top of page

BLOG ARTICLES

Search
  • Writer's pictureMaharshi MahaManas

ঈশ্বর ও বিশ্বাত্মা প্রসঙ্গে মহর্ষি মহামানস



ঈশ্বর ও বিশ্বাত্মা প্রসঙ্গে মহর্ষি মহামানস


আমরা সবাই একই চেতন-স্তরে অবস্থান না করার ফলে, ঈশ্বর (আমরা বলি, 'বিশ্বাত্মা') সম্পর্কে আমাদের ধারণাও সবার ক্ষেত্রে একরূপ নয়। আবার আধ্যাত্মিক (দৃষ্টিকোণ থেকে) ঈশ্বর, আর প্রচলিত ধর্মীও ঈশ্বর একরূপ নয়। যখন তুমি নিজেকে নিজের স্বরূপে জানতে পারবে, একমাত্র তখনই তুমি ঈশ্বরকে তার প্রকৃত রূপে বা স্বরূপে জানতে সক্ষম হবে— অনেকাংশে।


এই মহাবিশ্বরূপ ঈশ্বরকে— মহাসাগররূপে কল্পনা করলে, তুমি হলে তার একবিন্দু জল বা পাণি স্বরূপ। এই মহাসাগরকে জানতে, সর্বাগ্রে— তার কয়েক বিন্দু জল বা পাণি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে তোমাকে। তুমি নিজেকে এবং নিজের চারিপাশকে সঠিকভাবে যত বেশি জানতে পারবে, ঈশ্বরকেও জানতে পারবে তত বেশি।

আমরা মহাবাদ ও মহাধর্ম -এর অনুসরণকারীগণ আমাদের স্রষ্টাকে বলি, 'বিশ্বাত্মা'। যদিও, আমাদের 'বিশ্বাত্মা' আর প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন নামে 'ঈশ্বর' একরূপ নয়। আমরা (মহাবাদ ও মহাধর্ম-এর অনুগামীগণ) মনে করি, এই মহাবিশ্ব হলো ঈশ্বরের শরীর, এবং এই শরীরের মধ্যে আছে একটি মন, তা-ই হলো ঈশ্বর-মন। এই মহাবিশ্বরূপ ‘শরীর’ আর এই মহাজাগতিক ‘মন’ মিলে একত্রে ঈশ্বর অস্তিত্ব। বিশ্ব-প্রকৃতি আর আমাদের ঈশ্বর আসলে একই।


এই মহাবিশ্ব— ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট নয়, সে নিজেই ঈশ্বর। এই মহাবিশ্বে ঈশ্বর অতিরিক্ত আর কিছুর অস্তিত্ব নেই (একমাত্র সুপ্ত বা প্রচ্ছন্ন আদিসত্ত্বা ছাড়া)। শুধুমাত্র এর কিছু অংশ— যেমন জীব ও উদ্ভিদ ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে। যদিও ঈশ্বর এদের সৃষ্টি করেছে তার শরীর উপাদান থেকেই। আমাদের মনও সৃষ্টি হয়েছে— বিশ্ব-মন বা ঈশ্বর-মন থেকে। শুন্য থেকে কিছু সৃষ্টি হয়নি। আমরা সবাই ঈশ্বরের অর্থাৎ এই মহাবিশ্বেরই অংশ।


এই বিশ্ব-অস্তিত্বই হলো ঈশ্বর। যা সৃষ্ট হয়েছে আদিসত্ত্বা বা পরমাত্মা (সংস্কৃততে ব্রহ্ম) থেকে। এই আদিসত্ত্বা ঈশ্বর নয়, এবং এই জাগতিক কর্মকান্ডে তার বিশেষ ভূমিকা নেই। এই বিশ্ব-লীলায় আদিসত্ত্বা হলো নিরব ও প্রচ্ছন্ন দর্শকের মতো। আদিসত্ত্বা— পরমাত্মা কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ বা পরিপূর্ণ নয়। পূর্ণতা হলো— পূর্ণ স্থির নিশ্চল— নিষ্ক্রিয় অবস্থা। পূর্ণতা থেকে কোনো সৃষ্টিই সম্ভব নয়। সেই অবস্থায় চাওয়ার কিছু থাকে না— পাওয়ারও কিছু নেই। সেই কারণে করারও কিছু নেই। সৃষ্টির প্রশ্নই আসেনা সেখানে।


