top of page

সপ্তম অধ্যায়

 

 

সবার আগে চাই সুস্থতা

সুস্থতা না থাকলে, আত্মবিকাশ কেন, কোনো কাজই সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়। মন তখন নিজের (মনের) নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। তাই, সবার আগে চাই সুস্থতা।

অনেক মানুষেরই শরীর ও মন সম্পর্কে, সুস্থতা ও অসুস্থতা সম্পর্কে, স্বাস্থবিধি সম্পর্কে এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায়, তারা বহুকিছু পাওয়ার জন্যেই প্রাণপণে চেষ্টা করে থাকে, কিন্তু সুস্থতা লাভের জন্য তার এক শতাংশ চেষ্টা করে না।

আবার, অনেকেরই মনোভাব, সুস্থতার জন্য ডাক্তার দেখাবো--- ওষুধ গ্রহণ করবো, ব‍্যস, এতেই নিজের প্রতি যথেষ্ট কর্তব্য করা হলো। রোগ ও চিকিৎসার নাড়ী-নক্ষত্র নিয়ে মাথা ঘামাবার কোনো দরকার নেই। কোন রোগ--- কোন চিকিৎসায় আরোগ্য হয়, রোগের কারণ এবং তার গতি- প্রকৃতি না জানার ফলে, পথ‍্য-অপথ‍্য না জানার ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই সুস্থতা লাভ না হয়ে, রোগ-ব‍্যাধি আরও জটিল রূপ ধারণ করে থাকে।

এছাড়া, যেখানে অধিকাংশ মানুষই অসুস্থ, সেখানে ওটাকেই তারা স্বাভাবিক বলে ভেবে থাকে। ফলে, সুস্থতা লাভের চিন্তাই তাদের মাথায় আসেনা। প্রকৃতি থেকে দূরে সরে গিয়ে যত বেশি কৃত্রিমতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়বে মানুষ, যত বেশি সুখ ও আরামপ্রিয় হয়ে উঠবে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে— তত বেশি রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে সে। 

অনেক অসফলতার মূলেই— অসুস্থতা

কেউ যদি মাঝেমাঝেই অকারণে বা স্বল্প কারণে খুব অস্থির— উত্তেজিত বা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে, —তার সেই ক্রোধ-উত্তেজনা, অশান্তি, উদ্বিগ্নতা প্রভৃতি তার শরীরে কোনো না কোনও প্রকার বিষ বা রোগ-বিষের উপস্থিতি নির্দেশ করে। এই বিষের প্রভাবে তার বিভিন্ন শরীর-যন্ত্র, যথা— লিভার-পরিপাকযন্ত্র, হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক প্রভৃতি —এদের কোথাও না কোথাও উপদাহ বা প্রদাহ বা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে থাকে।

 

সেই উত্তেজনা ক্রমশ স্নায়ুমন্ডলসহ মনকে উত্তেজিত ও অসুস্থ ক’রে তোলে। এরফলে মানুষ ক্রমশ জীবনে সফলতার পথে অগ্রসর হওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে ওঠে। অসুস্থতার লক্ষণ মানুষের চেহারায় এবং আচরণে পরিস্ফুট হয়ে— তাকে বিকর্ষক ক’রে তোলে। এই ইরিটেশন, ইনফ্লেমেশন ও এক্সাইটমেন্টের কারণে শরীরের ক্ষয়-ক্ষতি ও বিকার-বিকৃতিও ঘটে থাকে। যার পরবর্তীতে আসে নিস্তেজনা, অবসাদ, বিষন্নতা— হতাশা। পরিণতিতে অনেকেই সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি থেকে বিযুক্ত হয়ে এক বিকর্ষক— হতভাগ্য মানুষে রূপান্তরীত হয়।

 

প্রসঙ্গতঃ আমাদের শারীরিক গঠণ— অবস্থা সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। ভিন্ন ভিন্ন শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে, বিভিন্ন প্রকার রোগ-বিষ— বিভিন্ন ধরণের রোগলক্ষণ সৃষ্টি করে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এক এক প্রকার রোগ-বিষ শরীরের এক এক অংশে বা যন্ত্রের প্রতি বেশি আকর্ষিত হয়র থাকে, এবং সেখানে বাসা বেঁধে— সেই অংশের ক্ষতিসাধন করে থাকে। সঠিক চিকিৎসা না হলে, শরীর-ব্যবস্থা রোগ-বিষকে নিস্ক্রিয় বা নিস্ক্রান্ত করতে না পারলে, যত সময় অতিবাহিত হয়, ততই শরীরের ক্ষয়-ক্ষতি বাডতে থাকে এবং রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পেতে থাকে ক্রমশই।

 

এখন, শরীরস্থ এই বিষ বা রোগবিষকে নিস্ক্রিয় অথবা শরীর থেকে নিস্ক্রান্ত করতে পারলে, সেই ব্যক্তি সুস্থতা লাভ ক’রে— আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রমের সহায়তা নিয়ে— সুখময়— শান্তিময়— আনন্দময়, সফল জীবনের অধিকারী হয়ে উঠতে সক্ষম হয়।

 

কিন্তু, কোনো চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যার মূল কারণ— রোগ-বিষকে নিস্ক্রিয় বা অপসারিত না ক’রে, শুধু সমস্যাকে চাপা দেওয়া— আপাত উপশমদায়ক ব্যবস্থা নেওয়া হলে, সমস্যার প্রকৃত সমাধান তো হয়ই না, বরং মূল রোগের সাথে ঔষধজ বিষের ক্রিয়ায়, রোগ বা সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করে। 

 

তবে, দীর্ঘস্থায়ী কোনো বিষ বা রোগ-বিষ থেকে মুক্ত হওয়া মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। সারা পৃথিবী জুড়ে এ’ নিয়ে বহু গবেষণা চলছে। আমাদের এখানে, বহুদিনের সযত্ন অন্বেষণের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে ওক নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি, যার নাম দেওয়া হয়েছে— ‘মহাপ্যাথি’। সংক্ষেপে— ‘এমপ্যাথি’ (www.mahapathy.wix.com/medicine)। শরীরস্থ বিষ বা রোগ-বিষকে নিস্ক্রিয় ক’রে তোলাই এই চিকিৎসা পদ্ধতির বিশেষত্ব।আমাদের মহা-আত্মবিকাশ বা মনোবিকাশ তথা মানববিকাশ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে, আগামী দিনে এই চিকিৎসা পদ্ধতি অনেকটাই সহায়ক হয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করা যায়।

 

অনেক আদর-যত্ন সাহচর্য— স্নেহ-ভালবাসা এবং সতর্কতাসহ বহু অর্থ-শ্রম-সময় ব্যয় করেও, আমরা অনেক সময়েই আমাদের সন্তানদেরকে ঠিকমতো মানুষ ক’রে তুলতে, তাদের যথাযথ বিকাশ ঘটাতে ব্যর্থ হই। আসলে, আমরা অনেকেই নিজেদের এবং সন্তানদের— উভয়ক্ষেত্রেই, ‘যথেষ্ট বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠা’ বলতে— ঠিক কী বোঝায়, সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নই।

 

একটা ঘটনা বলি, প্রতিবছর ক্লাসে প্রথমস্থান অধিকার করা, একটি বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে, তার জন্যে ভাল পুষ্টিকর খাদ্য, দামি পোষাক, দামি গাড়ি, মোবাইল-ফোন, নামি-দামি স্কুল এবং বেশ কয়েকজন গৃহশিক্ষকসহ পর্যাপ্ত আদর-যত্ন-সাহচর্য, স্নেহ-ভালবাসা সত্বেও— সে এ’বছর পরীক্ষায় ফেল করে। স্বভাবে সে অস্থির-উত্তেজিত, অবাধ্য ও জেদী। অনুসন্ধানে জানা যায়, সে ইদানীং গোপনে প্রেম করছে। তাছাড়া, সে মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্লু-ফিল্ম দেখতেও অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর, সবচাইতে সাংঘাতিক কথা হলো— সে গনোরিয়া রোগের আক্রান্ত হয়েছে।

 

নিদারুণ যৌন-উত্তেজনাসহ বয়ঃসন্ধিকালের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা, তাদের যৌন-শিক্ষায় শিক্ষিত ক’রে তোলা এবং তাদের শরীর ও মনকে সর্বাঙ্গীন সুস্থ ক’রে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং উদ্যোগের বড়ই অভাব। ফলতঃ অসাফল্য অনিবার্য।  

চিকিৎসা প্রসঙ্গে মহর্ষি মহামানস


স্বাস্থ্য, ওষুধ এবং বিভিন্ন চিকিৎসা সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং সচেতনতার অভাবে মানুষের এতো রোগ-ব‍্যাধি, এত দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা। হাসপাতালগু্লিতে বা চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতা এতো রোগীর ভীড়। 

