top of page

কাম-বীজ
~মহামানস

অজ্ঞান- অন্ধত্ব, অন্ধ- আবেগ, অন্ধ- স্বার্থবোধ, কাম, ইচ্ছা বা চাহিদার অবদমন, নৈরাশ্য, অসুস্থতা প্রভৃতি কারণগুলি ক্রোধ- হিংসা -বিদ্বেষ, নিষ্ঠুরতা এবং ধ্বংস প্রবৃত্তি প্রকাশের সুযোগ করে দেয় ঠিকই, কিন্তু ক্রোধ- হিংসা- নিষ্ঠুরতার বীজ আমাদের মধ্যেই নিহিত রয়েছে।

ঈশ্বরের মধ্যে এই গুণগুলি বিদ‍্যমান থাকায়, তার অংশানুক্রমে--- 
আমাদের মধ‍্যেও এই গুণগুলি বর্তেছে। চেতনা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই নিম্নস্তরের ফাইলগুলি নিস্ক্রিয় হয়ে, ক্রমশ মন- সফ্টওয়্যারের অন্ধকার স্টোর-রুমে গিয়ে জমা হয়। বর্তমানে ঈশ্বরের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়েছে। ঈশ্বর এখন বিকাশমান চেতনার পথে অগ্রসর হয়ে, অনেক উচ্চ চেতন-স্তরে উপনীত হয়েছে। সে এখন তার শৈশব ও কৈশোরের সৃষ্টিলীলা --- পুতুল খেলায় আর আগ্রহী নয়।

ঈশ্বর একমাত্র খুব উচ্চ-চেতন (মনুষ‍্যোত্তর) সত্তাদের সম্পর্কে মাঝে মাঝে কিছুটা আগ্রহী হয়ে থাকে। নিম্ন-চেতন অস্তিত্ব জীব তথা মানুষের ব‍্যাপারে সে এখন আর মোটেও আগ্রহী নয় (জীব -সৃষ্টি তত্ত্ব দ্রষ্টব্য)।

এই প্রসঙ্গে বলি, ঐ সমস্ত উচ্চ- চেতন স্তরগুলিতে পৌঁছে--- মানুষ তখন আর মানুষ বা জীব থাকে না। তখন সে 'মহাবাদ' -উক্ত দেব বা মহাদেব (পৌরাণিক নয়) হয়ে ওঠে।

অন্ধবিশ্বাসী আর অন্ধ-অবিশ্বাসী হলো একই মুদ্রার দুই পিঠ।

ধর্ম ও রাজনীতির ক্ষেত্রেই যে শুধু অন্ধবিশ্বাসী রয়েছে, তা-ই নয়।একটু লক্ষ্য করলেই, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের ক্ষেত্রেও অনেক অন্ধবিশ্বাসীর দেখা মিলবে।

উভয় ক্ষেত্রের অন্ধভক্ত ---অন্ধ অনুসরণকারীদের থেকেই সাবধানে থাকা উচিৎ। এই উভয় পক্ষই মানব সমাজের পক্ষে অত‍্যন্ত বিপদজনক।

মহামনন
'আত্মবিকাশ-যোগ' হলো
সর্বশ্রেষ্ঠ যোগ।

ধর্ম কথা : স্বভাব ধর্ম ও আরোপিত ধর্ম

মানুষের ক্ষেত্রে ধর্ম দুই প্রকারের। একটি হলো তার স্বভাব-ধর্ম, অপরটি আরোপিত ধর্ম।

আরোপিত ধর্ম হলো একটি প্রায়োগিক ব‍্যবস্থা, যা তার অধিনস্ত অথবা অনুসরণকারীদের উপর প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট হয়ে থাকে। আরোপিত ধর্ম গঠিত হয়ে থাকে, কয়েকটি বিষয় নিয়ে, যেমন--- দর্শন, নীতি, অনুশাসন, অনুশীলন, আচরণবিধি প্রভৃতি। 


স্বভাব ধর্মের মধ্যে থাকে, মূলত স্বভাবগত আচরণ।

প্রচলিত আরোপিত ধর্ম হলো অজ্ঞান মানুষকে চিরকাল অজ্ঞান অন্ধ মূর্খ বানিয়ে রাখার এক সুন্দর খাঁচাকল।

ভালভাবে বাঁচার জন্য এবং সঠিকভাবে দ্রুত বিকাশলাভের জন্য এই আরোপিত ধর্মটির প্রয়োজন হয়ে থাকে। এছাড়াও, স্বভাব ধর্মের মধ্যে কিছু ভালো গুণ থাকে এবং কিছু খারাপ গুণও থাকে। সেই খারাপ গুণগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও আরোপিত ধর্মের প্রয়োজন হয়।

কিন্তু প্রচলিত আরোপিত ধর্মগুলি-- এই দুটির কোনোটাই নয়। এই ধর্ম মানুষকে বিপথগামীই করে, বিকশিত করে না।

মানুষের এই অভাব দূর করতেই আত্মপ্রকাশ করেছে, যুগোপযোগী নতুন ধর্ম--- মহাধর্ম।

অনেকেই মানবতা বা মানবিকতা এবং মানবধর্ম এই দুটিকে গুলিয়ে ফেলেন। তাই, এখানে সে সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন।


মানবতা হলো--- মনুষ‍্যোচিত সদগুণাবলী। অনেকের মধ্যেই এই সদগুণাবলীর কিছু অংশ প্রকাশিত, আর কিছু অংশ সুপ্তাবস্থায় থাকে।

মানবধর্ম হলো--- মানুষের স্বভাব ধর্ম। এই স্বভাব ধর্মের মধ্যে রয়েছে, ভালভাবে বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা আর বিকাশ লাভের প্রচেষ্টা।

কিন্তু প্রচলিত ধর্ম মানুষের এই বিকাশ লাভের স্বভাব ধর্মকে উৎসাহিত না ক'রে, সাহায্য না ক'রে, বরং উল্টে তাকে চাপা দেওয়ার এবং মানুষকে বিপথগামী করে তোলার চেষ্টা ক'রে থাকে। ঈশ্বর লাভ, ঈশ্বরের কৃপা লাভ, স্বর্গ লাভ প্রভৃতি অলীক বিষয় -বস্তুর পিছনে মানুষকে অন্ধের মতো ছুটিয়ে মারে। মুখে সত‍্যের কথা ব'লে, অসত‍্যের পিছনে মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় প্রবঞ্চক প্রতারকদের মতো। একে তাই মানুষের উপযোগী ধর্ম না বলে বলা উচিত অধর্ম।

মানবিকতা মানুষের স্বভাবগুণ বা স্বভাব ধর্মের একটা অংশ হলেও, অনেক সময় অসুস্থতা, অস্বাভাবিক মানসিক গঠনের কারণে, এবং কুশিক্ষার কারণে, স্বভাব ধর্মের মধ্যে কিছু কিছু খারাপ গুণও থাকতে পারে, অথবা প্রবেশ করতে পারে। ফলে, মানবিকতা রূপ সদগুণাবলীর অভাব দেখা দিতে পারে, এবং অমানবিক গুণের প্রকাশ ঘটতে পারে।

