মানব আসলে ধর্ম কি—
- Maharshi MahaManas
- Jun 10, 2018
- 4 min read
Updated: Jul 21, 2018
মানব আসলে ধর্ম কি—

মানব আসলে ধর্ম কি—
কর্ম ও ভোগের মধ্য দিয়ে— জ্ঞান-অভিজ্ঞতা লাভের দ্বারা ক্রমশ মনোবিকাশ তথা চেতনা-বিকাশের পথে এগিয়ে চলাই মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম— মৌলিক ধর্ম এবং অন্যতম প্রধান ধর্ম। আর, এ-ই হলো মানব ধর্ম।
আমরা সবাই এই একই পথের পথিক— ক্রমবিকাশমান চেতনার পথে। তবে, কেউ চলেছে জ্ঞাতে, আর কেউ অজ্ঞাতে। কেউ পিছিয়ে— আর কেউ এগিয়ে। কেউ অতি ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে, আর কেউ দ্রুত গতিতে। কেউ চেতন-আলোকবিহীন অন্ধকারাচ্ছন্ন পথে অজ্ঞান-অন্ধত্বের কারণে হোঁচট খেতে খেতে, অত্যন্ত দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনা ও অসুস্থতার মধ্য দিয়ে এই পথ অতিক্রম ক’রে চলেছে, আর কেউ চেতন-আলোকে উজ্বল পথে— স্বচ্ছন্দে— জ্ঞানানন্দে স্ফূর্তিতে পূর্ণ-বিকাশের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে এই একই পথ ধরে। কেউ মানবধর্ম সম্পর্কেই সজাগ নয়, ওয়াকিবহাল নয়, আর কেউ সজাগ-সচেতনভাবে মানবধর্ম পালন ক’রে চলেছে।
একটাই জগত, পথও একটাই, শুধু চেতনার পার্থক্যের জন্য এক একজনের এক এক দশা, এবং এই পথ ও জগত— এক একজনের কাছে এক এক প্রকার উপলব্ধ হয়। শুধু তা-ই নয়, জ্ঞান ও চেতনার স্বল্পতার কারণে অনেকে এই পথ—এই জগতকেই দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনাময় নরক ক’রে তোলে।
এরজন্য অনেকাংই দায়ী স্বার্থান্বেষীদের দ্বারা পরিচালিত অন্ধ-বিশ্বাস ভিত্তিক প্রচলিত ধর্ম। ধর্ম--- যাকে ধারণ ও পালন করে আমাদের মনোবিকাশ বা মানব-বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা, উল্টে সেই ধর্মই যদি আমাদের বিপথগামী--- নিম্নগামী করে তোলে, তো সেই মিথ্যার বেসাতিকে কি ধর্ম বলা যাবে?
এই অজ্ঞান-অন্ধত্বজাত অশান্তি থেকে মুক্ত হয়ে স্বচ্ছন্দে সানন্দে এগিয়ে যেতে চাইলে, জ্ঞান ও চেতনা-বিকাশের পথে অগ্রসর হতে হবে আমাদের মানব ধর্ম ভিত্তিক আত্মবিকাশ ধর্ম— মহাধর্মের পথ ধরে।
এই প্রসঙ্গে বলি, আমাদের মধ্যে দুটি (প্রায়) বিপরিতমুখী বল-রূপ স্বভাব-ধর্ম কাজ করছে। একটি হলো— আত্ম-বিকাশের তাড়না, যা আমাদেরকে পূর্ণ-বিকাশ লাভের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, এবং সেইসাথে অন্যান্যদের থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন ক’রে— দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আর, অপরটি হলো— একত্বের টান, যা আমাদেরকে পরস্পর বেঁধে রেখেছে— একত্র ক’রে রেখেছে।
