top of page

অতিথি লেখকদের পাতা ঃ

লিখেছেন রুপম দাশ

মানুষ যখন ধর্মে আচ্ছন্ন হয়ে যায় তখন সে ধর্মের এসব অনৈতিকতাগুলো দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ফলে সে অনৈতিক মানুষ হয়ে যায়। এজন্যই ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ধার্মিকরা পরস্পরকে ঘৃণা করে এমনকি একে অন্যকে হত্যা করার জন্য উঠে পরে লাগে। আস্তিকদের ধর্ম দ্বারা অনৈতিকতা বোধ মানুষ ভেদে ভিন্ন রকম হয়। কারণ হলো ধর্মগুলো টিকে থাকে বিশ্বাস বা অন্ধবিশ্বাসের উপর ভর করে। ফলে ধর্মের প্রতি যে বেশী নির্ভরশীল থাকে সেই ধর্মের অনৈতিকতা দ্বারা বেশী আক্রান্ত হয়। ফলে সে বেশী পরিমাণে ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের ঘৃণা করে এবং তাদের হত্যার জন্য বেশী উদ্গ্রীব থাকে। এজন্যই মৌলবাদীদেরকে দেখা যায় তারা বিধর্মীদেরকে বেশী ঘৃণা করে এবং বেশী করে বিধর্মীদের প্রতি আক্রমনাত্বক হয়ে উঠে। যেমন যেসব ধার্মিক সামাজিক মূল্যবোধ সম্পন্ন হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের সাথে মেলামেশা করে, তারা স্বাভাবিক ভাবেই সব ধর্মের মানুষদের প্রতিই একই সহমর্মিতা অনুভব করে। কিন্তু যারা সব ধরণের মানুষের সাথে মেলামেশার সুযোগ পায় না এবং শুধু এক ধর্মের অনুসারীদের সাথেই মেলামেশা করে থাকে তারাই ধর্মের দ্বারা বেশী আক্রান্ত হয়ে ধর্মের অনৈতিকতা দ্বারা বেশী আক্রান্ত হয়। ফলে তারাই মৌলবাদী হয়ে উঠে। এবং ভিন্ন ধর্মের মানুষদের উপর অত্যাচারী রুপে আবির্ভূত হয়।


অর্থাৎ ধর্মই মানুষকে প্রাচীণকালের নিকৃষ্ট নৈতিকতার মানুষে পরিণত করে।


বিভিন্ন ধর্মের নৈতিকতা বোধ বিভিন্ন রকম। কারণ ধর্মের উৎপত্তি ঘটেছে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। ফলে যে ধর্ম যে সময়টিতে উৎপন্ন হয়েছে সেই ধর্মটি সেই সময়ের নৈতিকতা ধারণ করেছে এবং সেই নির্দিষ্ট নৈতিকতাকেই কাল ক্রমে বহন করে চলেছে। কিন্তু কালক্রমে মানুষ উন্নত থেকে উন্নততর হয়েছে। সেই সাথে মানুষের নৈতিকতাও উন্নত থেকে উন্নততর হয়েছে। কিন্তু ধর্মগুলো সময়ের সাথে সাথে উন্নত হয়নি। বরং ধর্ম যেহেতু স্থবির এবং পরিবর্তনহীন তাই ধর্মের নৈতিকতা বোধও পরিবর্তনহীন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ উন্নত হয়েছে এবং সেই সাথে তাদের নৈতিকতা বোধও উন্নত হয়েছে। আর এজন্যই দেখা যায় ধর্মই বর্তমানে প্রাচীণ অনৈতিকতাগুলোকে বহন করেছে এবং তা দ্বারা বর্তমান মানুষকে আক্রান্ত করেছে। ফলে আধুনিক সমাজে বাস করেও কিছু মানুষ সেই প্রাচীন বর্বরতাগুলো চর্চা করে চলেছে। যেমন ধর্ম যুদ্ধকে বৈধতা দিয়েছে কিন্তু আধুনিক নৈতিকতাবোধ যুদ্ধকে অনৈতিক বর্বর মনে করে। ধর্ম পশু হত্যা, নারী অবমাননাকর অনৈতিক ধারণাগুলোকে বৈধতা দিয়েছে। অথচ আধুনিক সমাজ পশু হত্যা বা নারী অবমাননাকর ধারণাগুলোকে অনৈতিক মনে করে এবং পশুহত্যাকে বর্বর প্রথা মনে করে ও নারীর সম-অধিকার দেওয়াকে মহৎ মনে করে। কিন্তু ধর্ম মতে পশুহত্যা বৈধই শুধু নয় বরং মহৎ কাজ এবং নারীর সম-অধিকার মহা পাপের কাজ। অর্থাৎ ধর্মই প্রাচীন অমানবিক, বর্বর, মানবিকতা বহির্ভূত অনৈতিক কাজগুলোকে ধারণ করে বহন করে চলেছে যুগ যুগ ধরে। ফলে ধর্ম কখনই আধুনিক নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং অপরিবর্তনীয় ধর্মগুলো প্রাচীণ বর্বর রীতিনীতিগুলোকেও নৈতিকতার নামে বহন করেছে।

রুপম দাশ।।

বিশ্বাস করতে কোনো সত্যের দরকার হয় না ! যা ইচ্ছা বিশ্বাস করা যায় ! আর বিজ্ঞান সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ! এখানে ভুল হবার কোনো সুযোগ নেই ! কারণ যেটা ভুল ও মিথ্যা সেটা বিজ্ঞান বাদ দিয়ে দেয় ! সত্যটাকে গ্রহণ করে ! আর এটাই বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি !

বিবর্তনবাদ সত্য বলেই এটা বিজ্ঞান মেনে নিয়েছে তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে ! আর আপনি এটা বিশ্বাস নাই করতে পারেন তাতে বিজ্ঞানের কিছু যায় আসে না ! বিজ্ঞান চিরকালই সত্য বলে এসেছে আর চিরকালই সত্য বলবে ! এখানে কে মিথ্যা-কাল্পনিক ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস করবে অথবা সত্যকে ( বিজ্ঞানের জ্ঞান) মেনে নেবে সেটা তার ব্যাপার ! কেও যদি বলে আমি মিথ্যা কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তাকেই বিশ্বাস করব যদিও জানি সেটা মিথ্যা; তবে তাকে কে আটকিয়ে রাখবে ! খ্রিস্টানরা ও ইহুদিরা সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর ঘূর্ণন কে মেনে নিতে পারেনি উপরন্তু বিজ্ঞানীকে মেরে ফেলেছিল সত্য বলার জন্য ! তাতে পৃথিবীর সূর্যের চারপাশে ঘোরা বন্ধ হয়ে যায়নি !

