মিথ্যাকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে পরিশ্রম করতে হয়না।
কিন্তু মিথ্যাকে মিথ্যা-- সত্যকে সত্য রূপে উপলব্ধি করতে কিছুটা পরিশ্রম করতে হয়।
সত্যকে উপলব্ধি করার অক্ষমতা বা অলসতার কারণে, অনেকে মিথ্যাকেই সত্য বলে গ্রহণ ক'রে আত্মসন্তুষ্টি লাভ ক'রে থাকে।
বহু মত অনুসারে তোমার সামনে বহু পথ দেখতে পাবে। কিন্তু চেতনা বিকাশের পথ বা ঈশ্বরত্ব লাভের পথ একটাই।
~মহামানস
তোমার প্রতিটি দিন আসুক নতুন চিন্তা নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে। প্রতিদিন নিজেকে ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে ক্রমোন্নত নতুন জীবন লাভ করো।
আমাকে অন্ধের মতো অনুসরণ করোনা। আমার কথা যুক্তি- বিচার ও উপলব্ধির মধ্য দিয়ে নিজেকে আলোকিত করে তোলো। তারপর নিজের আলোতেই এগিয়ে চলো।
কোনো ঈশ্বর বা প্রচলিত কোনো ধর্ম নয়, মানুষের অধিকাংশ সমস্যার প্রকৃত সমাধান হলো মানব ধর্ম ভিত্তিক মানব বিকাশ মূলক ধর্ম মহাধর্ম।
সুস্থ না থাকলে, কোনো কাজই সুষ্ঠুভাবে করা যায়না। মন তখন নিজের (মনের) নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। তাই, সবার আগে চাই সুস্থতা।
অনেক মানুষেরই শরীর ও মন সম্পর্কে, সুস্থতা ও অসুস্থতা সম্পর্কে, স্বাস্থবিধি সম্পর্কে এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায়, তারা বহুকিছু পাওয়ার জন্যেই প্রাণপণে চেষ্টা করে থাকেন, কিন্তু সুস্থতা লাভের জন্য তার এক শতাংশ চেষ্টা করেন না।
আবার, অনেকেরই মনোভাব, সুস্থতার জন্য ডাক্তার দেখাবো--- ওষুধ গ্রহণ করবো, ব্যস, এতেই নিজের প্রতি যথেষ্ট কর্তব্য করা হলো। রোগ ও চিকিৎসার নাড়ী- নক্ষত্র নিয়ে মাথা ঘামাবার কোনো দরকার নেই। কোন রোগ--- কোন চিকিৎসায় আরোগ্য হয়, রোগের কারণ এবং তার গতি- প্রকৃতি না জানার ফলে, পথ্য- অপথ্য না জানার ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই সুস্থতা লাভ না হয়ে, রোগ- ব্যাধি আরও জটিল রূপ ধারণ করে থাকে।
এছাড়া, যেখানে অধিকাংশ মানুষই অসুস্থ, সেখানে ওটাকেই তারা স্বাভাবিক বলে ভেবে থাকেন। ফলে, সুস্থতা লাভের চিন্তাই তাদের মাথায় আসেনা।
শুধুমাত্র সহজ প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কেউ বা কোনো দম্পতি যদি সন্তান গ্রহণ করে, যদি সেক্ষেত্রে তার শিক্ষিত সচেতন মনের কোনো ভূমিকা না থাকে, তাহলে সেই সন্তান কতটা মানুষ হবে, অথবা আদৌ মানুষ হবে কি না, সবটাই অনিশ্চিত।সে কি হবে না হবে, তার উপর বিশেষ নিয়ন্ত্রণ থাকবে না কারো।
ধর্ম শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজ ও পরিবার আমাদেরকে যুক্তিপথে তলিয়ে ভাবতে শেখায় না, শেখায় বিশ্বাস করতে। এই হলো আমাদের দুর্দশার কারণ।
মহাধর্ম
(মানববিকাশ মূলক ধর্ম)
আমাদেরকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে শেখায় না। যুক্তির পথে তলিয়ে ভাবতে শেখায়।
যার ফলস্বরূপ আসে সাফল্য।
ধর্মের করালগ্রাসী মোহজাল থেকে মুক্ত করে মানুষকে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনে যে ধর্ম, তারই নাম মহাধর্ম।
।। মানব ধর্মই মহাধর্ম ।।
মানসিক রোগের ওষুধ দীর্ঘদিন গ্রহণ করে মানুষ যেমন আসক্ত হয়ে পড়ে, জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসতে অক্ষম হয়ে পড়ে, ধর্মও ঠিক তেমনটিই করে।
সমস্ত উদ্ভিদ ও জীবজগৎ সহ আমরা হলাম ঈশ্বর বা বিশ্বাত্মার ছোটবেলাকার খেলাঘরের জীবন্ত (animated) খেলনা পুতুল। সেই পুতুলের মধ্যে মানুষ হলো ঈশ্বরের পুতুল খেলার শেষ দিকের সৃষ্ট অনেক উন্নত মানের পুতুল। যা তার বহু সৃজনকর্ম লব্ধ--- বহু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ফসল।
ঈশ্বরের বড়বেলায়--- ঈশ্বরের খেলাঘরে অযত্নে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত পুতুল গুলির এখন আর কোনো আদর নেই, অভিভাবক নেই। তারা পূর্বব্যবস্থা মতো ঘটনাক্রমে--- নিজেরা যে যার মত বেড়ে চলেছে--- কর্ম করে চলেছে।
যখন শিশু- ঈশ্বর এই পুতুল খেলায় মগ্ন ছিল, সে নিজে একটা পুতুল রূপ ধারণ ক'রে বা একটা পুতুল হয়ে--- এই পুতুলদের সুখ-দুঃখ হাসি-কান্নায় অংশ নেওয়ার কথা--- কখনো তার একবারের জন্যও মনে হয়নি। একটা মানব শিশুর পুতুল খেলার সাথে--- শিশু ঈশ্বরের পুতুল খেলার মধ্যে পার্থক্য অনেক। শিশু ঈশ্বর পুতুলগুলো তৈরি করেছে তার নিজের শরীর ও মন উপাদানে। তারপর এই পুতুলগুলো তার শরীরেরই একটা অংশ। যাবতীয় খেলা চলছে শরীরের মধ্যেই। যার ফলে নিজে একটা পুতুল হয়ে, পুতুলদের জগতে গিয়ে-- তাদের সাথে মিলিত হয়ে, পুতুল জীবন উপভোগ করা, তার পক্ষে সম্ভব নয়। আর এমন চিন্তা তার মনে আসাও সম্ভব নয়।
কিন্তু কী অবাক কাণ্ড! মানুষরূপ পুতুল গুলো--- একসময় নিজেরাই নকল (কাল্পনিক) ঈশ্বর তৈরী ক'রে, তারা 'ঈশ্বর-- ঈশ্বর' খেলা শুরু করে দিয়েছে!
