top of page
38057342_255354438615161_504272084453556

এই জাগতিক ব‍্যবস্থায় আমরা পূর্ণ চেতনার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। আমরা এখন মানব -চেতন -স্তরে অবস্থান করছি। লক্ষ্যে পৌঁছাতে, আমাদের সামনে এখনো অনেক পথ বাকি। এই চেতনা বিকাশের পথের মাঝামাঝি কোনো একজায়গায় দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ পথের জ্ঞান--- অসম্ভব।

জীব কিন্তু সরাসরি সেই অস্ফুট- চেতন- স্তর থেকে পূর্ণ চেতনার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে না। ঈশ্বর তার নিজের চেতনা বিকাশের সাথে সাথে, একেরপর এক ক্রমোন্নত ও ক্রমবিকশিত জীব সৃষ্টির মধ্য দিয়ে--- মানব- চেতন -স্তর পর্যন্ত, সে তার সৃষ্ট জীবকে ক্রমবিকাশমান চেতনার পথে নিজেই অনেকটা পথ এগিয়ে নিয়ে গেছে। তারপর, সে এমন একটা ব‍্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যাতে এই মানুষ কর্ম ও ভোগের মধ্য দিয়ে--- জ্ঞান- অভিজ্ঞতা- চেতনা লাভের মধ্য দিয়ে, এবং আত্মবিকাশ চর্চার মধ্য দিয়ে পরবর্তী চেতন- স্তরগুলি নিজেই ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে সক্ষম হতে পারে।

(আত্ম- ধ‍্যান -লব্ধ 'মহাবাদ' দর্শন থেকে। আরও ভালভাবে উপলব্ধি করতে, পড়ুন--- 'মহাবিশ্ব সৃষ্টিরহস্য উন্মোচন')

তোমরা অন্ধবিশ্বাস ত‍্যাগ ক'রে সত্যপ্রিয় হও।
প্রকৃত জ্ঞানাকাঙ্খী হও।
মানব জীবনের মূল লক্ষ্য~
আত্মবিকাশ লাভে ব্রতী হও।
37989601_146973166192813_740846352065363

মহামানস সমীপে একদিন এক ভক্ত (শিষ্য নয়) তাঁকে বললেন,

--- ঈশ্বরে আমার পুরোপুরি বিশ্বাস আছে। 
--- কি রকম? মহামানস জিজ্ঞাসা করলেন।
--- আমি মনেকরি, গাছের পাতাটাও তাঁর ইচ্ছাতেই নড়ে। তিনি যা করান আমি তা'ই করি। ভক্তের উত্তর।
--- তাই বুঝি! তাহলে তোমার বিশ্বাসে তো দেখছি, কোনো খাদ নেই।
ভক্তটি মাথা কাত করে সম্মতি জানিয়ে বলেন, 
--- হ‍্যাঁ, আমি তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি। 
তখন মহামানস বলেন, 
--- আচ্ছা, তাহলে তুমি পাপ ---পূণ্য এসবে বিশ্বাস করো? 
--- হ‍্যাঁ, তা তো করিই। 
--- সেটা আবার কিরকম হলো! --- এতো বৈপরীত্য কেন?
ভক্ত মহামানসের কথা ঠিক মতো বুঝতে না পেরে, অবাক দৃষ্টিতে হতভম্ব হয়ে বলেন,
--- কেন, পাপ -পূণ্যের কথা তো সব ধর্মগ্রন্থেই আছে!? 
--- হ‍্যাঁ, তা' আছে বটে! তাই বলে, তুমি কি তা' নির্বিচারেই গ্রহণ করবে!?
ভক্ত নিশ্চুপ। তখন মহামানস বললেন,
--- আর, ধর্মগ্রন্থের কথা তো এখানে আসছে না। এ' হলো তোমার নিজস্ব বিশ্বাসের কথা। 
--- হ‍্যাঁ, তা' তো বটেই। কিন্তু....
--- দেখো, তুমি যেমন বলছ, ঈশ্বরকে তুমি পুরোপুরি বিশ্বাস করো। তাঁর ইচ্ছাই তোমার ইচ্ছা, তাঁর ইচ্ছাতেই তোমার কর্ম। তাহলে, সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে বিচার করলেই বুঝতে পারবে, তোমার কর্মের জন্যে তুমি দায়ী হতে পার না। তোমার কর্মফলের জন্য পাপ বা পূণ্য কিছুই তোমার প্রাপ্য নয়। 
ভক্তটি কিছুক্ষণ গুম হয়ে থাকার পর, প্রণাম করে বললেন, 
--- এই জন‍্যেই তো আপনার কাছে আসি।

(সঙ্গে দেওয়া ছবিটি, মহামানসের নয়। শিল্পীর আঁকা ছবি)

আমরা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের কথা বলিনা। অন্ধ-বিশ্বাস ভিত্তিক সব ধর্মকেই আমরা মানব জাতির বিকাশের প্রধান অন্তরায় বলে মনেকরি।

