top of page

BLOG ARTICLES

Search
  • Writer's pictureMaharshi MahaManas

ধর্ম কথা : স্বভাব ধর্ম ও আরোপিত ধর্ম

ধর্ম কথা : স্বভাব ধর্ম ও আরোপিত ধর্ম



মানুষের ক্ষেত্রে ধর্ম দুই প্রকারের। একটি হলো তার স্বভাব-ধর্ম, অপরটি আরোপিত ধর্ম।

আরোপিত ধর্ম হলো একটি প্রায়োগিক ব‍্যবস্থা, যা তার অধিনস্ত অথবা অনুসরণকারীদের উপর প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট হয়ে থাকে। আরোপিত ধর্ম গঠিত হয়ে থাকে, কয়েকটি বিষয় নিয়ে, যেমন--- দর্শন, নীতি, অনুশাসন, অনুশীলন, আচরণবিধি প্রভৃতি।

স্বভাব ধর্মের মধ্যে থাকে, মূলত স্বভাবগত আচরণ।

প্রচলিত আরোপিত ধর্ম হলো অজ্ঞান মানুষকে চিরকাল অজ্ঞান অন্ধ মূর্খ বানিয়ে রাখার এক সুন্দর খাঁচাকল।

ভালভাবে বাঁচার জন্য এবং সঠিকভাবে দ্রুত বিকাশলাভের জন্য এই আরোপিত ধর্মটির প্রয়োজন হয়ে থাকে। এছাড়াও, স্বভাব ধর্মের মধ্যে কিছু ভালো গুণ থাকে এবং কিছু খারাপ গুণও থাকে। সেই খারাপ গুণগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও আরোপিত ধর্মের প্রয়োজন হয়।

কিন্তু প্রচলিত আরোপিত ধর্মগুলি-- এই দুটির কোনোটাই নয়। এই ধর্ম মানুষকে বিপথগামীই করে, বিকশিত করে না।

মানুষের এই অভাব দূর করতেই আত্মপ্রকাশ করেছে, যুগোপযোগী নতুন ধর্ম--- মহাধর্ম।

অনেকেই মানবতা বা মানবিকতা এবং মানবধর্ম এই দুটিকে গুলিয়ে ফেলেন। তাই, এখানে সে সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন।

মানবতা হলো--- মনুষ‍্যোচিত সদগুণাবলী। অনেকের মধ্যেই এই সদগুণাবলীর কিছু অংশ প্রকাশিত, আর কিছু অংশ সুপ্তাবস্থায় থাকে।

মানবধর্ম হলো--- মানুষের স্বভাব ধর্ম। এই স্বভাব ধর্মের মধ্যে রয়েছে, ভালভাবে বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা আর বিকাশ লাভের প্রচেষ্টা।

কিন্তু প্রচলিত ধর্ম মানুষের এই বিকাশ লাভের স্বভাব ধর্মকে উৎসাহিত না ক'রে, সাহায্য না ক'রে, বরং উল্টে তাকে চাপা দেওয়ার এবং মানুষকে বিপথগামী করে তোলার চেষ্টা ক'রে থাকে। ঈশ্বর লাভ, ঈশ্বরের কৃপা লাভ, স্বর্গ লাভ প্রভৃতি অলীক বিষয় -বস্তুর পিছনে মানুষকে অন্ধের মতো ছুটিয়ে মারে। মুখে সত‍্যের কথা ব'লে, অসত‍্যের পিছনে মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় প্রবঞ্চক প্রতারকদের মতো। একে তাই মানুষের উপযোগী ধর্ম না বলে বলা উচিত অধর্ম।

মানবিকতা মানুষের স্বভাবগুণ বা স্বভাব ধর্মের একটা অংশ হলেও, অনেক সময় অসুস্থতা, অস্বাভাবিক মানসিক গঠনের কারণে, এবং কুশিক্ষার কারণে, স্বভাব ধর্মের মধ্যে কিছু কিছু খারাপ গুণও থাকতে পারে, অথবা প্রবেশ করতে পারে। ফলে, মানবিকতা রূপ সদগুণাবলীর অভাব দেখা দিতে পারে, এবং অমানবিক গুণের প্রকাশ ঘটতে পারে।

