top of page

BLOG ARTICLES

Search

জীবাত্মা -- দিব‍্যাত্মা

  • Writer: Maharshi MahaManas
    Maharshi MahaManas
  • Aug 9, 2018
  • 11 min read

জীবাত্মা -- দিব‍্যাত্মা (পর্ব-- ২) ~মহর্ষি মহামানস





বিভিন্ন সময়ে বহু মানুষের কাছ থেকেই প্রশ্ন এসেছে আত্মা সম্পর্কে। আত্মা আছে কি-- নেই, থাকলে তা' কি রূপ। তার অশরীরী অস্তিত্ব আছে কি না, পুনর্জন্ম হয় কি না, এমনই বিবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাকে বহুবার।


এতদিন এড়িয়ে গেছি, বলেছি, যা বোঝানো সহজ নয়, যার প্রমাণ দেওয়া যায় না, ---তা নিয়ে কথা বলে কি হবে। বলেছি, এ' সম্পর্কে জানার সময় হয়নি এখনো। কিন্তু অনেকেই নাছোড়বান্দা। অগত্যা অতি সংক্ষেপে আজ কিছু বলব, ঠিক করেছি।


পরমাত্মা--- বিশ্বাত্মা বা ঈশ্বরাত্মা, জীবাত্মা নিয়ে মানুষের যত না আগ্রহ, তার থেকে বেশি আগ্রহ প্রেতাত্মা বা দিব‍্যাত্মা নিয়ে। তবে নতুন প্রজন্মের অনেক মানুষেরই চেতনা এখন অনেক উন্নত। প্রধানত তাদের কথা ভেবেই আজকের এই আত্মা আলোচনা। পরমাত্মা ও বিশ্বাত্মা বা ঈশ্বর সম্পর্কে সৃষ্টিতত্ত্ব অধ্যায় বলেছি। এখন, জীবাত্মা এবং প্রেতাত্মা বা দিব‍্যাত্মা সম্পর্কে বলব।


জীবাত্মাকে ভালোভাবে বুঝতে হলে প্রথমে বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে ---এর বাস্তব দিকটাকে ভালভাবে দেখা দরকার। সর্বাগ্রে জানতে হবে জীবাত্মা কি বা কাকে বলবো।


জীবের দেহময় অস্তিত্ব ছাড়াও রয়েছে আরও দুটি প্রধান অস্তিত্ব, ---প্রাণময় অস্তিত্ব এবং মনোময় বা চৈতন্যময় অস্তিত্ব। জীবাত্মা বলতে বাস্তব দৃষ্টিতে বোঝায়, যথাযথ দেহ প্রাণ সম্পন্ন সক্রিয় সচেতন জীবের মনোময় সত্তাটি---। মানুষের ক্ষেত্রে এই আমিত্ব স্বরূপ কর্তা ও ভোক্তাই হলো জীবাত্মা। যা জীবদেহকে ভিত্তি ক'রে কর্ম ও ভোগের মধ্য দিয়ে বিকাশ লাভ ক'রে চলেছে---। যার সঙ্গে নাড়ির যোগ রয়েছে বিশ্বাত্মা বা ঈশ্বরের সঙ্গে। অলক্ষ্যে সেখানে উপস্থিত রয়েছে আরো একজন উপভোক্তা, সে হলো সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্র পরিব‍্যপ্ত হয়ে থাকা--- পরমাত্মা।


মনোময় সত্তা বা জীবাত্মা সপ্রাণ সক্রিয় দেহের উপর নির্ভরশীল। বাস্তবে, দেহময় এবং প্রাণময় অস্তিত্ব লোপ পেলেই মনময় অস্তিত্বও লোপ পায়। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র ব‍্যতীত মনের কোনো অস্তিত্ব নেই। মন থাকলে, সেখানে মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্র থাকতে হবে। মন--- সে যত শক্তিশালী- ই হোক না কেন, মস্তিষ্ক রূপ যন্ত্র নির্ভর।


তাহলে ঈশ্বরেরও কি মস্তিষ্ক আছে! হ‍্যাঁ আছে, তোমার মস্তিষ্কটাকে কল্পনায় বহুগুণ বর্ধিত করো, আরো বড়--- আরও বড় করে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মত বিশাল আকার ভাবার চেষ্টা কর। দেখো, সেটা একটা মহাবিশ্বের মতই দেখাচ্ছে। বাস্তবে, এই মহাবিশ্বের অনেকটা অংশই হলো ঈশ্বরের মস্তিষ্ক। তবে ঈশ্বর মস্তিষ্ক--- আমাদের এই জৈব মস্তিষ্কের মত নয়। তার গঠন উপাদান কার্য প্রক্রিয়া ভিন্ন (যেমন ট্র‍্যানজিস্টার যুক্ত যন্ত্র এবং ডিজিটাল যন্ত্র)।


