top of page
ষষ্ঠ অধ্যায়
সংক্ষেপে 'মহামনন' মহা-আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রম 
মহর্ষি মহামানস নির্দেশিত ও প্রদর্শিত পথে মহাধর্মাচারণ অর্থাৎ মহাধর্ম-এর অনুশীলন পর্বের নাম হলো— 'মহামনন'। যা হলো মহা আত্মবিকাশ বা মনোবিকাশ শিক্ষাক্রম। মহামনন যোগ সাধনা— প্রচলিত যোগ-প্রক্রিয়া থেকে অনেকাংশে স্বতন্ত্র। আধুনিক বিজ্ঞানের হাত ধরে, অনেক গবেষণা, প্রয়োগ এবং অনুশীলনের মাধ্যমে অত্যন্ত কার্যকরী এই যোগ প্রক্রিয়াগুলি গড়ে উঠেছে। 'মহামনন' অনুশীলনের পূর্বে, মহাধর্মের তাত্ত্বিক পর্বগুলি  অবশ্যই পাঠ করা কর্তব্য। —সম্পাদক
"নিজেকে বদলাও, তোমার ভাগ্যও বদলে যাবে। নিজের মধ্যে শুভ পরিবর্তন ঘটাতে পারলে, তোমার ভাগ‍্যেরও শুভ পরিবর্তন ঘটবে।"

 

সহজ উপায়ে মনোবিকাশ বা চেতনার বিকাশ কিভাবে সম্ভব

আলোচনার প্রয়োজন হয়— কোনো বিষয়কে ভালোভাবে বোঝার জন্য এবং সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য। কিন্তু যারা ঘন্টার পর ঘন্টা— দিনের পর দিন ধরে, কোনো সাধারণ বিষয় নিয়ে আলোচনা ক’রেই চলে, বুঝতে হবে তাদের চেতনা বা বোধশক্তি খুবই কম।

চেতনা কম হওয়ার অনেকগুলি কারণের মধ্যে প্রধান দুটি কারণ হলো—

১। মস্তিষ্কের জড়তা, যা কোনো অত্যাবশ্যক শরীর-উপাদানের ঘাটতি, অথবা কোনো অর্জিত ও/ বা বংশগত রোগ-ব্যাধির ফল। রোগব্যাধির প্রধান কারণ হলো— শরীরে কোনো দীর্ঘক্রিয় ও গভীর ক্রিয়াশীল অনিষ্টকর বিষ বা রোগ-বিষ। যেমন, পারদ, সিফিলিস জীবানুজ বিষ প্রভৃতি।

২। মন বা মস্তিষ্ক-র যথেষ্ট কাজ করার পরিবেশ—পরিস্থিতি না থাকা। জীবনে অনেক বিচিত্র সমস্যার সম্মুখীন না হওয়া। যত বিচিত্র জ্ঞান-অভিজ্ঞতা লাভ হবে, ততই চেতনা বৃদ্ধি পাবে। দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনার মধ্য দিয়েই চেতনার বিকাশ ঘটে থাকে।

চেতন-অস্তিত্ব লাভ করার বা প্রাপ্ত হওয়ার সাথে সাথেই যন্ত্রনার পালা শুরু হয়ে যায়। তবে, নিম্ন-চেতন-স্তরগুলিতে বোধ-শক্তি কম হওয়ায়— যন্ত্রনাও কম বোধ হয়। চেতনা যত বর্ধিত হয়, যন্ত্রনাও তত বর্ধিত হতে থাকে। আবার, উচ্চ-চেতনা লাভের পর থেকে যন্ত্রনা ধীরে ধীরে কম অনুভূত হতে থাকে। অনেকটা উচ্চ বা উচ্চতর চেতন-অবস্থায় আর তেমন যন্ত্রনা থাকে না।

পার্থিব দেহ-অস্তিত্ব সম্পন্ন চেতন-সত্তার যন্ত্রনা কিছু বেশি হলেও, দেহাতীত বা দেহ-বিহীন চেতন সত্তাকেও অনেক যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়। তা’ হলো মানসিক যন্ত্রনা।