অনিয়মিত অসংযত আহার-বিহার, জীবন যাপন, বিষাক্ত খাদ্য-পানিয়, অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারসহ ওষুধের সাইড (এডভার্স) এফেক্টের কারণে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে মানুষের জীবনে।

অনেক মানুষকে দেখেছি, তারা তাদের রোগের প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থায় তেমন কোনো গুরুত্বই দেয়না। যখন খুবই মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হয়, তখন ঘটি-বাটি-গহনা বিক্রি করে নার্সিংহোমে ছোটাছুটি করে।

বেশকিছু মানুষ আছে, তারা ইনজেকশন ও অস্ত্রপচার করাতেই বেশি আগ্রহী। বহীর্বাংলায় রোগীদেরকে একটা কথা বলতে শুনেছি, 'সূঁই নেহি দিয়া তো ক‍্যা ডকডর (ডাক্তার) হ‍্যায়'। ফলে, এই রকম রোগী পেলে একশ্রেণীর ডাক্তারদের পোয়াবারো। তবে এই মনোভাব সৃষ্টির পিছনে ডাক্তাররাই দায়ী। 

কর্পোরেট হসপিটালগুলিতে শুনেছি, ডাক্তারদের ওপরে একটা কোটা বেঁধে দেওয়া (নির্দেশ) থাকে, মাসে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক টেস্ট ও অপারেশন দিতেই হবে। বেঙ্গালুরুতে একটা বেসরকারি হাসপাতালে আমি নিজে দেখেছি, আমার রোগিনীকে তিনবার লিভার ফাংশন টেস্ট করানোর পরেও, পুণরায় লিভার ফাংশন টেস্ট করানোর জন্য পীড়াপীড়ি করেছে। তারপর তাদের পরিসেবা অতি মন্দ।

বেশিরভাগ মানুষই হুজুগে মেতে, বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইতে ছুটছে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার আশায়। অথচ সেখানেই যে সবাই সুস্থ হতে পারছে, এমন নয়। বেঙ্গালুরু হসপিটাল থেকে ফিরে আসা বেশ কয়েকজন রোগী আমাদের প্রাকৃতিক চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে সুস্থতা লাভ করেছে।

কোন্ রোগ কোন্ চিকিৎসা পদ্ধতিতে নির্মলভাবে সহজেই আরোগ্য হয়, এই ধারণা থাকা খুবই প্রয়োজন। অনেক মানুষেরই এ' সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায়, অযথা হয়রানি এবং অর্থব‍্যয় হচ্ছে। 

অনেক মানুষ এতটাই অজ্ঞান-অন্ধ, যে তাদের ধারণা, ডাক্তার মানেই তার চেহারাটা বেশ হৃষ্টপুষ্ট হবে, সঙ্গে প্রাইভেট কার থাকবে....। তারা তাদের গলা বাড়িয়েই রেখেছে বলি প্রদত্ত হওয়ার জন্য! 

এমনতো আমরা অনেক সময়েই দেখছি, যেখানে অপারেশন না করেও রোগারোগ‍্য সম্ভব হতো, সেখানে শুধুমাত্র একপক্ষের অর্থলাভের জন্য, আর অপর পক্ষের অজ্ঞতার জন্য অযথা কাটা-ছেড়া করে ভোগান্তির একশেষ হচ্ছে।

বিশেষ দুরবস্থা ছাড়া, যথাসম্ভব প্রাকৃতিক চিকিৎসার অধিনে থাকা সজাগ-সচেতন মানুষ তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো আছে।

হোমিওপ্যাথিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক চিকিৎসার নামে অনেককেই খড়্গহস্ত হতে দেখা যায়। যদি তাদের কথামতো ধরেই নিই, ওগুলো সব বিশ্বাসভিত্তিক চিকিৎসা, ওইসব ওষুধের কোনো আরোগ্য ক্ষমতা নেই। সেক্ষেত্রে আমার কথা হলো, বিশ্বাসের মাধ্যমে নির্মলভাবে অর্থাৎ কোনো সাইড-এফেক্ট ছাড়াই যদি রোগী সুস্থতা লাভ করে, মন্দ কী। আমাদের দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী এই পদ্ধতিতেই আরোগ্য অথবা উপশম লাভ করে চলেছে।

মহর্ষি মহামানস প্রদর্শিত বিশেষ যোগ প্রক্রিয়া ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সর্বাঙ্গীন চিকিৎসা  

সুস্থতা ছাড়া যথেষ্ট আত্মবিকাশ বা মনোবিকাশ ঘটানো সম্ভব নয়। তাই, প্রাকৃতিক চিকিৎসা মহাধর্ম অনুশীলনের একটি অন্যতম প্রধান অঙ্গ। 

    

যাঁরা বহুদিন যাবৎ বিভিন্ন জটিল রোগে কষ্ট পাচ্ছেন, প্রচলিত কোনো চিকিৎসাতেই আরোগ্য হচ্ছেন না, এছাড়া সব রকমের মেডিকেল টেষ্টেও কোনো রোগ ধরা পড়ছেনা, তাঁরা আমাদের এই সর্বাঙ্গীন চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্যে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন।  এই চিকিৎসার জন্যে কাউকে কোনো ফিস দিতে হবেনা। চাই বিশ্বাস আর নিষ্ঠার সঙ্গে এখানে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলি অনুশীলন। যাঁর এ'সম্পর্কে ধারনা বা বিশ্বাস যত বেশী, তিনি তত দ্রুত সর্বাঙ্গীণ আরোগ্য লাভ করতে পারবে্।প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলি তোমাকে সংগ্রহ বা ক্রয় করতে হবে। সুস্থ হওয়ার পরে, চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে, উপস্থিত সবার সামনে তোমার আভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করবে। 

অসুস্থতার অন্যতম কারণ হলো রোগবিষ বা টক্সিন। শুধু শারীরিক দূষণ-ই নয়, তার সঙ্গে রয়েছে মানসিক দূষণ। আমরা নানা প্রকারের ওষুধ খেয়ে সাময়ীকভাবে সুস্থতা লাভ করলেও, শরীরে টক্সিনের মাত্রা ক্রমশই বাড়িয়ে চলেছি। অধিকাংশ ওষুধেরই কিছু না কিছু কুফল বা সাইড এফেক্ট বা এডভার্স এফেক্ট রয়েছে। আসল রোগের সঙ্গে ওষুধের কুফল যুক্ত হয়ে, ক্রমশই আমাদের রোগ-ব্যাধি আরও জটিল আকার ধারণ করে চলেছে।

প্রতিনিয়ত জল-বাতাস-খাদ্য প্রভৃতি ক্রমশই সাঙ্ঘাতিকভাবে দুষিত ও বিষাক্ত হয়ে চলেছে। আমাদের শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে চলেছে প্রতিদিনই। তাই, প্রাকৃতিক উপায়ে যথাসম্ভব সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে আমাদের। ওষুধের উপর নির্ভর না করে, নিয়মিতভাবে শরীর থেকে রোগবিষ দূরীকরণের মাধ্যমে আমরা সুস্থ থাকার চেষ্টা করবো।

আমাদের শরীর তার আভ্যন্তরীণ মলিনতাকে দূর করতে, সে তার নিজস্ব ব্যবস্থা মতো বিভিন্ন রন্ধ্রপথে বিভিন্ন প্রকার স্রাব নির্গমনের মধ্য দিয়ে, নানাবিধ রােগবিষ –বর্জনীয় পদার্থ থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু রোগবিষ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাওয়ায়, সবসময় সে এই কাজে সফল হতে পারে না, ফলে ক্রমশ শরীরে রোগবিষ পুঞ্জীভূত হয়ে থাকে। আমাদের অসুস্থতার অন্যতম কারণই হলো –এই রোগবিষ, রোগ সৃষ্টি করে যে বিষ।

শরীরের পক্ষে অনিষ্টকর– বিরূপ এই সমস্ত বর্জ্য পদার্থকে আমরা যদি বাইরের সাহায্য নিয়ে বহিস্কার করতে সক্ষম হই, তাহলেই আমরা অনেকাংশে সুস্থতা লাভ করতে পারবো। অবশিষ্ট অসুস্থতার জন্য আমাদেরকে মনোপথে (ধ্যান-যোগ পথে) অগ্রসর হতে হবে৷

রোগবিষ ও রোগলক্ষণকে চাপা দিয়ে আপাত সুস্থতা লাভের চেষ্টার ফলে, আমরা আরো কঠিণ ও জটিল ভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ি। তাই, ও পথে না গিয়ে রোগবিষকে শরীরের বাইরে বার করে দেওয়ার অথবা তাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। যদিও এই কাজটি মোটেই সহজ কাজ নয়। তবুও, নিজেদের স্বার্থে, সুস্থভাবে বাঁচার স্বার্থেই এটা করতে হবে আমাদের। 