আদিসত্ত্বাও পূর্ণ নয়। তারও আছে কিছু চাহিদা— কিছু অভাব। সে জানেনা, সে— কে, কেনই বা সে, আর কোথা থেকেই বা সে এসেছে বা তার উৎপত্তি হয়েছে। জানেনা তার পরিণতি কী। এই নিজেকে জানার ইচ্ছাই হলো— সৃষ্টির আদি কারণ। অগত্যা, স্ব-ইচ্ছায় নিজেকে হারিয়ে ফেলে, পুণরায় তাকে খোঁজা বা আত্মানুসন্ধান করাই হল— সৃষ্টির গোপন রহস্য।


একসময় এই মহাবিশ্ব— অস্তিত্ব সম্পন্ন হয়েছে বা জন্ম নিয়েছে, এবং একসময় এর মৃত্যু বা ধ্বংসও হবে। এই মহাবিশ্ব— মহাসৃষ্টি হলো আদিসত্ত্বার ইচ্ছার ফল। ঈশ্বরের জন্ম হয়েছে ঠিক একটি সদ্যজাত শিশুর মতো— শিশু-বিশ্ব রূপে। প্রায় অজ্ঞান-অচেতন একটি শিশুর জীবনযাত্রা শুরু হয়েছে— পূর্ন বিকাশলাভের উদ্দেশে। প্রায় অজ্ঞান-অচেতন অবস্থা থেকে পূর্ণ চেতনার লক্ষ্যে, কর্মতৎপরতা সহ দুঃখ-কষ্ট ও আনন্দলাভের মধ্য দিয়ে— জ্ঞান ও চেতনা লাভের জন্য অবিরাম চলাই তার নিয়তি। আর এটাই হলো জীবন।


পিতা-মাতার অপূর্ণ ইচ্ছাকে সন্তানের মধ্য দিয়ে পূর্ণ ক’রে তোলার সাথে— এই মহাসৃষ্টির উদ্দেশ্য-র অনেকটাই সাদৃশ্য আছে। ঈশ্বর বা মহাবিশ্ব-জীবনে অনেকগুলি ক্রমিক ধাপ রয়েছে, যথা— শৈশব, কৈশোর, যৌবন প্রভৃতি, —অনেকটা আমাদের জীবনের মতোই।


শুধু ঈশ্বর নয়, আমরা সবাই চলেছি সেই এক লক্ষ্য পানে—। ইশ্বর বা মহাবিশ্বের অংশানুক্রমে আমরা প্রকৃতি—পরিস্থিতি এবং ঘটনা অনুসারে কেউ এগিয়ে আর কেউ পিছিয়ে আছি।

সৃষ্টির ক্রমিক পর্বগুলি নিম্নরূপ—

১) আদিসত্ত্বা বা পরমাত্মা তার নিজ উপাদানে— প্রায় তার অনুরূপ একটি ক্ষুদ্র সত্ত্বা তৈরী করেছে প্রথমে।

২) আদিসত্ত্বার প্রতিরূপ সত্ত্বাটি— স্ব-অভিভাবন বা আত্ম-সম্মোহন দ্বারা অর্থাৎ যোগনিদ্রা বলে, নিজ জ্ঞান-গুণ-ক্ষমতা বিস্মৃত হয়ে— অস্ফুট চেতন-স্তরে উপনীত হয়।

৩) তারপর সে, প্রথম বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে— দ্বিধা বিভক্ত হয়ে, কিছুটা দুরিত্বে দুটি বিপরীত বিশ্বের বীজে পরিণত হয়।