এখন, একটি উপযুক্ত আরোপিত ধর্মের দ্বারা তা' নিরাময়ের ব‍্যবস্থা করাই হলো আমাদের কর্তব্য। আর এই উদ্দেশ্যেই এসেছে--- মহাধর্ম।

এই আরোপিত ধর্মও কিন্তু কিছু উন্নত চেতনার মানুষ তাদের উন্নত স্বভাব ধর্ম থেকেই সৃষ্টি ক'রে থাকেন। বিকাশ বলতে, এখানে মনোবিকাশ বোঝায়। আর, বিকাশের বিভিন্ন স্তরে স্বভাব ধর্মেরও কিছু কিছু পরিবর্তন হয়।

শুধু ধর্মই নয়, প্রায় প্রতিটি সিস্টেম বা ব‍্যবস্থার মধ্যেই কিছু ভালো কিছু খারাপ জিনিস থাকে।

এখন, যদি সেই ব‍্যবস্থার নিয়ন্ত্রকগণ অথবা তার অধীনস্থ মানুষ--- সেই খারাপ দিকটাকে দূরীকরণের চেষ্টা না ক'রে, শুধু ভালো দিকটাকে নিয়েই গর্ব- মত্ত হয়ে থাকে, তাহলে একদিন না একদিন, সেই খারাপ অংশটা বৃদ্ধি পেতে পেতে ক্রমশ সমস্ত অংশটাকেই গ্রাস করে ফেলবে। ফলস্বরূপ একসময় সেই ব‍্যবস্থাটি ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।

হাজার হাজার বছর ধরে অজ্ঞান—অসহায় মানুষ অন্ধ-বিশ্বাস ভিত্তিক (আরোপিত)ধর্মের অধিনস্ত হয়ে আসছে। এই সুদীর্ঘকালের ধর্ম-শিক্ষায় মানুষের ওপরটাতে মেকী সভ্যতার চাকচিক্য— ধর্মীয় ভেক বা ভন্ডামোর ছাপ পড়েছে শুধুমাত্র, অন্তরের অন্ধকার ঘোঁচেনি এতটুকুও। মানুষ যে তিমির সেই তিমিরেই রয়ে গেছে আজও। প্রচলিত ধর্ম মানুষের সচেতন মনের বিকাশ ঘটাতে চায়নি কোনদিনই।

প্রচলিত ধর্ম ও রাজতন্ত্র (বর্তমানে রাজনীতি) উভয় উভয়ের স্বার্থে —একে অপরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সচেস্ট। মেকী মানবসভ্যতার অন্যতম ভিত্তি স্বরূপ শক্তিশালী তিনটি স্তম্ভ হলো— ধর্ম, রাজতন্ত্র আর বৈশ্যতন্ত্র। এরা পারতপক্ষে (কম-বেশি) প্রত্যেকেই মানুষকে অজ্ঞান-অন্ধ ক’রে রাখতে— তাদের খুশিমতো মানুষকে ব্যবহার করতে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বদ্ধপরিকর। মানব মনের যথেষ্ট বিকাশ —এদের কাম্য নয়।

এককালে, আদিম মানুষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, তাদেরকে সমাজবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ক’রে তুলতে, প্রচলিত ধর্মের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কালের সাথেসাথে তা’ সময়োপযোগী না হয়ে ওঠায়, এখন তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে অনেকাংশে। অন্ধ-বিশ্বাস ভিত্তিক ধর্ম মানুষকে কখনোই প্রকৃত জ্ঞানের পথে— সত্যের অভিমুখে অগ্রসর হতে সাহায্য করেনা। আজ চারিদিকে যে ভীষন অসুস্থতা— অরাজকতা, বিকার-বিকৃতি, যে তমসাচ্ছন্ন ঘোর সঙ্কট পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা’ অনেকাংশেই এই ধর্মের গর্ভে সৃষ্ট। ধর্ম নিজেই যদি অজ্ঞান-অন্ধ —দুষিত —অসুস্থ, বিকারগ্রস্ত হয়, তার গর্ভজাত সন্তান ভাল হয় কীকরে! দু-একজন ব্যতিক্রমী মানুষকে নিয়ে আহ্লাদিত হলে হবেনা!

সারাবিশ্বে যত গন্ডগোল— যত সমস্যা— সঙ্কট, তার অধিকাংশের জন্যই দায়ী হলো— অন্ধ-বিশ্বাস। যে ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে আমার সম্যক জ্ঞান নেই, সেই ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে কোনো ধারণাকে ‘সত্য’ বলে— নিশ্চিতভাবে মনে স্থান দেওয়াই হলো— বিশ্বাস বা অন্ধ-বিশ্বাস। এযে কত বিপদজনক —কী মারাত্মক, তা’ একটু সজাগ দৃষ্টিতে চারিদিকে তাকালেই বোঝা যাবে। বোঝা না গেলে, —সে-ও হবে ঐ অন্ধ-বিশ্বাসের কারণেই। জ্ঞানী মানুষ মাত্রই তাদের ধারণা—বিশ্বাস—জ্ঞানকে আপাতসত্য জ্ঞান ক’রে থাকেন।

পুরস্কারের লোভ আর শাস্তির ভয় দেখিয়ে পশুকে এবং পশুতুল্য নিম্নচেতনস্তরের মানুষকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। একটু জ্ঞান-চক্ষু ফুটলে— সচেতন মনের একটু বিকাশ ঘটলেই— সে মানুষ তখন আর ওসবের দ্বারা কারো নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। তাই, ধর্মও চায়না মানুষের চেতনার বিকাশ ঘটুক। স্বর্গলাভ—পূণ্যলাভ প্রভৃতি পুরস্কারের লোভ আর নরকাদি শাস্তির ভয় দেখিয়ে, দিব্য-চেতনার নামে আজগুবি দার্শনিক তত্ত্বে ভুলিয়ে— মানুষকে অচেতন করে রাখতেই সে বেশি আগ্রহী।

আজকের এই করুণ পরিস্থিতিতে মানবজাতিকে রক্ষা করতে, চাই— ‘মানবধর্ম’। যে ধর্ম মানুষকে মিথ্যার পিছনে না ছুটিয়ে— ছোটাবে ‘পূর্ণ বিকশিত মানুষ’ হওয়ার লক্ষ্যে। হ্যাঁ, ইতিমধ্যে সে-ও একটু একটু করে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে! এখন, তাকে অভ্যর্থনা জানাতে হবে আমাদের নিজেরদের স্বার্থেই। 

 

গুগল বা ফেসবুকে গিয়ে— ‘মহাধর্ম’ (MahaDharma) সার্চ করলেই তার দেখা পাওয়া যাবে। মানব ধর্মই মহাধর্ম।

========================================================

 

যুগ যুগ ধরে মানুষ প্রচলিত ধর্মীয় শাসন ও শিক্ষার অধিনে থেকেও, তার যথেষ্ট মনোবিকাশ ঘটেনি এখনো। যে তিমির সেই তিমিরেই পড়ে আছে।

এর চাইতে, মানুষ যদি প্রচলিত ধর্ম হতে মুক্ত থেকে, স্বাভাবিক মানব ধর্ম অনুযায়ী পৃথিবীর মুক্ত পাঠশালায় শিক্ষা গ্রহণ করতো, তাহলে অনেক অনেক বেশি বিকাশলাভ করতে পারতো।