শরীর থেকে রোগবিষ নিষ্ক্রান্ত হয়ে থাকে সাধারণতঃ নাসাস্রাব, অশ্রুস্রাব, কর্ণমল, লালাস্রাব, প্রস্রাব, ঘাম ও মল ত্যাগের মধ্য দিয়ে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার চর্মরােগ এবং তাদের স্রাবের মধ্য দিয়েও রোগবিষ বহিস্কৃত হয়ে থাকে।

আমাদের জীবনদায়ক খাদ্য, পানীয়জল, বাতাস সহ সমস্ত পরিবেশ ক্রমশই অত্যন্ত দুষিত বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমানে বিষাক্ত পদার্থ বা রােগবিষ জমা হয়ে চলেছে। এখন মানুষ আর বয়সে বুড়ো হয়না, অকালে রোগেই বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। মানবজগতে অস্বাভাবিক যা কিছু ঘটছে তার অনেকাংশের মুলেই আছে এই বিষাক্ততা।

এখন, পৃথিবীকে বিষমুক্ত করা– প্রায় দুঃসাধ্য কাজ৷ তবু আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। নানা উপায় অনুসন্ধান করতে হবে। সেই সাথে, আমাদের ভিতরে জমে থাকা বিষ বা রোগবিষ থেকেও যথাসাধ্য মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সুস্থজীবন উপভোগ করতে হলে, নিয়মিত ভাবে শরীর-মনকে বিষমুক্ত ও সুস্থ করার কাজে লেগে থাকতে হবে। আমাদের এই ডিটক্সিফিলেশন পদ্ধতি— শরীরের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকা বিভিন্ন ধরণের পরজীবি কীট, কীটাণু, জীবানু ও ফাঙ্গাসদেরও দূর করে থাকে।

এবার, আমি এক এক করে রোগবিষ দূরীকরণের এবং সুস্থতা লাভের পদ্ধতিগুলি বর্ণনা করবো।

 

১৷ শুরুতে, কোনো এক ছুটির দিনের পুর্বের রাত্রে বিশেষ অনিষ্টকর নয় এমন কোনো প্রাকৃতিক জোলাপ গ্রহন করে শুয়ে পড়তে হবে। খাদ্য গ্রহনের ২ঘন্টা পরে জোলাপ সেবন কর্তব্য। চিকিৎসকের নির্দেশ মতো হার্বাল, আয়ুর্বেদিক অথবা হােমিওপ্যাথিক জোলাপ সেবন করতে হবে। পুরাতন অম্ল-অজীর্ন আমাশার রােগী— যাদের অন্ত্রে প্রচুর পরিমাণে ক্রিমি-জিয়ারডিয়া-ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, তারা জোলাপ গ্রহনের দিন চিকিৎসকের নির্দেশ মতো ক্রিমির ওষুধ সেবন করতে পারেন৷

তিন বারের বেশি পায়খানা হলে, জলে ভেজানো ভাত। কাঁচা পোস্ত বাটা দিয়ে খাবেন। আশাকরি পায়খানা বন্ধ হয়ে যাবে।

এখানে দুটি পদ্ধতি জানাচ্ছি। চিকিৎসকের পরামর্শমতো, এই দুটি পদ্ধতির যেকোনো একটির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

(ক) রাত্রে শোওয়ার পূর্বে সোনাপাতা (দুই চামচ) এবং ত্রিফলা (দুই চামচ) একত্রে ভেজানো জল পান করতে হবে। বেলার দিকে (১২ টা নাগাদ) একটা কাচের গ্লাসে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পান করার পূর্বে ছেঁকে নেবে।

(খ) অথবা, সকাল বেলায়, স্বল্প গরমজলসহ একচামচ (বিশুদ্ধ) ক্যাস্টর অয়েল পান করতে হবে।

যে পদ্ধতিটি সুবিধাজনক মনেহবে, সেটাই ব্যবহার করবে। তবে যে কোনো পদ্ধতির জোলাপেরই কিছু না কিছু সাইড-এফেক্ট আছে। তাই, জোলাপ নেওয়ার দিন এবং তার পরেরদিন রাত্রে শোবার পূর্বে এক ডোজ করে  NUX VOM. 30 খেয়ে শুয়ে পড়বে।

এই প্রক্রিয়াটি দুই মাসে একবার করে (অন্ততঃ তিন মাস অন্তর) করা উচিৎ। পরের দিন ২–৩ বার পায়খানা হবে। প্রয়োজনে ORS বা নুন-চিনির জল পান করা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াটির দ্বারা অন্ত্রে জমে থাকা পরজীবি ও রোগবিষ অনেকটাই দূরীভূত হবে। এর ঠিক পরেরদিন থেকে—

২। প্রতিদিন সকালে, (সম্ভব হলে, পায়খানা করার পর) ২ গ্লাস উষ্ণ (অল্প গরম) জল পান করার পরে, গলায় আঙুল দিয়ে বমি করে যতটা সম্ভব জল বের করে দেবে। তবে খুব জোর করে বমি করার চেষ্টা করবেন না। প্রথম ২–৪ দিন অল্প করে জল বার করে, অভ্যাস করো। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাকস্থলী থেকে প্রতিদিন কিছুটা করে রোগবিষ বাইরে বার হয়ে যাবে। এরপরে ঈষদুষ্ণ জল পান করতে পারবে। 

৩৷ পনেরদিন অন্তর —মাসে ২বার উপবাস থাকা কর্তব্য। প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমাতেও উপবাস করা যেতে পারে। অন্ততঃপক্ষে মাসে একদিন উপবাস করা অবশ্য কর্তব্য। এরদ্বারা শরীর থেকে বেশ কিছুটা রােগবিষ বহীস্কৃত হয়ে থাকে, এবং পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম পায়। উপবাসকালীন নিজের নিজের প্রকৃতি ও সহ্য মতাে ফলের রস আর জল পান করতে হবে। ফলের রস সহ্য না হলে, তরল খাদ্য সাবু, বার্লি, দুধ প্রভৃতি অথবা শাক-সজী সেদ্ধ করে, তার জল বা ক্বাথ খাওয়া যেতে পারে।

 

৪৷ প্রতিদিন সকাল ও সন্ধায় বা রাত্রে, প্রাণযোগ (প্রাণায়াম অথবা সহজ প্রাণায়াম। 'প্রাণযোগ' প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য) অভ্যাস করবে--- অর্থাৎ ক্ষমতা অনুযায়ী কিছুক্ষণ ধরে গভীর নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস নিতে হবে। তবে ভর্তি পেটে নয়। এর দ্বারা রক্তে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন এসে মেশার ফলে, শরীর নিজেকে রােগবিষ থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হবে। তাছাড়া, এর দ্বারা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। বিশদভাবে জানতে, 'প্রাণযোগ' প্রবন্ধ পড়ো।

৫। 'প্রাণযোগ' শেষ হলে, দুই হাতের তালু ও আঙুল দিয়ে সশব্দে সজোরে ছয়বার (৬) তালি দেবে। যাতে, দুই হাতের তালু ও আঙুলগুলো ঝিন-ঝিন করে ওঠে। এর দ্বারা, হাতের তালুতে অবস্থিত আকু-পয়েন্ট গুলি উদ্দীপিত হয়ে, সুস্থতা লাভের সহায়ক হবে। 

৬। এবার, অসুস্থতার অন্যতম কারণ-- মনোদূষণ থেকে মুক্ত হওয়ার উপায়গুলি আলোচনা করবো।
পুরাতন ও জটিল রোগের ক্ষেত্রে প্রায় সবারই কিছু না কিছু মানসিক সুস্থতার অভাব থাকে। সেজন্য, সুষুপ্তি-যোগ বা মহা-শবাসন অবশ্যই অভ্যাস করতে হবে। প্রতিদিন অবসর মতো একটা নির্দিষ্ট সময়ে অভ্যাস করবে। প্রতিদিন একবার আধঘন্টা। সুষুপ্তি-যোগ বা ‘মহা-শবাসন’-এর অডিও ফাইল কোথায় পাবে, জেনে্ নাও, এবং সুষুপ্তি-যোগ অভ্যাসের নিয়ম  ভালোকরে পড়ে নাও। সপ্তাহে অন্ততঃ ২–৩ দিন মহা-শবাসন বা সুষুপ্তি যোগ (রিল্যাক্সেশন) বা নিদ্রাযোগ অভ্যাস করতে হবে। এর অডিও সিডি বা অডিও ফাইল আমাদের কাছে পাওয়া যাবে। এছাড়াও, প্রতিদিন ধ্যান অভ্যাস করা কর্তব্য। এর দ্বারা মনােবিষ ও মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হয়ে মন ও স্নায়ুমন্ডল সুস্থ হয়ে উঠবে, এবং তার ফলে শরীরও সক্রিয়তা ও সুস্থতা লাভ করবে।

