মহর্ষি মহামানস
চল্লিশ বছরের অধিক সময়কাল ধরে, সারা ভারতবর্ষে ঘুরে, কখনো অনাহারে--- কখনও স্বল্পাহারে--- দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে, বহু সাধনা ও নিরলস গবেষণার মধ্য দিয়ে মানব বিকাশের এই মহান উপায় আবিষ্কার করেছেন। সৃষ্টি করেছেন একালের সর্বোৎকৃষ্ট দর্শন ও মতবাদ--- 'মহাবাদ' ।
প্রকৃত মানব হিতাকাঙ্খী মহামানসের যুক্তিসম্মত আধ্যাত্মিক মতবাদ--- 'মহাবাদ' -এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, মানব ধর্ম মূলক যুগোপযোগী ধর্ম--- মহাধর্ম। যা মানববিকাশের তথা মনোবিকাশের একমাত্র পথ।
একসময় তিনি হিমালয়ের গহীন অরণ্যে গুহাবাসি হয়েও তপস্যা করেছেন। জীবন ও মহাজীবনের সত্য সন্ধানে, মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনেই কেটেছে তাঁর সারা জীবন। জগতের মুক্ত পাঠশালার প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত এই অসাধারণ নিরহংকারী মানুষটি এখন আমাদেরকে সজাগ-সচেতন করে তোলার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। মহামানস নামটি তাঁর হিমালয়ের এক গুরু প্রদত্ত নাম। তাঁর পূর্ণবিকশিত মানুষ হয়ে ওঠার ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা ধন্য। জয় মহামানস।
মানব ধর্মই মহাধর্ম।
RECENT ARTICLES
যে পথ ও পদ্ধতিকে ধারণ ক’রে একজন মানুষ নিজেকে— নিজের স্বরূপে উপলব্ধি করতে পারে, আরো ভালো জীবন লাভে সক্ষম হতে পারে, এবং পূর্ণ বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠার লক্ষ্যে দ্রুত অগ্রসর হতে পারে, তা’ই হলো— ‘মহাধর্ম’।
নিজে বাঁচো অপরকে বাঁচাও, আর নিজের বিকাশ ঘটানোর সাথে সাথে অন্যান্যদেরও বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করো। এটাই হলো মানবধর্ম।
মানব ধর্ম— হলো মানুষের প্রকৃত ধর্ম— আদি ধর্ম। আত্ম-বিকাশের ধর্ম। আমরা সেই মানবধর্মকে ভুলে গিয়ে, নানারূপ ধর্ম ও অধর্ম নিয়ে অজ্ঞান-অন্ধের মতো মোহাচ্ছন্ন হয়ে মেতে আছি। চারিদিকে একটু সচেতন দৃষ্টিতে তাকালেই দেখা যাবে— দিনকে দিন ক্রমশ ভয়ানক পরিনতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা। আজকের এই ঘোর সঙ্কটকালে— এই সর্বনাশা করুণ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে, অবিলম্বে মানব ধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ক’রে, মানব ধর্ম অনুশীলন করতে হবে আমাদের।
মহাধর্ম হলো— মানবধর্ম ভিত্তিক অন্ধ-বিশ্বাসমুক্ত মানব-বিকাশমূলক অধ্যাত্মিক-বিজ্ঞান অনুসারী যুগোপযোগী ধর্ম। মহাধর্ম হল— এ’কালের মহা বৈপ্লবিক উত্তাল তরঙ্গ— প্রকৃত মানব বিকাশের জন্য। এ’হলো অত্যুৎকৃষ্ট (সুস্থ—শান্তিপূর্ণ ও যথেষ্ট বিকশিত) জীবন লাভের শ্রেষ্ঠ পথ। মহাধর্ম গ্রহন করতে, এবং দিকে দিকে সংগঠন গড়ে তুলতে, মুক্তমনের সত্যপ্রেমী যুক্তিবাদী আত্ম-বিকাশকামী জ্ঞানপথের উদ্যোগী মানুষদের আহ্বান জানাই।