37987905_2269611469720727_62367688385500
যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস মানুষের মধ্যে এতটাই দৃঢ়মূল হয়ে আছে, যে তা' থেকে সহজে বেড়িয়ে আসা অতি সাধারণের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

প্রসঙ্গ: পাপ

বিশ্বাত্মার (ঈশ্বরের) কাছে~ তোমার কর্মের জন্য তুমি দায়ী নও। তুমি যা করো তা জাগতিক ব‍্যবস্থা দ্বারা করিত হও বা করতে বাধ্য হও। এখানে পাপ -পূণ্য বলে কিছু নেই।

এখানে, এই মনুষ্য সমাজে, রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে বা বিচারে এবং আইনে কোনো ব‍্যক্তি তার কোনো কোনো কর্মের জন্য অপরাধী হিসাবে বিবেচিত হতে পারে, এবং শাস্তি পেতে পারে।

কিন্তু বিশ্বাত্মা (ঈশ্বর) ও জাগতিক ব‍্যবস্থার কাছে সেই ব‍্যক্তি অপরাধী বা পাপী রূপে পরিগণিত হয়না, আর কোনো শাস্তিও পায়না।

কে কাকে কেন শাস্তি দেবে!? মানুষ হলো এই জগতের--- এই জাগতিক ব‍্যবস্থারই একটা অংশ। মানুষের ক‍র্মও এই জাগতিক কর্মকাণ্ডেরই একটা অংশ। আমি যা চিন্তা করছি, যে কর্ম ক‍রছি, সবকিছুই এই জাগতিক ব‍্যবস্থা আমাকে দিয়ে করাচ্ছে। আমি হলাম বিশ্বাত্মার ঈশ্বরের তৈরী ক্রীড়নকের মতো। একথা শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

'পাপ' কথাটা এবং পাপের শাস্তি--- এই ব‍্যাপারটা প্রচলিত ধর্মের অবদান। তারা তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য--- শাস্তি - পুরষ্কার এবং পাপ - পূণ্য প্রভৃতি সৃষ্টি করেছে।

এখানে মানব ধ‍র্ম--- মহাধ‍র্ম -এর আলোচনায় অন্য কোনো ধর্মের প্রসঙ্গ আনবেন না দয়া করে। নিজস্ব জ্ঞান -বুদ্ধি, বিচার- বিবেচনা ও যুক্তি দিয়ে কথা বলবেন, এটাই আশা করবো। ধন্যবাদ।

 ঈশ্বর এই জগতের সবকিছু চালনা বা পরিচালনা করে না। তা' করে স্বয়ংক্রিয় জাগতিক ব‍্যবস্থা। 

যেমন, তুমি তোমার শরীর ও মনের মধ্যে সংঘটিত হওয়া সমস্ত কিছু চালনা বা পরিচালনা করনা। তা' করে তোমার শারীরিক ও মানসিক ব‍্যবস্থা।

এমনকি, তুমিও চালিত বা পরিচালিত হও এই ব‍্যবস্থার দ্বারাই। আর, তোমার মতোই ঈশ্বরও চালিত বা পরিচালিত হয় এই জাগতিক বা মহাজাগতিক ব‍্যবস্থার দ্বারাই।

আমার কর্ম— এই মহাজাগতিক কর্মকান্ডেরই একটা অংশ। আমার কর্ম হতে উৎপন্ন হয় যে ফল, অর্থাৎ আমার কর্মফল— তা’ শুধু আমার নয়, তা’ এই জগতেরই—, এবং জগৎ জুড়েই তা’ প্রভাব বিস্তার করে। আর, সমস্ত জগতই সেই ফল ভোগ ক’রে থাকে। 
জগতের কোনো কিছুই বিচ্ছিন্ন নয়। সব কিছুর সাথেই সবার যোগ রয়েছে। জাগতিক কর্মকান্ড এবং তা’ থেকে উৎপন্ন ফলের অধিকাংশই আমাদের পক্ষে অনুভব যোগ্য নয়। আমরা তার খুব সামান্য অংশই উপলব্ধি করে থাকি।

এই মহাজাগতিক কর্মকান্ড থেকে উৎপন্ন অসংখ্য প্রকারের— অসংখ্য ফলের মধ্যে আমিও একটি ফল। আমি যা কিছু করছি, তা’ এই জগতব্যাপী ঐচ্ছিক—অনৈচ্ছিক অসংখ্য কর্মকান্ডের মিলিত ফলেরই একটা অংশ।