 

ঠিক তেমনি নব্য অন্ধ আর কল্পনা বিশ্বাসী এবং সত্য বিবর্জিতরা বিবর্তন মেনে নিতে পারছে না কারণ এই তত্বটা মিথ্যা ঈশ্বর বিশ্বাসে চরম আঘাত হেনেছে ! আর সেই সব কুসংস্কারাচ্ছন্ন আস্তিকরা এর বিরুদ্ধে রে রে করে উঠেছে ! তাতে কিন্তু সত্যকে ধামা চাপা দিয়ে রাখা যাচ্ছে না ! বরং সত্য বিবর্তনবাদ আরো শক্তিশালী হয়ে প্রমান দিচ্ছে যে এটা কত সত্য (ফসিল ও DNA টেস্ট) ! আর কিছু অন্ধ-কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং ভন্ড আস্তিক বিজ্ঞানের এই সত্যটাকে মেনে নিতে পারছে না ! এর কারণ তারা ধরেই নিয়েছে তাদের কাল্পনিক (এবং মিথ্যা) সৃষ্টি কর্তা একমাত্র সত্য ! তার কথা মিথ্যা হতে পারে না !

 

কিন্তু তারা একবারের জন্যও ভাবছে না যে তারা কত বড় মিথ্যার মধ্যে আছে ! এর কারণ কিছু ভন্ড মানুষ বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে ! আর এরাই ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ঘৃণার পাত্র হবে সত্যকে না মেনে নিয়ে এর বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা ছড়িয়ে দেবার জন্য ! আর আস্তিকগুলোও সত্যের ধার না ধেরে মিথ্যা কথা গুলি বিশ্বাস করছে ! তারা সত্য মিথ্যা যাচাই করে না পর্যন্ত ! আর এই অন্ধ বিশ্বাস থেকেই তারা বিবর্তনবাদের বিরুধিতা করছে ! কিন্তু তারা ভালো করে ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখে না যে সব আস্তিকরা যারা বিজ্ঞানের সত্যের বিরুধিতা করেছে তারা বারবার মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে বিজ্ঞানের সত্যের কাছে !


আর এই সব আস্তিকেরা যারা বিবর্তন বাদের বিরুধিতা করছে এরাও ভবিষ্যতে ঘৃণার পাত্র হবে ! তখনও কিন্তু কিছু মানুষ থাকবে যারা মিথ্যা কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করবে ! তারাও এদের মত সত্যের ধার ধারবে না ! বরং তারা তাদের মিথ্যা কুসংস্কারকেই সত্য মনে করবে আর ইতিহাসে ঘৃণার এবং হাসির পাত্র হবে ! এরা কখনোই তাদের অন্ধকার কাল্পনিক জগত থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে না !

 

আর এজন্যই আজকেন অন্ধ- কুসংস্কারাচ্ছন্ন আস্তিকগুলো তাদের ভ্রান্ত ও মিথ্যা বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে না ! যদি তারা তাদের কল্পনার জগত থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসতে চায় তাহলে তারা বিজ্ঞানের সত্য গুলো জেনে এই মিথ্যা কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে ! কিন্তু তারা তাদের মিথ্যা বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে সত্য মেনে নিতেই চায় না ! আর সেজন্যই তারা সত্য জেনেও বিবর্তনবাদ মেনে নিতে পারছে না ! বরং মিথ্যা কথা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে আর মানুষ কে এর বিরুদ্ধে ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে বেড়াচ্ছে !


এরা কখনই নিরপেক্ষ ভাবে বিজ্ঞানের সত্যগুলো জানেনা বা জানতে চায়না ! আর তাই এসব সত্যকে তারা মিথ্যা বলে ধরে নেয় আর কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার অন্ধ বিশ্বাসকে ধরে রাখে ! যে কুসংস্কার থেকে বেরোতে না চায় তাকে কিভাবে মিথ্যা কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস থেকে বের করে আনা যাবে বলুন !!!!!!!!!??????

রুপম দাশ।।

37797093_914048465593058_636539065795503
37218860_902097163454855_350118301099517

পৃথিবী জুড়ে ক্ষমতা শুধু দুষ্ট রাজনীতিকদের বড়ো অস্ত্র হয়ে উঠেছে ধর্ম। তারা নিজেরা ধর্মে বিশেষ বিশ্বাস করে না, তাদের জীবন যদিও অধাৰ্মিক, তবু তারা ক্ষমতার জন্যে উত্তেজিত করে তোলে সাধারণ মানুষের লোভ-ভয় অপবিশ্বাসকে।

মানুষ ধাৰ্মিক হয়ে জন্ম নেয় না যদি ও অনেক সময় রটানো হয় যে কেউ কেউ মায়ের গর্ভ থেকেই ধর্মগ্রন্থ মুখস্থ ক’রে এসেছে; অধিকাংশ মানুষ সাধারণত ধর্মকে পাত্তা দেয় না। ধর্ম এতো দিনে লোপ পেয়ে যেতো যদি না চারপাশে সারাক্ষণ সক্রিয় থাকতো ধর্মের রক্ষীবাহিনী। প্রতিটি ধর্ম সৃষ্টি করে তার সুবিধাভোগী রক্ষীবাহিনী; কখনো এবং কোথা ও ওই বাহিনী অত্যন্ত হিংস্র, কখনো কোথা ও মৃদু।

পরিবার, পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, মসজিদ-মন্দির গির্জা-সিনেগগ, উৎসব, পুরোহিত-মোল্লা-রাবাই, বিদ্যালয়-পাঠ্যপুস্তক, সমাজ-রাষ্ট্র সবই কাজ করে ধর্মের রক্ষীবাহিনী রূপে ।এরা সব সময় চোখ রাখে যাতে কেউ ধর্মের বাইরে যেতে না পারে, অর্থাৎ তাদের ক্ষমতাকে অস্বীকার করতে না পারে। আমাদের দেশে এদের আচরণ মৃদু, কিন্তু ক্রমশ হিংস্র হয়ে উঠছে; এবং ইরানে, সৌদি আরবে, পাকিস্থানে হিংস্র ।

আমাদের দেশে ও ধর্মের বাইরে যাওয়া কঠিন। বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে, চাকুরির জন্যে আবেদন করতে, এবং তুচ্ছ নানা কাজ করতে গেলে ধর্মের ঘর পূরণ করতে হয়; যারা ধর্মে বিশ্বাস করে না, তারা ও রক্ষীবাহিনীর গোপন ফাদের বাইরে যেতে পারে না। ধর্ম টিকে আছে এ রক্ষীবাহিনীর সক্রিয়তায় । রক্ষীবাহিনীটি ধর্মের সুবিধাভোগী বাহিনী; ধর্ম থেকে যতোটা সুবিধা তোলা যায়, তারা তোলে, এবং ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের আগ্নেয়াস্ত্রহিশেবে, যা গর্জে উঠতে পারে যখন তখন। আমাদের দেশে কেউ চুপচাপ ধর্মের বাইরে থাকতে পারে, পালন নাও করতে পারে ধর্মের বিধিবিধান, কিন্তু সে প্রকাশ্যে ধর্মের সমালোচনা করতে পারে না, লিখতে পারে না। ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার ধর্ম, অর্থাৎ ধর্মের রক্ষীবাহিনী দেয় না, যেমন স্বৈরাচারীরা দেয় না তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার।