দেহ-অস্তিত্ব সম্পন্ন সচেতন মানুষ শারীরিক যন্ত্রনা থেকে মানসিক যন্ত্রনাই বেশি ভোগ করে থাকে। যন্ত্রনার মধ্যদিয়েই মনোবিকাশ তথা চেতনার বিকাশ ঘটে থাকে।

যে একবার চেতন-অস্তিত্ব লাভ করেছে, তার যন্ত্রনা থেকে রেহাই নেই। একমাত্র, দ্রুত উচ্চ চেতন-স্তরে উপনীত হতে পারলে, তবেই যন্ত্রনা থেকে অনেকাংশে মুক্তি ঘটবে।

তাই, যন্ত্রনা থেকে পালিয়ে যাওয়ার অথবা যন্ত্রনাকে ভুলে থাকার চেষ্টা না করে, দ্রুত আত্ম-বিকাশ লাভের চেষ্টা করো। আত্ম বিকাশই আমাদের অন্তিম লক্ষ্য।

জাগতিক-ব্যবস্থা মতো— আমাদের জীবন-চলা ঐ পরম লক্ষ্যপানেই এগিয়ে চলেছে। কেউ দ্রুত গতিতে— কেউ ধীর গতিতে, কেউ এগিয়ে, আর কেউ পিছিয়ে। আমরা সবাই এই একই পথের পথিক— বিকাশমান চেতনার পথে।

অত্যন্ত মূল্যবান এই মানব জীবনকে মোটেই হালকাভাবে দেখো না। জীবনটা শুধুই হাসি-মজা-হৈচৈ ক’রে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য নয়। জীবনের লক্ষ্য কি তা’ জানো। জীবনকে ভালোভাবে বোঝার পরে, তখন হালকাচালে লক্ষ্য পানে এগিয়ে চলার কলাই হলো— জীবন-কলা।

আমরা এখানে এসেছি— এক শিক্ষামূলক ভ্রমনে। ক্রমশ উচ্চ থেকে আরো উচ্চ চেতনা লাভই— এই মানব জীবনের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য। এখানে আমরা জ্ঞান—অভিজ্ঞতা লাভের মধ্য দিয়ে যত বেশি চেতনা-সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারবো, —তত বেশি লাভবান হবো। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে— এখান থেকে চলে যাবার সময় কিছুই আমাদের সঙ্গে যাবে না, —একমাত্র চেতনা ব্যতিত।

চেতনার অনেকটা বিকাশ ঘটলে, তবেই একজন ব্যক্তি— মানুষ চেনার ক্ষমতা লাভ ক’রে থাকে। মানুষ চিনতে না পারার কারনে— একজন ব্যক্তিকে সারা জীবন বহু দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়। সাধুবেশী ভন্ড-প্রতারক—উন্মাদ-শয়তানের কবলে পড়েও, অনেকের চেতনা জাগ্রত হয়না। একই ভুল সে বারবার করতেই থাকে। যদি চেতনার বিকাশ ঘটাতে চাও, মানব ধর্ম— মহাধর্ম-এর শরণ নাও।

তবে, একটু-আধটু মানুষ চিনতে সক্ষম হলেই যেন তা’ প্রকাশ কোরোনা, তাহলেই বিপদে পড়বে। কিছু কিছু জ্ঞান প্রকাশযোগ্য নয়।

আমাদের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো— অধিকাংশ মানুষই মুক্তমনে— যুক্তি-বিচারের সাথে গভীরভাবে তলিয়ে ভাবতে পারেনা, এবং অনেক সাধারণ বিষয়ও বুঝতে পারেনা। তারা গতানুগতিক বাঁধা ছকের মধ্যে— ওপরে ওপরে— ভাসা ভাসা চিন্তা করতে অভ্যস্ত। মানবজাতির প্রধান সমস্যা গুলির মধ্যে এটা হলো অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা। এর সাথে নিকট সম্পর্কযুক্ত আরেকটি সমস্যা হলো— অন্ধ-বিশ্বাস।

দু-একটি ব্যতীক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া, আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা, স্কুল-কলেজ প্রভৃতির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, এবং ধর্মীয় শিক্ষা, —এদের কেউই আমাদেরকে যুক্তি-সম্মতভাবে— বিষয়ের গভীরে গিয়ে— পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে চিন্তা করতে শেখায় না, বুঝতে শেখায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই— এরা অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে শেখায়। এদের অধিক অংশই আমাদেরকে তাদের অধীনস্ত— আজ্ঞাবহ— বাধ্য ক’রে রাখতে, আমাদেরকে মূর্খ বানিয়ে রাখতে সদা তৎপর।