৪) দুটি বিশ্ব-বীজ থেকে দুটি বিশ্ব-অস্তিত্ব (এই বিশ্ব ছাড়াও আছে আরেকটি বিপরীত বিশ্ব-অস্তিত্ব, একটি হলো ঈশ্বর, আর অপর বিশ্বকে বোঝার সুবিধার জন্য ‘ঈশ্বরী’ বলা যেতে পারে)-এর সৃষ্টি হয়, একই সময়ে দুটি মহা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। তারপর, বীজ থেকে ক্রমশ মহীরূহের মতো— মহাবিশ্বে পরিণত হতে থাকে (উভয় বিশ্ব-ই) অসংখ্য ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে।

৫) পরবর্তীকালে, ঈশ্বর একসময় উদ্ভিদ ও জীব সৃষ্টির খেলায় মেতে ওঠে...।


এই হলো, অতিসংক্ষেপে মহা জীবন-চলার কথা (বিশদভাবে জানতে হলে, ‘মহাবাদ’ গ্রন্থটি পড়তে হবে)। এই জীবন-চলার মধ্যে বহু পর্ব আছে। আছে বহু কর্মকান্ড। এই বিশ্বরূপ ঈশ্বর সহ আমরা যতই এগিয়ে চলেছি, ততই অজ্ঞানতা— অচেতনতা ও মোহ থেকে মুক্ত হচ্ছি ক্রমশ। প্রকৃতপক্ষে, যথেষ্ট জ্ঞান-চেতনা লাভই এই জীবনের মূল লক্ষ্য।

ঈশ্বর সম্পর্কে সাধারণের ধারণা, ঈশ্বর শুধুই কল্যাণময়— শুভাকাঙ্খী— প্রেমময়, সৎ চিৎ আনন্দময়, জীবের বন্ধু। কিন্তু ঈশ্বরের প্রকৃত রূপ বা স্বরূপ তা’ নয়। ঈশ্বরের মধ্যে তার বিভিন্ন চেতন-স্তর ও অবস্থা অনুযায়ী শুভ-অশুভ, সৎ-অসৎ উভয় গুণ ও শক্তিই বিদ্যমান। এখানে উল্লেখযোগ্য, ঈশ্বর যদি সত্যই জীবের বন্ধু বা শুভাকাঙ্খী হতো, তাহলে জীবের মধ্যে খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক তৈরী করতো না।


ঈশ্বর-মনের মধ্যে শুভাত্মক সৎ মন-অস্তিত্ব যেমন রয়েছে, তেমনি তার মধ্যে অশুভ— অসৎ মন-অস্তিত্বও রয়েছে। অসৎ অস্তিত্ব (কোনো কোনো ধর্মে একেই হয়তো শয়তান বলা হয়ে থাকে) আসলে ঈশ্বরেরই আর এক দিক বা রূপ বা অস্তিত্ব।


ঈশ্বরের সন্তান ও অংশরূপে তার সাথে আমাদের বহু সাদৃশ্য বর্তমান। ক্রমবিকাশমান চেতনার পথে— ঈশ্বর যখন আমাদের অনুরূপ চেতন-স্তরে অবস্থান করেছে, তখন তার মানসিক অবস্থাও অনেকাংশে আমাদের মতই ছিলো। আমাদের মতোই ঈশ্বরের মন ও চেতনাও ক্রমশ বিকাশমান। বিকাশমান মনের কয়েকটি বিশেষ বিশেষ নিম্ন-চেতন-স্তর হলো— কয়েক প্রকারের অসৎ বা ঋণাত্মক মন-স্তর।


ঈশ্বর ও আমাদের মধ্যে এই ঋণাত্মক বা শয়তান মনের বিকাশ ঘটে, নিম্ন-চেতন-স্তরগুলির বিশেষ বিশেষ স্তরে— অসুস্থ ও বিকারগ্রস্ত অবস্থায়। ক্রমশ চেতনা বিকাশের সাথে সাথে, এইসব নিম্ন-চেতন-স্তরের অসুস্থ ও বিকারগ্রস্ত মনগুলি সচেতন বা আরও উচ্চ-চেতন মনের প্রদীপের নীচে— অন্ধকারে আশ্রয় নেয়, অর্থাৎ অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে অন্তরালে চলে যায় তারা।