ধর্মগুলো যুক্তি ও সততা সহ্য করে না; ধর্মের পক্ষে কোটি কোটি মিথ্যে মানুষ কয়েক হাজার বছরে বলেছে,এখনো বলছে; ধর্মের আপত্তি নেই ওই সব মিথ্যে সম্বন্ধে, বরং ওই মিথ্যে গুলোকেই মনে করা হয় ধর্ম; কিন্তু ধর্মের বিরুদ্ধে একটি সত্য ও বলা যায় না। ধর্মের প্রতি পালকেরা যতো মিথ্যে কথা বলে প্রতিদিন, শুক্রবার, রোববার, ধর্মীয় জলসায়, সাধারণ মানুষ ততো কখনো বলে না।

ধর্ম এবং ধর্মের বইগুলো অলৌকিক নয়, ধর্মের বইগুলো জ্ঞানের বই ও নয়;পঞ্চম শ্রেণীর বই পড়লে ও যতোটা জ্ঞান হয়,ধর্মের বইগুলো পড়লে ততোটা জ্ঞান ও হয় না, বরং অনেক অজ্ঞানতা জন্মে। বিশ্বাস ও অজ্ঞানতা পরস্পরের জননী; জ্ঞান জন্মে অবিশ্বাস থেকে। বিশ্বাসমাত্রই অপবিশ্বাস; জ্ঞান বিশ্বাসের বিষয় নয়, জানার বিষয়। কোনো ধর্মপণ্ডিত যদি সারাজীবন ধর্মেরই বই ও তার ভাষ্য পড়ে, আর কিছু না পড়ে, সে থেকে যায় পঞ্চম শ্রেণীর শিশুটির থেকেও মূখ। ওই শিশুটি জানে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে পৃথিবী ও বিভিন্ন গ্রহ, কিন্তু ধর্মপণ্ডিত জানে পৃথিবীই কেন্দ্র; শিশু জানে সাত আসমান বলে কিছুই নেই,—ওটা টলেমির ধারণা ছিলো এবং ঢুকে গিয়েছিলো ধর্মের বইয়ে, ধর্মপণ্ডিত তা জানে না; শিশু জানে চাদ পৃথিবীর উপগ্রহ, তার কোনো পবিত্রতা নেই, ধর্মপণ্ডিত জানে চাদ পবিত্র, মাস আর বছর হিশেব করার জন্যে বিধাতা এটি সৃষ্টি করেছে। এগুলোতে সত্য নেই, রয়েছে প্রচুর মিথ্যে, ও আদিম মানুষদের ব্যাপক অপবিশ্বাস। ধর্মের বইগুলোতে রয়েছে প্রচুর ভুল, আর স্ববিরোধিতা; এবং এগুলো পরস্পর বিরোধী। বলা হয় যে ধর্মের বইগুলো বিধাতার বই, তাই সহজাত ভাবেই শ্ৰেষ্ঠ; এ-বই মানুষের পক্ষে লেখা অসম্ভব। তবে এগুলোর থেকে বহু উৎকৃষ্ট বই মানুষ লিখেছে, এবং আরো লিখবে।

ধর্ম
হুমায়ুন আজাদ।।

রুপম দাশ।।

35055045_868862390111666_595586883770122

মানুষ মানবতায় যতই উৎকৃষ্ট হয়েছে ততই সমাজ থেকে অনৈতিকতা দুর হয়েছে। মানুষের জ্ঞান, মানবতাবোধ উন্নত হবার সাথে সাথেই মানুষের নৈতিকতা উন্নত থেকে উন্নততর হয়।।

আর তাই ধর্ম নয় বরং মানবতাবোধই নৈতিকতা নির্ধারণ করে। মানুষ যত বেশী মানবিক হয় তার নৈতিকতাবোধও তত উন্নত হয়। এজন্য প্রাচীন মানুষের নৈতিকতাবোধে প্রাচীণ সমাজের বর্বরতার স্থান ছিল। কিন্তু যখন মানুষ সভ্য হতে শুরু করেছে তখন থেকে তার নৈতিকতাবোধও উন্নত হতে শুরু করেছে। কিন্তু ধর্মগুলো অপরিবর্তিত থাকে বলে এর নৈতিকতাও অপরিবর্তিত থেকেছে। কিন্তু মানুষের মানবিকতা বোধ বৃদ্ধির সাথে সাথে তার নৈতিকতাও উন্নত হয়েছে।

আজকের সভ্য উন্নততর নৈতিকতার জন্ম হয়েছে মানুষের উন্নত মানবিকতাবোধ থেকে।


মানুষের মানবতা বোধই নৈতিকতার প্রধান উৎস এবং ধারক ও বাহক।

রুপম দাশ।।

পৃথিবীর কোন শিশুই তার নিজের ধর্ম বেছে নেবার সুযোগ পায় না।।

পরিবার, এমনকি সমাজ প্রত্যেক শিশুর উপর তাদের ধর্মকে এবং তাদের বিশ্বাসকে শিশুটির উপর চাপিয়ে দেয়।।

শিশু যখন ধর্ম কি জানে না, তার আগেই তাকে শেখানো হয় সৃষ্টিকর্তা
সম্পর্কে ! যুক্তি বুদ্ধি বিচার শক্তি তৈরী হবার আগেই সে তাদের পিতা-মাতারবিশ্বাসকে বিশ্বাস করতে শুরু করে দেয় ! আর তাই শিশুর যুক্তি-বুদ্ধি বা বিচার করার ক্ষমতা তৈরী হবার আগেই সে তার পরিবারের ধর্মকে বিশ্বাস করতে শুরু করে দেয় ! আর সমাজ ও পরিবার মিলে শিশুকে আস্তিকে পরিনত করে ফেলে সে মানুষ হবার পূর্বেই। সে সারা জীবনে তার শৈশবের বিশ্বাসকে (অনেক জ্ঞানী হবার পরেও) আকড়ে ধরে বসে থাকে ! এর থেকে সে বেরিয়ে আসতে পারে না !


পৃথিবীর কোন শিশুই তার নিজের ধর্মকে বেছে নিতে পারে না ! পরিবার তাদের ধর্ম এবং বিশ্বাস সব শিশুর উপর চাপিয়ে দেয়,
যখন শিশু অসহায় অবস্থায় থাকে !


আর এজন্যই পৃথিবীতে আস্তিকে ভর্তি ! হাতে গোনা কয়েকজন সেই শৈশবের মিথ্যা এবং অন্ধ বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারে ! তাই পৃথিবীতে নাস্তিকের সংখ্যাটা এত কম l


যদি শিশুকে তার ধর্ম বেছে নেবার সুযোগ করে দেয়া হতো তবে দেখা যেত পৃথিবীতে আস্তিকের সংখ্যা বেশি নাকি নাস্তিকের ?