“চতুর্দিকে মানবকেন্দ্রিক যত অশান্তি, যত সমস্যা ও সঙ্কট ক্রমশ ভয়ানক রূপ ধারণ করতে চলেছে, তার অধিকাংশেরই মূল কারণ হলো— জ্ঞান ও চেতনার স্বল্পতা এবং শরীর ও মনের অসুস্থতা। আর, এর একমাত্র সমাধান হলো— সার্বিকভাবে মহাধর্ম অনুশীলন।”
শরীর ও মনের সুস্থতাসহ মনোবিকাশ এবং সার্বিক উন্নতি লাভের জন্য ‘মহাধর্ম গ্রহন করুন, এবং আত্ম-বিকাশ-যোগ অনুশীলন করুন। পূর্বের ধর্ম ত্যাগ না করেও মানব ধর্ম— ‘মহাধর্ম গ্রহণ করা যাবে। এই ধর্ম প্রচলিত ধর্মের মতো নয়। মানুষকে সচেতন ও সুস্থ করে তোলাই এই ধর্মের মূল উদ্দেশ্য।
প্রতিদিন সারা পৃথিবী জুড়ে অত্যন্ত মর্মাহতকর মনুষ্যকৃত যে সমস্ত ঘটনা ঘটে চলেছে, এবং মানুষের যে বিকৃত—বিকারগ্রস্ত—উন্মাদপ্রায় রূপ আমরা অসহায়ের মতো প্রত্যক্ষ ক’রে চলেছি, ধর্ম—রাজনীতি—প্রশাসন প্রভৃতি প্রচলিত কোনো ব্যবস্থা/সিস্টেম-ই যে তার প্রতিকারে সক্ষম নয় তা’ আমরা খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছি।
এই ঘোর সঙ্কটে, আগামী সর্বনাশা পরিণতি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করতে— মহর্ষি মহামানস একমাত্র সমাধানের পথ দেখিয়েছেন। এখনও সময় আছে, আমরা যদি এখনও সেই পথ অবলম্বন ক’রে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলেই শেষ রক্ষা হবে। ধন্যবাদ।
সত্য ও অস্তিত্ব
মহামানস
'সত্য' হলো--- যথার্থ বা যথার্থতা, বাস্তব বা বাস্তবতা। প্রকৃত। আর, বাস্তবতা--- যথার্থতা যার আছে, তার অস্তিত্বও আছে। সে অস্তিত্বশীল। সেই হিসাবে মিথ্যাও সত্য। মিথ্যা রূপে সত্য, অর্থাৎ ওটা যে মিথ্যা--- সেটা তো সত্য!
'অস্তিত্ব' হলো--- বিদ্যমানতা, অর্থাৎ বিদ্যমান থাকা। যা আছে তা-ই হলো অস্তিত্বশীল। সেই হিসাবে, ঠান্ডা ও অন্ধকারেরও অস্তিত্ব আছে। ঠান্ডা ও অন্ধকার এগুলো হলো এক একটা অবস্থা। আর সেই অবস্থাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। ওরা ঐ ঐ অবস্থায় অস্তিত্বশীল।
কেউ যদি বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে ঠান্ডা ও অন্ধকার -এর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে, তা' হবে দুর্ভাগ্যজনক। হবে, অপবিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের ভুল ব্যাখ্যা।
ঈশ্বর-অস্তিত্ব!
প্রচলিত ধর্ম--- দর্শন---মতবাদ -এর কথা আমি বলতে পারবো না। আমাদের ধর্ম-দর্শন-মতবাদে এই মহাবিশ্বই হলো ঈশ্বর। এই বিশ্ব-অস্তিত্বকে কি আপনি অস্বীকার করতে পারেন !?