৭। দিনের মধ্যে এক থেকে দুইবার, সাধ্যমতো বেশ কিছুটা পরিশ্রম অথবা ব্যায়ামের মাধ্যমে, শরীর থেকে অনেকটা পরিমানে ঘাম ঝরিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন সহ্য ক্ষমতা আনুযায়ী ব্যায়াম (অথবা স্কিপিং বা লাফ-দড়ি) করা অবশ্য কর্তব্য। এর দ্বারা রক্তে প্রচুর অক্সিজেন এসে মিশবে এবং ঘামের মাধ্যমে অনেকটা রােগবিষ বহীৰ্গত হবে৷ অর্থাৎ প্রতিদিন আধঘন্টা মতো জগিং ও ওয়াকিং সহ হাল্কা ব্যায়াম করতে হবে। সকালে অথবা বিকালে একবার। এছাড়া, আহারাদির নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিয়ম নিম্নে দেখো।   

৮। সাধ্যমতো যথেষ্ট পরিমানে জল পান করলে ভালো প্রস্রাব হবে। এতেও অনেকটা পরিমানে 'টক্সিন' শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। তবে, পিপাসা কম থাকলে অথবা না থাকলে, জোর করে বেশি জল পান করা উচিৎ নয়। সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি, বায়োকেমিক অথবা কোনো প্রাকৃতিক চিকিৎসার মাধ্যমে পিপাসাহীনতা দূর করার চেষ্টা করতে হবে।​​

৯। প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত্রের মধ্যে যেকোনো একটা সময় বসে, কিছুক্ষণ সশব্দে জোরে জোরে হাসতে হবে। জোক বা কমিক গল্প, অথবা ভিডিও দেখে হাসতে পারো, অথবা কোনো হাসির কথা মনে করে হাসতে পা্রো।  একসাথে কয়েকজন মিলে এটা করা যাবে।

১০।  সংগীতের মাধ্যমে 'মহামনন' ধ্যান । 

'সঙ্গীত সহযোগে ধ‍্যান' হলো একটা খুব সহজ এবং ফলপ্রসূ 'ধ‍্যান' পদ্ধতি। প্রথমে গানটি কাগজে লিখে নাও। তারপর--- গান শুনে, গানটিকে কণ্ঠস্থ করে নাও। তারপর নিজেই গাইতে থাকো। কয়েকজন মিলে সংঘবদ্ধ হয়েও, এই ধ‍্যান অভ‍্যাস করতে পা্রবে।

ধ্যান-সংগীত গাওয়ার সময় হেলেদুলে--- মাথা দুলিয়ে, হাত তুলে, অথবা হাতে তালি দিয়ে--- মাতোয়ারা হয়ে গান গাইতে থাকো। 

গানটি কে বারবার (repeatedly) গাওয়া সাথে সাথে--- ক্রমশ লয় বা গতি বাড়িয়ে দাও। অর্থাৎ ক্রমশ দ্রুতগতিতে গান গাইতে থা্কো। কিছুক্ষণ গাওয়ার পরে, যখন দেখবে্ বেশ ঘোরলাগা মতো অবস্থা হয়ে এসেছে, তখন গান গাওয়া বন্ধ করে চোখ বুজে স্ব-বোধে স্থিত হয়ে, ধ‍্যানের গভীরে ডুবে যাও।

সমস্ত ফোকাস থাকবে মস্তিষ্কের ঠিক মাঝখানে। আস্তে আস্তে এক চিন্তাশূন্য অবস্থায় চলে যাও। যতক্ষণ ভালো লাগবে ধানের মধ্যে ডুবে থাকো।

এর বহুবিস্তৃত সুফল বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। নিষ্ঠার সঙ্গে ধ‍্যান অভ‍্যাস করতে করতে, ধ‍্যান-যোগী নিজেই উপলব্ধি করতে পারবে্ এর বহুবিধ উপকারিতা।

সবচাইতে ভালো উপায় হলো, 'মহামনন' ধ্যান অভ্যাস।

যা যা পরিহার বা এভয়েড করতে হবেঃ

এলকোহল, কফি, তামাক, ফাস্টফুড, প্যাকিং ফুড, কোল্ড ড্রিংকস, রিফাইন্ড- প্রসেসড ফুড, কৃত্রিম খাদ্য, বেশী চর্বি জাতীয় খাদ্য, বেশি চিনি ও মিষ্টি, ময়দা, বেশী লবন, বাসি-পচা খাদ্য প্রভৃতি৷ সেঁতসেতে গরম আবহাওয়া এবং দুষিত আবহাওয়া, দুষিত জল, দুষিত সংসর্গ, চর্মরোগ এবং যেকোনো রোগকে চাপা দেওয়া চিকিৎসা, বাইরের থেকে ঘরে ফিরে এসে হাত-পা না ধোওয়া এবং আহারের পূর্বে হাত না ধোওয়া।

 

বিঃদ্রঃ- স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজ নিজ প্রকৃতি (বাত । পিত্ত । কফ প্রভৃতি) অনুযায়ী উপযুক্ত এবং সুষম আহার– বিহার -আচরণ কর্তব্য। যদি কখনাে উদ্ভেদ (স্কিন ডিজিস) আকারে চামড়া দিয়ে টক্সিন বহির্গত হয়, বিচলিত হবে না৷ কিছুদিন পরে ওগুলাে আপনা থেকেই চলে যাবে না গেলে, হােমিওপ্যাথির সাহায্যে চিকিৎসা করাতে হবে৷

কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করে— কোনো অসুবিধা দেখা দিলে, সেটি তখনকার মতো বন্ধ করে, আমাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নাও৷ যাদের পেটে /অন্ত্রে জ্বালা-যন্ত্রনা ও ক্ষত আছে, তারা অম্ল বা এসিড জাতীয় খাদ্য/ দ্রব্য গ্রহনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করবে৷ এই ডিটক্সিফিকেশন পদ্ধতি যাদের জন্য নয়- গর্ভবতী ও স্তনদাত্রী মহিলা, শিশু, সাঙ্ঘাতিক বা মারাত্মক রােগে আক্রান্ত ব্যক্তি, অতি বৃদ্ধ এবং ভগ্ন স্বাস্থ্যের অত্যন্ত দুর্বল ব্যক্তিগণ।

শরীর-কোষের মধ্যে গভীর ভাবে অন্তর্গ্রথিত (বংশগত বা অর্জিত পুরাতণ) রোগবিষকে এই সমস্ত পদ্ধতিতে নির্মূল করা যাবেনা। তার জন্য এরসঙ্গে হোমিওপ্যাথি-র সাহায্য নিতে হবে। 

এই প্রসঙ্গে বলি, ব্যাক্টেরিয়াল ও ফাঙ্গাল-ইনফেকশনসহ রোগবিষ দূরীকরণের জন্য এই প্রাকৃতিক দ্রব্যগুলি সাধারণত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রয়োজন মতো এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কোনো এক বা একাধিক দ্রব্য সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে পারো — খাঁটি নারকেল তেল, আপেল সিডার ভিনিগার, ক্লোভ অয়েল, গার্লিক এক্সট্রাক্ট, কার্ডুয়াস মেরিনাস (হোমিওপ্যাথিক মাদার টিনচার ফর লিভার) , গ্রীন-টি বা টি-ট্রি অয়েল, টক দই (প্রোবায়োটিক)  প্রভৃতি।  

আর একটা বিশেষ পদ্ধতি (অন্যান্য পদ্ধতিগুলির সঙ্গে যুক্ত করা যাবে)—ঃ  

একটা খাঁটি তামার ঘটি বা ঘট লাগবে, যাতে মোটামুটি আধ লিটার মতো জল ধরবে। আর লাগবে— একটা খাঁটি রুপোর বেলপাতা বা রুপোর পাত, যা ওই ঘটির জলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা যাবে। এছাড়া, লাগবে— একটা খাঁটি সোনার ফুল বা কানের টপ, অথবা সোনার পাত। আর লাগবে— তিনটি  তুলসী পাতা। এগুলি ওই ঘটির জলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হবে।

প্রক্রিয়াঃ- শেষ রাত্রে (রাত ৩টে নাগাদ) ঐ তামার ঘটিতে এক ঘটি গঙ্গার জল নিয়ে, তার মধ্যে পূর্বোক্ত সোনা ও রুপো এবং তিনটি তুলসী পাতা ডুবিয়ে ঢাকা দিয়ে দাও। তিন ঘন্টা পরে (লক্ষ্য রাখো, যেন তিন ঘন্টার বেশি না হয়), সকালে, ঘুম থেকে উঠে আধ চামচ মধু এবং পূর্বোক্ত তুলসীপাতা (চিবেয়ে) সহ ওই জল পান করতে হবে। শুধু সকালে একবার।  জল পানের পূর্বে সোনা ও রুপোর টুকরো দুটি ঐ ঘটি থেকে আলাদা ক'রে অন্যত্র তুলে রাখবে। একমাস টানা * এইভাবে জল পান করার পরে, সাতদিন বিরাম দিয়ে পরবর্তি সাতদিন  ধরে, শুধু সকালে একবার জল পান করতে হবে। অর্থাৎ এক সপ্তাহ অন্তর ঐভাবে জল পান করতে হবে।  