প্রত্যেক শিশুকে প্রথমে মানুষ হতে দিতে হবে l তার যুক্তি-বুদ্ধি, বিচার করার ক্ষমতা তৈরী হতে দিতে হবে l তাকে সব ধর্ম সম্পর্কে সমান ধারণা দিতে হবে l সব ধর্মের ভালো এবং খারাপ দিক তার কাছে তুলে ধরতে হবে নিরপেক্ষ ভাবে l এবং তারপর তাকে তার ধর্ম বেছে নিতে বলতে হবে l
তবেই মানুষ ধর্ম বিশ্বাসের যে সুযোগ সেটা পাবে l তা না হলে পৃথিবীর কোন মানুষই প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে না l

সব মানুষ বর্তমানের মতই অন্ধ-বিশ্বাসী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন হবে l
বাস্তবতা দেখেও সে কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না যে কল্পনার জগত প্রত্যেক মানুষকে শৈশবে চাপিয়ে দেয়া হয় l

বিশ্বাস করার মানবিক অধিকার প্রত্যেক মানুষকে দেয়া মানবিকতারই দ্বায়িত্ব।।

আজ থেকে কোন শিশুকে তার যুক্তি-বুদ্ধি, এবং বিচার করার ক্ষমতা তৈরী হবার আগে কোন ধর্মকে তাদের উপর চাপিয়ে দেব না l তাদের যুক্তি-বুদ্ধি এবং বিচার করার ক্ষমতা তৈরী হয়ে গেলে তাদেরকে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে l সব ধর্মের ভালো এবং খারাপ দিক তার কাছে তুলে ধরতে হবে l এবং সবশেষে তাকে তার ধর্ম বেছে নিতে বলা হবে l এবং সে তার ধর্মকে বেছে নিতে যত সময় চায় সেটাও তাকে দিতে হবে l তারপর সে যে ধর্ম বেছে নেবে সেটাই হবে তার প্রকৃত বিশ্বাস l একমাত্র এভাবেই তার বিশ্বাস করার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে l
মানুষের; সব মানুষের উচিত শিশুকে তার বিশ্বাস করার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।

রুপম দাশ।।

পৃথিবীর কোনো ধর্মই মানবিক নয় ! প্রত্যেক ধর্মই সাম্প্রদায়িক।

আপনি এমন কোনো ধর্ম


পাবেন না যেখানে ভিন্ন ধর্মীয় মানুষদের প্রতি মানবিকতা দেখানো হয়েছে l বরং জন্মের পর থেকেই শিশুকে বিধর্মীদের ব্যাপারে নেগেটিভ ধারণা দেয়া হয়।। 


অর্থাৎ বিধর্মীরা খারাপ, নরকের অধিবাসী, কাফের , অবিশ্বাসী, নাস্তিক ,
ওরা খারাপ l এই মিথ্যা ধারণা নিয়েই একটা শিশু বড় হয় আর সারা জীবন বিধর্মীকে খারাপ হিসেবেই দেখে l আর প্রত্যেক ধর্মই এই শিক্ষা দেয় l এবং সব ধার্মিক হয় প্রচন্ড পরিমানে সাম্প্রদায়িক।।

প্রত্যেক ধর্মই যদি মানবিক শিক্ষা দিত তবে সাম্প্রদায়িক হিংস্রতা থাকত না পৃথিবীতে l বরং সাম্প্রদায়িকতার হিংস্র থাবা বার বার আঘাত হানে এই মানবিক পৃথিবীতে।

আজ পৃথিবীর যেখানেই তাকাবেন দেখবেন সব দেশে সব ধর্মের সংখ্যা গরিষ্ঠ সাম্প্রদায়িক জনগোষ্টি সংখ্যা লগিষ্ঠ অন্য সাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠির উপর হামলা করে ও হত্যা কান্ড চালায়।

এই যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলছে সারা পৃথিবী জুড়ে এর মূলে দায়ী কিন্তু সব ধর্ম; যেটা সবসময় সাম্প্রদায়িক হয় l এটা কিন্তু অস্বিকার করার উপায় নেই যে সাম্প্রদায়িকতা ধর্মের দ্বারাই সৃষ্ট।।


আর তাই একটা সভ্যতার দরকার হয়ে পরেছে এই সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে l যেটা পুরো পৃথিবীকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসবে, পৃথিবীর সব ধর্মের সব মানুষকে পরস্পরের সাথে ভাতৃত্বের সম্পর্কে l আর সেখানে মানবিকতার শিক্ষা দেয়া হবে , পরস্পরকে মানবিক ভালবাসায় গ্রহণ করার শিক্ষা দেয়া হবে। ফলে সাম্প্রদায়িকতা নামে যে ভয়ংকর মানুষিক বিকৃতির শিক্ষা মানুষকে দিয়ে এসেছে এতদিন ধরে সব ধর্ম মিলে; সেটা আর থাকবে না পৃথিবীতে l আর এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই তৈরী হয়েছে পরস্পরের বন্ধুত্বের সম্পর্কের একটা ধর্ম আর
এটাই হচ্ছে মানবিকতা ধর্ম।।

এটা কোনো ধর্ম থেকে নেয়া হয়নি l কারণ কোনো ধর্মই মানবিক নয় l সব ধর্মই সাম্পদায়িক l আর সাম্প্রদায়িক ধর্ম গুলোর বিভীষিকাময় আগ্রাসন থেকে বাচার জন্যই তৈরী হয়েছে মানবিকতা ধর্মের।

রুপম দাশ।।

অন্ধ-বিশ্বাসী ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন আস্তিকগুলো সত্যের বিরোধিতা করে এসেছে এবং এখনো করছে।


কিন্তু তাতে সত্য কখনো মিথ্যে হয়ে যায় নি l বরং সত্য সবসময় সত্যই থেকেছে চিরকাল। 


আর তাই আজ যারা বিজ্ঞানের সত্যকে অস্বীকার করতে চাইছে তাদের মিথ্যে ধর্মকে টিকিয়ে রাখতে; তারা কখনই তাদের মিথ্যে দিয়ে সত্যকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। বিবর্তনবাদ সত্যি ছিল সতিই থাকবে। 
আবার স্টিফেন হকিংস যখন বলছে যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই এটি মানুষের কল্পনা ঠিক তখন এই আস্তিকগুলোই তার বিরোধিতা করছে।

বিজ্ঞান বলছে যে বিগ ব্যাং-এর আগে সময় ছিল না। অর্থাৎ সময় তৈরিই হয়নি বিগ ব্যাং-এর আগে। 


আর তাই কোন সৃষ্টিকর্তা থাকা সম্ভব নয় l


যদি সময়ই না থাকে তবে সৃষ্টিকর্তা থাকবে কিভাবে ?