 

========================================================

 

 

ধর্ম-টা ব‍্যক্তিগত ব‍্যপার, ব‍্যক্তি স্বার্থের ব‍্যপার হলে বিশেষ সমস‍্যা থাকেনা। কিন্তু, সেটা যখন গোষ্ঠিগত ব‍্যপার, গোষ্ঠীগত স্বার্থের ব‍্যপার হয়, এবং সেই গোষ্ঠি যদি গোড়া মৌলবাদী গোষ্ঠি হয়, তখন সেই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত অথচ স্বাধীনচেতা বা মুক্তমনের মানুষের পক্ষে তা' সঙ্কটের কারণ হয়ে ওঠে। 

কেউ কেউ প্রচলিত ধর্মের মধ্যে থেকে, তার সেই ধর্মকে সংশোধন ---পরিবর্তন করতে চায়। খুব উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব‍্যক্তি হলে, কিছুটা পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হলেও হতে পারে। সাধারণ মানুষের পক্ষে তা' সম্ভব হবেনা। উল্টে প্রাণটাই যাবে।
​===========================

 

 

দিব্যজ্ঞান লাভ করতে চাও? —আগে কান্ডজ্ঞান লাভ করো! (ভক্ত ও অনুগামীদের প্রতি মহামানসের উক্তি)

যদি দিব্যজ্ঞান লাভ করতে চাও, তাহলে— আগে কান্ডজ্ঞান লাভ করো। মোহ-মায়া —অজ্ঞানতা থেকে মুক্ত হতে পারলে, —তবেই মুক্তিলাভ সম্ভব হবে।

পূর্ণ বিকাশলাভই এই জীবনের অন্তিম লক্ষ্য। তার জন্য পায়ে পায়ে— সমস্ত পথ অতিক্রম করতে হবে। চেতনার পথে যত এগিয়ে যাবে, —ততই বন্ধন মুক্ত হবে, —ততই স্বাধীন হয়ে উঠবে। তবে, ফাঁকি দিয়ে— ফাঁক রেখে, কাউকে ঘুষ দিয়ে— কোনো জাদু-মন্ত্র বলে এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথ ডিঙিয়ে যাওয়ার অলীক চিন্তা কোরো না। 

 

যে যতই প্রলোভন দেখাক না কেন, বর্তমান মানব-চেতন স্তরে কোনো ভাবেই মুক্তিলাভ— মোক্ষলাভ— দিব্যজ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। তাই, যথাসম্ভব মুক্তমনা হয়ে, যথাসাধ্য সজাগ— সচেতন থেকে, আত্মজ্ঞান— আত্মবিকাশ লাভে সচেষ্ট হও।

কেউ অত্যল্প অতিন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী হয়েই— নিজেকে একজন কেউকেটা ভাবছে। আবার কেউ কেউ মানুষ ঠকানোর মতো কিছু ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা, —কিছু প্রতারণা মূলক কৌশল অথবা প্রেতশক্তির সাহায্য নিয়ে— নিজেদেরকে ঈশ্বর অথবা ঈশ্বরের প্রতিনিধি রূপে উপস্থাপিত করছে।

কান্ডজ্ঞান বিহিন— লোভী মানুষই প্রধানত এদের শিকার হয়। এদের মতো লোভে পড়ে, বিকাশের পথ ছেড়ে— বিপথগামী হয়োনা।

আগের কাজ আগে করো। পূর্ণ বিকশিত মানুষ হওয়ার আপাত লক্ষ্যে এগিয়ে যাও। তার পরের ধাপে— ‘মহামানব’ হও। তারপর আস্তে আস্তে দেবচেতন স্তরে উন্নীত হবে। তারওপরে ‘মহাদেব’ চেতনা সম্পন্ন হয়ে উঠবে, এবং ক্রমে পূর্ণ বিকাশলাভ করবে। এই উচ্চতর থেকে উচ্চতম চেতনস্তর গুলির বিকাশ ঘটবে— ভিন্ন ভিন্ন লোকে, —এই পৃথিবীতে নয়।

মনেরেখ, ঈশ্বরের এই বিধান— এই জাগতিক ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন করার সাধ্য— ঈশ্বরেরও নেই। সে তুমি যতই তার পূজা— উপাসনা ও প্রার্থনা করো না কেন!

 

=========================================================

 

ঈশ্বর আছে কি নেই, থাকলে তার স্বরূপ কি —তা’ যুক্তি-বিচার দিয়ে বোঝার চেষ্টা কর। অজ্ঞান-অন্ধের মতো কেন চোখ বুঁজে তা’ বিশ্বাস করবে!?

মনে রেখ, যুক্তি—কারণ ছাড়া এখানে কোন কিছুই ঘটে না। ঈশ্বরকে যুক্তি-বিচারের সাহায্যে বোঝা যায় না, —একথা ঠিক নয়। তোমার যেটুকু বোঝার ক্ষমতা আছে— সে টুকুই বোঝ। কল্পনার ঈশ্বরকে বিশ্বাস করার চাইতে তা’ অনেক গুণে ভালো। কল্পনার ঈশ্বরকে নিয়ে তৃপ্ত থাকা— মুর্খের স্বর্গে বাস করার সমান।

ঈশ্বরকে তার স্বরূপে জানা—বোঝার ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকলে, ‘মহাধর্ম’ পুস্তকটি তোমার কাজে লাগতে পারে। মানব ধর্ম হলো মানুষের মূলগত ধর্ম। মানব ধর্মই মহাধর্ম।

ঈশ্বর প্রসঙ্গে মহর্ষি মহামানস

আমরা সবাই একই চেতন-স্তরে অবস্থান না করার ফলে, ঈশ্বর সম্পর্কে আমাদের ধারণাও সবার ক্ষেত্রে একরূপ নয়। আবার আধ্যাত্মিক (দৃষ্টিকোণ থেকে) ঈশ্বর, আর প্রচলিত ধর্মীও ইশ্বর একরূপ নয়। যখন তুমি নিজেকে নিজের স্বরূপে জানতে পারবে, একমাত্র তখনই তুমি ঈশ্বরকে তার প্রকৃত রূপে বা স্বরূপে জানতে সক্ষম হবে— অনেকাংশে। এই মহাবিশ্বরূপ ঈশ্বরকে— মহাসাগররূপে কল্পনা করলে, তুমি হলে তার একবিন্দু জল বা পাণি স্বরূপ। এই মহাসাগরকে জানতে, সর্বাগ্রে— তার কয়েক বিন্দু জল বা পাণি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে তোমাকে। তুমি নিজেকে এবং নিজের চারিপাশকে সঠিকভাবে যত বেশি জানতে পারবে, ঈশ্বরকেও জানতে পারবে তত বেশি।

আমরা (মহাবাদ ও মহাধর্ম-এর অনুগামীগণ) মনে করি, এই মহাবিশ্ব হলো ঈশ্বরের শরীর, এবং এই শরীরের মধ্যে আছে একটি মন, তা-ই হলো ঈশ্বর-মন। এই মহাবিশ্বরূপ ‘শরীর’ আর এই মহাজাগতিক ‘মন’ মিলে একত্রে ঈশ্বর অস্তিত্ব।