এখানে এমন কোনো চালু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, যে সরাসরি আমাদের চেতনার বিকাশ (সচেতন মনের বিকাশ) ঘটাতে সাহায্য করে। আমাদের জীবনের পক্ষে অপরিহার্য এই বিষয়ের উপরেই কাজ ক’রে চলেছে— মানব-বিকাশ-মূলক ধর্ম— মহাধর্ম। মহাধর্ম বলে, জেগে ওঠো— আত্ম-বিকাশলাভ করো।

আমরা জানি, মোহাচ্ছন্ন মানুষ— এই ‘জেগে ওঠা’ এবং ‘প্রকৃত বিকাশলাভ’-এ মোটেই আগ্রহী নয়। তাদের কথা— ‘এই মধুর স্বপ্ন দেখা থেকে জাগিও না— আমাদের জাগিও না।’ ‘হোক সে মিথ্যা বা কল্পনা, তবু সেই মিথ্যা নিয়েই বাঁচতে চাই আমরা।’

এমনও দেখা যাবে, একজন ব্যক্তি কোনো ক্ষেত্রে বা কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমঝদার, এবং যুক্তি অবলম্বন করে চলেছেন। আবার, সেই একই ব্যক্তি, অপর কোনো একটি ক্ষেত্রে পুরোপুরি অন্ধ-বিশ্বাস যুক্ত।

একজন, কোনো একটি বিষয়ে ভালো সমঝদার, কিন্তু অপর কোনো একটি সাধারণ বিষয় তার মাথাতেই ঢোকেনা। এখানে আগ্রহ—অনাগ্রহের ব্যাপার থাকতে পারে। আবার আগ্রহ থাকা সত্বেও, কোনো ক্ষেত্রে সে (মানসিক দিক থেকে) দুর্বল বা অক্ষম, —কোনো ক্ষেত্রে সে (মানসিক দিক থেকে) সবল— সক্ষম হতে পারে।

এছাড়া, লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, আমরা অনেক সময় কোনো বিষয় ভালোভাবে না বুঝে অথবা কিছু না বুঝেই কথা বলি— কাজ করি। আবার, কখনো কখনো সব বোঝার ভান করে থাকি। —এ’ হলো আমাদের মানসিক দোষ বা ত্রুটি।

যুগযুগ ধরে বহু মনীষীই আমাদেরকে বলেছেন— ‘মানুষ হও...’ ‘মানুষের মতো মানুষ হও’ ...কিন্তু, কী উপায়ে যে যথেষ্ট বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠা যাবে, —তার কোনো হদিস নেই কোথাও।

যে সব পথ অনেকে দেখিয়ে গেছেন, সে সব পথে যথেষ্ট বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠা যাবেনা কোনো দিনও। তা’ যদি হতো— তাহলে দেশের তথা পৃথিবীর চেহারাটাই বদলে যেতো।

এখানে উল্লেখযোগ্য, মানুষ হওয়ার মানে শুধু মানব-দরদী হওয়াই নয়, মানুষ হওয়ার অর্থ হলো— মানব-মনের যথেষ্ট বিকাশ ঘটা। বিকশিত মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবেই মানব-দরদী হয়ে থাকে। তাদের উপর মানবতার পাঠ বা কর্তব্য আরোপ করার কোনো প্রয়োজনই হয়না।

'আজ, মানুষ গড়ার প্রকৃত দিশা দেখিয়েছেন, আমাদের সদগুরু— মহর্ষি মহামানস তাঁর আত্ম-বিকাশ শিক্ষাক্রমের মধ্য দিয়ে। এ-ই হলো প্রকৃত আত্ম-বিকাশ লাভের পথ।'—সম্পাদক

চেতনা বিকাশের কয়েকটি সহজ উপায় (প্রতিটি পদ্ধতিই অভ্যাস করতে হবে)