সৃষ্টিকর্তা থাকার জন্য তো সময় থাকতে হবে। যদি সময় না থাকে অর্থাত সময় তৈরিই না হয়ে থাকে তাহলে সৃষ্টিকর্তাও থাকতে পারবে না। 
আর তাই কোন সৃষ্টিকর্তা থাকা সম্ভব নয়। 


যদি সময়ই না থাকে তবে সৃষ্টিকর্তা থাকবে কিভাবে।

সৃষ্টিকর্তা যদি বিশ্বজগত তৈরী করে থাকে তবে তাকে সময় অতিবাহিত করে এসব করতে হবে l আবার যদি সৃষ্টিকর্তা বিগ ব্যাং-এর আগে থেকে বিরাজমান থাকে তবুও তাকে সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে l
ফলে সময় ছাড়া সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারবে না l আর তাই সৃষ্টিকর্তা থাকাও সম্ভব নয় l


অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই। ঠিক এই কথাটিই বলেছিল স্টিফেন হকিংস। ফলে অন্ধ-বিশ্বাসী ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন আস্তিকগুলো সমালোচনা শুরু করে দিল তার বিরুদ্ধে। 


এবারেও যে এই আস্তিক গুলো সত্যকে থামিয়ে দিতে পারবে না বরং সত্যই যুগ যুগ ধরে প্রতিষ্ঠিত থাকবে সেটা অতীত এবং বর্তমানের বিজ্ঞানের সভ্যতাই প্রমান করে।।

বহু ধর্ম যুগে যুগে বিলীন হয়ে গিয়েছে। আর বহু ধর্ম বর্তমানে বিলীন হয়ে যাচ্ছে l কিন্তু বিজ্ঞান তার সত্যের সর্বময় ক্ষমতা নিয়ে দাড়িয়ে আছে বীর দর্পে।

কেউ বিজ্ঞানের সত্যকে থামিয়ে রাখতে পারেনি আর ভবিষ্যতেও কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না l সত্যি চিরকাল সত্যি হয়েই থাকবে l
ফলে যারা স্টিফেন হকিংস-এর সমালোচনা করছে এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছে তাদের দুরভিসন্ধি কখনই সফল হবে না বরং মিথ্যে বিলুপ্ত হয়ে সত্যই প্রতিষ্ঠিত হবে।

যদি স্টিফেন হকিংস সত্যি কথা না বলে, মিথ্যে সৃষ্টিকর্তার পক্ষে কথা বলতো তাহলে এই অন্ধ-বিশ্বাসী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন আস্তিক গুলোই তাকে পুজো করত l কিন্তু সে সত্যিটা বলায় তারা আজ তাকে নিয়ে সমালোচনা করে চলেছে l


কিন্তু তাতে কখনই তাদের কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা এবং মিথ্যে ধর্মগুলো সত্যি হয়ে উঠবে না l বরং বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা এবং মিথ্যে ধর্মগুলো সত্যের কঠিন আঘাতে বিলীন হয়ে যাবে l সত্য চিরকাল সত্য ছিল ভবিষ্যতেও সত্যই থাকবে।।

বিলুপ্ত হবে মিথ্যে, এবং বিলুপ্ত হবে মানুষের তৈরী কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তা এবং মিথ্যে ধর্মগুলো।।

রুপম দাশ।।

বিজ্ঞান কিছু আবিষ্কার করলেই ধার্মিকরা বলে থাকে সেটা তাদের ধর্মগ্রন্থে আগেই বলা ছিল। ধর্মগ্রন্থ গুলোকে অনেক খুজা খুজির পর তাদের ইচ্ছা মত অনুবাদ করে বলে এইতো এইখানেই বলা আছে।
যেমনঃ তারা দাবী করে থাকে_ বিগ ব্যাগ, ব্লাক হোল বিজ্ঞানের সব কিছুই আছে তাদের ধর্মগ্রন্থে।


আচ্ছা যখন বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেনি পৃথিবী গোল, সূর্য পৃথিবীর চার দিক ঘুরে না! তখনও কি তাদের ধর্মে গ্রন্থে এই সকল বিষয় লিখা ছিল? নাকি এর অর্থ যুগের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা বিজ্ঞান যদি আবার দাবি করে পৃথিবী সমতল তাহলে কি তারা আবার বলবে এটা আগেই বলা ছিল আমাদের ধর্মগ্রন্থে।


আমার একটা সহজ প্রশ্নের কি উত্তর দিতে পারবে তারা, এখন বিজ্ঞান যা আবিষ্কার করেনি ভবিষ্যতে করবে এমন কিছুকি এখন বলতে পারবে যা বিজ্ঞান আবিষ্কার করার আগেই ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে?


আমি জানি পারবে না, কারণ তারা মিথ্যাবাদী । মিথ্যার উপর টিকে আছে ধর্মগুলো।

লিখেছেন@Saym Ahmed.

ক্যাফেটেরিয়া নামক পেইজ থেকে নেওয়া।।

রুপম দাশ।।

মুক্তচিন্তা একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গী।


সচেতনভাবে মুক্তচিন্তার প্রয়োগকে বলে মুক্তচিন্তন এবং এর অনুশীলনকারীদের বলে মুক্তমনা।


বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরীক্ষিত ও প্রামান্য তথ্য, যুক্তিবিদ্যার ভিত্তিতে গ্রহনযোগ্য উপাত্ত এবং প্রমানযোগ্য যুক্তির আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়া ও সেই সিদ্ধান্তের নিস্পত্তি করতে পারার দক্ষতা হল মুক্তচিন্তা।

নিজ মতামত গঠণের ক্ষেত্রে মুক্তচিন্তার অনুশীলনকারীরা কোন প্রথা, বিশ্বাস, আচার, স্বার্থ বা কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে শুধুমাত্র নির্মোহতা ও নৈর্ব্যাক্তিকতাকে প্রাধান্য দেয় বলেই তারা মুক্তমনা। ধর্মানুসারীদের পক্ষে ধর্মমোহ থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব হয়না বলেই তারা মুক্তমনা নয়। কেবলমাত্র মননের পরিশীলন, মুক্তবুদ্ধির ক্রমাগত চর্চা আর যুক্তিনিষ্ঠাই পারে মুক্তচিন্তার দক্ষতাকে ঋদ্ধ করতে।

অত্যন্ত আশাপ্রদ কথা এই যে, বাংলাদেশেও মুক্তচিন্তকদের সংখ্যা বাড়ছে; যদিও সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের আলোকে বাংলাদেশের মুক্তমনাদের নিয়ে আমার দুটি নিন্দাসূচক অপ্রিয় মন্তব্য আছে,

(১) আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চায়, জনমুক্তির আদর্শ বাস্তবায়নে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে, কবিতায়, নাটকে, গানে, এমনকি কথাসাহিত্যে বা মঞ্চনাট্য এমনিক লোকসংস্কৃতির চর্চায় কথিত মুক্তমনাদের নেই সক্রিয় কোন অংশগ্রহণ; ফলে শুধুমাত্র ধর্মীয় নির্দেশনা ও ধর্মীয় সংস্কৃতিকে উপহাস করা ছাড়া, অসুস্থ বানীগুলোর নিরানন্দ ব্যবচ্ছেদ করা ব্যতীত আর কোন সৃজনশীল কর্মকান্ডে তাদের উপস্থিতি শূন্য। 


পরিশীলিত মননের চর্চার অভাবে মুক্তমনা দাবীধারি মানুষগুলোর এই ধর্ম-বিরোধিতায় উৎসাহিত হয় ভিন্ন ধর্মের মৌলবাদীরা। ধর্মবিরোধিতার আড়ালে জাতিগত বিদ্বেষও পায় প্রশ্রয়, কিন্তু তাতে তাঁদের খুব ভাবান্তর দেখিনা।

(২) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় কথিত মুক্তমনাদের আগ্রহ আছে বলে প্রায়ই শুনি, কিন্তু তারও উদাহরণ মেলা ভার!