সমস্ত মহাবিশ্ব জুড়েই এই কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করা যাবে। একদিকে মহাবিশ্ব ক্রমশই বিস্ফারিত ও প্রস্ফূটিত হয়ে চলেছে, আবার, একের সাথে অপরকে বেঁধে রেখেছে— টেনে ধরে রেখেছে মহাকর্ষ-অভিকর্ষের মতো টান। আসলে, আদিতে সব বা সবাই তো একই ছিলো, সেই এক থেকে বহু হলেও, নাড়ির টান রয়ে গেছে কোষে কোষে— অনু-পরমানুতে।
এখন, অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে আলাদা করে মানব ধর্ম ভিত্তিক এই 'মহাধর্ম' গ্রহণ ও অনুশীলন করার প্রয়োজন কী।
প্রয়োজন এই জন্য---, আমরা হাজার হাজার বছর পেরিয়ে এসেও, এখনো আমাদের যথেষ্ট মনোবিকাশ ঘটতে পারেনি। আমরা আজও যে তিমির সেই তিমিরেই পড়ে আছি। আমাদের চেতনা বিকাশের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় প্রতিবন্ধকদের চিহ্নিত করতে হবে প্রথমে। এরা হলো--- প্রচলিত ধর্ম, রাজতন্ত্র (বর্তমানে রাজনীতি), আর বৈশ্যতন্ত্র (ব্যবসায়ীরা)। এরা চিরকালই আমাদেরকে এদের প্রয়োজনানুসারে মুর্খ বানিয়ে রাখতে সদাতৎপর। মানুষের মনোবিকাশ এদের কাম্য নয়। মানুষ বেশি সচেতন হয়ে উঠলে এদের সর্বনাশ। এদের কারসাজিতেই, আজ আমাদের যতটা মনোবিকাশ ঘটার কথা, তা' ঘটা সম্ভব হয়নি।
মহাধর্ম হলো একটি অতি উৎকৃষ্ট বিশেষ (প্র্যাকটিকাল ও থিওরিটিক্যাল) শিক্ষা ব্যবস্থা। যার দ্বারা বিভিন্ন প্রতিকূলতা দূর করে দ্রুত মনোবিকাশ ঘটানো সম্ভব। মানুষকে সুস্থ ও সচেতন করে তোলা এবং পূর্ণবিকশিত মানুষ হয়ে ওঠার লক্ষ্যে আমাদেরকে এগিয়ে দেওয়াই মহাধর্ম -এর কাজ। যেটা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা অথবা প্রচলিত ধর্মের দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়। আশা করছি, মহাধর্ম আসলে কি, এবং এর কি উদ্দেশ্য, আপনাদেরকে মোটামুটি বোঝাতে পেরেছি।
মানবধর্ম-ই মহাধর্ম
মানব ধর্ম— হলো মানুষের প্রকৃত ধর্ম— আদি ধর্ম। আত্ম-বিকাশের ধর্ম। আমরা সেই মানবধর্মকে ভুলে গিয়ে, নানারূপ ধর্ম ও অধর্ম নিয়ে অজ্ঞান-অন্ধের মতো মোহাচ্ছন্ন হয়ে মেতে আছি। চারিদিকে একটু সচেতন দৃষ্টিতে তাকালেই দেখা যাবে— দিনকে দিন ক্রমশ ভয়ানক পরিণতীর দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা। আজকের এই ঘোর সঙ্কটকালে— এই সর্বনাশা করুণ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে, অবিলম্বে মানব ধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ক’রে, মানব ধর্ম অনুশীলন করতে হবে আমাদের।
কেউ কেউ মনে করেন, শুধু সৎ ও সহৃদয় হয়ে ওঠাই ‘মানবধর্ম’। কিন্তু মানবধর্ম মানে শুধু সৎ ও সহৃদয় হয়ে ওঠাই নয়, মানবধর্ম হলো পূর্ণ বিকশিত মনের মানুষ হয়ে ওঠার জন্য অবশ্য পালনীয় ধর্ম। একজন বিকশিত মানুষ সতঃস্ফূর্তভাবেই সৎ ও হৃদয়বান হয়ে থাকেন।
মানবধর্ম অনুশীলনের মধ্যদিয়েই প্রকৃত মানব-বিকাশ এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। মানবজীবনে এক শুভ পরিবর্তন আসছে— মহাধর্ম-এর পথ ধরে।