এই মহাবিশ্ব— ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট নয়, সে নিজেই ঈশ্বর। এই মহাবিশ্বে ঈশ্বর অতিরিক্ত আর কিছুর অস্তিত্ব নেই (একমাত্র সুপ্ত বা প্রচ্ছন্ন আদিসত্ত্বা ছাড়া)। শুধুমাত্র এর কিছু অংশ— যেমন জীব ও উদ্ভিদ ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে। যদিও ঈশ্বর এদের সৃষ্টি করেছে তার শরীর উপাদান থেকেই। আমাদের মনও সৃষ্টি হয়েছে— বিশ্ব-মন বা ঈশ্বর-মন থেকে। শুন্য থেকে কিছু সৃষ্টি হয়নি। আমরা সবাই ঈশ্বরের অর্থাৎ এই মহাবিশ্বেরই অংশ।

এই বিশ্ব-অস্তিত্বই হলো ঈশ্বর। যা সৃষ্ট হয়েছে আদিসত্ত্বা বা পরমাত্মা (সংস্কৃততে ব্রহ্ম) থেকে। এই আদিসত্ত্বা ঈশ্বর নয়, এবং এই জাগতিক কর্মকান্ডে তার বিশেষ ভূমিকা নেই। এই বিশ্ব-লীলায় আদিসত্ত্বা হলো নিরব ও প্রচ্ছন্ন দর্শকের মতো।

আদিসত্ত্বা— পরমাত্মা কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ বা পরিপূর্ণ নয়। পূর্ণতা হলো— পূর্ণ স্থির নিশ্চল— নিষ্ক্রিয় অবস্থা। পূর্ণতা থেকে কোনো সৃষ্টিই সম্ভব নয়। সেই অবস্থায় চাওয়ার কিছু থাকে না— পাওয়ারও কিছু নেই। সেই কারণে করারও কিছু নেই। সৃষ্টির প্রশ্নই আসেনা সেখানে।

আদিসত্ত্বাও পূর্ণ নয়। তারও আছে কিছু চাহিদা— কিছু অভাব। সে জানেনা, সে— কে, কেনই বা সে, আর কোথা থেকেই বা সে এসেছে বা তার উৎপত্তি হয়েছে। জানেনা তার পরিণতি কী। এই নিজেকে জানার ইচ্ছাই হলো— সৃষ্টির আদি কারণ। অগত্যা, স্ব-ইচ্ছায় নিজেকে হারিয়ে ফেলে, পুণরায় তাকে খোঁজা বা আত্মানুসন্ধান করাই হল— সৃষ্টির গোপন রহস্য।

একসময় এই মহাবিশ্ব— অস্তিত্ব সম্পন্ন হয়েছে বা জন্ম নিয়েছে, এবং একসময় এর মৃত্যু বা ধ্বংসও হবে। এই মহাবিশ্ব— মহাসৃষ্টি হলো আদিসত্ত্বার ইচ্ছার ফল। ঈশ্বরের জন্ম হয়েছে ঠিক একটি সদ্যজাত শিশুর মতো— শিশু-বিশ্ব রূপে। প্রায় অজ্ঞান-অচেতন একটি শিশুর জীবনযাত্রা শুরু হয়েছে— পূর্ন বিকাশলাভের উদ্দেশে। প্রায় অজ্ঞান-অচেতন অবস্থা থেকে পূর্ণ চেতনার লক্ষ্যে, কর্মতৎপরতা সহ দুঃখ-কষ্ট ও আনন্দলাভের মধ্য দিয়ে— জ্ঞান ও চেতনা লাভের জন্য অবিরাম চলাই তার নিয়তি। আর এটাই হলো জীবন।

পিতা-মাতার অপূর্ণ ইচ্ছাকে সন্তানের মধ্য দিয়ে পূর্ণ ক’রে তোলার সাথে— এই মহাসৃষ্টির উদ্দেশ্য-র অনেকটাই সাদৃশ্য আছে। ঈশ্বর বা মহাবিশ্ব-জীবনে অনেকগুলি ক্রমিক ধাপ রয়েছে, যথা— শৈশব, কৈশোর, যৌবন প্রভৃতি, —অনেকটা আমাদের জীবনের মতোই।শুধু ঈশ্বর নয়, আমরা সবাই চলেছি সেই এক লক্ষ্য পানে—। ইশ্বর বা মহাবিশ্বের অংশানুক্রমে আমরা প্রকৃতি—পরিস্থিতি এবং ঘটনা অনুসারে কেউ এগিয়ে আর কেউ পিছিয়ে আছি।সৃষ্টির ক্রমিক পর্বগুলি নিম্নরূপ—

১) আদিসত্ত্বা বা পরমাত্মা তার নিজ উপাদানে— প্রায় তার অনুরূপ একটি ক্ষুদ্র সত্ত্বা তৈরী করেছে প্রথমে।২) আদিসত্ত্বার প্রতিরূপ সত্ত্বাটি— স্ব-অভিভাবন বা আত্ম-সম্মোহন দ্বারা অর্থাৎ যোগনিদ্রা বলে, নিজ জ্ঞান-গুণ-ক্ষমতা বিস্মৃত হয়ে— অস্ফুট চেতন-স্তরে উপনীত হয়।৩) তারপর সে, প্রথম বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে— দ্বিধা বিভক্ত হয়ে, কিছুটা দুরিত্বে দুটি বিপরীত বিশ্বের বীজে পরিণত হয়।

৪) দুটি বিশ্ব-বীজ থেকে দুটি বিশ্ব-অস্তিত্ব (এই বিশ্ব ছাড়াও আছে আরেকটি বিপরীত বিশ্ব-অস্তিত্ব, একটি হলো ঈশ্বর, আর অপর বিশ্বকে বোঝার সুবিধার জন্য ‘ঈশ্বরী’ বলা যেতে পারে)-এর সৃষ্টি হয়, একই সময়ে দুটি মহা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। তারপর, বীজ থেকে ক্রমশ মহীরূহের মতো— মহাবিশ্বে পরিণত হতে থাকে (উভয় বিশ্ব-ই) অসংখ্য ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে।৫) পরবর্তীকালে, ঈশ্বর একসময় উদ্ভিদ ও জীব সৃষ্টির খেলায় মেতে ওঠে...।

এই হলো, অতিসংক্ষেপে মহা জীবন-চলার কথা (বিশদভাবে জানতে হলে, ‘মহাবাদ’ গ্রন্থটি পড়তে হবে)। এই জীবন-চলার মধ্যে বহু পর্ব আছে। আছে বহু কর্মকান্ড। এই বিশ্বরূপ ঈশ্বর সহ আমরা যতই এগিয়ে চলেছি, ততই অজ্ঞানতা— অচেতনতা ও মোহ থেকে মুক্ত হচ্ছি ক্রমশ। প্রকৃতপক্ষে, যথেষ্ট জ্ঞান-চেতনা লাভই এই জীবনের মূল লক্ষ্য।