এই যে তাঁরা নিজেদের অসাম্প্রদায়িকতার ধ্বজাধারী বলে দাবী করে আসছেন, তাঁরাই আবার সম্প্রদায়, সাম্প্রদায়িকতা ও অসাম্প্রদায়িকতাকে সংজ্ঞায়িত করতে ও তার পার্থক্য নিরুপন করতে নিদারুনভাবে ব্যর্থ। গুরুত্বপূর্ণ অভিধাগুলোকে সংজ্ঞায়িত করতে ব্যর্থ বলেই তাঁদের দেখিনা সাম্যের কথা বলতে, সমাজ বদলের কথা বলতে, নারীর অধিকার নিয়ে ভাবতে, পাহাড়ের জনগোষ্ঠীর উপর হয়ে চলা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, সম্প্রীতি ও সহনশীলতার কথা বলতে, ঐক্যের কথা বলতে, সমাধানের কথা বলতে। 


নিরবে, নিভৃতে কেবল আপ্তবাক্যের উচ্চারনই হয়ে উঠেছে ভরসা, তাঁরাও হয়ে পড়ছেন স্বল্প বিদ্যায় ফাঁপা বুলিসর্বস্ব একদল নিন্দুকে।

জ্ঞান, অনুভব, সহমর্মিতা ও সচেতনতা - এর সমন্বয়ই সংবেদনশীলতা; কথিত বঙ্গীয় মুক্তমনারাও পরিণত হচ্ছেন অসংবেদনশীল একদল মানুষে, কারন স্পষ্টভাবেই তাঁদের কর্মকান্ডও অধুনা সাম্প্রদায়িকতা দোষে দুষ্ট। ধর্মান্ধদের মতই তাঁরাও পরমতের কোন তোয়াক্কা করেননা। 


গা জোয়ারি ভাব যে যুক্তি নয়, অনেক ক্ষেত্রেই সেটা তাঁরা বুঝতে অসমর্থ; যুক্তির পথ ছেড়ে অস্বীকার, অগ্রাহ্যতা, বর্জন, বিদ্বেষ আর অননুমোদনকে এঁরা মুক্তচিন্তার ভিত্তি বলে মেনে চলেন;কিন্তু হায়, তাঁরা ভুলে যান, অশিক্ষা থেকে উদ্ভুত সিদ্ধান্ত, কেবল মাত্র কুশিক্ষাকেই লালন করে।

দুর্বিনীত এই অহংবোধ মুক্তচিন্তার চর্চাকেই দিচ্ছে পিছিয়ে; সময় এসেছে ভাব, ভাষা, আচরণে পরিশীলিত হওয়ার, নতুবা ধর্মান্ধরাই হয়ে উঠবে নিয়ন্ত্রক।

লেখকঃCharbak Qazi.
লেখাটি ক্যাফেটেরিয়া নামক পেইজ থেকে নেওয়া।।

আদিম মানুষের জীবন-জগৎ সম্পর্কে পরিপূর্ণ কিংবা বিশ্লেষণী জ্ঞান না থাকার দরুন তাদের মধ্যে প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য, বন্য পশুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য, পেটপুরে কিছুটা খাবার সংগ্রহের নিশ্চয়তা লাভের উদ্দেশ্যে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রাক-ধর্মীয় চেতনা বিস্তার লাভ করে।

প্রাক-ধর্মীয় চেতনার ধারণার মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ সময়ে আত্মার ধারণা থেকে টোটেমবাদ, টোটেমবাদ থেকে সর্বপ্রাণবাদ, সর্বপ্রাণবাদ থেকে সর্বেশ্বরবাদ, সর্বেশ্বরবাদ থেকে বহুঈশ্বরবাদ-এ মোড় নিয়েছে, সমন্বয় ঘটেছে; তবে এগুলো সবসময় সবজায়গায় কখনো একরৈখিক ছিল না। স্থান-কাল-পাত্রভেদে পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে পরিবর্তিত হয়েছে, সমন্বিত হয়েছে।

ধীরে ধীরে বহুঈশ্বরবাদ থেকে আবার একেশ্বরবাদে পৌঁছেছে।

 

এখন সময় এসেছে ধর্মীয় একেশ্বরবাদকে ছেঁটে ফেলে নিরীশ্বরবাদের দিকে যাত্রা শুরু করার। এগুলো আজ নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানের গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত সত্য।


রুপম দাশ।।

ধর্মগুলোই শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে পৃথিবীকে অশান্তির নরকে পরিণত করছে।কারণ তারা নিজেদের ধর্মের সমালোচনা সহ্য করতে পারেনা,অন্যের মতাদর্শকে গুরুত্ব দিতে জানেনা,এবংঅন্য মানুষকে সম্মান জানাতে ও এরা শিখেনি।এজন্য পৃথিবীতে এসব ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষগুলো পৃথিবী জুড়ে অশান্তি ঘটিয়েছে এবং ঘটিয়েই চলেছে।

পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠান নামে এরা পৃথিবীর অশান্তি সৃষ্টিকরার প্রধান কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে সব সময়ই।তাই তাদের মতাদর্শকে বিলুপ্ত না করে পৃথিবীতে কখনই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

