মহাধর্ম-উক্ত মনোবিকাশের তথা মানব বিকাশের পথই হলো মানুষের একমাত্র মুক্তির পথ।
সন্তুষ্ট থাকা-- ভালো থাকার ভালো উপায় হলেও, সন্তুষ্টি হলো বিকাশের পরিপন্থী। তাই, জাগতিক ব্যবস্থা আমাদেরকে সন্তুষ্ট থাকতে দেয় না।
~মহর্ষি মহামানস
অটোইমিউন ডিজিজ সম্পর্কে মহর্ষি মহামানসের সায়েন্টিফিক আর্টিকেল।
অটোইমিউন ডিজিজ হলো শরীরের এক আত্মঘাতী কার্যকলাপ। যা সেই যদুবংশ ধ্বংসের মতোই আগামী দিনে ব্যাপকভাবে ভয়ংকর মারাত্মক রূপ নিতে চলেছে।
আমাদের শরীর-মন সহ সমগ্র মহাবিশ্ব ও তার বিশ্বমনের মধ্যে রয়েছে পরস্পর বিরোধী সহজ প্রবৃত্তি। একাধারে সে গঠনাত্মক ---সৃজনাত্মক, অপরপক্ষে সে ধ্বংসাত্মক। তার চাহিদা মতো ঘটনা না ঘটার কারণে, তার চাহিদা মতো বা মন মতো সৃষ্টি করতে না পারার কারণে, সে নিজেকেই নিজে আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ক'রে ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে বহুবার। এবং এখনো ঘটিয়ে চলেছে। এই ভাঙ্গা-গড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে সে।
আমাদের ক্ষেত্রেও, আমাদের চাহিদা মতো--- মন মতো অনেক কিছুই ঘটে না। ফলে প্রতিনিয়ত মনোকষ্ট অবদমন ক'রে চলেছি আমরা। নিজের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ---মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছে আমাদের, --- এই ভাবে বেঁচে থাকার চাইতে নিজেকে ধ্বংস করে দেওয়াই বুঝি শ্রেয়। কেউ কেউ করছেও তা'।
নিজের সঙ্গে এবং বহু প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই ক'রে যুদ্ধবিধ্বস্ত জীবন কোনরকমে এগিয়ে চলেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
শুধু মানসিক ক্ষেত্রেই যে অবদমন ঘটছে তাই নয়, শারীরিক চাহিদারও অবদমন ঘটছে। এছাড়া সঠিক চিকিৎসার অভাবে রোগ-ব্যাধি ও শারীরিক কষ্টেরও অবদমন ঘটে চলেছে। এদিকে, পরিবেশ-পরিস্থিতি ---খাদ্য পানীয়, বাতাস প্রভৃতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটে চলেছে। পরিবর্তন ঘটে চলেছে আমাদের মনোজগৎ--- অন্তর্জগতেও। অনেক সময়েই, এই এত কিছুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এই বিষময় অবস্থার সঙ্গে যেন আর পেরে ওঠা যাচ্ছে না। সৃষ্টি হচ্ছে ইরিটেশন, বিরুদ্ধ ভাব ---বিদ্রোহী ভাব মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে।
শরীরের মধ্যেকার প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও দিশেহারা হয়ে পড়ছে, উত্তেজিত হয়ে পড়ছে এবং ক্রমশ বিগড়ে যাচ্ছে, এর ফলে আত্ম ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে সে। নিজেকে নিজেই গ্রাস করতে ---ধ্বংস করতে শুরু করছে সে তখন। যার কর্তব্যকর্ম ছিল রোগজীবাণু ও রোগবিষকে ধ্বংস করার, সে তা' না ক'রে নিজেই নিজেকে, নিজের সুস্থ কোষকে ধ্বংস করতে শুরু করে দিচ্ছে। নিজেকেই নিজে ক্ষতবিক্ষত ক'রে--- নিজেকে কুরে কুরে খেয়ে ক্রমশ আত্ম-ধ্বংসের পথ অবলম্বন করেছে। সমস্যা এমন ব্যাপক আকার ধারণ করতে চলেছে, যে আগামী দিন আমরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠছি।
সহজ কথায়, ইমিউন ডিজিজের ক্ষেত্রে, আমাদের ইমিউন সিস্টেম যে 'ইনবিল্ট প্রোগ্রাম' বা অন্তর্গ্রথিত সহজাত নির্দেশের দ্বারা তার কর্তব্য কর্ম করে থাকে, সেই 'প্রোগ্রাম' কোরাপ্টেড হওয়ার ফলে, এবং/অথবা অন্তর্নিহিত আত্মঘাতী সহজাত প্রবৃত্তির প্রভাবে--- সে অনেক সময় বিপরীত কর্ম করে থাকে। অর্থাৎ সে রোগজীবাণু ও রোগবিষকে ধ্বংস না ক'রে, নিজের সুস্থ কোষকেই ধ্বংস করতে শুরু করে তখন।
এই আত্মঘাতী প্রবনতা যে শুধু বয়ষ্কদের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে তা' নয়, অল্পবয়সীদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। অনেক ইরিটেবল বাচ্চাদের মধ্যেও দেখা যায়--- তারা দেওয়ালে সজোরে মাথা ঠুকছে। অথবা নিজের মাথায় আঘাত করেছে। 'ইরিটেবিলিটি' এবং আত্মঘাতী প্রবণতা একজনের মধ্যে বংশগতভাবেও আসতে পারে।