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

এই চিকিৎসা শুরু করার পরে, যখনই তোমার রোগের হ্রাস বা বৃদ্ধি লক্ষণ  অর্থাৎ উপশম  বা রোগবৃদ্ধি... কোনো ক্রিয়া  বুঝতে পারবে, তার পর থেকেই  তামার ঘটির জল  খাওয়ার পরিমান কমিয়ে দিতে হবে, এবং দুদিন অন্তর  একবার করে খেতে হবে।

এই চিকিৎসা চলাকালীন কোনরকম  নেশাজাত খাদ্য বা পানীয় সেবন করা চলবে না। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। 

এসিডিটি : এক ভয়ানক সমস্যা


 

অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগছে অধিকাংশ বাঙালি। দিনের পর দিন অ্যান্টাসিড, অ্যাসিড-ব্লকার জাতীয় ওষুধ খেয়ে সাময়িক উপশম মিলছে মাত্র, সমস্যা বাড়ছে বৈ কমছে না। ক্রমশ সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করছে।

এখন, এই এসিডিটির কারণ গুলি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ও গবেষণা থেকে সংক্ষেপে কিছু বলবো। এসিডিটির পিছনে মোটামুটি দুই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, এক হলো--- ইসোফেগাসের স্ফিংটার ভাল্ভটি ঠিক মত কাজ না করায় অ্যাসিড আমাদের গলায় উঠে আসে। যাকে এসিড রিফ্লেক্স বলা হয়। এতে মুখে টক আস্বাদ হয় এবং বুক জ্বালা করে।

আর দ্বিতীয় প্রকারের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন কারণে স্টমাক-এ উত্তেজনা--- ইরিটেশন ঘটার ফলে, বেশি পরিমাণে এসিড উৎপন্ন হয়। তাতে পেটে জ্বালা-যন্ত্রণা হয়ে থাকে। মলেও অম্ল গন্ধ পাওয়া যায়। এই উত্তেজনার জন্য দায়ী বিভিন্ন ব‍্যাকটেরিয়া, কৃমি, ওষুধ, যেমন যন্ত্রণা নাশক ওষুধ, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী খাদ্য, রোগবিষ এবং মানসিক উত্তেজনা প্রভৃতি।
কারো কারো ক্ষেত্রে এই দুটো ঘটনাই ঘটতে পারে।

এসিড হলো অত্যন্ত ক্ষয়কারক পদার্থ। অতিরিক্ত এসিড--- রক্তের সঙ্গে প্রবাহিত হয়ে শরীরের কোষে কোষে পৌঁছে গিয়ে,  শরীর-কোষ ধ্বংস করে থাকে। এরফলে নানা প্রকার ক্ষয়-ক্ষতি ও সমস্যা দেখা দিতে পারে। 'অটো-ইমিউন ডিজিজ'-এর মতো আত্ম-ধংসাত্মক সমস্যাও দেখা দেয় অনেকের ক্ষেত্রে। 

এবার, এর পিছনের কারন গুলো কি কি থাকতে পারে, দেখা যাক। বাঙালির খাদ্যাভ্যাস হলো একটা বড় কারণ। মিষ্টি-- নুন ---ময়দা প্যাকিং ফুড, খুব মসলাদার খাবার। কৃত্রিম খাবার, তারপরে জাঙ্কফুড তো আছেই। একদিন ভোজ বাড়িতে গুরুপাক অখাদ্য-কুখাদ্যগুলি গণ্ডে-পিণ্ডে খাওয়ার ফলে, আমাদের যে কি পরিমান ক্ষতি হয়, সে সম্পর্কে অনেকেরই ভালো ধারণা নেই।

খাদ্য লোভি বাঙালি মাংসও খাবে, আবার সেই সঙ্গে দুগ্ধজাত খাদ্যও খাবে। এইরকম অনেক বিষম খাদ্য আহারের ফলে যে কি পরিমান বিষক্রিয়া হয় তা আর বলার নয়। এছাড়া বাসি-পচা অখাদ্য তো আছেই, আছে চালানি মাছ প্রভৃতি।

এরপর আরো সাংঘাতিক ব্যাপার হলো বিভিন্ন চর্মরোগসহ নানাবিধ রোগের সাময়িক উপশম ও অবদমন ঘটানো বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক ওষুধ প্রয়োগ। অবদমিত চর্মরোগ শরীর অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়ে ভিতরে ভিতরে সাংঘাতিক উপদ্রব সৃষ্টি করে থাকে। বিভিন্ন শারীরিক যন্ত্র বা অর্গান -এর ক্ষতি সাধন করে থাকে এরা। 

অ্যাসিড নিজেও একটা ক্ষয়কারক পদার্থ। তার বৃদ্ধি ঘটলে সে শরীরের মধ্যে যে ক্ষয়-ক্ষতি করে, তার থেকেও সৃষ্টি হয় বহু সমস্যা। মানসিক ও শারীরিক উত্তেজনা প্রবণ অস্থির প্রকৃতির ব্যক্তিদের— স্বভাবতই পাকাশয়িক উত্তেজনাও ঘটে থাকে। আর তার ফলে তাদের এসিডিটি-- গ্যাস-- অজীর্ণ বা ইনডাইজেশন অন‍্যান‍্যদের তুলনায় বেশিই হয়।

বিভিন্ন কারণে শরীরের ক্ষয়ক্ষতি ঘটলে, শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে, শরীরযন্ত্রগুলো ঠিকমতো তাদের কাজ করতে সক্ষম হয় না। তার ফলে পাকস্থলীতে খাদ্য ঠিকমতো হজম না হয়ে--- পড়ে থাকে, এবং ক্রমশ ব্যাকটেরিয়া-- ফাঙ্গি-- মাইক্রোবস -দের বংশ বৃদ্ধি ঘটতে থাকে সেখানে। এর ফলে খাদ্য গেঁজিয়ে ফার্মেন্টেশন হতে শুরু করে, এবং গ্যাস উৎপন্ন হয়ে সাংঘাতিক সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন। মানসিক অবসাদ--- হতাশা থেকেও এইরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়। মন শোকাচ্ছন্ন থাকলে, ডাইজেস্টিভ সিস্টেমসহ বিভিন্ন শরীরযন্ত্র ভালোভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে অম্ল-অজীর্ণ রোগ দেখা দেয়।

বিভিন্ন রোগ অবদমন ও অপচিকিৎসার ফলে আমাদের শরীর অভ্যন্তরস্থ অন্তক্ষরা গ্রন্থি বা গ্ল‍্যাণ্ড গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রোগগ্রস্ত হয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। তার মধ্যে এসিডিটিও একটি বড় সমস্য।

থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের নিষ্ক্রিয়তা বা অতি সক্রিয়তা সঙ্গেও এসিডিটির সম্পর্ক রয়েছে। অধিকাংশ রোগ-ব্যাধির কারণ হলো বিষ। রাসায়নিক বিষ, ধাতব বিষ, জীবাণুজ বিষ। আর, বিভিন্ন কারণে শরীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হওয়া নানাপ্রকার বিষ। যেগুলো শারীরিক ও মানসিক আঘাত থেকেও ঘটতে পারে। তারপর আছে পরিবেশ দূষণ। বিভিন্ন দূষণের মতোই মানসিক দূষণও শরীরাভ‍্যন্তরে একপ্রকার বিষ সৃষ্টি করে থাকে। আর এদের নিয়েই জেরবার হচ্ছি আমরা।

এখনো সচেতন না হলে আগামী দিনগুলোতে আমাদের যে কি করুণ অবস্থা হবে, তা' ভাবলেও গা শিউরে ওঠে! নিজেদের কথা না ভাবলেও, আমাদের সন্তান-সন্ততি, নতুন ও আগামী প্রজন্মের কথা ভেবেও আমাদের সতর্ক হতে হবে এবং সবাইকে সতর্ক করতে হবে।


 

 বায়ু রোগ 
 

প্রয়োজনীয় শরীর-উপাদানের ঘাটতি এবং পুষ্টির অভাব থেকে সৃষ্টি হয় যে শূন্যতা, সেই শূন্যস্থান পূরণ করে বায়ু। তাই ঘাটতি ও অভাবজনিত কারণে শরীর মনে যে সমস্যা বা কষ্ট দেখা দেয়, তাকেই বলা হয় বায়ুরোগ। বায়ুরোগে আসে শুষ্কতা, অস্থিরতা, উত্তেজিনা, দূর্বলতা, হজমশক্তির অভাব, উদর বায়ু, কোষ্ঠবদ্ধতা, মাথা ও মনের ভারসাম্যহীনতা, স্নায়বিক সমস্যা প্রভৃতি।