ঈশ্বর-অস্তিত্ব নিয়ে এর পূর্বে আমি লিখেছি। আগ্রহী হলে দেখবেন। নমস্কার।
সবচাইতে বড় ও ভালো নেশা~ ধ্যানের নেশা। আর সব নেশা~ সর্বনাশা।
ঈশ্বর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হলে, আমাদের প্রমাণ করতে হবে--- ঈশ্বর-মনের অস্তিত্ব। আমাদের 'মহাবাদ' দর্শন অনুসারে --- আমরা মনে করি, সমস্ত বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডই হলো ঈশ্বর-শরীর বা ঈশ্বর।
এক্ষেত্রে, ঈশ্বরের শরীর-অস্তিত্বের প্রমাণ দাখিল করার প্রয়োজন নেই। শুধু প্রমাণ করতে হবে, এই শরীরের মধ্যে একটি 'মহামন' আছে।
আমরা মনে করি, ঈশ্বর এই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করেনি। সে নিজেই এই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড। অর্থাৎ তার পিছনে এক সৃষ্টিকর্তা অথবা সৃষ্টিরহস্য আছে। এ'নিয়ে আমাদের 'মহাসৃষ্টি রহস্য উন্মোচন' নামক সৃষ্টিতত্ত্বে যথাসম্ভব বর্ণনা করা হয়েছে।
এই দর্শনে আমরা দেখেছি, ঈশ্বর শুধু উদ্ভিদ ও জীব সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীতে এই জীবশ্রেষ্ঠ মানুষ আবার সৃষ্টি করেছে অনেক কিছু।
বস্তুতঃ এই জীব সৃষ্টির কর্তা হলো ঈশ্বরের মন। আমাদের ক্ষেত্রেও, আমরা যাকিছু সৃষ্টি করছি--- তার প্রকৃত স্রষ্টা হলো আমাদের মন।
এখন, এই মনকে বুঝতে হয় মন দিয়ে। মনের অস্তিত্বকে সরাসরি দেখা বা অনুভব করা--- আমাদের অধিকাংশ স্বল্প চেতন মনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। মনের অস্তিত্বকে আমরা অনুভব করি--- মনের কার্যকলাপের মাধ্যমে।
মন হলো অনেকাংশে কম্পিউটার সফটওয়্যার-এর মতো একটি অতি উচ্চমানের সফটওয়্যার বিশেষ। এই সফটওয়ারের পিছনেও থাকে ডেভলপার---প্রোগ্রামার। এমনি এমনি কিছুই সৃষ্টি হয়ে যায় না।
এবার ঈশ্বর-মনের কার্যকলাপের দু-একটি নিদর্শন দেখাযাক, যার মাধ্যমে তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া সম্ভব হবে।
ঈশ্বর-মন নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। যারা নিজের মনটাকেই এখনো ঠিকমতো বুঝতে বা জানতে পারেনি, তাদের পক্ষে ঈশ্বর-মনকে বোঝা বা জানা, তার অস্তিত্ব উপলব্ধি করা সত্যিই দুষ্কর।
মনকে বুঝতে হয় মন দিয়েই। আর তার জন্য প্রয়োজন হয়--- সজাগ-সচেতন-সত্যপ্রিয়, বিকশিত মুক্ত-মন।
ঈশ্বর-মনের অস্তিত্ব উপলব্ধি করার পক্ষে এই নিদর্শনটি অনেকটা সহায়ক হবে আশাকরি---
মরণশীল জীবের বংশবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে--- তাদের অস্তিত্ব, বংশধারা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে, ঈশ্বর যে কৌশল রচনা করেছে, তাতেই তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। আর, বুদ্ধিমত্তাই হলো 'মন'-এর উপস্থিতির নিদর্শন। অর্থাৎ যেখানে বুদ্ধি আছে, সেখানে অবশ্যই মন আছে।
যেমন, কোথাও ধোঁয়া থাকলে--- আমরা সেখানে আগুনের অস্তিত্ব বা উপস্থিতি সহজেই অনুমান করতে পারি।
এবার বলি, সেই কৌশলের কথা---