ঈশ্বর সম্পর্কে সাধারণের ধারণা, ঈশ্বর শুধুই কল্যাণময়— শুভাকাঙ্খী— প্রেমময়, সৎ চিৎ আনন্দময়, জীবের বন্ধু। কিন্তু ঈশ্বরের প্রকৃত রূপ বা স্বরূপ তা’ নয়। ঈশ্বরের মধ্যে তার বিভিন্ন চেতন-স্তর ও অবস্থা অনুযায়ী শুভ-অশুভ, সৎ-অসৎ উভয় গুণ ও শক্তিই বিদ্যমান। এখানে উল্লেখযোগ্য, ঈশ্বর যদি সত্যই জীবের বন্ধু বা শুভাকাঙ্খী হতো, তাহলে জীবের মধ্যে খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক তৈরী করতো না।ঈশ্বর-মনের মধ্যে শুভাত্মক সৎ মন-অস্তিত্ব যেমন রয়েছে, তেমনি তার মধ্যে অশুভ— অসৎ মন-অস্তিত্বও রয়েছে। অসৎ বা শয়তান আসলে ঈশ্বরেরই আর এক দিক বা রূপ বা অস্তিত্ব।

ঈশ্বরের সন্তান ও অংশরূপে তার সাথে আমাদের বহু সাদৃশ্য বর্তমান। ক্রমবিকাশমান চেতনার পথে— ঈশ্বর যখন আমাদের অনুরূপ চেতন-স্তরে অবস্থান করেছে, তখন তার মানসিক অবস্থাও অনেকাংশে আমাদের মতই ছিলো। আমাদের মতোই ঈশ্বরের মন ও চেতনাও ক্রমশ বিকাশমান। বিকাশমান মনের কয়েকটি বিশেষ বিশেষ নিম্ন-চেতন-স্তর হলো— কয়েক প্রকারের অসৎ বা ঋণাত্মক মন-স্তর।ঈশ্বর ও আমাদের মধ্যে এই ঋণাত্মক বা শয়তান মনের বিকাশ ঘটে, নিম্ন-চেতন-স্তরগুলির বিশেষ বিশেষ স্তরে— অসুস্থ ও বিকারগ্রস্ত অবস্থায়। ক্রমশ চেতনা বিকাশের সাথে সাথে, এইসব নিম্ন-চেতন-স্তরের অসুস্থ ও বিকারগ্রস্ত মনগুলি সচেতন বা আরও উচ্চ-চেতন মনের প্রদীপের নীচে— অন্ধকারে আশ্রয় নেয়, অর্থাৎ অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে অন্তরালে চলে যায় তারা।

তাই বলে, একেবারে হারিয়ে যায় না কিছুই— সবই থাকে ফাইলের নীচে চাপা পড়া অবস্থায়। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, ঈশ্বররূপ এই মহাবিশ্বে ঈশ্বর অতিরিক্ত কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। এখানে ভালো-মন্দ যা কিছু আছে, সবই ইশ্বর বা ঈশ্বরের অংশ। মনের ক্রমবিকাশের স্তরগুলি সম্পর্কে অন্যত্র আলোচনা করেছি ('মন-আমি' দ্রষ্টব্য)।

তাইবলে, ঈশ্বরকে ভয় পাবার কিছু নেই। ঈশ্বর সৃষ্ট জীব কখনোই ঈশ্বরের শত্রু হতে পারে না। আবার, ঈশ্বরও কখনোই জীবকে শত্রু ভাবতে পারে না। ঈশ্বরের শত্রু হতে গেলে, যে ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, তা’ কখনোই জীবের পক্ষে লাভ করা সম্ভব নয়। জীবোত্তর জীবনে উচ্চতর চেতন-স্তরে— সে যতই উন্নীত হবে, ঈশ্বরের সাথে তার একাত্মতা বৃদ্ধি পাবে ততই।

জীবের প্রতি রুষ্ট বা অসন্তুস্ট হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ, জীব যা কিছু করে, —সবই সে জাগতিক ব্যবস্থার দ্বারা চালিত হয়েই ক’রে থাকে। স্বতন্ত্রভাবে তার পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। তাই, তার কর্মের জন্য সে দায়ী নয়।

আমাদের ক্ষেত্রে যেমন— আমরাই আমাদের বড় শত্রু। ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই নিজের বড় শত্রু (অজ্ঞানতার কারণে)। তেমনি ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও। ঈশ্বরের মধ্যেও (নিম্ন চেতন-স্তরগুলিতে) চলে অন্তর্দ্বন্দ্ব। সে নিজেই তার নিজের শত্রু। এই অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে, ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে— মহাবিশ্ব জুড়ে। অবশ্য তার কুফল ভুগতে হয় জীবকেও। কিন্তু জীব এখানে অসহায়, তার পক্ষে ঈশ্বরকে শান্ত করা— প্রশমিত করা সম্ভব নয়। পূজা-পাঠ, প্রার্থনা—উপাসনা কোনো কিছুই ঈশ্বরকে টলাতে সক্ষম নয়।

তবে সান্তনা এই যে, ঈশ্বর এখন ক্রমবিকাশের পথ ধরে— অনেক উচ্চ চেতন-স্তরে উপনীত হয়েছে। তার ঋণাত্মক বা শয়তান মন এখন অতীতের অন্ধকারে প্রায় সুপ্ত অবস্থায় চলে গেছে। সে এখন আর সৃষ্টির ব্যপারে— কিশোর-যৌবনের লীলা-খেলার ব্যপারে অনেকটাই উদাসীন।

এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমরা যেমন— যা কিছু করছি— ভাবছি, সবই বাধ্য হয়ে করছি। জগতের অংশরূপে পূর্ব-নির্ধারিত জাগতিক ঘটনা পরম্পরার মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে সবাইকে। ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও তেমনি। ঈশ্বর নিজেই এই জগত স্বরূপ। তার মধ্যে যাকিছু ঘটছে, প্রকৃতপক্ষে তার উপর ঈশ্বরের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তার ভাবনা-চিন্তা-কর্ম সবই পূর্ব-নির্ধারিতভাবে যখন যেটা ঘটার ঘটে চলেছে। এরই নাম ভাগ্য। সে যেটা নিয়ন্ত্রণ করছে সেটাও পূর্ব-নির্ধারিতভাবে করতে বাধ্য হচ্ছে সে। অপ্রিয় সত্যটা হলো— ভাগ্য ঈশ্বরের থেকেও বলবান।

এই পূর্ব-নির্ধারণ ঘটেছে সৃষ্টির শুরুতেই। সৃষ্টির শুরুতেই সমস্ত চিত্রনাট্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। কখন কোথায় কী ঘটবে, সবকিছুই স্থির হয়ে গেছে— সৃষ্টি শুরু হবার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। যেমন একটি বিস্ফোরণ ঘটার সাথে সাথেই স্থির হয়ে যায়— তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় কখন— কোথায় কী ঘটবে। সৃষ্টির শুরুও তো আসলে একটা বিস্ফোরণ বা মহা-বিস্ফোরণ!