বায়ুরোগের কারণ— অনিয়ম ও অত্যাচার, আঘাত, দুশ্চিন্তা ও হতাশা, ক্রোধ, শরীর অভ্যন্তরে জীবাণু ও রোগবিষ কর্তৃক ক্ষয়ক্ষতি, বাহ‍্যিক মলম প্রভৃতি প্রয়োগ করে চর্মরোগের অবদমন, অখাদ্য-কুখাদ্য ও দুষিত পানীয় গ্রহণ, উপবাস, রাত্রি জাগরণ, রক্ত-রস ও বীর্য ক্ষয় প্রভৃতি। এককথায়, শরীরের ক্ষয়-ক্ষতিকারক যে কোন ঘটনা ঘটা এবং কোন কারণে সেই ক্ষয়-ক্ষতি পূরণ না হওয়াই হলো বায়ু রোগের কারণ। এই বায়ুরোগ থেকে সৃষ্টি হতে পারে অনেক কঠিন রোগ-ব‍্যাধি।

বায়ুকারক খাদ্য--- শাক, তিক্ত, কষায়, দুষ্পাচ্য এবং বায়ু পূর্ণ খাদ্য, যেমন-- মুড়ি, চিড়ে ভাজা, বিস্কুট প্রভৃতি।

বায়ুনাশক খাদ্য--- মাখন- মিছরি, তৈলাক্ত খাদ্য, এবং শক্তিবর্ধক খাদ্য এবং স্নিগ্ধ খাদ্য।

বায়ুরোগ নিরাময়ে কোনো সহজ-সরল নির্দিষ্ট উপায় নেই। এর পিছনে কি কারণ আছে, তা' খুঁজে বার করতে হবে। তারপর, সম্ভব হলে, সেই কারণের নিরসন ঘটাতে হবে। আর সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে রোগীকে। অনেক সময় জাঙ্ক-ফুড গ্রহণ এর জন্য দায়ী থাকে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু কিছু মানুষ জন্ম থেকেই বায়ুরোগী অথবা বায়ু প্রকৃতির মানুষ। সেক্ষেত্রে, চিকিৎসার দ্বারা তার প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটাতে পারলে তবেই সুরাহা হবে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তার বংশে কোনো কঠিন রোগ অথবা চর্মরোগ অবদমনের ঘটনা আছে। অপচিকিৎসা এবং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে এমন সব ওষুধ প্রয়োগ করার ফলে, বায়ুরোগের সৃষ্টি হতে পারে।

খাদ্য সম্পর্কে একটা কথা মনে রেখো, একজনের পক্ষে যেটা ভালো খাদ্য, অপরের পক্ষে সেটাই ক্ষতিকর খাদ্য হতে পারে। তাই, যে ব্যক্তি যে খাদ্য গ্রহণ করে সুস্থ বোধ করবে, সেটাই তার পক্ষে উপযুক্ত খাদ্য।   

প্রাচীন প্রদাহ

এক বা একাধিক রোগবিষের কারণে, আমাদের অলক্ষ্যে ধীরগতিশীল প্রাচীন প্রদাহ রয়েছে অনেকেরই শরীর অভ্যন্তরে। এই প্রদাহ ভিতরে ভিতরে কুড়েকুঁড়ে খাচ্ছে আমাদের। আমাদের অস্থিরতা— ক্রোধ— উত্তেজনার মূলে রয়েছে এই প্রাচীন প্রদাহ। এই প্রদাহ সুপ্ত অবস্থায়— অনেক ক্ষেত্রে উপদাহ রূপে প্রকাশ পেয়ে থাকে। আবার আগ্নেয়গিরির মতোই কোনো কোনো সময় সে ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। এইরূপ প্রদাহ ও তার রোগবিষ— অনেক সময় বংশানুক্রমে উত্তরপুরুষেও সংক্রামিত হয়ে থাকে।  

রোগবিষ বা টক্সিন আমাদের শরীর-উপাদানের ক্ষয়-ক্ষতি — বিকার-বিকৃতি ঘটিয়ে থাকে। তাই, পরীক্ষার দ্বারা যদি বোঝাযায়, শরীরে কোনো কোনো অত্যাবশ্যক শরীর-উপাদান পদার্থের ঘাটতি রয়েছে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সেই ঘাটতি পূরণ করতে হবে।

বায়োকেমিক চিকিৎসা শাস্ত্রে এইরূপ ঘাটতি পূরণকারী ওষুধ আছে। বায়োকেমিক মেটিরিয়ামেডিকা অধ্যয়ন করলেও বোঝা যাবে, শরীরে কোন বা কোন কোন পদার্থের ঘাটতি রয়েছে। তবে, বায়োকেমিক চিকিৎসা শাস্ত্রে মাত্র বারোটি ওষুধ রয়েছে। কিন্তু, আমাদের শরীরে ঐ বারোটি পদার্থ ছাড়াও আরো অনেক পদার্থ রয়েছে, এবং তাদের অভাব ঘটলেও অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। সম্ভব হলে, ভবিষ্যতে সবকটি শরীর-উপাদান পদার্থ এবং তাদের রোগলক্ষণ নিয়ে আলাদা একটি পুস্তক প্রকাশের চেষ্টা করবো।

 

এক একটি রোগবিষ— শরীরস্থ কোনো এক বা একাধিক শরীর-উপাদান পদার্থের সঙ্গে মিলিত হয়ে, সেই বা সেইসব পদার্থের ক্ষয়-ক্ষতি— বিকার-বিকৃতি ঘটিয়ে থাকে। এখন, সেই পদার্থ বা পদার্থগুলির (হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে) শক্তিকৃত ওষুধের সাহায্যে সেই বা সেইসব বিকৃত পদার্থসহ অনিষ্টকর রোগবিষকে নিষ্ক্রিয় করে এবং ক্ষয়-ক্ষতি পূরণ করে, শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়ে থাকে।    

অটোইমিউন ডিজিজ সম্পর্কে মহর্ষি মহামানস

অটোইমিউন ডিজিজ হলো শরীরের এক আত্মঘাতী কার্যকলাপ। যা সেই যদুবংশ ধ্বংসের মতোই আগামী দিনে ব্যাপকভাবে ভয়ংকর মারাত্মক রূপ নিতে চলেছে।

আমাদের শরীর-মনসহ সমগ্র মহাবিশ্ব ও তার বিশ্বমনের মধ্যে রয়েছে পরস্পর বিরোধী সহজ প্রবৃত্তি। একাধারে সে গঠনাত্মক ---সৃজনাত্মক, অপরপক্ষে সে ধ্বংসাত্মক। তার চাহিদা মতো ঘটনা না ঘটার কারণে, তার চাহিদামতো বা মনমতো সৃষ্টি করতে না পারার কারণে, সে নিজেকেই নিজে আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ক'রে ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে বহুবার। এবং এখনো ঘটিয়ে চলেছে। এই ভাঙ্গা-গড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে সে।

আমাদের ক্ষেত্রেও, আমাদের চাহিদা মতো--- মন মতো অনেক কিছুই ঘটে না। ফলে প্রতিনিয়ত মনোকষ্ট অবদমন ক'রে চলেছি আমরা। নিজের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ---মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছে আমাদের, --- এই ভাবে বেঁচে থাকার চাইতে নিজেকে ধ্বংস করে দেওয়াই বুঝি শ্রেয়। কেউ কেউ করছেও তা'। নিজের সঙ্গে এবং বহু প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই ক'রে যুদ্ধবিধ্বস্ত জীবন কোনরকমে এগিয়ে চলেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

শুধু মানসিক ক্ষেত্রেই যে অবদমন ঘটছে তাই নয়, শারীরিক চাহিদারও অবদমন ঘটছে। এছাড়া সঠিক চিকিৎসার অভাবে রোগ-ব্যাধি ও শারীরিক কষ্টেরও অবদমন ঘটে চলেছে। এদিকে, পরিবেশ-পরিস্থিতি ---খাদ্য পানীয়, বাতাস প্রভৃতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটে চলেছে। পরিবর্তন ঘটে চলেছে আমাদের মনোজগৎ--- অন্তর্জগতেও। অনেক সময়েই, এই এত কিছুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এই বিষময় অবস্থার সঙ্গে যেন আর পেরে ওঠা যাচ্ছে না। সৃষ্টি হচ্ছে ইরিটেশন, বিরুদ্ধ ভাব ---বিদ্রোহী ভাব মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে।