রুপম দাশ।।

ধার্মিকদের নৈতিকতাবোধ খুবই শোচনীয়। বহু ধর্ম রয়েছে পৃথিবীতে। একটি সরল প্রশ্ন জাগতে পারে যে বিধাতা যদি থাকেন, তিনি যদি একলাই স্রষ্টা হন, তবে তিনি কেনো এতো ধর্ম পাঠালেন? তিনি একটি ধর্ম পাঠালেই পারতেন, এবং আমরা পরম বিশ্বাসে সেটি পালন করতে পারতাম। তিনি তা করে নি কেনো? তবে কি তিনি একলা নন? ওই অলৌকিক জগতে ও কি রয়েছেন বহু প্রতিদ্বন্দ্বী, যারা মানুষের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্যে ব্যগ্র? তাদের কেউ হিন্দুর, কেউ ইহুদির, কেউ খ্রিস্টানের, কেই মুসলমানের, এবং কেউ ঙ-র, কেউ চ-র, কেউ ছ-জ-ঝর? যদি তিনি একলা, তাহলে এতো ধর্ম পাঠিয়ে কেনো তিনি বিভ্রান্ত করছেন মানুষকে? শুধু বিভ্রান্ত ক’রেই তিনি সুখ পাচ্ছেন না; তিনি মানুষের মধ্যে তৈরি করেছেন বিভাজন—কাউকে করেছেন ইহুদি, কাউকে খ্রিষ্টান, কাউকে মুসলমান, কাউকে হিন্দু।কেনো এদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন শক্রতা, এবং লিপ্ত করেছেন পারস্পরিক হত্যাকাণ্ডে? আরো নানা প্রশ্ন জাগতে পারে। তিনি কেনো শুধু এক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেন? তিনি কেনো একজনের কাছে বাণী পাঠান? তিনি কেনো শুধু প্রাচীন কালেই দেখা দিতেন? কেনো তিনি দেখা দিচ্ছেন না আধুনিক কালে? আধুনিক কাল নিয়ে তার বা তাদের কোনো উদ্বেগ নেই? কেনো তিনি একদলকে গরু খেতে নিষেধ করেন, আরেক দলকে খেতে বলেন; কেনো তিনি একদলের জন্যে নিষিদ্ধ করেন মদ্য, এবং সিদ্ধ করেন আরেক দলের জন্যে? কেনো তিনি সর্বশক্তিমান হয়েও শক্তির প্রকাশ ঘটান না? তার ক্রিয়াকলাপ কেনো এতো বিস্ময়কর, অস্বাভাবিক, এবং সম্পূর্ণরূপে অবিশ্বাস্য?এসব সরল প্রশ্নের উত্তর ধর্মের বইগুলোতে পাওয়া যাবে না।

হুমায়ুন আজাদ।।

রুপম দাশ।।

মানুষ যখন ধর্মে আচ্ছন্ন হয়ে যায় তখন সে ধর্মের এসব অনৈতিকতাগুলো দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ফলে সে অনৈতিক মানুষ হয়ে যায়। এজন্যই ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ধার্মিকরা পরস্পরকে ঘৃণা করে এমনকি একে অন্যকে হত্যা করার জন্য উঠে পরে লাগে। আস্তিকদের ধর্ম দ্বারা অনৈতিকতা বোধ মানুষ ভেদে ভিন্ন রকম হয়। কারণ হলো ধর্মগুলো টিকে থাকে বিশ্বাস বা অন্ধবিশ্বাসের উপর ভর করে। ফলে ধর্মের প্রতি যে বেশী নির্ভরশীল থাকে সেই ধর্মের অনৈতিকতা দ্বারা বেশী আক্রান্ত হয়। ফলে সে বেশী পরিমাণে ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের ঘৃণা করে এবং তাদের হত্যার জন্য বেশী উদ্গ্রীব থাকে। এজন্যই মৌলবাদীদেরকে দেখা যায় তারা বিধর্মীদেরকে বেশী ঘৃণা করে এবং বেশী করে বিধর্মীদের প্রতি আক্রমনাত্বক হয়ে উঠে। যেমন যেসব ধার্মিক সামাজিক মূল্যবোধ সম্পন্ন হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের সাথে মেলামেশা করে, তারা স্বাভাবিক ভাবেই সব ধর্মের মানুষদের প্রতিই একই সহমর্মিতা অনুভব করে। কিন্তু যারা সব ধরণের মানুষের সাথে মেলামেশার সুযোগ পায় না এবং শুধু এক ধর্মের অনুসারীদের সাথেই মেলামেশা করে থাকে তারাই ধর্মের দ্বারা বেশী আক্রান্ত হয়ে ধর্মের অনৈতিকতা দ্বারা বেশী আক্রান্ত হয়। ফলে তারাই মৌলবাদী হয়ে উঠে। এবং ভিন্ন ধর্মের মানুষদের উপর অত্যাচারী রুপে আবির্ভূত হয়।
অর্থাৎ ধর্মই মানুষকে প্রাচীণকালের নিকৃষ্ট নৈতিকতার মানুষে পরিণত করে।


বিভিন্ন ধর্মের নৈতিকতা বোধ বিভিন্ন রকম। কারণ ধর্মের উৎপত্তি ঘটেছে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। ফলে যে ধর্ম যে সময়টিতে উৎপন্ন হয়েছে সেই ধর্মটি সেই সময়ের নৈতিকতা ধারণ করেছে এবং সেই নির্দিষ্ট নৈতিকতাকেই কাল ক্রমে বহন করে চলেছে। কিন্তু কালক্রমে মানুষ উন্নত থেকে উন্নততর হয়েছে। সেই সাথে মানুষের নৈতিকতাও উন্নত থেকে উন্নততর হয়েছে। কিন্তু ধর্মগুলো সময়ের সাথে সাথে উন্নত হয়নি। বরং ধর্ম যেহেতু স্থবির এবং পরিবর্তনহীন তাই ধর্মের নৈতিকতা বোধও পরিবর্তনহীন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ উন্নত হয়েছে এবং সেই সাথে তাদের নৈতিকতা বোধও উন্নত হয়েছে। আর এজন্যই দেখা যায় ধর্মই বর্তমানে প্রাচীণ অনৈতিকতাগুলোকে বহন করেছে এবং তা দ্বারা বর্তমান মানুষকে আক্রান্ত করেছে। ফলে আধুনিক সমাজে বাস করেও কিছু মানুষ সেই প্রাচীন বর্বরতাগুলো চর্চা করে চলেছে। যেমন ধর্ম যুদ্ধকে বৈধতা দিয়েছে কিন্তু আধুনিক নৈতিকতাবোধ যুদ্ধকে অনৈতিক বর্বর মনে করে। ধর্ম পশু হত্যা, নারী অবমাননাকর অনৈতিক ধারণাগুলোকে বৈধতা দিয়েছে। অথচ আধুনিক সমাজ পশু হত্যা বা নারী অবমাননাকর ধারণাগুলোকে অনৈতিক মনে করে এবং পশুহত্যাকে বর্বর প্রথা মনে করে ও নারীর সম-অধিকার দেওয়াকে মহৎ মনে করে। কিন্তু ধর্ম মতে পশুহত্যা বৈধই শুধু নয় বরং মহৎ কাজ এবং নারীর সম-অধিকার মহা পাপের কাজ। অর্থাৎ ধর্মই প্রাচীন অমানবিক, বর্বর, মানবিকতা বহির্ভূত অনৈতিক কাজগুলোকে ধারণ করে বহন করে চলেছে যুগ যুগ ধরে। ফলে ধর্ম কখনই আধুনিক নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং অপরিবর্তনীয় ধর্মগুলো প্রাচীণ বর্বর রীতিনীতিগুলোকেও নৈতিকতার নামে বহন করেছে।

রুপম দাশ।।

প্রায় সকল মানব সমাজেই ঈশ্বর অতি আদরের উপকরণ। রাজ-দন্ডের মালিক চিরদিনই ঈশ্বরের একান্ত সেবক, রক্ষক ও প্রমোটার। তাই সাধারন মানুষের চিন্তাধারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যাওয়া কখনই সহজ ছিল না। 