ঈশ্বর এই জগতের সবকিছু চালনা বা পরিচালনা করে না। তা' করে স্বয়ংক্রিয় জাগতিক ব‍্যবস্থা। যেমন, তুমি তোমার শরীর ও মনের মধ্যে সংঘটিত হওয়া সমস্ত কিছু চালনা বা পরিচালনা করনা। তা' করে তোমার শারীরিক ও মানসিক ব‍্যবস্থা।

এমনকি, তুমিও চালিত বা পরিচালিত হও এই ব‍্যবস্থার দ্বারাই। আর, তোমার মতোই ঈশ্বরও চালিত বা পরিচালিত হয় এই জাগতিক বা মহাজাগতিক ব‍্যবস্থার দ্বারাই।

ঈশ্বর প্রসঙ্গে –খুব স্বাভাবিকভাবেই দেব-দেবীদের কথা এসে যায়। বহু মানুষই ঈশ্বর ও দেব-দেবী সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে, বিভিন্ন দেব-দেবীকেই ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা—উপাসনা করে থাকে। ‘মহাবাদ’-এ উক্ত দেব-চেতন-স্তরের বাসিন্দারাই প্রকৃত অর্থে দেবতা। এখানে দেব-দেবী বলে কিছু নেই। কারণ, এই উচ্চ চেতন-স্তরে কোনো লিঙ্গ ভেদ নেই। নেই বংশবৃদ্ধির ব্যবস্থা।

সারা পৃথিবীতে প্রচলিত বা কাল্পনিক দেব-দেবী বা দেবতাগণ আর মহাবাদোক্ত দেবতাগণ এক নয়। এরা অনেক বেশি উচ্চ চেতন-স্তরের সত্ত্বা। পৃথিবীতে অবতরণ ক’রে মানুষের সাথে নানারূপ লীলা-খেলায় অংশ নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

সংস্কৃতভাষায় দেবতার অর্থ জ্ঞানী-বিদ্বজন, যাঁরা তৎকালীন সাধারণ মানুষ থেকে বেশ কিছুটা উচ্চশ্রেণীর মানুষ।* ভগবান বলতেও সংস্কৃতভাষায় শুধু ঈশ্বরকেই বোঝায় না। দেবতুল্য ব্যক্তি, শৌর্য-বীর্যবান, ঐশ্বর্যশালি, জ্ঞানী, যশবান ও সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকেও ভগবান বলা হয়। আর, এর ফলেই, সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে ঈশ্বর ও দেবতা সম্পর্কে গুলিয়ে ফেলে।

আর, একটা গুহ্য কথা, পরোলোকের কিছু কিছু নিম্ন-চেতন-স্তরের বিদেহী আত্মা (বা দুরাত্মা)-দেরকে অনেক সময়েই বিভিন্ন পূজিত দেব-দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায়। বিশেষতঃ যে সব মন্দির ও তীর্থস্থানে অনাচার—কদাচার—দুরাচারে পূর্ণ, সেইসব স্থানেই ভূত-প্রেত-পিশাচাদি নিম্ন-চেতন-স্তরের প্রেত-আত্মাদের ভীড়। এদের মধ্যে কিছু কিছু চতুর প্রতারক মনের প্রেত-আত্মা অনেক সময়েই অজ্ঞান-অন্ধ-অসহায় মানুষ বা দেব-ভক্তদের প্রতারণা ক’রে আনন্দ পায়, এবং তাদের পূজা-অর্ঘাদি আত্মসাৎ ক’রে তৃপ্ত হয়।

এদের কেরামতিতেই অনেক দেবস্থান এবং অনেক দেব-দেবী হয়ে ওঠে জাগ্রত। দেবতা সম্পর্কে সঠীক ধারণা না থাকায়, অনেক মানুষই প্রতারিত হয়ে আসছে এইভাবে। অনেকেই ঈশ্বর আর দেবতার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পেরে মায়ার গোলকধাঁধায় ঘুরে মরছে।

*বিদ্বাংসোদেবা (সূত্রঃ তৈত্তিরীয় উপনিষদ ২/৩ সুক্ত)x

বিকাশ অর্থাৎ মনোবিকাশ। পূর্ণবিকশিত (মনের) মানুষ হয়ে ওঠাই মানবজীবনের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য। এই লক্ষ্য-পথে অগ্রসর হওয়াই মানুষের মৌলিক ধর্ম। মানবধর্ম।

কিন্তু, প্রচলিত ও তথাকথিত ধর্ম মানুষকে সেই বিকাশপথ থেকে সরিয়ে দিয়ে বিপথে ঠেলে দিয়েছে। এই বিপথগামীতা কখনোই মানুষের ধর্ম হতে পারে না। এ' হলো অধর্ম।

আবার বলছি, মানুষকে তার মূল ও প্রধান স্বার্থ--- বিকাশধর্ম থেকে বঞ্চিত করে, ভুল স্বার্থবোধে ---অধর্মে প্ররোচিত করে যা--- তা' কখনোই মানুষের ধর্ম হতে পারেনা। তা' ধর্ম নামে আসলে অধর্ম। তা' মানবজাতির প্রধান শত্রু।

মহামনন 
আত্মবিকাশ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সর্বপ্রকার সাহায্য কামনা করি। 
বাড়ি, জমি, শ্রম, অর্থ, অন্যান্য 
বস্তু দান করুন।
কলকাতা বা তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সহজ শর্তে উপযুক্ত বাড়ি বা হলঘর হলেও শুরু করা যাবে।

শিকার 
~মহামানস

পশু-পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণী জগতে দুই শ্রেণির প্রাণী দেখা যাবে। 
এক শ্রেণী খাদ্য ও অপর শ্রেণী খাদক। একশ্রেণীর প্রাণী হলো অপর খাদক শ্রেণীর খাদ্য। এখানে খাদ্য ও খাদকের চেহারা জাতি ভিন্ন ভিন্ন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, একই জাতির প্রাণী--- বড় ছোটকে, সবল দুর্বলকেও আহার করে থাকে। আহারের জন্য বধ করে থাকে।

মানুষের মধ্যেও ঐ দুই শ্রেণী বর্তমান। তবে, মানুষের ক্ষেত্রে ঐ দুই শ্রেণীর প্রাণী একই চেহারার--- একই জাতির অন্তর্গত। মানুষতো কিছু উচ্চ শ্রেণীর প্রাণী, তাই, মানুষের ক্ষেত্রে, সরাসরি আহার বা মাংস ভক্ষণ হয়না। একটু ভিন্নভাবে এবং ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থে--- এক শ্রেণীর মানুষ অপর শ্রেণীর মানুষকে বধ করে থাকে।

একই চেহারার কারণে--- একই জাতির অন্তর্গত হওয়ায়, এবং সরাসরি খাদ্যের সম্পর্ক না থাকায়, শিকারিকে শিকার সবসময় চিনে উঠতে পারেনা এবং সাবধান হতে পারেনা। শিকারি কিন্তু তার শিকারকে ঠিকই চেনে।

যেসব প্রাণী তৃণভোজী শাকাহারী বা উদ্ভিদভোজী, তারা কোনো প্রাণীর মাংস আহার করে না। তবে, স্বার্থ রক্ষার জন্য, মাংস আহারের উদ্দেশ্য ছাড়াই, কোনো কোনো সময় সেই শ্রেণীর সবল প্রাণী--- নিজ শ্রেণীর প্রাণীকে বধ করতে পারে।
সেইরূপ, শাকাহারী মানুষও বিভিন্ন স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অপরাপর মানুষকে বধ বা শিকার করতে পারে।