আমার দ্বারা কৃত সমস্ত কর্ম— আমার ইচ্ছা মতোই সংঘটিত হয়না। এর পিছনে রয়েছে— বহু ইচ্ছা—অনিচ্ছা, স্বয়ংক্রিয় ঘটনা, স্থান-কাল-পাত্র, অবস্থা প্রভৃতি। আর, এ সবই পুর্বনির্ধারিতভাবে যখন যেটা ঘটার— ঘটে চলেছে। এটা শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়, —আমার-তোমার —সবার এবং সবকিছুর ক্ষেত্রেই। 
সামাজিক দৃষ্টিতে কেউ খারাপ কাজ করলেই যে তাকে খারাপ ফল ভোগ করতে হবে— তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার কেউ ভালো কাজ করলেই যে সে ভালো ফল পাবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। পেতেও পারে, আবার নাও পেতে পারে। হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।

কোনো কর্মই শুধু ভালো কর্ম অথবা শুধুই মন্দ কর্ম— এমন হয়না। প্রতিটি কর্মই কম-বেশি ভালো-মন্দ হয়ে থাকে। কোনো কর্ম কারো দৃষ্টিকোণ থেকে বা কারো পক্ষে ভালো, তো অপর কারো পক্ষে মন্দ হতে পারে।
আবার, ভালো—মন্দের নুন্যাধিক্য গুণ বিচার ক’রে কেউ কেউ কোনো কর্মকে ভালো, আর কোনো কর্মকে মন্দ বলে, মনে করতে পারে। 

কর্ম হ’তে উৎপন্ন কর্মফলের মধ্যেও ভালো ও মন্দ উভয় ফলই বিদ্যমান থাকে। কেউ শুধু ভালোটা দেখতে পায়, মন্দটা তার দৃষ্টিগোচর হয়না। আবার কেউ শুধু মন্দটাই দেখতে পায়, ভালো দিকটা সে উপলব্ধি করতে পারেনা। 

নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে উভয় দিকই সঠিকভাবে দেখতে পায়— এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। 


সাধারণত, কর্মের জন্য— কর্মফলের জন্য— একজন অপরজনকে দায়ি ক’রে থাকে। আবার, দুরদৃষ্টি সম্পন্ন নিরপেক্ষ ব্যক্তি দেখে, এদের মধ্যে কেউই দায়ি নয়, —পূর্ব-নির্দিষ্টভাবে যা ঘটার তা-ই ঘটে চলেছে। কোনো কর্মেই কারো হাত নেই। আর, তাই কোন কর্মের জন্যই কেউ দায়ি নয়। 

‘কর্মফল’-কে বুঝতে হলে, সর্বাগ্রে আমাদেরকে পূর্বনির্ধারিত ‘ভাগ্য’-কে বুঝতে হবে। ‘ভাগ্য’ আসলে কী— তা’ না বোঝা পর্যন্ত নানা সংশয়-দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ঢেউয়ের দোলায় ও ধাক্কায় বিপর্যস্ত হতে হবে আমাদেরকে।

কাল্পনিক ঈশ্বরের কৃপা লাভের পিছনে না ছুটে, মানবত্ব লাভের জন্য এগিয়ে যাও। তাতেই মানবজীবন সার্থক হবে।

'মানব ধর্মই মহাধ‍র্ম'
বিশ্বাত্মা (ঈশ্বর) সর্বশক্তিমান নয়। ভাগ্যের কাছে তার 
হাত-পা বাঁধা। 
তার ঐচ্ছিক শক্তি ভাগ্যরূপ অনৈচ্ছিক শক্তির কাছে অসহায়।

প্রাচীন পুঁথি, গ্রন্থ এবং রূপকথাসম বিভিন্ন পুরাতন কাহিনী, আর নানা প্রবচনগুলোকে পুঁজি করে, কিছু কুচক্রী ধ‍র্ম- কারবারিগণ শাস্তি ও পুরস্কারের (বন‍্য পশুদের পোষ মানানোর পদ্ধতিতে) ভয় ও লোভ দেখিয়ে, সেকেলে অজ্ঞান- অন্ধ সরল মানুষদের বশীভূত করেছিল, তাদের হীন স্বার্থ পু্রনের উদ্দেশ্যে এবং কিছুটা তৎকালীন সমাজের প্রয়োজনে।

পরম্পরাগতভাবে আজকের মানুষও সেই ফাঁদেই পড়ে আছে এখনো।

এখনো পরিবার -সমাজ ও ধর্মগুরুদের কথায় অজ্ঞান- অন্ধের মতো বা অতি সরল মনে, বিনা যুক্তি- বিচার ছাড়াই সেইসব ধর্মের বুলি সর্বাংশে বিশ্বাস ক'রে নেওয়াটা, আজকের মানুষের পক্ষে বিজ্ঞানমনষ্কতা বিহীন অতি শিশু মনেরই পরিচয়।

আজকের উন্নত চেতনার শিশুরাও যা বিনা প্রশ্নে এবং সন্তোষজনক উত্তরের অভাবে সহজে নিঃসংশয়ে মেনে নেবে না।

যে ব‍্যক্তি অহেতুক অযথা মিথ্যে কথা বলে, তার স্বপ্ন~ তার আশা-আকাঙ্খা সবই অবশেষে মিথ্যেয় পরিণত হয়।