এখন, একটি উপযুক্ত আরোপিত ধর্মের দ্বারা তা' নিরাময়ের ব‍্যবস্থা করাই হলো আমাদের কর্তব্য। আর এই উদ্দেশ্যেই এসেছে--- মহাধর্ম।

এই আরোপিত ধর্মও কিন্তু কিছু উন্নত চেতনার মানুষ তাদের উন্নত স্বভাব ধর্ম থেকেই সৃষ্টি ক'রে থাকেন। বিকাশ বলতে, এখানে মনোবিকাশ বোঝায়। আর, বিকাশের বিভিন্ন স্তরে স্বভাব ধর্মেরও কিছু কিছু পরিবর্তন হয়।

শুধু ধর্মই নয়, প্রায় প্রতিটি সিস্টেম বা ব‍্যবস্থার মধ্যেই কিছু ভালো কিছু খারাপ জিনিস থাকে।

এখন, যদি সেই ব‍্যবস্থার নিয়ন্ত্রকগণ অথবা তার অধীনস্থ মানুষ--- সেই খারাপ দিকটাকে দূরীকরণের চেষ্টা না ক'রে, শুধু ভালো দিকটাকে নিয়েই গর্ব- মত্ত হয়ে থাকে, তাহলে একদিন না একদিন, সেই খারাপ অংশটা বৃদ্ধি পেতে পেতে ক্রমশ সমস্ত অংশটাকেই গ্রাস করে ফেলবে। ফলস্বরূপ একসময় সেই ব‍্যবস্থাটি ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।


হাজার হাজার বছর ধরে অজ্ঞান—অসহায় মানুষ অন্ধ-বিশ্বাস ভিত্তিক (আরোপিত)ধর্মের অধিনস্ত হয়ে আসছে। এই সুদীর্ঘকালের ধর্ম-শিক্ষায় মানুষের ওপরটাতে মেকী সভ্যতার চাকচিক্য— ধর্মীয় ভেক বা ভন্ডামোর ছাপ পড়েছে শুধুমাত্র, অন্তরের অন্ধকার ঘোঁচেনি এতটুকুও। মানুষ যে তিমির সেই তিমিরেই রয়ে গেছে আজও। প্রচলিত ধর্ম মানুষের সচেতন মনের বিকাশ ঘটাতে চায়নি কোনদিনই।

প্রচলিত ধর্ম ও রাজতন্ত্র (বর্তমানে রাজনীতি) উভয় উভয়ের স্বার্থে —একে অপরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সচেস্ট। মেকী মানবসভ্যতার অন্যতম ভিত্তি স্বরূপ শক্তিশালী তিনটি স্তম্ভ হলো— ধর্ম, রাজতন্ত্র আর বৈশ্যতন্ত্র। এরা পারতপক্ষে (কম-বেশি) প্রত্যেকেই মানুষকে অজ্ঞান-অন্ধ ক’রে রাখতে— তাদের খুশিমতো মানুষকে ব্যবহার করতে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বদ্ধপরিকর। মানব মনের যথেষ্ট বিকাশ —এদের কাম্য নয়।

এককালে, আদিম মানুষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, তাদেরকে সমাজবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ক’রে তুলতে, প্রচলিত ধর্মের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কালের সাথেসাথে তা’ সময়োপযোগী না হয়ে ওঠায়, এখন তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে অনেকাংশে। অন্ধ-বিশ্বাস ভিত্তিক ধর্ম মানুষকে কখনোই প্রকৃত জ্ঞানের পথে— সত্যের অভিমুখে অগ্রসর হতে সাহায্য করেনা। আজ চারিদিকে যে ভীষন অসুস্থতা— অরাজকতা, বিকার-বিকৃতি, যে তমসাচ্ছন্ন ঘোর সঙ্কট পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা’ অনেকাংশেই এই ধর্মের গর্ভে সৃষ্ট। ধর্ম নিজেই যদি অজ্ঞান-অন্ধ —দুষিত —অসুস্থ, বিকারগ্রস্ত হয়, তার গর্ভজাত সন্তান ভাল হয় কীকরে! দু-একজন ব্যতিক্রমী মানুষকে নিয়ে আহ্লাদিত হলে হবেনা!