এই জগৎ ও আমরা
~মহামানস

এই জগতে---এখানে, যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে। জ্ঞান ও চেতনার স্বল্পতার কারণে আমরা জানতে পারি না, কখন কি ঘটবে। তাই, সবসময় সর্বপ্রকার ঘটনার জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকলে, যা-ই ঘটুক না কেন--- বিশেষ মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হবে না।

এটাই হবে, অথবা এটা হতেই হবে, বা পেতেই হবে--- এই রকম অন্ধ-আবেগ বা অন্ধ-বিশ্বাসের ফলে মানুষ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এখানে যখন যা হবার, তা-ই হয়। সবই পূর্ব নির্ধারিত ( 'মহা-সৃষ্টি-রহস্য উন্মোচন' প্রবন্ধের মধ্যে 'ভাগ্য' আসলে কী তা' জানুন)।

তাই, কোনো কিছু আশা করলেও, মনে রাখতে হবে--- আশা মতো কিছু নাও ঘটতে পারে। আশা মতো কিছু না ঘটলে, ---আমি যেন ভেঙে না পড়ি। আগের থেকেই ---এইরূপ স্ব- অভিভাবন বা সেল্ফ- প্রোগ্রামিং করা থাকলে, বিশেষ কোনো সমস্যা দেখা দেবে না।

স্বপ্ন কথা
~মহামানস

স্বপ্নের স্রষ্টা বা রচনাকার হলো আমাদের অবচেতন মন। এই মনটি এক বড় চলচ্চিত্রকার।

স্বপ্ন শুধুমাত্র নিদ্রাকালেই সৃষ্টি হয়না, তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায়, এমনকি একটু ঝিম মেরে পড়ে থাকলেও স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে যেতে পারে। যাদের অবচেতন মন ---সচেতন মন থেকে বেশি শক্তিশালী, অস্থির-উত্তেজিত মন, যারা বায়ুপ্রধান বা স্নায়বিক প্রকৃতির, তারা কিছুক্ষণ একটু চুপ ক'রে শুয়ে বা বসে থাকলেও, তাদের স্বপ্ন রচনা শুরু হয়ে যেতে পারে। জাগ্রত অবস্থায় সৃষ্ট এই স্বপ্নকেই আমরা সাধারণত কল্পনা বলে থাকি। বেশি কল্পনাপ্রবণ মন--- জাগ্রত ও নিদ্রিত অবস্থায় অলৌকিক--- অবাস্তব--- উদ্ভট সব কল্পনা ও স্বপ্ন রচনা করতে পারে।

সচেতন মন কিছুটা সজাগ থাকলে, অবচেতন মন অনেক সময় সচেতন মনকে বুঝতে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে--- তাকে ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতীকী আকারেও স্বপ্ন রচনা ক'রে থাকে। এমন অনেক প্রতীকী স্বপ্ন রচিত হয়, অনেক সময়েই যার অর্থ বোঝা সম্ভব হয়না।

স্বপ্ন অনেক প্রকারের হয়ে থাকে, যেমন--- 
দৈনন্দিন কাজকর্ম, ঘটনা, চিন্তা-ভাবনা সংক্রান্ত জাবরকাটা স্বপ্ন হতে পারে। জাগ্রত অবস্থায় ভুলে যাওয়া কোনো কথা বা কোনো কিছু আমাদের স্বপ্নে প্রকাশ পেতে পারে। বিশেষ কোনো ইচ্ছা--- চাহিদা--- লোভ-লালসা, কোনো ভয়, আশঙ্কা, সন্দেহ, বিশ্বাস প্রভৃতি নিয়ে অবচেতন মন স্বপ্ন রচনা করতে পারে। কখনো কখনো ঐসব স্বপ্ন প্রতীকী আকারেও রচিত হতে পারে।


মনের মধ্যে জমে থাকা অপরাধবোধ , গ্লানি, দুঃখ-কষ্ট, শোক, হতাশা, অপমান, যৌনাকাঙ্খা প্রভৃতি স্বপ্নাকারে মনের পর্দায় প্রকাশ পেতে পারে। এছাড়া মৃত্যুভয় বা মরনাকাঙ্খা, প্রিয় বা অপ্রিয় ব‍্যক্তি, মৃতব‍্যক্তি মনের পর্দায় উঠে আসতে পারে।

এছাড়া, শরীর ও মনের অসুস্থতার কারণে, এবং মনের বিকারগ্রস্ত অবস্থায় অনেক প্রকারের উদ্ভট উদ্ভট কল্পনা ও স্বপ্ন সৃষ্টি হয়ে থাকে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে, খুব অনুভূতি প্রবণ মন--- অথবা বেশ দূরদর্শী মন, অথবা ভবিষ্যতের স্পষ্ট বা অস্পষ্ট ধারণা সম্পন্ন মন--- অনেক সময় নিদ্রার মধ্যে ভবিষ্যতের ঘটনাবলী স্বপ্নাকারে দেখতে সক্ষম হতে পারে।

অনেক সময়, নিদ্রাকালে মন যখন নিস্তরঙ্গ---শান্তিপূর্ণ থাকে, তখন পূর্বের কোনো বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা অথবা কোনো সমস্যার সমাধান বা সমাধান সূত্র স্বপ্নাকারে দেখা দিতে পারে। আসলে, নিদ্রাকালেও ভিতরে ভিতরে ঐ বিষয় নিয়ে নিজের অজান্তেই চিন্তা-ভাবনা চলতে থাকে।

এছাড়া, 'স্বপ্ন'--- আমাদের 'মন' 'সফ্টওয়্যারের ক্লিনিং সিস্টেম হিসাবেও কাজ করে।

স্বপ্ন রচনাকার এই পাগল মনটি এতটাই কলাকুশল এবং খামখেয়ালী, যে কখন সে কি করবে, কি কল্পনা করবে, তার হদিস পাওয়া খুব মুস্কিল। তার সৃজন ক্ষমতা এতটাই প্রবল এবং বেগবান, যে সে পূর্ব অভিজ্ঞতা লব্ধ--- বিভিন্ন বস্তু, প্রাণী বা উদ্ভিদ অথবা বিভিন্ন ব‍্যক্তির বিভিন্ন ইমেজের অংশ জুড়ে জুড়ে তৎক্ষণাৎ নতুন নতুন বস্তু, প্রাণী বা ব‍্যক্তির ইমেজ সৃষ্টি করতে সক্ষম। যাদের সাথে পূর্বে দেখা কোনো ব‍্যক্তি বা কোনো কিছুর সাথেই আপাত দৃষ্টিতে মিল খুঁজে পাওয়া মুস্কিল।

সচেতন মনের দুর্বলতা বা অনুপস্থিতির সুযোগে এই মনটি কি করতে পারে, আর কি না পারে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। স্বপ্নকে যদি ভবিষ্যতে কোনো প্রযুক্তির সাহায্যে রেকর্ডিং করা সম্ভব হয়, তখন এক নতুন জগত আমাদের সামনে উন্মোচিত হবে।