37583693_244429263041012_629016167295064

মনটাই তো আসলে তুমি। শরীরের মতো তাকেও নিয়মিত পরিস্কার করা না হলে, সে ক্রমশ নোংরা দুষিত অব‍্যবহার্য পরিত্যক্ত হয়ে ওঠে। এখন, তুমি যদি সেই অপরিচ্ছন্ন মন নিয়েই থাকতে অভ‍্যস্ত হও, তাহলে অনেকেই তোমার কাছে ঘেঁষতে চাইবে না--- তোমাকে এড়িয়ে চলবে। তোমার কাজকর্ম ও আচরণেও এর প্রভাব পড়বে।

প্রতিদিন প্রতিনিয়ত তোমার মনে ময়লা জমছে। কিন্তু একবারের জন্যেও তাকে পরিস্কার না করে, তুমি যদি দিনের পর দিন সেই অপরিচ্ছন্ন আবর্জনার স্তুপ হয়েই থাকো, তাহলে সেই মনের অবস্থাটা কিরূপ হবে--- একবার ভেবে দেখো!

এই অবস্থায় কোনো শুভলাভ--- সৌভাগ্য লাভ, উন্নতি--- সাফল্য--- বিকাশ লাভ কি সম্ভব?

মনের পরিচ্ছন্নতার জন্য সারাদিনে মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় ব‍্যয় করলেই হবে। বিশ্রামের সময়ে স্থিরভাবে বসে--- একাগ্র হয়ে মনের দিকে ধ‍্যান দাও। দেখ, বহুকাল ধরে মনের মধ্যে--- বহু দুঃখ- কষ্ট- যন্ত্রণা, কালিমা- কলুষ- গ্লানি, শোক- সমস্যা- হতাশা প্রভৃতি জমে জমে মনের কি দশা হয়েছে।

এগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে মনকে কয়েকবার নির্দেশ বা আদেশ দাও, এবং লক্ষ্য করো--- মনটা অচিরেই কেমন নির্মল- পবিত্র- সুন্দর, পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে। এ'হলো রোজকার সাফাই। পুরোনো জমে থাকা ময়লা দূর করতে হলে, তোমাকে গভীর 'ট্রান্স' -এর মধ্যে ডুবে গিয়ে স্ব- অভিভাবন বা নির্দেশ দিতে হবে মাঝে মাঝে।

মনের ধ‍্যান শুরু করার পূর্বে ৫ মিনিট সচেতন- প্রাণযোগ বা Consciously deep breathing অভ‍্যাস করতে হবে। শ্বাস গ্রহণের সয়য় কল্পনা করো--- মহাজাগতিক শক্তি তোমার মধ্যে প্রবেশ করছে। আর শ্বাস ত‍্যাগ ক‍রার সময় কল্পনা করো--- শরীর ও মনে জমে থাকা সমস্ত আবর্জনা দূর হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেও আরো কিছু বিষয় আছে, যা সাক্ষাৎ শিক্ষা কালেই বোঝানো হয়ে থাকে। তবে, এতেও অনেক সুফল পাওয়া যাবে।

এই পরিবর্তনশীল জগতে কোনোকিছুই চিরন্তন নয়। মনোবিকাশের সাথে সাথে আমাদের ধর্মেরও পরিবর্তন ঘটে। প্রতিটি চেতন-স্তরের ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন।
শৈশবের ধর্ম আর যৌবনের ধর্ম যেমন এক নয়, তেমনি স্বল্প চেতন আর উচচ চেতন মানুষের ধর্মও এক হতে পারে না।

যারা বলে, তাদের ধর্ম চিরন্তন, তার মানে, তাদের বিকাশ বহুকাল ধরে একজায়গায় থেমে আছে।
38650392_264219771061961_181183471977653

শুনতে অবাক লাগলেও, আমার অভিধানে 'বিশ্বাস' নামে কোনো শব্দ নেই। এই 'বিশ্বাস'-ই হলো~ পৃথিবীতে যত নষ্টের গোড়া।

যুগ যুগ ধরে প্রচলিত ধর্ম মানুষকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে, তার স্বার্থে। তাই বিশ্বাস মানুষের মজ্জাগত হয়ে গেছে। বিশ্বাস ছাড়াও যে জীবন চলতে পারে, এ কথা মানুষ ভাবতেই পারেনা।

আমি কখনোই বলি না, আমার কথা বিশ্বাস করো। আমি বলি, যুক্তি- বিচার আর বিজ্ঞান- মনষ্কতার কষ্ঠিপাথরে আমার কথা যাচাই করে, তারপর গ্রহণযোগ্য মনে হলে, তবেই তাকে গ্রহণ করো। আমি তোমাদের বিশ্বাস অর্জন করতে চাইনা, চাই নির্ভরযোগ্য হতে।