সারাবিশ্বে যত গন্ডগোল— যত সমস্যা— সঙ্কট, তার অধিকাংশের জন্যই দায়ী হলো— অন্ধ-বিশ্বাস। যে ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে আমার সম্যক জ্ঞান নেই, সেই ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে কোনো ধারণাকে ‘সত্য’ বলে— নিশ্চিতভাবে মনে স্থান দেওয়াই হলো— বিশ্বাস বা অন্ধ-বিশ্বাস। এযে কত বিপদজনক —কী মারাত্মক, তা’ একটু সজাগ দৃষ্টিতে চারিদিকে তাকালেই বোঝা যাবে। বোঝা না গেলে, —সে-ও হবে ঐ অন্ধ-বিশ্বাসের কারণেই। জ্ঞানী মানুষ মাত্রই তাদের ধারণা—বিশ্বাস—জ্ঞানকে আপাতসত্য জ্ঞান ক’রে থাকেন।

পুরস্কারের লোভ আর শাস্তির ভয় দেখিয়ে পশুকে এবং পশুতুল্য নিম্নচেতনস্তরের মানুষকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। একটু জ্ঞান-চক্ষু ফুটলে— সচেতন মনের একটু বিকাশ ঘটলেই— সে মানুষ তখন আর ওসবের দ্বারা কারো নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। তাই, ধর্মও চায়না মানুষের চেতনার বিকাশ ঘটুক। স্বর্গলাভ—পূণ্যলাভ প্রভৃতি পুরস্কারের লোভ আর নরকাদি শাস্তির ভয় দেখিয়ে, দিব্য-চেতনার নামে আজগুবি দার্শনিক তত্ত্বে ভুলিয়ে— মানুষকে অচেতন করে রাখতেই সে বেশি আগ্রহী।

আজকের এই করুণ পরিস্থিতিতে মানবজাতিকে রক্ষা করতে, চাই— ‘মানবধর্ম’। যে ধর্ম মানুষকে মিথ্যার পিছনে না ছুটিয়ে— ছোটাবে ‘পূর্ণ বিকশিত মানুষ’ হওয়ার লক্ষ্যে। হ্যাঁ, ইতিমধ্যে সে-ও একটু একটু করে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে! এখন, তাকে অভ্যর্থনা জানাতে হবে আমাদের নিজেরদের স্বার্থেই। 

গুগল বা ফেসবুকে গিয়ে— ‘মহাধর্ম’ (MahaDharma) সার্চ করলেই তার দেখা পাওয়া যাবে। মানব ধর্মই মহাধর্ম।

====================================================================


যুগ যুগ ধরে মানুষ প্রচলিত ধর্মীয় শাসন ও শিক্ষার অধিনে থেকেও, তার যথেষ্ট মনোবিকাশ ঘটেনি এখনো। যে তিমির সেই তিমিরেই পড়ে আছে।

এর চাইতে, মানুষ যদি প্রচলিত ধর্ম হতে মুক্ত থেকে, স্বাভাবিক মানব ধর্ম অনুযায়ী পৃথিবীর মুক্ত পাঠশালায় শিক্ষা গ্রহণ করতো, তাহলে অনেক অনেক বেশি বিকাশলাভ করতে পারতো।


===================================================================


ধর্ম-টা ব‍্যক্তিগত ব‍্যপার, ব‍্যক্তি স্বার্থের ব‍্যপার হলে বিশেষ সমস‍্যা থাকেনা। কিন্তু, সেটা যখন গোষ্ঠিগত ব‍্যপার, গোষ্ঠীগত স্বার্থের ব‍্যপার হয়, এবং সেই গোষ্ঠি যদি গোড়া মৌলবাদী গোষ্ঠি হয়, তখন সেই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত অথচ স্বাধীনচেতা বা মুক্তমনের মানুষের পক্ষে তা' সঙ্কটের কারণ হয়ে ওঠে। 
কেউ কেউ প্রচলিত ধর্মের মধ্যে থেকে, তার সেই ধর্মকে সংশোধন ---পরিবর্তন করতে চায়। খুব উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব‍্যক্তি হলে, কিছুটা পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হলেও হতে পারে। সাধারণ মানুষের পক্ষে তা' সম্ভব হবেনা। উল্টে প্রাণটাই যাবে।
​====================================================================

দিব্যজ্ঞান লাভ করতে চাও? —আগে কান্ডজ্ঞান লাভ করো! (ভক্ত ও অনুগামীদের প্রতি মহামানসের উক্তি)