প্রাণময় অস্তিত্ব সম্পর্কে এই প্রসঙ্গে কিছু বলা প্রয়োজন। প্রাণ হলো প্রধানত তাপ, জৈব বিদ্যুৎশক্তি ও স্নায়বিক শক্তি। শরীরস্থ বিভিন্ন যান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে--- তা' থেকে গতি, বল প্রভৃতি আরও কয়েক প্রকার শক্তি বা কার্যক্ষমতার সৃষ্টি হয়, --- শরীরের বিভিন্ন প্রকার কার্যকর জীবনীশক্তি হিসাবে। মানস প্রক্রিয়ার পিছনেও রয়েছে-- প্রাণশক্তি থেকে বিভিন্ন যান্ত্রিক ব‍্যবস্থাক্রমে উদ্ভূত কয়েক প্রকার কার্যকর শক্তি।


প্রাণশক্তির অভাবে দেহ- মন- চেতনা সবই স্তব্ধ। প্রাণের অভাবে দেহ স্তব্ধ বা ক্রিয়া রহিত হলেও--- সঙ্গে সঙ্গে তার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়না। কিন্তু প্রাণশক্তির অভাবে মনের ক্রিয়া রহিত হওয়ায়, তার অস্তিত্ব লোপ পায়। কারণ ক্রিয়াতেই তার অস্তিত্ব প্রতিভাত হয়ে থাকে।


প্রাণশক্তি দেহযন্ত্রের মধ্যে--- বাইরের খাদ্য, আলো, জল, বাতাস প্রভৃতির যোগান সাপেক্ষে সৃষ্ট হয়ে, দেহযন্ত্রকে সচল সক্রিয় রাখার কার্যকরী শক্তি স্বরূপ। ব্যাপক দৃষ্টিতে ক্রিয়া শক্তিই প্রাণশক্তি। প্রাণশক্তি ছাড়া কোন ক্রিয়া হতে পারে না। জাগতিক সমস্ত ক্রিয়াই বিশ্বসত্তার এবং জীবের প্রাণশক্তির খেলা।

মন বা জীবাত্মাকে বুঝতে--- কম্পিউটার বা কম্পিউটারযুক্ত উন্নত মানের 'রোবট' হলো সবচাইতে ভালো নিদর্শন। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার হলো জীবের দেহময় অস্তিত্ব। আর সফটওয়ার হলো মনময় অস্তিত্ব। শরীরের মধ্যে একটি বহুমুখী কার্যকর বেসিক সফটওয়্যার আছে। মন সফটওয়্যার তার উপরে ভিত্তি করেই সৃষ্ট হয়েছে এবং কর্ম করে চলেছে। যদিও কম্পিউটারের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের তুলনায় আমাদের জৈব দেহ ও মন অনেক বেশি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জটিল যন্ত্র। মনরূপ সফটওয়্যার এবং তার প্রোগ্রামও অনেক বেশি উন্নত।


সফটওয়্যার মূলত দুই প্রকারের, এক--- অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার, আর দুই--- বিভিন্ন কাজের উপযোগী এপ্লিকেশন সফটওয়্যার। মূল অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার -এর উপর ভিত্তি করেই এপ্লিকেশন সফটওয়্যার গুলি কাজ করে থাকে। আধুনিক কালের উন্নত অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারের মধ্যেই নানা প্রকার কাজের উপযোগী অনেক এপ্লিকেশন সফটওয়্যার অন্তর্গত থাকে।

জীবের ক্ষেত্রে, বিশেষত মানুষের ক্ষেত্রে এই প্রকারের অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার হলো মনোময় সত্তা। সে জন্মসূত্রে হার্ডওয়ার রূপ শরীর যন্ত্রের সঙ্গে কপি হয়ে আসে এবং কর্ম আর ভোগের মধ্য দিয়ে ডেভলপড এবং আপগ্রেডেড হতে থাকে নিজে নিজেই। জীবের দেহরূপ হার্ডওয়ারের গঠন- উপাদান, গুণাগুণের উপর তার মনের প্রকৃতি, চরিত্র, গুণমান অনেকাংশে নির্ভরশীল। মনুষ্য সৃষ্ট কম্পিউটার সফটওয়্যার -এর মতো সাধারণত তা' স্থানান্তর যোগ্য নয়।


মনোময় সত্তা বংশগতির মাধ্যমে দেহরূপ হার্ডওয়্যার -এর মধ্যে সৃষ্ট নবজাতক হার্ডওয়্যার -এর সাথেই প্রতিলিপি বা কপি হয়ে বংশানুক্রমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই প্রতিলিপির সংকেত মজুত থাকে দেহরূপ হার্ডওয়্যারের বিশেষ কোষের মধ্যে।