বিশ্বাস কথাটা নয়, বলো-- জানি অথবা জানি না। এর মাঝখানে আছে--- হতে পারে, অনুমান, ধারণা, মনে হয়, প্রভৃতি। বড়জোর বলা যেতে পারে, আপাত বিশ্বাস।

এভাবে চললে, কখনোই বিশ্বাস হারানো--- বিশ্বাস ভঙ্গ, অবিশ্বাস, বিশ্বাস ঘাতকের কবলে পড়তে হবেনা। 'বিশ্বাস' ছাড়াই---বিজ্ঞানমনষ্ক হয়ে চললে, জীবন অনেকটাই শুভ ও ধনাত্মক হয়ে উঠবে। ঋণাত্মকতা দূর হয়ে যাবে।

তা'ই বলে আমি বলছি না, অবিশ্বাস-- সন্দেহের চোখে দেখতে। আমি বলতে চাইছি, সর্বদা সজাগ- সচেতন ভাবে থাকতে।

'বিশ্বাস' কথাটার মধ্যেই নিহিত থাকে-- অজ্ঞান-অন্ধত্ব, অনিশ্চয়তা, সন্দেহ-অবিশ্বাস -এর একটা চোরা স্রোত। থাকে বিশ্বাস ভঙ্গ হওয়ার বা বিশ্বাস হারানোর আশঙ্কা।

'বিশ্বাস' মানেই নিশ্চয় জ্ঞান নয়, এটা জানা সত্বেও, সম‍্যক জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও, সচেতন মনের সতর্কতার বিরুদ্ধে গিয়ে-- কোনো কাউকে বা কিছুকে জোর ক'রে সত্য বলে মেনে নেওয়ার ভিতরে প্রচ্ছন্ন থাকে-- আত্মপ্রবঞ্চনা। থাকে দুটি (সচেতন ও অবচেতন) মনের অন্তর্দ্বন্দ্ব।

38451347_261425544674717_429425171149881

এক ভক্ত একদিন আমায় বলে যে, সে কিছুই চায় না, শুধু ঈশ্বরের সেবা করতে চায়। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, কি ধরনের সেবক হতে চাও তুমি, দক্ষ সেবক--- না অদক্ষ সেবক? নিচু শ্রেণীর সেবক, দূরের সেবক, না উচ্চ শ্রেণীর সেবক, ঈশ্বরের খুব কাছের সেবক?

আমার প্রশ্ন শুনে সে অপ্রস্তুত ভাবে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে খানিকক্ষণ। আমি তাকে উদাহরণ দিয়ে বোঝাই, এই যেমন ধরো, কোন এক বিশিষ্ট ধনী ব্যক্তি--- তার ঘরে বাইরে ও কর্মস্থলে বহু সেবক কাছে। কেউ তার বাগানে কাজ করে, কেউ তার গাড়িঘোড়ার পরিচর্যা করে, কেউ তার ঘর দুয়ার সফাই করে। আবার কেউ তার স্নানের জল দেয় ---কেউ খাদ্য পরিবেশন করে। কেউ কেউ তার গা হাত পা ম্যাসাজ করে দেয়। আর কিছু সেবক আছে যারা তার কর্মস্থলে থেকে তার কাজে সহযোগিতা করে। এখানেও আছে বিভিন্ন স্তরের সেবক। উচ্চ শ্রেণীর সেবক যারা, তারা প্রভুর চাহিদা, সুবিধা-অসুবিধা বোঝে, তারা প্রভুর কাজের ধারা কাজের উদ্দেশ্য বোঝে। এরা প্রভুর খুব প্রিয় সেবক। তা' তুমি এদের মধ্যে কোন শ্রেণীর সেবক হতে চাও?

সেই ভক্ত তৎক্ষণাৎ উত্তর দেয়, আমি উচ্চ শ্রেণীর সেবক--- প্রিয় সেবক হতে চাই। তখন আমি তাকে বলি, তাহলে সর্বাগ্রে তোমাকে ঈশ্বর সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। তার জগত তার চাহিদা--- তার কাজের ধারা বুঝতে হবে তোমাকে। সেই সঙ্গে নিজেকে জানতে হবে। নিজের প্রবণতা মেধা ও যোগ্যতা অনুসারে, তার বিশেষ কোনো কাজের বা সেবার যোগ্য হয়ে উঠতে হবে তোমাকে। অদক্ষ সেবকের মতো--- চুন চাইতে নুন নিয়ে হাজির করলে, সে নিশ্চয়ই তোমাকে ভালোবাসবে না। তাই সর্বাগ্রে তাকে জানো, এবং তারপর তার যোগ্য সেবক হয়ে ওঠো--- ।