যৌনসুখের প্রতি জীবকে প্রলুব্ধ ক'রে তুলে, ---তার মধ্যে যৌন মিলনের তাড়নারূপ প্রোগ্রাম-এর অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে, জীবকে যৌনমিলনে অনুপ্রাণিত বা বাধ্য ক'রে তোলার কৌশলটি অবশ্যই ঈশ্বরের বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।
খুঁজলে, এইরকম আরো অনেক নিদর্শন পাওয়া যাবে।
আর একটু সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে, দেখা যাবে--- আমাদেরকে স্বল্পচেতন মানব থেকে ক্রমশ উচ্চ--- আরও উচ্চ চেতনা ও জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ ক'রে তোলার উদ্দেশ্যে , সে নানা প্রকার কৌশল তৈরী করেছে।
এছাড়াও, আরো সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে, সুদীর্ঘকাল ধরে ঈশ্বর-মনও ক্রমশ একটু একটু ক'রে বিকশিত হয়ে চলছে। মনোবিকাশের সাথে সাথে তার সৃজন ক্ষমতারও যে উন্নতি হয়েছে, তা তার ক্রমোন্নত (কীট থেকে আরম্ভ করে উন্নত মানুষ) সৃষ্টির দিকে তাকালেই তা' স্পষ্ট বোঝা যাবে।
মানব ধর্ম— ‘মহাধর্ম’ এবং ‘মহামনন’— আত্ম-বিকাশ যোগ শিক্ষাক্রম অনুশীলনের জন্য কলকাতা এবং বড় শহরে (সহজ শর্তে অথবা দানে) উপযুক্ত বাড়ি, জমি, অর্থ ও শ্রম দান করতে ইচ্ছুক মহামনা ব্যক্তিগণ সাহায্যের হাত এগিয়ে দিয়ে এই মহান কার্যক্রমকে সফল ক’রে তুলুন।
যোগাযোগ— ৮৫৩৮৮০৫৭৫১ / ৯৭৩৩৯৯৯৬৭৪
কর্ম ও কর্মফল
আমার কর্ম— এই মহাজাগতিক কর্মকান্ডেরই একটা অংশ। আমার কর্ম হতে উৎপন্ন হয় যে ফল, অর্থাৎ আমার কর্মফল— তা’ শুধু আমার নয়, তা’ এই জগতেরই—, এবং জগৎ জুড়েই তা’ প্রভাব বিস্তার করে। আর, সমস্ত জগতই সেই ফল ভোগ ক’রে থাকে।
জগতের কোনো কিছুই বিচ্ছিন্ন নয়। সব কিছুর সাথেই সবার যোগ রয়েছে। জাগতিক কর্মকান্ড এবং তা’ থেকে উৎপন্ন ফলের অধিকাংশই আমাদের পক্ষে অনুভব যোগ্য নয়। আমরা তার খুব সামান্য অংশই উপলব্ধি করে থাকি।
এই মহাজাগতিক কর্মকান্ড থেকে উৎপন্ন অসংখ্য প্রকারের— অসংখ্য ফলের মধ্যে আমিও একটি ফল। আমি যা কিছু করছি, তা’ এই জগতব্যাপী ঐচ্ছিক—অনৈচ্ছিক অসংখ্য কর্মকান্ডের মিলিত ফলেরই একটা অংশ।
আমার দ্বারা কৃত সমস্ত কর্ম— আমার ইচ্ছা মতোই সংঘটিত হয়না। এর পিছনে রয়েছে— বহু ইচ্ছা—অনিচ্ছা, স্বয়ংক্রিয় ঘটনা, স্থান-কাল-পাত্র, অবস্থা প্রভৃতি। আর, এ সবই পুর্বনির্ধারিতভাবে যখন যেটা ঘটার— ঘটে চলেছে। এটা শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়, —আমার-তোমার —সবার এবং সবকিছুর ক্ষেত্রেই।
সামাজিক দৃষ্টিতে কেউ খারাপ কাজ করলেই যে তাকে খারাপ ফল ভোগ করতে হবে— তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার কেউ ভালো কাজ করলেই যে সে ভালো ফল পাবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। পেতেও পারে, আবার নাও পেতে পারে। হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।
‘কর্মফল’-কে বুঝতে হলে, সর্বাগ্রে আমাদেরকে পূর্বনির্ধারিত ‘ভাগ্য’-কে বুঝতে হবে। ‘ভাগ্য’ আসলে কী— তা’ না বোঝা পর্যন্ত নানা সংশয়-দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ঢেউয়ের দোলায় ও ধাক্কায় বিপর্যস্ত হতে হবে আমাদেরকে।
শিশুসুলভ মানবমন রূপকথাসম ধর্মীয় কল্পকাহিনীতে কেমন অন্ধবিশ্বাসে বিভোর হয়ে আছে! একবারও প্রশ্ন জাগেনা এই মনে!