১। সর্বপ্রথম যা দরকার তা’ হলো— ইচ্ছা। আত্ম বিকাশলাভের ইচ্ছা।

২। সর্বদা হাবজাবি চিন্তায় মনকে ব্যস্ত না রেখে, কিছু কিছু সৃজনমূলক গঠনমূলক চিন্তা করো। এছাড়া, গোয়েন্দা বা বিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো প্রয়োজনীয় অথবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সত্যানুসন্ধানে মন দাও। কোনো কিছু আবিষ্কারেও মন দিতে পারো। কোনো কিছু সৃষ্টি করা— আবিষ্কার করা, সত্য উদ্ঘাটন করার মধ্যে যে কতো আনন্দ— তা’ ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।

৩। মাঝে মাঝেই নিজের মনের প্রতি— মনের কার্যকলাপের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখো। এর উপর মৎকৃত একটি অডিও প্রোগ্রাম আছে। এই 'মন-আমি-যোগ' অভ্যাসের মাধ্যমে মন তথা চেতনার বিকাশ ঘটে থাকে।

৪। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যা অর্জন ও যোগ্যতা লাভের চেষ্টা করা। শুধু তোমার চাহিদা হলেই হবেনা, বাজারে তার চাহিদা থাকতে হবে। তার জন্য 'মার্কেট-স্টাডি' করতে হবে তোমাকে।

৫। সর্বদা সমশ্রেণীর মানুষদের সাথে মেলামেশা না ক’রে, মাঝেমাঝে বিভিন্ন শ্রেণীর এবং সম্ভব হলে, কিছু উচ্চশ্রেণীর মানুষের সাথে মেলামেশা করবে। এবং এই মেলামেশার সময় নিজেকে সজাগ রেখে, তাদের কাছ থেকে কিছু কিছু বিষয় শেখার ও জানার চেষ্টা করবে।

৬। সুস্থতা লাভ ও তা’ বজায় রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন করতে হবে। অসুস্থতা ও তার কারণ এবং শরীর-মন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, এবং সুষম আহার করতে হবে। আজেবাজে আহার (জাঙ্ক ফুড) একেবারে চলবে না।

৭। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দক্ষ কর্মীর কাজ মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। একজন দক্ষ কর্মী কিভাবে— কি কৌশলে সেই কাজটি সম্পন্ন করছে, শেখার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে যেন তুমিও সেই কাজটি করতে পারো। অর্থাৎ কর্মদক্ষ হয়ে উঠতে হবে।

৮। অবসর সময়ে, অথবা ট্রেনে বা বাসে যাত্রাকালে মনোযোগ দিয়ে সামনের মানুষকে বোঝার বা পড়ার (রিড) চেষ্টা করবে। তার চেহারা, মুখাবয়ব, তার পোষাক, অভিব্যক্তি, কথাবার্তা, বাচনভঙ্গী— সবকিছু খুঁটিয়ে লক্ষ্য করবে (তবে সেই ব্যক্তি যেন বুঝতে না পারে)। এবং মনেমনে এক এক ক’রে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে আপাত সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে। এরপর, সুযোগ পেলে তোমার সিদ্ধান্ত মিলিয়ে নেবে। ভুল হলে, কেন ভুল হয়েছে দেখবে, এবং ভুল সংশোধন করে নেবে।

তবে, সাবধান, তোমার এই সিদ্ধান্ত বা প্রেডিকশন মিলে গেলে খুশি হতে পার, কিন্তু অহঙ্কার বোধ কোরো না। তাহলেই তোমার মানুষ চেনার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। এইভাবে অভ্যাস করতে করতে তোমার মন-বিকাশ ঘটতে থাকবে।

৯। নিজের দিকে দৃষ্টি দাও, —নিজেকে চেনো। নিরপেক্ষভাবে নিজের শরীর ও মনকে জানা ও বোঝার চেষ্টা করো। ক্রমশ চেতনা বৃদ্ধি পাবে।

১০। নিয়মিতভাবে একটা নির্দিষ্ট সময়ে— সুষুপ্তি-যোগের মধ্য দিয়ে সুষুপ্তাবস্থায় ডুবে যাও। এতে মনের বিকাশ ঘটবে। সুষুপ্তি-যোগ ভালোভাবে অভ্যাস হয়ে গেলে, তখন গভীর ধ্যানের মধ্যে ডুবে যাওয়া খুব সহজ হবে।