শরীরের মধ্যেকার প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও দিশেহারা হয়ে পড়ছে, উত্তেজিত হয়ে পড়ছে এবং ক্রমশ বিগড়ে যাচ্ছে, এর ফলে আত্ম ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে সে। নিজেকে নিজেই গ্রাস করতে ---ধ্বংস করতে শুরু করছে সে তখন। যার কর্তব্যকর্ম ছিল রোগজীবাণু ও রোগবিষকে ধ্বংস করার, সে তা' না ক'রে নিজেই নিজেকে, নিজের সুস্থ কোষকে ধ্বংস করতে শুরু করে দিচ্ছে। নিজেকেই নিজে ক্ষতবিক্ষত ক'রে--- নিজেকে কুরে কুরে খেয়ে ক্রমশ আত্ম-ধ্বংসের পথ অবলম্বন করছে। সমস্যা এমন ব্যাপক আকার ধারণ করতে চলেছে, যে আগামী দিন আমরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠছি।

সহজ কথায়, অটোইমিউন ডিজিজের ক্ষেত্রে, আমাদের ইমিউন সিস্টেম যে 'ইনবিল্ট প্রোগ্রাম' বা অন্তর্গ্রথিত সহজাত নির্দেশের দ্বারা তার কর্তব্য কর্ম করে থাকে, সেই 'প্রোগ্রাম' কোরাপ্টেড হওয়ার ফলে, এবং/অথবা অন্তর্নিহিত আত্মঘাতী সহজাত প্রবৃত্তির প্রভাবে--- সে অনেক সময় বিপরীত কর্ম করে থাকে। অর্থাৎ সে রোগজীবাণু ও রোগবিষকে ধ্বংস না ক'রে, নিজের সুস্থ কোষকেই ধ্বংস করতে শুরু করে তখন।

এই আত্মঘাতী প্রবণতা যে শুধু বয়ষ্কদের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে তা' নয়, অল্পবয়সীদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। অনেক ইরিটেবল বাচ্চাদের মধ্যেও দেখা যায়--- তারা দেওয়ালে সজোরে মাথা ঠুকছে। অথবা নিজের মাথায় আঘাত করেছে। 'ইরিটেবিলিটি' এবং আত্মঘাতী প্রবণতা একজনের মধ্যে বংশগতভাবেও আসতে পারে। 

ইমিউন ডিজিজের ক্ষেত্রে 'ইরিটেবিলিটি' হলো একটি প্রধান কারণ। এই 'ইরিটেবিলিটি' -র পিছনে প্রধানত দায়ী হলো--- পরিবেশ দুষণ, খাদ্য-পানীয় দুষণ এবং মনোদুষণ। ক্রমশই বিষময় হয়ে উঠছে সমস্ত জগত। এই সমস্ত আত্মঘাতী ব‍্যাপারগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অধিক অংশেই আমাদের সচেতন মনের অজ্ঞাতে ঘটে থাকে। কেউ কেউ কিছুটা বুঝতে পারলেও, তেমন গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে, ভিতরে ভিতরে ধ্বংসাত্মক ক্রিয়া চলতেই থাকে।

এবার আসি প্রতিকারের কথায়, বর্তমান 'মেডিকেল সায়েন্স' সাময়িক উপশম দায়ক কিছু ব্যবস্থাগ্রহণ ছাড়া এখনো পর্যন্ত এর সঠিক কারণ এবং প্রতিকার আবিষ্কার করে উঠতে পারেনি। তাই, এর প্রতিকারে--- মানসিক ও ধাতুগত লক্ষণ এর উপর ভিত্তি ক'রে, হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রেও যে সবাই সাফল্য পাবে, এমন নয়। এর সঠিক প্রতিকারের জন্য আমাদের 'মহাশবাসন' বা 'নিদ্রাযোগ' অভ্যাস করতে হবে। আর ওষুধ হিসেবে প্রয়োগ করা যেতে পারে 'মহাপ্যাথি'-র ওষুধ। কিন্তু তা' প্রস্তুত করা সহজ নয়। 

রোগ-ব‍্যাধি ও চিকিৎসা প্রসঙ্গে নানা কথা

অজ্ঞানতার কারণে অখাদ্য-কুখাদ‍্য খাওয়ার ফলে, এবং অনাচার-অত‍্যাচার করার ফলে রোগ-ব‍্যাধির সূত্রপাত হয়।

তারপর রোগ-ব‍্যাধি হলে, তার সুচিকিৎসা না হয়ে, বরং কুচিকিৎসার কারণে (রোগ-ব‍্যাধি অবদমনের ফলে এবং ঔষধজ রোগ সৃষ্টির ফলে) তা' আরও জটিল আকার ধারণ করে।

পরে, সেই ব‍্যাধির একটা অংশ বংশানুক্রমে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সংক্রামিত হয়। বাবা-মার কাছ থেকে আমরা কোনো ধন-সম্পত্তি পাই বা না পাই, বংশানুক্রমিক রোগ-ব‍্যাধিগুলো আমরা ঠিকই লাভ করে থাকি।

রোগ-ব‍্যাধির প্রধান কারণ হলো বিষ। রাসায়নিক বিষ এবং জৈব বিষ বা জীবাণুঘটিত বিষ। আর আছে-- শরীরাভ‍্যন্তরে সৃষ্ট বা অন্তক্ষরিত বিষ, যা মনোদুষণ, আঘাত এবং অনাচার প্রভৃতি কারণে আমাদের শরীরের মধ্যেই সৃষ্টি হয়।

রোগ-ব‍্যাধির একটা অংশ অর্জিত, আর একটা অংশ জন্মসূত্রে প্রাপ্ত। এই দুয়ে মিলে তা' এক কঠিন ও জটিল অবস্থায় পরিণত হয়।


প্রসঙ্গত, রোগ-ব‍্যাধি দুই প্রকারের, নিস্তেজক প্রকৃতির এবং উত্তেজক প্রকৃতির। এক প্রকার যে শরীরযন্ত্রকে নিস্ক্রিয় করে তোলে, আর দ্বিতীয় প্রকারের রোগ-ব‍্যাধি যে শরীরযন্ত্রকে অতিসক্রিয় করে তোলে। এবার নিজের শরীর ও মনের দিকে ধ‍্যান দিয়ে বোঝার চেষ্টা করো তোমার অবস্থা এবং তার কারণ।

শরীর-মন সুস্থ থাকলে তবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। নচেৎ নিয়ন্ত্রণ কৌশল জানা থাকলেও তা' কাজে লাগানো যাবে না।

প্রসঙ্গ : উপবাস
 

প্রাচীনকাল থেকেই উপবাস বিধি বা প্রথা চলে আসছে বিভিন্ন সমাজে। উপবাসের মূল উদ্দেশ্য হলো, সুস্থতা লাভ ও স্বাস্থ্য রক্ষা। এ' হলো শরীর থেকে রোগ-বিষ দূরীকরণের একটি বিশেষ পদ্ধতি।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, যারা নিয়মিত উপবাস বিধি অনুসরণ করে থাকে, তারা উপবাসের দ্বারা সুস্থতা লাভ তো দূরের কথা, বরং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খেয়ে, অথবা কিছু না খেয়ে, তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে।

উপবাস কালে যথেষ্ট জলপানসহ নিজের নিজের সহ্য ক্ষমতা অনুসারে কিছুটা তরল খাদ্য, ফলের জুস প্রভৃতি গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা' করতে দেখা যায় না।

সাধারণত, প্রতি মাসে দুইবার, অথবা অন্তত একবার, স্বাস্থ্যবিধান অনুসারে উপবাস পালন করলে, আমাদের শরীর থেকে রোগ-বিষ অনেকাংশে দূরীভূত হয়ে থাকে।

'মহাধর্ম' অনুসরণকারীদেরও নিজের নিজের শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী, 'ডিটক্সিফিকেশন মেথড' অনুসারে প্রতি মাসে অন্তত একবার উপবাস করা উচিত। সুস্থতা থাকলে, তবেই ধর্ম-কর্ম ও বিকাশলাভসহ সুন্দর জীবন উপভোগ করা সম্ভব হবে।

রোগবিষ বা টক্সিন সম্পর্কে সাবধান!