আজকের অনেক শিশু মনেও প্রশ্ন জাগে, তারাও প্রশ্ন করে, তবুও নিজেদেরকে বয়স্ক ভেবে গর্বিত মনে প্রশ্ন জাগে না, তাইতো, এসব কি সম্ভব! এগুলো কি অবাস্তব কল্পনা নয়!?
‘মন’-এর কথা
একটি শিশুকে আগ্রহের সাথে বারবার নানাবিধ প্রশ্ন করতে দেখে, আমরা সাধারণতঃ তাকে উন্নতিশীল বা প্রগতিশীল শিশু বলে চিহ্নিত ক’রে থাকি। তার এইসব প্রশ্ন যদি নিছক কৌতুহল না হয়ে জানার আগ্রহ হয়, আর সে যদি তার স্বল্প জ্ঞান-অভিজ্ঞতা সম্বল ক’রেই যুক্তি-বিচার সম্ভাবনা-অনুমান-এর সাহায্যে সত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে, এবং সেই পথে সত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, তখন তাকে আমরা উৎকৃষ্ট শ্রেণীর শিশু বলে থাকি।
শুধু শিশুই নয়, বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রেও এ’কথা প্রযোজ্য। যে সচেতন মনটির মালিক হওয়ার সুবাদে— আমরা মানুষ বলে গণ্য হই, সেই সচেতন বা মানব-চেতন মনটি এখনো আমাদের অধিকাংশের মধ্যে শৈশব অবস্থাতেই রয়েছে। তার যথেষ্ট বিকাশ ঘটলে— তবেই ঘটবে মনোবিকাশ —ঘটবে মানব-বিকাশ।
সঠিক বিকাশের জন্য— জানার আগ্রহের সাথে থাকতে হবে সুস্থতা। ক্রোধ-উত্তেজনা-অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, অলসতা-উদাসীনতা প্রভৃতি অসুস্থতা জ্ঞাপক দোষসহ অন্ধ-বিশ্বাস, অন্ধবৎ অনুসরণ, নির্বোধের মতো সব মেনে নেওয়া, যুক্তি-বিচারের অক্ষমতা, এবং স্রোতে ভেসে চলার প্রবণতা প্রভৃতি দোষগুলি আমাদের বিকাশের পরিপন্থি। কষ্ট করতে রাজি নয়, এমন একজনের বক্তব্যঃ ‘বিশ্বাস করতে তো আর কষ্ট করতে হয়না, জ্ঞান অর্জনের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়!’ অথচ, জ্ঞানাভাবের কারণে তাকে আরো অনেক বেশি কষ্ট স্বীকার করতে হচ্ছে!