জীবের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় প্রকারের এপ্লিকেশন সফটওয়্যার গুলি, মূল মন -সফটওয়্যারের বিকাশ --গঠন এবং প্রবণতার ভিত্তিতে, বিভিন্ন পরিবেশ- পরিস্থিতিতে বাইরের জ্ঞান -অভিজ্ঞতা- শিক্ষার যোগান নিয়ে বিভিন্ন কাজের উপযোগী এপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরি হয়ে ওঠে, ও.এস. সফটওয়্যার এর ভিতরেই। যেমন--- সংগীত, নাটক, কারিগরি চেতনা ও কার্যক্ষমতা সম্পন্ন বিভিন্ন প্রকার উপমন বা অংশমন, ---যারা প্রধান মনের সাহায্যে, তার একটা অংশ হিসেবে কাজ করে।


মৌলিক শ্রেণীর প্রাণী--- কীটপতঙ্গ, পশুপাখির ক্ষেত্রে, বংশানুক্রমে প্রাপ্ত প্রতিলিপি বা কপি--- মন সফটওয়্যার ও দেহ হার্ডওয়ার, অর্থাৎ মন ও শরীর তাদের মা-বাবার প্রায় অনুরূপ হয়ে থাকে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে তা হয় না। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ সংকর জাতির হওয়ায়, জন্মসূত্রে প্রাপ্ত তাদের দেহ- মনের প্রতিলিপি বা কপিগুলি কোনটির সাথে কোনটি সমরূপ হয় না। সুদীর্ঘকাল ধরে অতি মিশ্র হওয়ার ফলে, এক একজনের চেহারা এবং মানসিক গঠন এক এক প্রকার।


কম্পিউটারের চালিকাশক্তি--- বিদ্যুৎ শক্তির মতোই, জীবের জৈব বিদ্যুৎ শক্তিই হলো প্রাণময় অস্তিত্ব। কম্পিউটারের ক্ষেত্রে প্রাণশক্তি বা বিদ্যুৎ সরাসরি বাইরের থেকে যোগান দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রাণশক্তির অভাবে সমস্ত কিছু অচল--- স্তব্ধ হলেও, জীবদেহরূপ হার্ডওয়ারের মতো প্রাণ বা বিদ্যুৎ শক্তির অভাবে তা' পুনর্জীবন লাভে অক্ষম হয়না। প্রাণ শক্তির পুনঃ যোগান পেয়ে কম্পিউটার- হার্ডওয়্যার সক্রিয় হলে, তার সফটওয়্যার আবার জাগ্রত সক্রিয় হতে পারে।


জীবদেহের ক্ষেত্রে প্রাণ শক্তি ---জৈব বিদ্যুৎ শক্তি দেহের মধ্যেই উৎপন্ন হয়। আর কোন কারনে প্রাণশক্তির উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ হলেই শরীর যন্ত্র বিনষ্ট হয়ে চিরতরে কার্যক্ষমতা এবং পুনর্জাগরণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে (সাধারণত)। বাস্তবে মনময় অস্তিত্ব যেহেতু প্রাণময় এবং এবং দেহময় অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল, তাই এ' অবস্থায় জীবের মনোময় অস্তিত্বেরও বিনাশ ঘটে চিরতরে।




বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা 'আত্মা' -কে দেখবো। এখন, জন্মান্তর প্রশ্নে--- দেখা যাক, পরলোকগত দিব্য মনোময় সত্তা বা প্রেতাত্মার (এখন থেকে বলার সুবিধার্থে এই ক্ষেত্রে শুধু আত্মাই বলব) পুণরায় জীবদেহ ধারণ করে পুনর্জন্ম লাভের আদৌ কোন বাস্তবতা আছে কিনা।


আমরা পূর্বেই দেখেছি, জীব মাত্রই জন্মসূত্রে ---বংশানুক্রমে তার জন্মদাতার বা জন্মদাতাদের কাছ থেকে প্রাণময় সত্তা সহ মনোময় এবং দেহময় সত্তার প্রতিলিপি (কপি) প্রাপ্ত হয়ে থাকে। তাই বংশবৃদ্ধির এই প্রক্রিয়ায়--- নবজাতককে আত্মা বা মন বা চেতনা লাভ করতে, তার শরীরের মধ্যে পরলোকের কোন আত্মার অনুপ্রবেশ ঘটার কোনো প্রয়োজন নেই। আর সেই কারণেই, পরলোকের আত্মার জীব দেহ ধারণ ক'রে পুনর্জন্ম লাভের কোন সম্ভাবনা নেই।