এখন আমরা যাকিছু খাচ্ছি— যে জল আমরা পান করছি, যে বাতাসে আমরা শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করছি, সবই কমবেশি বিষযুক্ত। প্রতিদিন এভাবেই আমরা বিষাক্ত বা বিষময় হয়ে উঠছি। এখন বুঝতে অসুবিধা হয়, যে কে অসুস্থ আর কে সুস্থ। চিকিৎসক যে আমাদের চিকিৎসা করছেন, সেও বিষ থেকে মুক্ত নয়। জেনেশুনে বা অজান্তে— দিনের পর দিন ধরে, ধীরে ধীরে আমরা রোগবিষ / টক্সিনের কারণে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। চিকিত্সা বা আরোগ্য অসম্ভব হয়ে উঠছে ক্রমশ।

মানবজাতিকে ধ্বংস করার মতো অনেক প্রকারের বিষ রয়েছে এখানে। মারাত্মক কীটনাশক এবং ব্যাকটিরিয়া ঘটিত রোগবিষ (টক্সিন) ছাড়াও, আরও অনেক প্রকারের বিষ আমাদের বিষাক্ত করতে সক্রিয় রয়েছে। বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্র এবং বিকিরণের প্রভাব আমাদের মধ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করছে। প্রতিদিন ব্যবহৃত বাসন বা পাত্রগুলি, বিশেষত রান্না করার পাত্রগুলি ধীরগতিশীল (ধাতববিষ জনিত) পীড়া সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক পদার্থের দ্বারাও নিয়মিত বিষক্রিয়া ঘটছে। জিনগতভাবে পরিবর্তিত খাদ্যগুলি আমাদের শরীরে মারাত্মক বিষক্রিয়া তৈরি করছে।  

এ’ছাড়াও, অনেক জায়গায় ফল এবং শাকসব্জী, মাছ, দুধ, মুরগী ইত্যাদির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য হরমোন ব্যবহার করা হচ্ছে... হরমোনযুক্ত খাবার এবং পানীয়গুলি আমাদের দেহ এবং মনের মধ্যে  ক্ষতিকর বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে চলেছে।

সর্বোপরি, মানসিক দূষণ এবং মানসিক বিষ আমাদের জীবনকে আরও তিক্ত এবং অসহনীয় করে তুলছে। তুমি কি আমাদের শরীরাভ্যন্তরীণ বিষ নিঃসরণ সম্পর্কে অবগত আছো? এটি মানসিক ব্যথা, উত্তেজনা এবং মানসিক দূষণের কারণে, অনিয়ম-অত্যাচারের কারণে ঘটে থাকে। যদি ভবিষ্যতে কোনও মারাত্মক আকস্মিক দুর্ঘটনা না ঘটে, তবে এই বিষ /টক্সিন-ই মানবজাতির ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।  

হতাশা এবং তজ্জনিত মনোবিকার এক বড় সমস্যা।

আমরা সবাই জানি, হতাশা থেকে সৃষ্ট মনঃকষ্ট ---বিষন্নতা ---অবসাদ হতে বহু অঘটন--- অসুস্থতা, বহু সমস্যা জন্ম নিয়ে থাকে। হতাশা হলো, কোনকিছুর জন্য আশা বা প্রত‍্যাশা মতো প্রাপ্তি না ঘটার ফলে, মনের একপ্রকার আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থা। হতাশার পিছনে থাকে মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা বা প্রত‍্যাশা। আর অপরদিকে থাকে অসাফল‍্য--- অপ্রাপ্তি, চাহিদামতো ঘটনা না ঘটা।

বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন প্রকার শারীরিক ও মানসিক গঠন, জ্ঞান ও চেতনস্তর এবং প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী পরিবেশ-পরিস্থিতি সাপেক্ষে বিভিন্ন ধরণের আশা-আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়ে থাকে।

আমরা জানি, এই প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, লাভ-লোকসান, অভাব, ঘটন-অঘটন, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চাহিদা প্রভৃতি সবকিছুই জাগতিক ব‍্যবস্থা অনুযায়ী যখন যেটা ঘটার সেটাই ঘটে থাকে ('ভাগ্য আসলে কী' প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য)। কিন্তু তা' জানা সত্বেও, আমরা অসহায়। জাগতিক নিয়মেই আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়-বস্তু লাভের জন্য আশা করতে হয়, এবং বহু ক্ষেত্রেই ঘটনাক্রমে হতাশ হতে হয়, হতাশা জনিত দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয় আমাদের।

অনেক মানুষকেই দেখাযাবে, সারাজীবন ধরে একেরপর এক বারবার অসফল--- অভাবগ্রস্ত হয়েও, নিদারুণভাবে দুর্ভাগ‍্যের শিকার হয়েও, সাময়িকভাবে আশাহত হলেও, হতাশায় ভেঙে পড়েনি। অনতিবিলম্বে বিফলতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, সমস্ত হতাশা ঝেড়ে ফেলে, নতুন উদ‍্যোমে পুণরায় লড়াইয়ের জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে।

আবার, অনেককেই দেখাযাবে, অল্পতেই, ছোটখাটো ব‍্যাপারেই আশাহত হয়ে সাংঘাতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নিয়েছে অথবা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। এসব অনেকটাই নির্ভর করে ব‍্যক্তির শরীর ও মনের অবস্থার উপর, এবং বাকিটুকু নির্ভর করে তার পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কী মনকে শিক্ষিত করে তুললে, অথবা মন শিক্ষিত হলে, এই দুরবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব হবে?

হ‍্যাঁ, অনেকসময় অনেকটাই সম্ভব হবে, যদি সেই মন শিক্ষিত এবং সেইসঙ্গে স্বনিয়ন্ত্রনাধীন হয়ে থাকে। শিক্ষার মধ্যে একটি প্রধান বিষয় হলো মানসিক প্রস্তুতি। মনে রাখতে হবে, যেকোনো সময় বাধা-বিঘ্ন অসাফল‍্য দুঃসময় আসতেই পারে। তারজন্য সর্বদা নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। সহনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। শুধুমাত্র তত্ত্বগত ভাবে শিক্ষিত হলেই হবেনা। ব‍্যবহারিক বা প্রয়োগগত শিক্ষা ও অনুশীলনও থাকা দরকার। এই জগতের বন্ধুর পথে এগিয়ে চলতে গেলে, যেমন সমাজ-সংসার সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, তেমনি মন সম্পর্কেও ভালো জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

তবে শুধু জ্ঞান ও শিক্ষার দ্বারাই সবসময় সবক্ষেত্রে সমস্যা মুক্ত হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এমন কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে, যখন এই আশা এবং তৎপরবর্তী হতাশা থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। যেমন, দুর্ভাগ‍্যক্রমে যদি কারো নূন্যতম চাহিদাটুকুও না মেটে, বারবার সে যদি তার মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে অসফল হয়, তখন সেই ব‍্যক্তির পক্ষে হতাশ হওয়া এবং সেই হতাশার কারণে অসুস্থ হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা। তখন কোনো জ্ঞান, কোনো শিক্ষাই কার্যকর হয়না।

তখন একমাত্র মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসা ছাড়া, এবং সেই হতাশার বাস্তব কারণ অপসারণ করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকেনা। হতাশ হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার পিছনে আভ‍্যন্তরীন দিক থেকে যে শুধুমাত্র ব‍্যক্তির মনই দায়ী তা' নয়। শরীরের বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিসহ বিভিন্ন দেহযন্ত্র বা অরগান-ও এর পিছনে অনেকসময় অনেকাংশে দায়ী থাকে।

এক্ষেত্রে, প্রথমে যথাসম্ভব নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিচার-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অতীতের ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে, অতীত থেকে শিক্ষা অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে। এর দ্বারা ক্ষতির থেকে বেশি লাভবান হওয়ার কথা ভেবে, খুশি হতে হবে। তারপর, কোনো কঠোর কায়িক পরিশ্রমের মধ্যে নিজেকে নিযুক্ত রেখে মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে অনেকটা মুক্ত রাখতে হবে। তারসঙ্গে নিয়মিতভাবে আত্ম-ধ‍্যান, প্রাণযোগ, সুষুপ্তি যোগ প্রভৃতি বিশেষ কিছু যোগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুসম আহার-বিহারসহ, সূক্ষ্ম মাত্রায় সুনির্বাচিত হোমিওপ্যাথিক ওষুধের সাহায্য নিতে হবে। তাহলেই দুরবস্থা থেকে বেড়িয়ে এসে, নতুন করে আবার জীবন-চলা শুরু করা সম্ভব হবে। প্রয়োজনে সমস্ত দিক বিচার বিবেচনা করে, ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

প্রসঙ্গত, একটা অতি সরল সমাধান আমাদের সমাজে কথিত আছে, "কাজ করে যাও, ফলের আশা করোনা"। এটা যে কতখানি অবাস্তব কথা, তা' বিজ্ঞজন মাত্রই অবগত আছেন।

'হৃদয়' শব্দটি সাধারণত দুটি অর্থে ব‍্যবহার হয়ে থাকে। একটি হলো~ হৃদযন্ত্র, আর অপরটি হলো~ অন্ধ-আবেগ প্রবণ অবচেতন মন। এখন, অনেক মানুষই অত তলিয়ে বোঝার চেষ্টা করে না। ফলে, তারা গুলিয়ে ফেলে। আর, 'মন' বলতে, তারা হৃদযন্ত্রকেই বুঝে থাকে। মনের অবস্থান বোঝাতে তাই তারা বুকের মাঝে হাত দিয়ে দেখায়।

এর জন্য অনেকাংশে দায়ী আমাদের শিক্ষাব‍্যবস্থা। প্রথাগত শিক্ষা এবং ধর্মীয় শিক্ষা আমাদেরকে যুক্তিপথে তলিয়ে ভাবতে শেখায়না, অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে শেখায়। তাই আমাদের আজ এই দুর্দশা।         —মহর্ষি মহামানস

bottom of page