মানব-জীবন লাভ ক’রে— মানব অস্তিত্ব সম্পন্ন উন্নত জীব হয়েও যদি কারো মধ্যে— নিজের সম্পর্কে—জীবন সম্পর্কে জোরালো প্রশ্ন না জাগে, আত্ম-জিজ্ঞাসা— জীবন-জিজ্ঞাসা —বিকাশাকাঙ্খা না জাগ্রত হয়, এবং যদি সে তার উত্তর সন্ধানে— সত্য সন্ধানে যুক্তিপথে অগ্রসর না হয়, সেক্ষেত্রে, তার সচেতন মনের অবস্থাটা সহজেই অনুমেয়।
সচেতন বা মানব-চেতন মনের ধর্মই হলো— যুক্তি-বিচার-সতর্কতার সাথে বাস্তবপ্রিয়তা ও সত্যপ্রিয়তা প্রভৃতি। আর, অবচেতন বা প্রাক-মানব-চেতন মনের ধর্ম হলো— অন্ধ-আবেগ— অন্ধ-বিশ্বাস, অলীক কল্পনা প্রিয়তা প্রভৃতি। মনে রাখতে হবে, আত্ম-জিজ্ঞাসাই ঊর্ধগামী আত্ম-বিকাশ-পথের প্রথম সোপান। এবং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে— তা’ যেন নিম্নগামী অন্ধবিশ্বাসের আপাত সুখকর পথে নেমে গিয়ে— পথভ্রষ্ট না হয়, —বিপথগামী না হয়।
আমাদের সচেতন-মন যত বেশি বিকশিত হবে, আমরা ততই অন্ধ-বিশ্বাস মুক্ত হয়ে— যুক্তি ও জ্ঞানপথে অগ্রসর হতে পারবো। আমরা যুক্তি ও জ্ঞানের পথ ধরে যত চলবো— সেইমতো সচেতন-মনের বিকাশও ঘটতে থাকবে ততই।
এখনও অনেক মানুষই--- সেই প্রাক মধ্যযুগীয় অজ্ঞান-অন্ধ-বিশ্বাসাসক্ত দুর্দমনীয় আবেগাক্রান্ত তীব্র লোভাতুর ও কামাতুর আদিম-হিংস্র--- নিষ্ঠুর রক্তলোলুপ উন্মাদপ্রায় মানব-মনেরই নিয়ন্ত্রণাধীন।
প্রবল আগ্রাসী কুটিল ধর্ম-রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের ঋণাত্মক শয়তানী প্রভাবে, যৎসামান্যই সচেতন-মনের বিকাশ ঘটেছে এদের। যারফলে, পরিবর্তন শুধু ওপরে ওপরেই, মানুষ যে তিমির সেই তিমিরেই রয়ে গেছে আজও।
সত্যিকারের শুভ পরিবর্তন ঘটাতে পারে, একমাত্র মানব ধর্ম--- মহাধর্ম।
আমাদের শরীর ও মনের মধ্যে যাকিছু ঘটছে, তার স্বল্পাংশই ঐচ্ছিক। বেশিরভাগটাই অনৈচ্ছিক। মহাবিশ্বের মধ্যেও ঠিক অনুরূপ ঘটনাই ঘটছে।
এখনও অনেক মানুষই--- সেই প্রাক মধ্যযুগীয় অজ্ঞান-অন্ধ-বিশ্বাসাসক্ত দুর্দমনীয় আবেগাক্রান্ত তীব্র লোভাতুর ও কামাতুর আদিম-হিংস্র--- নিষ্ঠুর রক্তলোলুপ উন্মাদপ্রায় মানব-মনেরই নিয়ন্ত্রণাধীন।
প্রবল আগ্রাসী কুটিল ধর্ম-রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের
ঋণাত্মক শয়তানী প্রভাবে, যৎসামান্যই সচেতন-মনের বিকাশ ঘটেছে এদের। যারফলে, পরিবর্তন শুধু ওপরে ওপরেই, মানুষ যে তিমির সেই তিমিরেই রয়ে গেছে আজও।
সত্যিকারের শুভ পরিবর্তন ঘটাতে পারে, একমাত্র মানব ধর্ম--- মহাধর্ম।