অনেকেই বিদেহী মনময় সত্তাকে 'আত্মা' বলে মেনে নেয় না। তারা আত্মা বলতে দেহ-মন অতিরিক্ত কোন সত্তায় বিশ্বাসী। কিন্তু সেটা যে প্রকৃতপক্ষে কী সে সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। কেউ কেউ শুধু দিব‍্য মনময় সত্তাকেই আত্মা বলে মনে করে। এটা ঠিক, পরলোক এবং তদুর্ধ লোকে দিব্য মনোময় সত্তাই আত্মা। কিন্তু দিব‍্য মনময় সত্তা তো আসলে মনই। যার চিন্তা করার ক্ষমতা আছে--- সে মন বৈ আর কিছু নয়। সে -ই অতীতে পৃথিবীতে-- দেহ অস্তিত্ব সম্পন্ন থাকাকালীন, বাস্তব মনোময় সত্তার সঙ্গে মিলেমিশে একসাথে জীবাত্মা রূপে তার ভূমিকা পালন করে গেছে একসময়। আচ্ছা, এ' কথায় পরে আসছি।

প্রেতাত্মা বা আত্মার ধারণা অতি প্রাচীনকাল থেকে আজও আমাদের মধ্যে রহস্যাবৃত হয়ে রয়েছে। প্রেতাত্মা বা অশরীরী আত্মাকে জানার চেষ্টাও হয়েছে বহু, কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞান -মনস্ক মানুষের পক্ষে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি তার অস্তিত্বের। মানুষের ভয়, বিশ্বাস, অজ্ঞানতা ও অসুস্থতা প্রসূত কুসংস্কারকে আশ্রয় ক'রে সে টিকে আছে আমাদের কাছে।


মনোবিকারজাত দৃষ্টি ভ্রম, ভ্রান্ত দর্শন এবং হিস্টিরিয়া রোগীর নানা অদ্ভুত কান্ড কারখানা, দুষ্ট লোকের কারসাজি, আর বিস্ময়কর প্রাকৃতিক ঘটনা এবং অদ্ভুত অজানা রোগের আকস্মিক প্রাদুর্ভাব, --- সাধারণের কাছে যার স্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায়, সাধারণ মানুষ সরল মনে সেগুলিকেই প্রেতাত্মার প্রমাণ হিসেবে মেনে নিয়েছে।


প্রেতাত্মা বিশ্বাসের সবচাইতে বড় কারণ হলো, আমাদের মধ্যে সংস্কারাবদ্ধ বা প্রি- প্রোগ্রামড (মন- আমি- চেতনা দ্রষ্টব্য) ধারণা বা অন্তর -গ্রথিত নির্দেশ, যা বেঁচে থাকার চাহিদা, মৃত্যুভয় বা অস্তিত্ব বিলোপের ভয় এবং আত্মরক্ষার ইচ্ছা বা চাহিদা রূপে কাজ করে। যার জন্য--- 'আমার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে, আমি এই জগত থেকে হারিয়ে যাবো চিরতরে--- আমি কোথাও থাকবো না।' এটা আমাদের মন কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। বিশেষত পরলোক সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ধারণা না থাকায়, এক প্রকার যুক্তিসঙ্গতভাবেই প্রেতাত্মা--- পুনর্জন্মের ধারণা গড়ে উঠেছে আমাদের মনে।


আমিত্ব! ---এই আমিত্ব গুণই হলো মানবাত্মার বিশেষ লক্ষণ। মন যখন নিজেকে কর্তা এবং ভোক্তা রূপে অনুভব করতে থাকে, আমিত্বের সৃষ্টি হয় তখন থেকেই। ক্রমশ যথেষ্ট জ্ঞান এবং উচ্চ চেতনা লাভের সঙ্গে সঙ্গে--- এই বোধ জন্মাতে থাকে, যে সে আসলে নিমিত্ত মাত্র। তখন থেকে ক্রমশ আমিত্ব লোপ পেতে থাকে তার। পরবর্তী সর্বোচ্চ চেতনায় ঈশ্বরের সাথে মিশে গিয়ে সে ঈশ্বরামিত্ব লাভ করে।

মানুষের মৃত্যুর পর কি আমিত্ব লোপ পায়, না তার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বর্তমান থাকে, না --কি ঈশ্বরের সাথে মিশে যায় এ প্রশ্ন অনেকেরই।


বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে--- যখন একজন মানুষ অজ্ঞান- অচেতন হয়ে পড়ে, তখন জগত- সংসার তার মতো চলতে থাকে। কিন্তু সে ---আমিত্ব স্বরূপ সেই মন অস্তিত্ব তখন অনুপস্থিত--- অস্তিত্ববিহীন। শরীর যন্ত্র স্বাভাবিক -সক্রিয় হলে, সে আবার অস্তিত্ব ফিরে পায়। কম্পিউটারের সুইচ অফ- অন করলে যেমনটি হয়। কিন্তু শরীর যখন একেবারে চিরতরে নিষ্ক্রিয় বা বিনষ্ট হয়ে যায়, পুনরায় স্বাভাবিক সক্রিয় হওয়ার আর কোন উপায় থাকে না, তখন সেই আমিত্ব স্বরূপ মনের আর অস্তিত্ব ফিরে পাবার উপায় থাকে না। দেহ তার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব হারিয়ে মিশে যায় বিশ্ব- শরীর বা ঈশ্বর দেহের সাথে। প্রচলিত কথায়, পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায় সে তখন।