যদি দিব্যজ্ঞান লাভ করতে চাও, তাহলে— আগে কান্ডজ্ঞান লাভ করো। মোহ-মায়া —অজ্ঞানতা থেকে মুক্ত হতে পারলে, —তবেই মুক্তিলাভ সম্ভব হবে।

পূর্ণ বিকাশলাভই এই জীবনের অন্তিম লক্ষ্য। তার জন্য পায়ে পায়ে— সমস্ত পথ অতিক্রম করতে হবে। চেতনার পথে যত এগিয়ে যাবে, —ততই বন্ধন মুক্ত হবে, —ততই স্বাধীন হয়ে উঠবে। তবে, ফাঁকি দিয়ে— ফাঁক রেখে, কাউকে ঘুষ দিয়ে— কোনো জাদু-মন্ত্র বলে এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথ ডিঙিয়ে যাওয়ার অলীক চিন্তা কোরো না। 

যে যতই প্রলোভন দেখাক না কেন, বর্তমান মানব-চেতন স্তরে কোনো ভাবেই মুক্তিলাভ— মোক্ষলাভ— দিব্যজ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। তাই, যথাসম্ভব মুক্তমনা হয়ে, যথাসাধ্য সজাগ— সচেতন থেকে, আত্মজ্ঞান— আত্মবিকাশ লাভে সচেষ্ট হও।

কেউ অত্যল্প অতিন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী হয়েই— নিজেকে একজন কেউকেটা ভাবছে। আবার কেউ কেউ মানুষ ঠকানোর মতো কিছু ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা, —কিছু প্রতারণা মূলক কৌশল অথবা প্রেতশক্তির সাহায্য নিয়ে— নিজেদেরকে ঈশ্বর অথবা ঈশ্বরের প্রতিনিধি রূপে উপস্থাপিত করছে।

কান্ডজ্ঞান বিহিন— লোভী মানুষই প্রধানত এদের শিকার হয়। এদের মতো লোভে পড়ে, বিকাশের পথ ছেড়ে— বিপথগামী হয়োনা।

আগের কাজ আগে করো। পূর্ণ বিকশিত মানুষ হওয়ার আপাত লক্ষ্যে এগিয়ে যাও। তার পরের ধাপে— ‘মহামানব’ হও। তারপর আস্তে আস্তে দেবচেতন স্তরে উন্নীত হবে। তারওপরে ‘মহাদেব’ চেতনা সম্পন্ন হয়ে উঠবে, এবং ক্রমে পূর্ণ বিকাশলাভ করবে। এই উচ্চতর থেকে উচ্চতম চেতনস্তর গুলির বিকাশ ঘটবে— ভিন্ন ভিন্ন লোকে, —এই পৃথিবীতে নয়।

মনেরেখ, ঈশ্বরের এই বিধান— এই জাগতিক ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন করার সাধ্য— ঈশ্বরেরও নেই। সে তুমি যতই তার পূজা— উপাসনা ও প্রার্থনা করো না কেন!


======================================================================


ঈশ্বর আছে কি নেই, থাকলে তার স্বরূপ কি —তা’ যুক্তি-বিচার দিয়ে বোঝার চেষ্টা কর। অজ্ঞান-অন্ধের মতো কেন চোখ বুঁজে তা’ বিশ্বাস করবে!?

মনে রেখ, যুক্তি—কারণ ছাড়া এখানে কোন কিছুই ঘটে না। ঈশ্বরকে যুক্তি-বিচারের সাহায্যে বোঝা যায় না, —একথা ঠিক নয়। তোমার যেটুকু বোঝার ক্ষমতা আছে— সে টুকুই বোঝ। কল্পনার ঈশ্বরকে বিশ্বাস করার চাইতে তা’ অনেক গুণে ভালো। কল্পনার ঈশ্বরকে নিয়ে তৃপ্ত থাকা— মুর্খের স্বর্গে বাস করার সমান।

ঈশ্বরকে তার স্বরূপে জানা—বোঝার ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকলে, ‘মহাধর্ম’ পুস্তকটি তোমার কাজে লাগতে পারে। মানব ধর্ম হলো মানুষের মূলগত ধর্ম। মানব ধর্মই মহাধর্ম।

49 views0 comments
bottom of page