38444484_2282205755127965_22501267091750
maha.jpg
সর্বজ্ঞ~ সর্ব-জ্ঞানী~ ত্রিকালজ্ঞ, এদের কোনো বাস্তব-অস্তিত্ব আছে বা ছিল নাকি ?! 
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে তো নেই। আপনাদের কি মনে হয়?
এই জাগতিক ব‍্যবস্থায় আমরা পূর্ণ চেতনার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। আমরা এখন মানব -চেতন -স্তরে অবস্থান করছি। লক্ষ্যে পৌঁছাতে, আমাদের সামনে এখনো অনেক পথ বাকি। এই চেতনা বিকাশের পথের মাঝামাঝি কোনো একজায়গায় দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ পথের জ্ঞান--- অসম্ভব। 
 
38235167_255161765301095_233860325451602

শিশুচেতন মনের মানুষ

যারা ধর্মের নামে আজগুবি গল্প- কথাকে সরল মনে বিশ্বাস করে--- সত্য বলে মনে করে, তাদের আর যাই বলো, যথেষ্ট সচেতন ও বাস্তবজ্ঞান সম্পন্ন পরিণত মনের মানুষ বলা যাবে না। সঠিক অর্থে এরা হলো চেতনার শৈশব স্তরের মানুষ।

শিশু যদি নিজেকে শিশু ভাবে, তাহলে কোনো সমস্যা থাকে না। তার বিকাশ স্বচ্ছন্দে এগিয়ে যায়। কিন্তু তা' না হয়ে যদি সে নিজেকে বয়ষ্ক--- জ্ঞানী--- সবজান্তা ভাবে, তাহলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে তার নিজের তো ক্ষতি হয়ই, সেই সাথে তার চারপাশের শিশু ও বয়ষ্করাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

(জানি, আমার এই কথায় কেউ কেউ ফোঁস করে উঠবে, আমাকে গাল- মন্দ দিয়ে নোংরা ছিটাবে, কিন্তু ওদেরকে আঘাত না করলে, ওরা তো এই শৈশব চেতন- স্তরেই থেকে যাবে, উত্তরণ ঘটবে না। আর সচেতন করতে, কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবেই।

বিশ্বাত্মা (ঈশ্বরের) -র কাছে~ তোমার কর্মের জন্য তুমি দায়ী নও। তুমি যা করো তা জাগতিক ব‍্যবস্থা দ্বারা করিত হও বা করতে বাধ্য হও।
37982931_146596262897170_423653080419427

ভক্তি পথের শুরুতে~
অজ্ঞান-অন্ধ ভক্তি, পরবর্তী স্তরে আসে~ অভক্তি, তারপরে আসে শুধুই~ জ্ঞানে ভক্তি, 
সব জানার শেষে ~ বিশুদ্ধ ভক্তি।

37985298_252938672190071_683066825758683
ধর্মসহ সর্বক্ষেত্রেই অন্ধবিশ্বাস থেকে
যাঁরা মুক্ত হতে পেরেছেন এবং যাঁরা পারবেন, তাঁরা প্রকৃতই অসাধারণ ও অতি উন্নত মানুষ!
অন্ধ বিশ্বাসই প্রকৃত মানব বিকাশের পক্ষে প্রধান প্রতিবন্ধক।
অন্ধ বিশ্বাস থেকে যে মুক্ত হতে পেরেছে, সে-ই বিকশিত মানুষ।

~মহামানস
37841894_10213766200523393_1799019160135

নিজেরা মানুষ হব না, মানুষ হওয়ার চেষ্টাও করব না। কিন্তু অপরের কাছ থেকে মানবতা আশা করব!
তাই কখনো হয়!!

নেতা-মন্ত্রীরা তো আর আকাশ থেকে নেমে আসেনি! আমাদের ঘর থেকেই উঠে এসেছে!
আমরা মানুষ না হলে, তাদের কাছ থেকে মনুষত্ব আশা করি কি করে!

সন্তানকে মানুষ করা মানে শুধু খাইয়ে পড়িয়ে শখ-আহ্লাদ মিটিয়ে বড় করে তোলা নয়! 
তাদেরকে মানুষ করার আগে, নিজেকে মানুষ ক'রে তুলতে হবে।

ভুল থেকে শিক্ষা নিতে না পারাটাই সবচাইতে বড় ভুল।
প্রচলিত ধর্ম-- মানব জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মানুষের মনে ভুল ধারণা সৃষ্টি করার ফলেই, যথোচিত মানব বিকাশ সম্ভব হয়নি।

~মহর্ষি মহামানস
36625101_227496861400919_564894848615920

বাস্তব সত্য

এই পরিবর্তনশীল অনিত‍্য বাস্তবে--- সত্য কখনোই স্থির নিত্য হতে পারে না। আজ যা সত্য ---কালই তা' মিথ্যা হয়ে যেতে পারে। আবার, কালকের মিথ্যা আগামীতে সত্য বলে পরিগণিত হতে পারে।

কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকলেই হবেনা, আমাদের চেতনায় তা' ধরা না দিলে, আমাদের কাছে সে অস্তিত্বশীল হতে পারবে না। সত্য--মিথ্যা এসবই তো আমাদের জ্ঞান ও চেতনার উপর নির্ভরশীল। আমাদের জ্ঞান ও চেতনাও পরিবর্তনশীল হওয়ায়, এই জ্ঞান ও চেতনা সাপেক্ষে এখানে সব কিছুই আপাত সত্য।

যা অস্তিত্ব সম্পন্ন তা'ই বাস্তব, যা বাস্তব তা'ই সত্য। সে অস্তিত্ব আমরা বোধ করতে পারি বা না পারি, সে আছে। সে আমাদের নিকট অস্তিত্ব বিহীন হলেও সে আছে। আমাদের বোধ--- উপলব্ধির বাইরে বহু অস্তিত্ব--- বহু সত্য আছে, যারা আমাদের কাছে--- থেকেও নেই।

আবার, কোনো কিছু আমাদের কাছে বিশেষ কোনো রূপে ধরা দিলেই যে সেটাই তার প্রকৃত রূপ তা' না ও হতে পারে। একটা মানুষকে আমরা যে রূপে দেখছি, সেটা তার প্রকৃত রূপ নাও হতে পারে। যেমন চাঁদকে আমরা যে রূপে দেখছি, সেটা তার প্রকৃত রূপ না হলেও, আমাদের কাছে (পৃথিবী থেকে, নির্দিষ্ট দূরত্ব সাপেক্ষে) সেটাই তার রূপ। তাহলে দেখা যাচ্ছে, কোনো কিছুর অস্তিত্ব আমাদের কাছে অনেক কিছুর সাপেক্ষে অনেক প্রকার হতে পারে।

এই মানব জীবনে পূর্ণ জ্ঞান ও চেতনা লাভ কখনোই সম্ভব নয়। একমাত্র অন্ধ বিশ্বাসের কাছেই আছে পূর্ণ জ্ঞানী, আছে পরম সত্য! অজ্ঞান -অন্ধত্ব দূর হয়ে গেলে , তখন সবই হয়ে যাবে আপাত সত্য।

অস্তিত্ব যে কত প্রকারের হতে পারে, তা' আমাদের ধারণার বাইরে। বস্তু, পদার্থ, শক্তি, তথ্য ও তত্ত্ব ছাড়াও এই বিশ্বে বহু প্রকারের অস্তিত্ব বিদ‍্যমান। আমাদের স্বল্প বোধ শক্তি বা ক্ষমতা নিয়ে আমরা তার অতি সামান্য অংশকেই জানতে পারি--- উপলব্ধি করতে পারি।

সময় বয়ে যায়~ 
চেতনা লাভের জন‍্যেই এখানে আসা, তার কি হবে উপায়? মজে আছ যা নিয়ে, যাবে কি তা সঙ্গে নিয়ে? চেতনাই দেবে শুধু সঙ্গ তোমায়।

37186651_240443043439634_169271538666491

।। মুক্ত মন এবং মুক্ত মনে কর্ম করা ।।

পূর্ব লব্ধ জ্ঞান- অভিজ্ঞতা, নীতি, শিক্ষা, নির্দেশ, বিশ্বাস, সংস্কার, অনুশাসন প্রভৃতির প্রভাবে আমাদের মন প্রায় সর্বদা আচ্ছন্ন হয়ে থাকে।

আমাদের অবচেতন মনই এগুলোর দ্বারা বেশি প্রভাবান্বিত বা আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এই অবচেতন মন আবার সচেতন মনের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে, অথবা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে থাকে। এইসব প্রভাবের মধ্যে কিছু কুপ্রভাবও থাকে যা আমাদেরকে ভুল পথে চালিত করে, অথবা চালিত করতে পারে।

এখন, এই অবচেতন মনের প্রভাব মুক্ত হয়ে, সজাগ ও আত্মসচেতন থেকে, সাময়িকভাবে শুধুমাত্র বা অনেকাংশে সচেতন মন নিয়ে থাকা, এবং ঐ অবস্থায় কোনো কর্ম করাকেই মুক্ত মনে কর্ম করা বোঝায়।

নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে, 'স্ব-অভিভাবন' বা 'self-suggestion' একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। তবে সঠিক প্রয়োগ জানতে হবে।
শুধু চেহারায় নয়, মনটাও মানুষের হতে হবে। অন‍্যান‍্য জীব নিজ নিজ ধর্ম নিয়েই জন্মায়। কিন্তু মানুষ কিছুটা মানবধর্ম জন্মসূত্রে পেলেও, অনেকটাই তাকে অর্জন করতে হয়।
38661898_150362089187254_288113558624718

অনেকেই বিশ্বাস ও দর্শন -এর পার্থক্যটা গুলিয়ে ফেলেন। দর্শন হলো-- জ্ঞান ও সত্যের প্রতি অনুরাগ থেকে, নিয়ত ধ‍্যানের মধ্যে একজন দার্শনিকের মানসপটে যা ফুটে ওঠে, তা'ই তার দর্শন। দর্শন থেকেই বিজ্ঞানের সৃষ্টি। তাত্ত্বিক বিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের দর্শন। তা' কিন্তু বিশ্বাস নয়।