আর মন---? ঈশ্বর মনের সাথে যুক্ত হতে গেলেও তার দেহ থাকতে হবে। বাস্তব দৃষ্টিতে--- দেহ ছাড়া মন হয় না। জীবন্ত সত্তার দেহ -মন আছে। আমরা ঈশ্বরের সাথে এবং ঈশ্বর মনের সাথে ---সরাসরি না হলেও, সূক্ষ্ম ও পরোক্ষভাবে যুক্ত আছি। দেহ নষ্ট হলে মনের অস্তিত্ব নেই, তাই ঈশ্বরের মনের সাথে জীব মনের মিশে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।


ঈশ্বরের সাথে মিশে যাওয়া বলতে, নিজের স্বাতন্ত্র্যবোধ মুছে গিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া। বাস্তবে, আমরা ঈশ্বরের সঙ্গেই আছি, কিন্তু স্বাতন্ত্র্যবোধ ---যথেষ্ট চেতনার অভাব আমাদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। স্বাতন্ত্র্যবোধ সম্পন্ন একটি জীবের আত্মা, ---মৃত্যু পরবর্তী স্তরে তার অস্তিত্ব থাকলেও, --- সে তার স্বাতন্ত্র্যের কারণে ---চেতনার স্বল্পতার কারণে, ঈশ্বর মনের সাথে মিশে যেতে বা একাত্ম হতে পারবে না। ঈশ্বর চেতনার সমান চেতনা লাভ হলে, তবেই ঈশ্বর মনের সাথে মিশে যাওয়া সম্ভব।

স্বল্প চেতন--- আমিত্ববোধ বিহীন, ---সম্পূর্ন দেহগত জীব- মন, তার শরীরের মৃত্যু হলে, শরীরের রূপান্তর ঘটার সাথে সাথে, সে- ও রূপান্তরিত হয়ে বিশ্ব -শরীর বা ঈশ্বর শরীরের সঙ্গে মিশে যায়।

এতক্ষণ বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে জীবাত্মা--- আত্মা এবং আত্মা সম্পর্কিত কিছু কিছু বিষয় বস্তু পর্যবেক্ষণ করলাম। এবার বলবো, সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে--- ধ‍্যানালোকে অতিরিক্ত যা পাওয়া গেছে।


আত্মা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হলে, তার আগে 'দিব‍্য- অস্তিত্ব' বা 'সুপার- এক্সিসটেন্স' সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। আদিকণা থেকে আরম্ভ ক'রে প্রতিটি পদার্থ, বস্তু এবং শক্তির রয়েছে দুটি ভিন্ন রূপ অস্তিত্ব। একটি হলো তার বাস্তব অস্তিত্ব, আর অপরটি--- দিব্য অস্তিত্ব। বস্তু বা পদার্থের গঠন, উপাদান, রূপ- গুণ, শক্তি প্রভৃতি সমস্ত কিছুই তার দিব‍্য অস্তিত্বের মধ্যে বর্তমান। সাধারণভাবে, এই দিব‍্য অস্তিত্ব-- বাস্তব অস্তিত্বের সাথে ওতপ্রোত হয়ে মিশে থাকে।


জীবদেহের ক্ষেত্রেও অনুরূপ, তারও আছে একটি দিব্য অস্তিত্ব, দিব্য শরীর বা অলৌকিক শরীর। জীব দেহের মধ্যে উপস্থিত মন, প্রাণ, চেতনা প্রভৃতির দিব‍্য অস্তিত্বও এই দিব‍্য শরীরের মধ্যে বিদ্যমান।

বস্তু ও শক্তির সাথে তাদের দিব্য অস্তিত্ব জড়িয়ে থাকে ওতপ্রোতভাবে। বাস্তব শরীর বা বস্তুকে অবলম্বন ক'রে, তার সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিলেমিশে--- তাকে ঘিরেই তার দিব‍্য অস্তিত্ব বর্তমান থাকে। দিব‍্য অস্তিত্ব বিহীন কোনো বস্তু--- কোনো কিছু হতেই পারে না। বস্তু বা শরীরের আকার এবং গুণগত পরিবর্তন ঘটলে, তার দিব‍্য অস্তিত্বেরও বা দিব্য সত্তারও অনুরূপ পরিবর্তন ঘটে থাকে। দিব্য শরীর বা অস্তিত্ব, বাস্তব অস্তিত্ব বা শরীরের একটি সামগ্রিক প্রতিলিপি বা কপি। যা আমাদের পরিচিত বস্তু নয়--- এক প্রকার অন্য বস্তু--- অলৌকিক বস্তু দিয়ে তৈরি।