এর উপর মৎকৃত 'নিদ্রা-যোগ'-এর অডিও প্রোগ্রাম আছে। যার মাধ্যমে খুব সহজেই নিদ্রা-যোগের গভীরে ডুবে যাওয়া যায়।

১১। মৎকৃত কিছু বিশেষ ধ্যান-প্রক্রিয়া— যেমন, মহামনন-যোগ, মহামানস-যোগ প্রভৃতি মনোবিকাশ তথা চেতনার বিকাশের উৎকৃষ্ট উপায়।

১২। মাঝেমাঝে মৎকৃত ‘মহাবাদ’ দর্শন অধ্যয়ন এবং নিয়মিতভাবে নিষ্ঠার সাথে ‘মহামনন’ আত্ম-বিকাশ-যোগ অভ্যাসের মধ্য দিয়ে চেতনার বিকাশ ঘটে। ‘মহামনন’-এর মধ্যেই রয়েছে মৎকর্তৃক সৃষ্ট বিভিন্ন দুর্লভ যোগ পদ্ধতি যা আত্ম-বিকাশ বা মনোবিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে।

এগুলি অভ্যাসের মধ্যদিয়ে আত্মবিকাশ লাভের পথে এগিয়ে যাওয়াই হলো— মহাধর্ম (পালন)।

"তুমি যত বিচিত্র ধরনের মানুষ, পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং ঘটনাবলীর সংস্পর্শে আসবে, তোমার জ্ঞান-অভিজ্ঞতা ও চেতনা ততই বৃদ্ধি পাবে। আরও বেশি হবে, যদি তুমি মুক্তমনের সত্যপ্রেমী হও। গতিময় ঘটনাবহুল জীবন যার, দ্রুততার সঙ্গে জ্ঞান-অভিজ্ঞতা ও চেতনা বৃদ্ধি পায় তার।" —মহর্ষি মহামানস

ছাত্র-ছাত্রী ও শিষ্য-ভক্তদের উদ্দেশ্যে মহর্ষি মহামানস 

'মহামনন' আত্মবিকাশ যোগ 

 


মহাধর্ম-এর মূল গ্রন্থ~ 'মহাবাদ' -এ যেসমস্ত আত্মবিকাশ মূলক বিশেষ (যোগ) প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ আছে, সেগুলির শুরুতে, সর্বপ্রথম অনুশীলনীয় যোগ প্রক্রিয়াটির নাম— সুষুপ্তি যোগ।

তবে, তার আগে, যোগ সম্পর্কে আমাদের ধারণা-টি জানা প্রয়োজন।

মহাধর্ম-এর ব্যবহারীক (প্র্যাকটিক্যাল) দিক হলো— ‘মহামনন’ বা মহা আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রম। আত্মবিকাশ অর্থাৎ মনোবিকাশ ঘটানোর সাথে সাথে সর্বাঙ্গীন সুস্থতা লাভই হলো এই শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য। 
 
বিভিন্ন চিকিৎসা বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, অধ্যাত্ম মনোবিজ্ঞান, যোগবিজ্ঞান এবং অন্যান্য বিজ্ঞানের সমন্বয়ে এবং ‘মহাবাদ’ গ্রন্থের প্রকৃষ্ট জ্ঞানের সাহায্যে এই অসাধারণ শিক্ষাক্রম গ’ড়ে উঠেছে— বহুকালের নিরলস ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও গবেষনার ফলে--।
 
নিজেকে জানা— নিজের শরীর ও মনকে জানা, নিজের চারিপাশ সহ মানুষকে চেনা, নিজের প্রকৃত অবস্থান সহ জগৎ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান লাভ, নিজের উপর নিয়ন্ত্রন লাভ, জগতকে আরো বেশি উপভোগ করার জন্য নিজেকে যোগ্য—সমর্থ ক’রে তোলা— এই রকম আরো অনেক বিষয় নিয়েই এই শিক্ষাক্রম।
 
নিষ্ঠার সাথে শিক্ষা ও অনুশীলন করতে থাকলে— আস্তে আস্তে তোমার ভিতরে এক উন্নত—বিকশিত নতুন মানুষ জন্ম নেবে। যা দেখে আর সবার মতো তুমিও বিস্ময়ে মুগ্ধ হয়ে যাবে। নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়ে অপার আনন্দের আধার হয়ে উঠবে তুমি। তোমার চারিপাশে থাকা সবাই এই আনন্দের সংস্পর্শে এসে তারাও আনন্দ লাভ করবে!
 