প্রতিদিন সারা পৃথিবী জুড়ে অত্যন্ত মর্মাহতকর মনুষ্যকৃত যে সমস্ত ঘটনা ঘটে চলেছে, এবং মানুষের যে বিকৃত—বিকারগ্রস্ত—উন্মাদপ্রায় রূপ আমরা অসহায়ের মতো প্রত্যক্ষ ক’রে চলেছি, ধর্ম—রাজনীতি—প্রশাসন প্রভৃতি প্রচলিত কোনো ব্যবস্থা/ সিস্টেম-ই যে তার প্রতিকারে সক্ষম নয় তা’ আমরা খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছি।
এই ঘোর সঙ্কটে, আগামী সর্বনাশা পরিণতি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করতে— মহর্ষি মহামানস একমাত্র সমাধানের পথ দেখিয়েছেন। এখনও সময় আছে, আমরা যদি এখনও সেই পথ অবলম্বন ক’রে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলেই শেষ রক্ষা হবে।
মহাধর্ম হলো— মানবধর্ম ভিত্তিক অন্ধ-বিশ্বাসমুক্ত মানব-বিকাশমূলক অধ্যাত্মিক-বিজ্ঞান অনুসারী যুগোপযোগী ধর্ম। মহাধর্ম হল— এ’কালের মহা বৈপ্লবিক উত্তাল তরঙ্গ— প্রকৃত মানব বিকাশের জন্য। এ’হলো অত্যুৎকৃষ্ট (সুস্থ—শান্তিপূর্ণ ও যথেষ্ট বিকশিত) জীবন লাভের শ্রেষ্ঠ পথ। মহাধর্ম গ্রহন করতে, এবং দিকে দিকে সংগঠন গড়ে তুলতে, মুক্তমনের সত্যপ্রেমী যুক্তিবাদী আত্ম-বিকাশকামী জ্ঞানপথের উদ্যোগী মানুষদের আহ্বান জানাই।
চতুর্দিকে মানবকেন্দ্রিক যত অশান্তি, যত সমস্যা ও সঙ্কট ক্রমশ ভয়ানক রূপ ধারণ করতে চলেছে, তার অধিকাংশেরই মূল কারণ হলো— জ্ঞান ও চেতনার স্বল্পতা এবং শরীর ও মনের অসুস্থতা। আর, এর একমাত্র সমাধান হলো— সার্বিকভাবে 'মহাধর্ম' অনুশীলন।
শরীর ও মনের সুস্থতাসহ মনোবিকাশ এবং সার্বিক উন্নতি লাভের জন্য ‘মহাধর্ম' গ্রহন করুন, এবং আত্ম-বিকাশ-যোগ অনুশীলন করুন। পূর্বের ধর্ম ত্যাগ না করেও মানব ধর্ম— ‘মহাধর্ম গ্রহণ করা যাবে। এই ধর্ম প্রচলিত ধর্মের মতো নয়। মানুষকে সচেতন ও সুস্থ করে তোলাই এই ধর্মের মূল উদ্দেশ্য।
মানবধর্ম অনুশীলনের মধ্যদিয়েই প্রকৃত মানব-বিকাশ এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। মানবজীবনে এক শুভ পরিবর্তন আসছে— মহাধর্ম-এর পথ ধরে।
মানব ধর্ম দুই প্রকারের: এক, মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। নেচরাল ফাংশন অফ হিউম্যান।
দুই, মানুষ গড়ার ধর্ম। এ'হলো একটা আরোপিত ব্যবস্থা বা সিস্টেম, যার দ্বারা প্রকৃত বিকশিত মানুষ গড়ে তোলা যায়। যা মানুষের মৌলিক ধর্ম সম্পর্কে মানুষকে সজাগ-সচেতন করে তোলা এবং সেই পথে দ্রুত অগ্রসর হতে সাহায্য করে। এর মধ্যে আবার দুটি ভাগ আছে। একটি হলো তাত্ত্বিক বা দার্শনিক দিক বা শিক্ষা। থিওরীটিক্যাল এডুকেশন। আর অপরটি হলো ব্যবহারীক দিক বা আচরণগত শিক্ষা। প্র্যাকটিকাল এডুকেশন।
যে মানুষ গড়ার (শিক্ষা) ব্যবস্থা ধারণ-পালনের মধ্য দিয়ে একজন ব্যক্তি যথেষ্ট বিকশিত মানুষ হয়ে উঠতে পারে, তা'ই হলো মানবধর্ম। আর মানব ধর্মই মহাধর্ম।
আরো জানতে হলে, এই ওয়েবসাইটে আসুন-- www.mahadharma.wix.com/bangla




Comments