তাই বলে, একেবারে হারিয়ে যায় না কিছুই— সবই থাকে ফাইলের নীচে চাপা পড়া অবস্থায়। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, ঈশ্বররূপ এই মহাবিশ্বে ঈশ্বর অতিরিক্ত কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। এখানে ভালো-মন্দ যা কিছু আছে, সবই ইশ্বর বা ঈশ্বরের অংশ। মনের ক্রমবিকাশের স্তরগুলি সম্পর্কে অন্যত্র আলোচনা করেছি ('মন-আমি' দ্রষ্টব্য)।


তাইবলে, ঈশ্বরকে ভয় পাবার কিছু নেই। ঈশ্বর সৃষ্ট জীব কখনোই ঈশ্বরের শত্রু হতে পারে না। আবার, ঈশ্বরও কখনোই জীবকে শত্রু ভাবতে পারে না। ঈশ্বরের শত্রু হতে গেলে, যে ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, তা’ কখনোই জীবের পক্ষে লাভ করা সম্ভব নয়। জীবোত্তর জীবনে উচ্চতর চেতন-স্তরে— সে যতই উন্নীত হবে, ঈশ্বরের সাথে তার একাত্মতা বৃদ্ধি পাবে ততই।


জীবের প্রতি রুষ্ট বা অসন্তুস্ট হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ, জীব যা কিছু করে, —সবই সে জাগতিক ব্যবস্থার দ্বারা চালিত হয়েই ক’রে থাকে। স্বতন্ত্রভাবে তার পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। তাই, তার কর্মের জন্য সে দায়ী নয়।

আমাদের ক্ষেত্রে যেমন— আমরাই আমাদের বড় শত্রু। ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই নিজের বড় শত্রু (অজ্ঞানতার কারণে)। তেমনি ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও। ঈশ্বরের মধ্যেও (নিম্ন চেতন-স্তরগুলিতে) চলে অন্তর্দ্বন্দ্ব। সে নিজেই তার নিজের শত্রু। এই অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে, ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে— মহাবিশ্ব জুড়ে। অবশ্য তার কুফল ভুগতে হয় জীবকেও। কিন্তু জীব এখানে অসহায়, তার পক্ষে ঈশ্বরকে শান্ত করা— প্রশমিত করা সম্ভব নয়। পূজা-পাঠ, প্রার্থনা—উপাসনা কোনো কিছুই ঈশ্বরকে টলাতে সক্ষম নয়।


তবে সান্তনা এই যে, ঈশ্বর এখন ক্রমবিকাশের পথ ধরে— অনেক উচ্চ চেতন-স্তরে উপনীত হয়েছে। তার ঋণাত্মক বা শয়তান মন এখন অতীতের অন্ধকারে প্রায় সুপ্ত অবস্থায় চলে গেছে। সে এখন আর সৃষ্টির ব্যপারে— কিশোর-যৌবনের লীলা-খেলার ব্যপারে অনেকটাই উদাসীন।


এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমরা যেমন— যা কিছু করছি— ভাবছি, সবই বাধ্য হয়ে করছি। জগতের অংশরূপে পূর্ব-নির্ধারিত জাগতিক ঘটনা পরম্পরার মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে সবাইকে। ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও তেমনি। ঈশ্বর নিজেই এই জগত স্বরূপ। তার মধ্যে যাকিছু ঘটছে, প্রকৃতপক্ষে তার উপর ঈশ্বরের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তার ভাবনা-চিন্তা-কর্ম সবই পূর্ব-নির্ধারিতভাবে যখন যেটা ঘটার ঘটে চলেছে। এরই নাম ভাগ্য। সে যেটা নিয়ন্ত্রণ করছে সেটাও পূর্ব-নির্ধারিতভাবে করতে বাধ্য হচ্ছে সে। অপ্রিয় সত্যটা হলো— ভাগ্য ঈশ্বরের থেকেও বলবান।