ছাত্র-ছাত্রীগণ তাদের প্রচলিত শিক্ষা গ্রহনের পাশাপাশি এই আত্মবিকাশ শিক্ষা গ্রহনের দ্বারা তাদের পরীক্ষার ফল আরো ভালো করতে সক্ষম হবে। এছাড়া তাদের আচরণেও শুভ পরিবর্তন দেখা যাবে। 
 
 
“দেবত্ব এবং তৎপরবর্তী ঈশ্বরত্ব আমাদের মধ্যেই সুপ্তাবস্থায় এবং বিকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। দেবত্ব এবং ক্রমে ঈশ্বরত্ব লাভের জন্য আমাদেরকে মানবত্ব লাভ করতে হবে সর্বাগ্রে” —মহর্ষি মহামানস

মহামনন

মহামানস নির্দেশিত ও প্রদর্শিত পথে সহজ-সরল অপূর্ব এই শিক্ষা অধ্যয়ন ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে— জীবনে আনুন এক অভূতপূর্ব বিস্ময়কর শুভ পরিবর্তন। আপনার জীবন আরও সুন্দর ও আরও বিকশিত হয়ে উঠুক।

মহা-আত্মবিকাশের জন্য মনন-ই হলো— ‘মহামনন’। প্রকৃত আত্মবিকাশ লাভের এক অতুলনীয় শিক্ষাক্রম-ই হলো—‘মহামনন’। ভিত্তিমূল শিক্ষা থেকে আরম্ভ ক’রে অতি উচ্চস্তরের ‘মহা-আত্ম-বিকাশ-যোগ’ শিক্ষাক্রমই হলো—‘মহামনন’। 

—যার মধ্য দিয়ে ক্রমশই বহু সত্য —বহু অভাবনীয় তথ্য ও তত্ত্ব আপনার সামনে উদ্ঘাটিত হবে, আস্তে আস্তে এক সুস্থ-সমৃদ্ধশালী নতুন মানুষ জন্ম নেবে আপনার মধ্যে, এবং ক্রমশ বিকাশলাভ করতে থাকবে— করতেই থাকবে। সুস্থতা ছাড়া আত্মবিকাশ সম্ভব নয়। তাই, এই শিক্ষাক্রমের অঙ্গ হিসাবে আপনি এখানে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। 
—সম্পাদক
সাফল্য লাভের উপায়
 


যে বিষয়ে সাফল্যলাভ করতে চাও, —সেই বিষয়ের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহী হতে হবে তোমাকে। শয়নে-স্বপনে —জাগরণে প্রায় সময়ে সেই বিষয়টি নিয়ে নিজের মধ্যে ধ্বনাত্মক (পজেটিভ) আলোচনা-পর্যালোচনা এবং কল্পনা-পরিকল্পনা চলবে। তবে এই চিন্তা-ভাবনাগুলি করতে হবে— সুশৃঙ্খলভাবে, এলোমেলো চিন্তা নয়। সেই সঙ্গে সুশৃঙ্খলভাবে চিন্তা-ভাবনা বিচার-বিশ্লেষণ করতেও শিখতে হবে।  সত্যে উপনীত হতে, অথবা সত্য উদ্ঘাটন করতে— সুশৃঙ্খলভাবে চিন্তা করতে শিখতে হবে।

তার আগে দেখতে হবে, ঐ ব্যাপারে তোমার যোগ্যতা আছে কি না, যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হবে কি না। আর দেখতে হবে, —সুযোগ-সুবিধা —বাস্তব সম্ভাবনা আছে কি না, তোমার কাজের বা ঐবিষয়ের বাস্তবে কেমন চাহিদা আছে— কোথায় চাহিদা আছে।

বিষয়ের প্রতি আগ্রহ কম থাকলে, সেই বিষয়ের মধ্যে রসের সন্ধান করতে হবে। যারা ঐ বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। ঐ বিষয়ের উপর পড়াশুনা— খোঁজ-খবর করতে হবে। ক্রমশ নিজের যোগ্যতা বাড়িয়ে তুলতে হবে।