ইমিউন ডিজিজের ক্ষেত্রে 'ইরিটেবিলিটি' হলো একটি প্রধান কারণ। এই 'ইরিটেবিলিটি' -র পিছনে প্রধানত দায়ী হলো--- পরিবেশ দুষণ, খাদ্য-পানীয় দুষণ এবং মনোদুষণ। ক্রমশই বিষময় হয়ে উঠছে সমস্ত জগত।
এই সমস্ত আত্মঘাতী ব্যাপারগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অধিক অংশেই আমাদের সচেতন মনের অজ্ঞাতে ঘটে থাকে। কেউ কেউ কিছুটা বুঝতে পারলেও, তেমন গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে, ভিতরে ভিতরে ধ্বংসাত্মক ক্রিয়া চলতেই থাকে।
এবার আসি প্রতিকারের কথায়, বর্তমান 'মেডিকেল সায়েন্স' সাময়িক উপশম দায়ক কিছু ব্যবস্থাগ্রহণ ছাড়া এখনো পর্যন্ত এর সঠিক কারণ এবং প্রতিকার আবিষ্কার করে উঠতে পারেনি। তাই, এর প্রতিকারে--- মানসিক ও ধাতুগত লক্ষণ এর উপর ভিত্তি ক'রে, হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রেও যে সবাই সাফল্য পাবে, এমন নয়। এর সঠিক প্রতিকারের জন্য আমাদের 'মহাশবাসন' বা 'যোগনিদ্রা' অভ্যাস করতে হবে। আর ওষুধ হিসেবে প্রয়োগ করা যেতে পারে 'মহাপ্যাথি'-র ওষুধ।
যতদিন না মানুষ অন্ধবিশ্বাস, ধর্মোন্মাদনা ও রাজনৈতিক উন্মাদনা থেকে মুক্ত হচ্ছে, ততদিন মানবজাতির উন্নতি ঘটবে না।
~মহর্ষি মহামানস
আমি বিশেষ কোনো ধর্মের বিরুদ্ধেই কথা বলি না! শুধু বাস্তব তথ্য প্রমাণ এবং যুক্তির পক্ষে কথা বলি, কিন্তু এসব কথাই প্রচলিত ধর্মমতের বিরুদ্ধে যায়!
।। ভালোবাসার গোড়ার কথা ।।
~মহর্ষি মহামানস
ভালোবাসা মূলতঃ দুই প্রকার। সজ্ঞান--সচেতন ভালোবাসা, আর অজ্ঞান-- সহজাত ভালোবাসা।
প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই তার নিজের অজান্তেই প্রথম ভালোবাসা--- সহজাত ভালোবাসা হলো, ---নিজেকে ভালোবাসা। নিজের প্রতি ভালোবাসা।
এই নিজেকে ভালোবাসার উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে অপরাপর মানুষ ও জীবকে ভালোবাসা। যে বা যারা অংশত নিজের অনুরূপ তাদের প্রতি স্বভাবতই ভালোবাসা জন্মায়। তারপর, যাকিছু নিজেকে তৃপ্তি দেয়, আরাম-- আনন্দ দেয়, সুখ ও শান্তি দেয়, সেইসব বিষয়-বস্তুকে পছন্দ, এবং ক্রমে ভালোবাসা গড়ে ওঠে।
আর এর ব্যতীক্রম ঘটলেই, সেখানে ভালোবাসার অভাব দেখা দেয়।
অজ্ঞান-অন্ধ-আবেগপূর্ণ ভালোবাসা অনেক সময়েই উন্মাদনা সৃষ্টি করে--- বিপত্তি ঘটাতে পারে।কিন্তু সজ্ঞান-সচেতন ভালোবাসায় আবেগ কিছু কম থাকলেও, তা অনেকাংশে নিরাপদ এবং শুভ ফলপ্রদ।
ভালোবাসার মূলে থাকে স্বার্থ। সে-- জ্ঞাতেই হোক, আর অজ্ঞাতেই হোক, সহজাত অজ্ঞান ভালোবাসাই হোক, আর সজ্ঞান-- সচেতন ভালোবাসাই হোক, স্বার্থ-ই হলো ভালোবাসার মূল উৎস।
আমার তিক্ত কথায়, আমার উপরে রাগ করেও যদি তুমি মানবত্ব লাভের পথে এগিয়ে যেতে পারো, তাহলে সবচাইতে বেশি খুশি হবো আমিই।
~মহর্ষি মহামানস
শিষ্যদের প্রশ্নের উত্তরে মহর্ষি মহামানসের উক্তি।
মোহাচ্ছন্ন মানুষ, এই মানব জীবন লাভ করে--- সে নিজেকে মহা ধন্য মনে করে থাকে। এবং তার জন্য সে তার জন্ম দাতা মা-বাবা সহ ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ বোধ করে থাকে। তার সেই জীবন যতই দুঃখ-কষ্টের হোক, মোহমুক্ত না হওয়া অবধি সে জীবনের মায়া ত্যাগ করতে পারে না।
সন্তান জন্ম দেওয়াকেও সে তার মহান সৃজন কর্ম হিসাবে গন্য করে থাকে। যেন সে একটা বিরাট কিছু করে ফেলেছে, যার জন্য সে নিজেকে খুব গর্বিত বোধ করে থাকে। তার সেই সন্তানকে সে মানুষ করতে পারুক আর না-ই পারুক। সন্তানের জন্য সে আহার-- বাসস্থান---নিরাপত্তা দিতে পারুক আর না-ই পারুক।
আসলে, সে এসবই করে থাকে, তার ভিতরে অন্তর্গ্রথিত প্রোগ্রাম বা নির্দেশ অনুসারে। এক্ষেত্রে তার কোনো দোষ বা গুণ নেই। তার এই কাজের জন্য তাকে কোনো ভাবেই দায়ী করা যাবে না। বলা যায়, সে হলো নিমিত্ত মাত্র।