আসল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে, সুচতুর কুটিল স্বভাবের স্বার্থান্বেষী কিছু নীচ মানুষ--- এই খেলাটাকেই অন্ধ- বিশ্বাসের জাল বিছিয়ে শোষণ ও নির্যাতনের ঘৃণ্য খেলায় পরিণত করলো একসময়। মানুষের লেখা গ্রন্থকে পরিণত করলো ঈশ্বরের সৃষ্ট শাস্ত্র এবং অলঙ্ঘনীয় পরম নির্দেশ রূপে। মানুষ বিশ্বাসের ঐ দুর্ভেদ্য জালে বদ্ধ হয়ে রইলো বংশ পরম্পরায়।
ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছে, তার শরীর ও মন উপাদানে। এবং মানুষ এই মহা বিশ্বরূপ ঈশ্বর শরীরের মধ্যেই অবস্থান করছে। ঈশ্বরের থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষমতা নেই কারো।
ঈশ্বরের ব্যক্তিরূপ হলো মানুষের কল্পনা মাত্র। শাস্ত্র রচনাও ব্যক্তি রূপী ঈশ্বরের কাজ। বিশ্বরূপ ঈশ্বরের পক্ষে ব্যক্তিরূপ ধারণ করে, অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। কে কোথায় অবতরণ করবে!! তুমি তোমার শরীরের মধ্যে অবতরণ করতে পার না।
মানুষকে সৎপথে পরিচালিত করতে, ঈশ্বরকে শাস্ত্র রচনা করার প্রয়োজন হয় না। তার কাছে রয়েছে অনেক উন্নত ব্যবস্থা। সে মানুষের জৈব সফ্টওয়্যার -এর মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার বা 'প্রোগ্রাম' অন্তর্গ্রথিত করে দিয়েই তার উদ্দেশ্য সাধন করতে সক্ষম।
ঈশ্বর এবং আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্ব সহ আমাদের দর্শন তথা দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে, 'মহাবিশ্ব- সৃষ্টিরহস্য উন্মোচন' পড়ুন।
অলৌকিক কাণ্ড দেখেই কাউকে ঈশ্বর / অবতার ভেবে নেওয়া মুর্খতা। অলৌকিক কাণ্ড~ কৌশল এবং প্রেতাত্মার সাহায্যেও সম্ভব।
প্রগতিশীল মন নিজেকে বিচার-বিশ্লেষণ-সংশোধনের মধ্য দিয়ে দ্রুত বিকাশ লাভ ক'রে থাকে।
আমাদের চারিপাশে বহির্জগতের অনেক উন্নয়ন ঘটলেও, আমাদের অন্তর্জগতের উন্নয়ন ঘটছে না। আমরা যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই পড়ে আছি।
পূজা প্রার্থনা উপাসনা প্রভৃতি ধর্মাচারণ কখনোই আধ্যাত্মিকতা নয়। আত্মজ্ঞান ও আত্মবিকাশ লাভের পথে অগ্রসর হওয়াই আধ্যাত্মিকতা।
'আমি কে, কেন, কোথা থেকে এসেছি, কোথায় যাবো...', এই আত্মজিজ্ঞাসাই হলো আধ্যাত্মিকতার শুরু। আর আত্মবিকাশের পথই হলো আধ্যাত্মিকতার পথ।
কেউ যদি নিজেকে ঈশ্বর বলে, ঘোষণা করেন, তাকে আপনারা কি বলবেন?
ভোজবাজী-- কারসাজি আর প্রোপাগান্ডার জোরে তাকে কি ঈশ্বর বলে, মেনে নেবেন?
মানব জীবনের লক্ষ্য কাল্পনিক ঈশ্বরলাভ নয়, মানব জীবনের লক্ষ্য মনুষত্ব লাভ।
পূর্ণ বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠাই মানব জীবনের লক্ষ্য।
—মহামানস