স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে--- সবকিছুই মানুষের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া যায় না। বহু মানুষই স্বাধীনতা লাভের যোগ্য হয়ে ওঠেনি এখনও। সবার আগে তাদের স্বাধীনতা লাভের যোগ্য ক'রে তুলতে হবে।

অজ্ঞান-অন্ধ মানুষের তো অনেক কিছুই ইচ্ছা করে। সেইসব ইচ্ছাগুলো কার্যকর হলে, তা' তাদের পক্ষে--- মানবজাতির পক্ষে হানিকর হবে কিনা, তা' যুক্তি-বিজ্ঞানসহ বিচার ক'রে দেখতে হবে, এবং যা উচিত মনে হবে--- তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

ধর্মীয় বিধান--- মানেই, তার সব পরিত‍্যাজ‍্য এবং সব অগ্রাহ্য করতে হবে, এমন নয়। তার মধ‍্যেও কিছু ভালো, কিছু সত্য রয়েছে। যেখানে যতটুকু মণি-মুক্ত পাওয়া যাবে, সেটুকু গ্রহন ক'রে, বাকী আবর্জনা যা আছে, তাকে পরিত্যাগ করতে হবে আমাদের।

আমরা ক্রমবিকাশমান প্রগতিশীল মানুষ। চিরসত‍্য--- পরমসত‍্য এখনও আমাদের কাছে অধরা রয়েছে। কোনো কিছুকে চিরসত‍্য বা শেষ কথা ভেবে, তাকে আঁকড়ে ধরে থাকলে--- আমাদের বিকাশ--- অগ্রগতি থমকে যাবে।

আপাত বিচারে যা সঠিক মনে হচ্ছে, পরবর্তী কালে তা-ই আবার বেঠিক মনে হতে পারে। তখন আবার নতুন করে বিচার-বিশ্লেষণ ক'রে ---তখনকার হিসাবে যা সঠিক মনে হবে, তাকেই গ্রহন করতে হবে আমাদের। এই ভাবেই আপাত সত‍্যের হাত ধরে, পরম সত‍্যের লক্ষ্য পানে এগিয়ে যাওয়াই হলো প্রগতিশীল জীবন।

মানব ধর্মই মহাধর্ম

বিশ্বাসের চশমাটাকে খুলে রেখে দেখো

মহাধর্ম ও মহাবাদ-এর মধ্যে তুমি তোমার বিশ্বাসের ঈশ্বরকে খুঁজতে যেওনা। –পাবেনা। তথাকথিত স্বর্গলাভ– ঈশ্বরলাভ অথবা ব্রহ্মলাভের কোন পথ বা পদ্ধতির সন্ধান নেই এখানে।

বিশ্বাসের চশমাটাকে খুলে রেখে, যথাসম্ভব প্রভাবমুক্ত হয়ে– খোলা মন নিয়ে, সত্যানুসন্ধিত্সু হয়ে– এর গভীরে প্রবেশ করলে, তবেই বিস্ময়কর সত্য তোমার কাছে প্রকাশলাভ করবে।

মহাধর্ম ও মহাবাদ হলো– যথাক্রমে এক স্বতন্ত্র ধর্ম এবং স্বতন্ত্র মতবাদ। বিভিন্ন শাস্ত্র –বিভিন্ন মতবাদ অথবা প্রচলিত ধ্যান-ধারণার সাথে এর তুলনামূলক বিচার করতে গেলে– ধন্দে পড়ে যাবে। দেখবে, কোথাও হয়তো মিলছে– কোথাও মিলছে না। তারফলে, তোমরা অনেকেই মানসিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে– হতবুদ্ধি হয়ে যেতে পার।

তাই, মহাধর্ম ও মহাবাদ-এর দ্বারা লাভবান হতে চাইলে, একে এর দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যুক্তিবাদী সচেতন মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

ঠিকমতো উপলব্ধি হলে, তখন বুঝতে পারবে, কোনটা লভ্য –কোনটা লাভ করা সম্ভব, আর কোনটা আকাশ-কুসুম কল্পনা! বুঝতে পারবে, এতদিন কিভাবে মরিচিকার পিছনে ছুটে ছুটে মরেছো তুমি। বুঝতে পারবে মানব জীবনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য কী।

তুমি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবে, তোমার জীবনের অধিকাংশ অসাফল্য– পরাজয়– হানি, অধিকাংশ দুঃখ– কষ্ট– যন্ত্রনার পিছনে প্রধানত দায়ী– তোমার অজ্ঞানতা –তোমার অন্ধ-বিশ্বাস। সঠিকভাবে নিজেকে না জানার ফলে, তোমার সামনের মানুষকে ঠিকমতো চিনতে না পারার ফলে, তুমি বহুবার ঠকেছ– প্রতারিত হয়েছো। এর পুণরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে, যতদিন না তুমি আলস্যতা কাটিয়ে সজাগ–সচেতন থেকে– সত্য– মিথ্যা, বাস্তব– অবাস্তব-কে চেনার ক্ষমতা লাভ করছো।

নিজেকে সজাগ–সচেতন রেখে— প্রভাবমুক্ত হয়ে, যুক্তি-বিচার প্রয়োগ করে– সত্যানুসন্ধান করতে, –গভীরভাবে চিন্তা করতে, অনেকটাই মানসিক পরশ্রম করতে হয়। তার চাইতে বিশ্বাস করা অনেক সহজ কাজ। বিশ্বাস করতে তেমন পরিশ্রমের দরকার হয় না। তাই, মানসিক শ্রমবিমুখ মানুষ –বিশ্বাসের পথটাই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু তার ফলে যে কী ক্ষতি হয়, –তা’ বোঝার জন্যেও মানসিক পরিশ্রম করতে সে নারাজ বা অপারক।

বিশ্বাসের পথে আত্মোপলব্ধি –সত্যোপলব্ধি –ঈশ্বরলাভ অথবা ঈশ্বরত্ব লাভ কিছুই সম্ভব হয় না। তবু, মানুষ বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধ’রে ছুটে–ছুটে মরে। তাই, মানুষকে সজাগ-সচেতন –যুক্তিবাদী –সত্যানুসন্ধিত্সু ক’রে তুলতে, মানুষের জীবনে একের পর এক দুর্ভাগ্য নেমে আসে। মানুষ যথেষ্ট সজাগ-সচেতন না হওয়াবধি বারবার আঘাত আসতে থাকে, এবং আসতেই থাকে।

বিশ্বাসের দ্বারা পৃথিবীতে যতটুকু ভালো হয়েছে, মন্দ হয়েছে তার চাইতে অনেক গুণ বেশি। সারা পৃথিবী জুড়ে যত অমানবিক কর্ম সংঘটিত হয়েছে ও হচ্ছে, তার অধিক অংশের মূলেই আছে বিশ্বাস। অন্ধ বিশ্বাস।

আর, যদি মনে কর, তোমার বিশ্বাসের পথই শ্রেষ্ঠ পথ, ওটাই শেষ কথা, তাহলে বুঝতে হবে, মহাধর্ম ও মহাবাদ তোমার জন্য নয়।

মহাধর্ম ও মহাবাদ সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে, গুগল সার্চ করুন> MahaDharma / MahaVad / MahaManan

123.jpg
bottom of page