এই পূর্ব-নির্ধারণ ঘটেছে সৃষ্টির শুরুতেই। সৃষ্টির শুরুতেই সমস্ত চিত্রনাট্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। কখন কোথায় কী ঘটবে, সবকিছুই স্থির হয়ে গেছে— সৃষ্টি শুরু হবার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। যেমন একটি বিস্ফোরণ ঘটার সাথে সাথেই স্থির হয়ে যায়— তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় কখন— কোথায় কী ঘটবে। সৃষ্টির শুরুও তো আসলে একটা বিস্ফোরণ বা মহা-বিস্ফোরণ!


ঈশ্বর প্রসঙ্গে –খুব স্বাভাবিকভাবেই দেব-দেবীদের কথা এসে যায়। বহু মানুষই ঈশ্বর ও দেব-দেবী সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে, বিভিন্ন দেব-দেবীকেই ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা—উপাসনা করে থাকে। ‘মহাবাদ’-এ উক্ত দেব-চেতন-স্তরের বাসিন্দারাই প্রকৃত অর্থে দেবতা। এখানে দেব-দেবী বলে কিছু নেই। কারণ, এই উচ্চ চেতন-স্তরে কোনো লিঙ্গ ভেদ নেই। নেই বংশবৃদ্ধির ব্যবস্থা।


সারা পৃথিবীতে প্রচলিত বা কাল্পনিক দেব-দেবী বা দেবতাগণ আর মহাবাদোক্ত দেবতাগণ এক নয়। এরা অনেক বেশি উচ্চ চেতন-স্তরের সত্ত্বা। পৃথিবীতে অবতরণ ক’রে মানুষের সাথে নানারূপ লীলা-খেলায় অংশ নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।


সংস্কৃতভাষায় দেবতার অর্থ জ্ঞানী-বিদ্বজন, যাঁরা তৎকালীন সাধারণ মানুষ থেকে বেশ কিছুটা উচ্চশ্রেণীর মানুষ।* ভগবান বলতেও সংস্কৃতভাষায় শুধু ঈশ্বরকেই বোঝায় না। দেবতুল্য ব্যক্তি, শৌর্য-বীর্যবান, ঐশ্বর্যশালি, জ্ঞানী, যশবান ও সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকেও ভগবান বলা হয়। আর, এর ফলেই, সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে ঈশ্বর ও দেবতা সম্পর্কে গুলিয়ে ফেলে।


আর, একটা গুহ্য কথা, পরোলোকের কিছু কিছু নিম্ন-চেতন-স্তরের বিদেহী আত্মা (বা দুরাত্মা)-দেরকে অনেক সময়েই বিভিন্ন পূজিত দেব-দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায়। বিশেষতঃ যে সব মন্দির ও তীর্থস্থানে অনাচার—কদাচার—দুরাচারে পূর্ণ, সেইসব স্থানেই ভূত-প্রেত-পিশাচাদি নিম্ন-চেতন-স্তরের প্রেত-আত্মাদের ভীড়। এদের মধ্যে কিছু কিছু চতুর প্রতারক মনের প্রেত-আত্মা অনেক সময়েই অজ্ঞান-অন্ধ-অসহায় মানুষ বা দেব-ভক্তদের প্রতারণা ক’রে আনন্দ পায়, এবং তাদের পূজা-অর্ঘাদি আত্মসাৎ ক’রে তৃপ্ত হয়।


এদের কেরামতিতেই অনেক দেবস্থান এবং অনেক দেব-দেবী হয়ে ওঠে জাগ্রত। দেবতা সম্পর্কে সঠীক ধারণা না থাকায়, অনেক মানুষই প্রতারিত হয়ে আসছে এইভাবে। অনেকেই ঈশ্বর আর দেবতার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পেরে মায়ার গোলকধাঁধায় ঘুরে মরছে।


*বিদ্বাংসোদেবা (সূত্রঃ তৈত্তিরীয় উপনিষদ ২/৩ সুক্ত)

47 views0 comments
bottom of page