একটি বস্তুর সাথে অপর একটি বস্তুর মধ্যে যখন ক্রিয়া ও বিক্রিয়া হয়, তখন তাদের দিব‍্যসত্তাদের মধ্যেও অনুরূপ ক্রিয়া ও বিক্রিয়া এবং পরিবর্তন ঘটে।


বিপরীত বিশ্বের (সৃষ্টি রহস্য--- দ্রষ্টব্য) সমস্ত বস্তু ও শক্তিরও রয়েছে অনুরূপ দিব্য সত্তা। কোন একটি বস্তু তার বিপরীত বস্তুর সংস্পর্শে এলেই--- দুটি বস্তু এবং তাদের দিব‍্য সত্তার মিলনের সাথে সাথে তারা উভয়ই তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। এই মিলনের ফলে শক্তির বিকিরণ ঘটে, আর মিলনের রকমফেরে (মিলনের গতি এবং অবস্থার উপর নির্ভর ক'রে) সৃষ্টি হতে পারে আদি কণা, সৃষ্টি হতে পারে নতুন পদার্থ বা বস্তু অথবা শক্তি।


কোন বস্তু বা বস্তু কণার সাথে অপর কোন বস্তু বা বস্তুর মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষ বা সংঘাত ঘটলে, একে অপরের উপর তাদের দিব্য সত্তার বিপরীত ছাপ ফেলবে। প্রত‍্যেকের দিব‍্যসত্তা অপরের দিব‍্য সত্তার ঐ বিপরীত ছাপ বহন করবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই বহনকারী বস্তু বা পদার্থ বা পদার্থ কণার এবং তাদের দিব্য সত্তার বিকার বা রূপান্তর ঘটছে।


বস্তুর দিব্য সত্তার উপর ভর ক'রে থাকা ঐ বিপরীত দিব্য ছাপ থেকে আরও অনেক ছাপ বা ঐ ছাপের কপি তৈরি হতে পারে, যদি ওই ছাপ বহনকারী বস্তু বা পদার্থ কণার সাথে কিছু পরিমাণ ঐরূপ বস্তু অথবা অপর কোন বস্তু বা পদার্থ কণার নিয়মিত পুনঃ পুনঃ সংঘাত বা সংঘর্ষ ঘটে তাহলেই---। তবে এক্ষেত্রে ঐ ছাপ -এর বিপরীত ছাপ তৈরি হবে না। অপর একটি দিব‍্যসত্তার উপর ভর করে থাকা এই বিপরীত দিব্য ছাপ--- নেহাতই একটি অশরীরী ছাপ বিশেষ। তার নিজস্ব শরীর না থাকায়, সে অপরের উপর বিপরীত ছাপ ফেলতে অক্ষম। সংঘর্ষের ফলে তা' থেকে অনেক অনুরূপ কপি তৈরী হতে পারে, তবে সেই ছাপ ক্রমশ সূক্ষতা প্রাপ্ত হবে। একটি কণা থেকে অপর কণাতে, তার থেকে আরেকটি কণাতে--- এইভাবে যদি ক্রমান্বয়ে ঐ ছাপের কপি হতে থাকে, তাহলে ক্রমশই সেই দিব্য ছাপ সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর হতে থাকবে।


সাধারণভাবে এই দিব্য ছাপ নিষ্ক্রিয় ---নির্গুণ। কিন্তু কোনো প্রকারে যদি তা' জীব শরীরের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে, তখন সে প্রাণশক্তি--- জৈব বিদ্যুৎ শক্তিসহ জীব যন্ত্রের সফটওয়ারের সাহায্যে দিব‍্যরূপ শরীর ধারণে সক্ষম হতে পারে।


বিপরীত দিব্য ছাপ--- জীব শরীরের মধ্যে প্রবেশ করার পর, তা' স্নায়ুতন্ত্রের মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কের বিশেষ কেন্দ্রে পৌঁছে যায়। সেখানে জীব- যন্ত্রের সফটওয়্যারের এক বিশেষ ক্ষমতা বলে, ঐ ছাপ তার অনুরূপ দিব‍্য শরীর লাভ ক'রে থাকে। অর্থাৎ মূল পদার্থের বিপরীত দিব‍্যছাপ তখন বিপরীত দিব‍্য শরীরে পরিণত হয়। তখন সে আর নিষ্ক্রিয় ছাপ মাত্র নয়, গুণ ও ধর্ম সম্পন্ন সক্রিয় দিব্য শরীর। যে বস্তু বা পদার্থের বিপরীত ছাপ রূপে তার জন্ম হয়েছিল, সেই বস্তু বা পদার্থের বিপরীত দিব‍্যসত্তা হয়ে ওঠে সে তখন।


এরপর, সেই বিপরীত সত্তা--- শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে জীবের সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক যেন আরক্ষাবাহিনীর মতো, শত্রু ও অপরাধীর সন্ধানে সারা শরীরে চিরুনি তল্লাশি ক'রে যদি কোথাও তার বিপরীত অস্তিত্বের সাক্ষাৎ পায়, তখনই ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর। ফলতঃ লোপ পায় উভয়ের অস্তিত্ব।