আবার ধর্মানুরাগীদের বিশ্বাস ভিত্তিক দর্শন, আর বিজ্ঞান- মনষ্ক মানুষদের সত‍্যানুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে মানসপটে উন্মোচিত দর্শনে অনেক পার্থক্য আছে।

মহামানস একজন বিজ্ঞান- মনষ্ক দার্শনিক। তাঁর আত্ম- ধ‍্যানের মধ্যে যা প্রত‍্যক্ষ হয়েছে, যা উপলব্ধ হয়েছে, তা'ই তিনি তাঁর 'মহাবাদ' গ্রন্থে প্রকাশ করেছেন।

তিনি মহাবাদ গ্রন্থে একথাও বলেছেন, "আমরা আপাত সত‍্যের হাত ধরে পরম সত‍্যের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি।" বলেছেন, "মহাবাদ কখনো শেষ কথা বলে না।"

দর্শন হলো একটি সম্ভাবনাময় তত্ত্ব- চিত্র। তা' কখনই বিশ্বাস নয়। এবার কেউ যদি কোনো দর্শনকে সত্য বলে, মনে করে, তখন তার কাছে সেটি বিশ্বাস। অন‍্যথায় দর্শন দর্শনই থাকে।

দর্শনকে এক কথায় বলা যায়, একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। মহা বিশ্ব এবং তার একটি অংশ--- মানব ও মানবসমাজ সম্পর্কে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ যৌক্তিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান- দর্শন।

38446368_261310141352924_247976728466345

ঈশ্বর দর্শনের কথা উঠলেই, আমার জানা সেই প্রেমোন্মাদ ছেলেটির কথা মনে পড়ে যায়।

সেই ছেলেটি একটি মেয়েকে খুব ভালোবেসেছিল। সে দূর থেকেই ভালোবাসতো। কথা বলার তেমন সুযোগ হয়ে ওঠেনি তার। বেশকিছুদিন এইভাবে চলছিল। শয়নে--স্বপনে-- সদা জাগরণে তার কথাই ভাবতো। আর কল্পনায় নানা ছবি আঁকতো সেই ছেলেটি।

হঠাৎ করে মেয়েটিকে আর কোথাও দেখতে না পেয়ে, ছেলেটি পাগলের মতো চারিদিকে খুঁজতে লাগলো তাকে। কিন্তু কোথাও তার দেখা মিললো না। তার সন্ধানও পাওয়া গেলনা। ভয় ও সঙ্কোচের কারণে, কাউকে মেয়েটির সম্পর্কে জিজ্ঞাসাও করতে পারেনা সে। তখন তার সে কি করুণ অবস্থা।

আসলে, মেয়েটি তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসে কিছুদিন এখানে ছিল। তারপর সে তার নিজের বাড়িতে চলে গেছে।

শেষে এমন অবস্থা হলো, ছেলেটি যেদিকে তাকায় সেদিকেই মেয়েটিকে দেখতে পায়। আরে! ঐতো সেই মেয়েটি! ... নাঃ কোথায় গেল!! একটু নিকটে এগিয়ে যেতেই মেয়েটি যেন নিমেষে অদৃশ্য হয়ে গেল!!!

বলতে চাইছি, ঈশ্বরের জন্য--- ঈশ্বর দর্শনের জন্য এমনই পাগল হলে, তখন ঈশ্বরকে ঐ ছেলেটির মতো অবশ্যই দেখতে পাওয়া যায়। যা দেখা যায়, তা' আসলে তার মেন্টাল প্রোজেকশন ছাড়া আর কিছুই নয়।

38612315_261018214715450_362369665246586
সাধ‍্যাতিত না হওয়া সত‍্যেও, 'পারিনা' বললে, যাদের চলে যায়--- তাদের চলুক।'পারিনা' বললে, যেখানে চলেনা, যাদের চলেনা, তাদের পারতেই হয়।আর তারাই জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
যা তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তা' নিয়ে বেশি মাথা ঘামিও না, হতাশ হয়ো না। যা তোমার সাধ‍্যের মধ্যে, তা'ই নিয়েই এগিয়ে যাও।
যদি তুমি তেমন কাজই করো, যা তুমি আগেও করেছো। তাহলে তুমি প্রায় তেমন ফলই পাবে, যেমন তুমি আগেও পেয়েছো। যদি আরো ভালো কিছু পেতে চাও, আরো ভালো কিছু করার চেষ্টা করো।

MahaDharma Samsad

  • Facebook Clean Grey
  • Twitter Clean Grey
  • LinkedIn Clean Grey

© 2023 by MahaDharma Samsad. Proudly created with Wix.com

bottom of page