জাগো— ওঠো, বিকাশলাভ করো
মানবদেহী বা মানবদেহধারী হলেই যে সে মানবত্ব লাভ করেছে অথবা তার আয়ুষ্কালের মধ্যেই মানবত্ব লাভ করতে পারবে, তেমন নয়। মানবত্ব লাভ হলো— পূর্ণবিকশিত মানুষ হয়ে ওঠা। মানব জীবনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্যই হলো— মানবত্ব লাভ।
একজন মানবদেহী (মানবদেহ ধারী) যে ধর্মরূপ পথ ও পদ্ধতি অবলম্বন ক’রে মানবত্ব লাভ করতে পারে, সেই ধর্মই হলো— মানবধর্ম।
নানা মতবাদ অনুসরণ ক’রে ঈশ্বর ও স্বর্গরূপ মরীচিকার পিছনে অন্ধের মতো ছুটে চলা— মানবধর্ম নয়।
দেবত্ব এবং তৎপরবর্তী ঈশ্বরত্ব আমাদের মধ্যেই সুপ্তাবস্থায় এবং বিকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। দেবত্ব এবং ক্রমে ঈশ্বরত্ব লাভের জন্য আমাদেরকে মানবত্ব লাভ করতে হবে সর্বাগ্রে।
কর্ম ও ভোগের মধ্য দিয়ে— জ্ঞান-অভিজ্ঞতা লাভের মধ্য দিয়ে— ক্রমশ মনোবিকাশ তথা চেতনার বিকাশ লাভ করা— আমাদের স্বভাবধর্ম। কিন্তু, আমাদের ভিতরে—বাইরে—চারিপাশে বিকাশের অনুকূল অবস্থা না থাকায়, নানা প্রতিকূলতা থাকায়, বিকাশ-উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহন —আবশ্যক হয়ে পড়ে।মানবধর্ম 'মহাধর্ম' হলো সেই অত্যাবশ্যক ব্যবস্থা। একটা চারাগাছের সঠিক বিকাশের জন্য যেমন যত্ন-পরিচর্যা-সুরক্ষাসহ পুষ্টি ও সুস্থতার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়, এ-ও ঠিক তেমনি।
মানুষের প্রকৃতি অনুযায়ী— বহু পথ বা মার্গ ধরে মানুষ অগ্রসর হয়ে থাকে। তার মধ্যে নিম্নগামী পথগুলি বাদ দিয়ে কর্মপথ—ভক্তিপথ—জ্ঞানপথ –এসবই মিলিত হয়েছে মহাধর্ম পথে। কর্ম ব্যতীরেকে ভক্তিপথ-জ্ঞানপথ –কোনো পথেই অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। আবার জ্ঞানপথেও ভক্তি থাকে। সে হলো জ্ঞানের প্রতি ভক্তি— সত্যের প্রতি ভক্তি। তবে তা’ অন্ধ ভক্তি নয়। অন্ধভক্তির পথ হলো নিম্নমূখী পথ –অধঃপতনের পথ।
ধর্মরূপ যে যুক্তিসম্মত পথ-পদ্ধতি ও ব্যবস্থা— একজন মানবদেহীকে মানবত্ব লাভে সাহায্য করে— তা-ই হলো মানবধর্ম। আর, এই মানবধর্মই— মহাধর্ম।
আত্ম-বিস্মৃত— মোহগ্রস্ত— পথভ্রষ্ট মানুষকে তার জীবনের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন ক’রে তুলতে, তাকে স্ব-ধর্মে (মানবধর্মে) প্রতিষ্ঠিত করতে, এবং স্বচ্ছন্দে সেই লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে ‘মহাধর্ম’ হাজির। শুধু তাকে গ্রহন করতে হবে— তাকে ধারণ করতে হবে।