তোমাদের কাছে বিষয়টি একেবারেই নতুন, তাই আরেকবার বলি--- বিপরীত ছাপ গুলি শরীরের স্নায়ুমন্ডলীর জৈব বিদ্যুতের সংস্পর্শে আসতেই--- তড়িৎ গতিতে তা' পৌঁছে যায় মস্তিষ্কের এক বিশেষ কেন্দ্রে। সেখানে জীব যন্ত্রের সফটওয়ারের মাধ্যমে--- ছাপগুলি তাদের রূপ- রূপ- গুণ চরিত্র মতো প্রত্যেকে এক একটি দিব্য শরীর লাভ করে। সেখান থেকে তারা জীব শরীরের প্রতিরক্ষাতন্ত্রের ব্যবস্থামতো সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে--- শরীরের মধ্যে বিষক্রিয়াকারি অনিষ্টকর সম- বিপরীত বস্তু বা পদার্থের সন্ধানে।

স্নায়ুতন্ত্রের দুর্বলতা, বিশৃঙ্খলা বা অক্ষমতা থাকলে, ওই দিব্য ছাপগুলির দিব্যশরীর লাভ এবং কার্যকর ভূমিকা পালন সম্ভব নাও হতে পারে।


বস্তু হলো তাঁর দিব‍্য অস্তিত্বের বাস্তব রূপ। দিব‍্য অস্তিত্ব বিহীন কোন বস্তু হতে পারে না। শক্তিও তাই। কিন্তু দিব‍্যসত্তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার বাস্তব রূপ অর্থাৎ বস্তু শরীর ছাড়াই--- কিছু শক্তি এবং অলৌকিক পদার্থের উপর নির্ভর ক'রে বিদ্যমান থাকতে পারে।


কোন দিব‍্য- অস্তিত্ব তার সম- বিপরীত দিব‍্য- অস্তিত্বের সাথে মিলিত হলে, উভয়ের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়। সেই সঙ্গে তাদের বাস্তব অস্তিত্ব থাকলে, তা- ও বিনাশ প্রাপ্ত হয়।


এই দিব‍্য- অস্তিত্ব তার বস্তু শরীরের মতই গুণসম্পন্ন অপার্থিব কনার সমন্বয়ে গঠিত। পরমাণু এবং তার অন্তঃস্থ শক্তি, আদি কণা এবং অন্যান্য সমস্ত কণারই দিব্য অস্তিত্ব বিদ্যমান। প্রতিটি বস্তুর মধ্যেই তার সদৃশ দিব‍্য- অস্তিত্ব উপস্থিত।


আমাদের হাতের কাছে--- দিব‍্য -সত্তার উপলব্ধি যোগ্য নিদর্শন হলো-- হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ হলো--- সুগার বা অ্যালকোহলের দিব্য সত্তার উপর ভর ক'রে থাকা ---ওষুধরূপ কোন বস্তু বা পদার্থ কণার বিপরীত দিব‍্য -ছাপ। যে ছাপ দেহের অভ্যন্তরের গিয়ে--- সদৃশ দিব‍্যসত্তা লাভ ক'রে, দেহস্থ অনিষ্টকর বিপরীত সত্তার সাথে মিলিত হয়ে, উভয়ই লয় প্রাপ্ত হয়। এই হলো হোমিওপ্যাথিক এবং 'মহাপ‍্যাথিক' ওষুধের আরোগ্য প্রক্রিয়া মূল তত্ত্ব। আরও জানতে হলে, 'মহাপ‍্যাথি' সম্পর্কে অন‍্য প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য।




ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে---, প্রত্যেকের যেমন যেমন শরীর মন, ঠিক সমানুরূপ এক একটি দিব্য -শরীর ও দিব‍্য- মন রয়েছে আমাদের। কিন্তু আমরা আমাদের দিব‍্য শরীর-মনের অস্তিত্ব সম্পর্কেই অবগত নই অধিকাংশ মানুষ। অবগত হলেও এদের আমরা পৃথক করতে অক্ষম। উচ্চ চেতনা সম্পন্ন এবং কিছু অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী কোন কোন মানুষের পক্ষে বিশেষ ইচ্ছাশক্তি এবং বিশেষ ক্ষমতা বলে--- দিব‍্যসত্তার একটি কপিকে সাময়িকভাবে দূরে অন্যত্র প্রেরণ করা সম্ভব।


স্বাতন্ত্র‍্য‍ ও আমিত্ববোধ সহ উচ্চ চেতনাসম্পন্ন জীব--- মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার মনোময় -সত্তা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তব অস্তিত্ব হারিয়ে ফেললেও, তার দিব‍্য- অস্তিত্ব বিলীন হয় না। মৃত্যুর পর মুহূর্তে--- দিব্য মনোময় সত্তা বা আত্মা স্থির- নিশ্চলভাবে মৃত্যুপূর্ব চেতন স্তরে বিরাজ করে। এর পরেই মৃতের শরীরে ধ্বংস বা রূপান্তর ক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। ক্রমশ শরীরের গঠন- উপাদান পরিবর্তিত হতে থাকে।