প্রাচীনকালে যখন ধর্মীয় আদি পুস্তক রচিত হয় তখন এর শত্রু-মিত্র-নায়ক সকলেই ছিল রক্ত মাংসের মানুষ। কালে কালে এই গ্রন্থগুলোর চরিত্রগুলো যতই বিকশিত হতে থাকে ততই তার নায়কেরা হতে থাকেন মহান চরিত্র আর শত্রুপক্ষ পরিণত হয় রাক্ষস খোক্কস কিংবা ভূতুমের রূপকথায় জিব্রাইল, শয়তানের মত। মূলত এরা প্রাচীন লেখকদের হাতে পেয়েছেন অর্ধদেবত্ব আর মধ্যযুগের লেখকদের হাতে পেয়েছেন পূর্ণ দেবত্ব কিংবা সর্বশক্তিমানের খেতাব। এর ফলে আল্লা-মোহাম্মদ-বান্দর-ভগবান সকলেই হয়ে উঠেন বেসুমার অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।


তবে এইসকল গ্রন্থে শুধু একজন মাত্র থেকে যান রক্ত-মাংস-আবেগের মৌলিক মানুষ। সেটা হলো লেডিস কারেক্টর। রামায়নে বাপে ফেলে দেয়া- শত্রুতে টেনে নেয়া- স্বামীতে তাড়িয়ে দেয়া সীতা... অথবা মহাভারতের দ্রৌপদী অথবা আয়েশা ধর্ষণ অথবা...।

সাধারন মানুষ ছোট খাটো মিথ্যা বলতেই ভয় পায় , যদি বলে ফেলেও খুব তাড়াতাড়ি তা ধরা খেয়ে যায়। কিন্তু কোন লোক যদি প্রকান্ড মিথ্যা কথা বলে তাহলে সাধারন মানুষ তা বিশ্বাস করার আগে প্রচন্ড রকম চমকে যায়। আর তাদের সামনে দুটো পথ মাত্র খোলা থাকে – এক. হয় লোকটাকে পাগল বা উন্মাদ সাব্যাস্ত করা, অথবা দুই. তার কথা বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করা। আর একবার যদি কিছু লোক তাকে বিশ্বাস করে বসে তাহলে তাদের পক্ষে লোকটার যাবতীয় সবকিছুই বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করতে হবে অন্ধের মত। তাই কোরাণে মোহাম্মদ এগুলো নিয়ে প্রশ্ন না তুলতে অনেক নির্দেশ পয়দা করেছেন। নিজে বিয়ে করে দাসী বাদী রেখেছেন আর এর বৈধতা দিতে শত শত আয়াত বানিয়েছেন।

এদিকে থেকে ঋষি ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রে কিন্তু বাধা ছিলই না। আমি খুব কম ঋষিকে সরাসরি কোনো বামুন কন্যা বিয়ে করতে দেখেছি। ঋষিরা বরং পুরো স্বাধীন ছিলেন স্ত্রী গ্রহণ করতে। বিয়ের ক্ষেত্রে জাতপাক কাস্ট এগুলা আরো বহু পরের সংযোজন। 


অন্যদিকে আয়েশার লজ্জা ঢাকতে মোহাম্মদ যেমন কোরাণে অনেক বোরকা হিজাব পড়িয়েছেন তেমনি কৃত্তীবাস বহু অলৌকিক কল্পকাহিনীর হিজাব-বোরখাও পড়িয়েছেন রাম অবতারের বৌয়ের ইজ্জত ঢাকার জন্য। ভগবানের বৌয়ের ইজ্জত রক্ষার দরকার!!! মহান কাজ !

এই সকল কারিগরিই হয়েছে মূলত ভগবান রামের ঘরের ইজ্জত রক্ষার জন্য; সীতার জন্য না। কারণ নারীর জাত তার স্বামীর জাতেই নির্ধারিত হয়; বামুনে বিয়ে করলে বামনি; চাষায় করলে কিষাণী আর চাড়ালে করলে চণ্ডালিকা... । সীতাকে ভরতের কাছে দান করে দিতেও আমার আপত্তি নাই; কথায় কথায় রামের মুখে এই রকম কথা দিয়ে রামায়ণে সীতার যে জীবনী শুরু হয় সেটা গিয়ে শেষ হয় সীতারে কুত্তায় চাটা ঘি বলে। আদি পুস্তকের পরতে পরতে সীতার এইরকম গঞ্জনা-অপমান গ্রন্থিত করলেও বাল্মিকী অন্তত সীতার আত্মসম্মানরে এক চুল পরিমাণও নীচে নামাননি।


এই কাজটা করছেন মূলত অবতারবাদী ভক্তের দল। তারা রাবণের ছোঁয়া থেকে রামের স্ত্রীর ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে রীতিমতো নরক ঢেলে দিছেন সীতার আত্মমর্যাদার উপর।

একজন ধর্ষিতা নারীর স্বামীকে ভগবান বানানো তো ভক্তের জন্য কঠিন। তাই ভক্তরা প্রথম রাবণের উপর রম্ভা কাহিনি চাপিয়ে ব্রহ্মার অভিশাপ যোগ করে বুঝাইতে চাইলেন যে নিজের জানের ভয়েই রাবণ সীতারে ছুঁতে পারে নাই। সতীত্ব ছাড়া নারীর সম্পদ নাই; স্বামী ছাড়া নারীর গতি নাই; এই কনেসেপ্টে বিশ্বাসী সকলেই সীতার মাথা নত করে তারে নিয়া তুলেছেন একটার পর একটা পরীক্ষা। ব্যক্তি সীতার দিকে কেউই তাকায়নি। সীতা অনেক মুখরা প্রত্তুৎপন্নামতী নারী হলেও দরকারি কথায় কিন্তু সীতা নির্বোধের মতো নিশ্চুপ থাকেন।

রাবণে বান্দরে ব্রাহ্মণে সকলেই যখন সীতারে অপবিত্র বলছেন এবং স্বয়ং সীতারাই যখন মেনে নেন তখন আমি আর বিষয়ের গভীরে যাব না।কথাগুলো বলছিলাম এই কারনে যে, একটি মেয়ে ধর্মবিশ্বাসী হয়ে কীভাবে নারীবাদী হয় আমার মাথায় ঢুকে না। আল্লা আর তার রাসুল নারীকে মানুষ হিসেবে তো স্বীকারই করেনি। ভোগপণ্য শস্যক্ষেত্ররা কী করে নারীবাদী হবার অবকাশ পায়? এটি ধর্মদ্রোহীতা নয়? এসব ধর্মদ্রোহীরা কি সুবিধেবাদী, জেগে ঘুমায় নাকি কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানায়?

লিখেছেন : Anthoni Dcosta

ক্যাফেটেরিয়া নামক পেইজ থেকে কপি করা।।

রুপম দাশ।।

bottom of page