আত্মা দেহের মায়া (উচ্চ চেতনা সম্পন্ন ব্যক্তি, যারা প্রায় মায়া মুক্ত, তাদের কথা স্বতন্ত্র) ত্যাগ করতে না পেরে, যতক্ষণ সম্ভব সে দেহের অস্তিত্বের মধ্যে--- পূর্বের মতোই বিদ্যমান থাকে। আস্তে আস্তে দেহ তার স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে পূর্ব রূপ হারিয়ে একটু একটু করে রূপান্তরিত হতে থাকে। শরীরের দিব্য সত্তাও ক্রমশ রূপান্তরিত হতে থাকে শরীরের সাথে সাথে।


একসময় পরিবর্তিত দিব্য শরীরের সাথে আর কোনো মতেই নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে--- সেখানে টিকে থাকতে না পেরে, নিষ্প্রাণ ক্ষীয়মান দিব্য শরীর থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয় সেই প্রাণময়-- চৈতন্যময় দিব্যসত্তার সম্মিলিত দিব‍্যরূপ--- আত্মা।


অতঃপর সে পরম- পদার্থ বা আদি- পদার্থ ( বোঝার সুবিধার্থে-- ব্রহ্ম- পদার্থ) -এর দিব্যরথে আরোহন ক'রে অর্থাৎ ব্রহ্ম- পদার্থকে অবলম্বন করে রওনা হয় নির্দিষ্ট বিশ্রামাগারের উদ্দেশ্যে।


মানুষের মৃত্যুর পরে মনোময় সত্তার অস্তিত্ব--- মৃত শরীর থেকে বেরিয়ে এসে, অশরীরী আত্মা রূপে ব্রহ্ম- পদার্থ অবলম্বন করে, প্রথমে একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে, এবং আস্তে আস্তে গভীর সুষুপ্তির মধ্যে ডুবে যায়। এই অবস্থার মধ্যেই সে তার চেতন স্তর, রূপ-গুণ- শক্তি সামর্থ্য ও মানসিক গঠন অনুসারে দিব‍্য- শরীর লাভ করে।


যে যত উচ্চ চেতনা সম্পন্ন--- সে তত ঊর্ধ্বমুখী। তার কর্মজগৎ পৃথিবী থেকে তত উর্ধ্বে। এই পৃথিবীর আকর্ষ মণ্ডলের মধ্যেই, চেতনস্তর ভেদে--- বিভিন্ন উচ্চতায় পার্থিব জগতের সমান্তরালে রয়েছে কয়েকটি জীবোত্তর জগৎ। এখন সে সেই জগতের বাসিন্দা।


আত্মার এই স্থানান্তরে গমন এবং দিব‍্য শরীর লাভ প্রভৃতি ঘটনাগুলি--- ঈশ্বর- শরীর- অভ‍্যন্তরস্থ (পূর্ব নির্ধারিত) যান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্রমেই ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে আত্মার নিজস্ব কোনো ভূমিকা নেই। আমাদের দেহাভ্যন্তরে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের যেমন দশা হয়--- কতকাংশে তেমনই।

নিম্ন- চেতন মনুষ‍্যেতর জীবের ক্ষেত্রে, যাদের জীবাত্মার স্বাতন্ত্র্যবোধ--- স্ববোধ বা আমিত্ব বোধ নেই, দেহবোধের সাথেই যাদের আত্মা একাত্ম হয়ে আছে, এবং যাদের দেহবোধ বা শরীর সচেতনতাও তেমন পুষ্ট হয়নি, মৃত্যুর পরে তাদের মনোময় সত্তা (আত্মা) দেহের সাথে সাথেই লয় প্রাপ্ত হয় অথবা দেহের সাথেই রূপান্তরিত হয়ে তার স্বতন্ত্র‍্য‍ হারায়।


স্বাতন্ত্র‍্য‍ বোধ সম্পন্ন--- অহংবোধ সম্পন্ন উচ্চচেতন মনেরই কেবল তদনুরূপ স্বতন্ত্র দিব‍্য মনোময় অস্তিত্ব থাকে। অন্যদের তেমন থাকে না। তাদের দিব‍্য মনোময় সত্তা শরীরের অস্তিত্বের সঙ্গে প্রায় মিশে থাকে, আলাদা হতে পারে না।

 
 
 

Comments


MahaDharma Samsad

  • Facebook Clean Grey
  • Twitter Clean Grey
  • LinkedIn Clean Grey

© 2023 by MahaDharma Samsad. Proudly created with Wix.com

bottom of page