পরিকল্পনা মাফিক ধাপে ধাপে— যুক্তিসম্মত পথ ধরে এগতে হবে তোমাকে। তার সাথে সুযোগ-সুবিধার সন্ধান ক’রে— তাকে কাজে লাগাতে হবে। অজ্ঞান-অন্ধের মতো শুধু নির্বিচারে তথ্য ও তত্ত্বগুলি গ্রহন করলেই হবেনা, বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করতে হবে সত্যানুসন্ধানীর দৃষ্টি নিয়ে। নিজেকে সৃজনশীল ক’রে তুলতে হবে। নতুন নতুন দিশার সন্ধান এবং নতুন কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা করতে হবে এবং এ’ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠতে হবে। যে কোনো কাজের আসল মজাই তো এইখানে!

মাঝে মাঝে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সমস্ত বিষয়-বস্তু এবং তোমার কার্যকলাপ— সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি করতে না পারো, তাহলে কিভাবে তা’ করতে হয় শিখতে হবে। আমাদের ‘মহামনন’ আত্মবিকাশ বা মনোবিকাশ শিক্ষাক্রমের মধ্যে— এ’সমস্ত কিছুই শেখানো হয়ে থাকে।

তোমার কাজ বা বিষয়ের প্রতি যত বেশী ভালবাসা থাকবে, তুমি সেক্ষেত্রে তত বেশী সাফল্য লাভ করতে পারবে। এই ভালবাসার মূলে রয়েছে— স্বার্থ। যাকিছু আমাদের স্বার্থ পুরণ করে— আমাদের আনন্দ বা তৃপ্তি দেয়, আমাদেরকে লাভবান ক’রে তোলে— আমাদের চাহিদা মেটায়, —তা-ই আমাদের ভাললাগে, তাকেই আমরা ভালবাসি।  

অনেকসময় এর ব্যতীক্রম হতে দেখা যায়, আমাদের বোঝার ভুলে, আমাদের সচেতনতার অভাবে, অথবা উদাসীনতার কারণে। এর প্রতিকার হলেই— তখন তোমার বিষয় বা কাজটির প্রতি ভালবাসা জন্মাবে। যদি অসুস্থতার কারণে ভালবাসার অভাব ঘ’টে থাকে— সেক্ষেত্রে তারও প্রতিকার করতে হবে।

ছাত্র-জীবনেই হোক আর কর্ম-জীবনেই হোক, সাফল্য লাভের পিছনে— অনেক ক্ষেত্রেই গৃহ ও পরিবারের একটা বড় ভূমিকা থাকে। বাড়ির পরিবেশ, পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের আচরণ এবং আর্থিক অবস্থা অনুকূলে থাকলে, সার্বিক সুস্থতা থাকলে সাফল্যলাভ অনেকটাই সহজ হয়।

প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে লড়াই ক’রে সাফল্য লাভ করতে প্রয়োজন— অদম্য মনের জোর— তীব্র উচ্চাকাঙ্খা, আর সজাগ-সচেতন-যুক্তিবাদী মন। নানা উপায়— নানা পথ খুঁজে বার করতে গিয়ে অনেক শ্রম,  অনেক সময়— অনেক শক্তি ব্যয় হলেও, ব্যক্তি অভিজ্ঞ—কর্মদক্ষ—কৌশলী—সচেতন এবং উদ্ভাবন ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে ওঠে। বাধা-বিঘ্ন —প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে গিয়ে সাফল্য লাভে— আনন্দ লাভ হয় অনেক বেশি।
 
কিন্তু বিশেষ মানসিক সহায়তা না পেলে— সবার পক্ষে তা’ সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তাই বাড়ির পরিবেশ, পরিবারের সদস্যদের আনুকূল্য বিশেষ প্রয়োজন হয়।

অনেক মা-বাবাকেই দেখা যায়, তাদের আচরণ— সন্তানের বিকাশের পক্ষে মোটেই সহায়ক নয়। দেখা যায়, অনেকেই তাদের সন্তানকে বিকশিত ক’রে তুলতে— মানুষ ক’রে তুলতে চাইছেন, কিন্তু তারা নিজেদের বিকাশের ব্যাপারে মোটেই সচেতন নয়।
 
সন্তানকে যথেষ্ট বিকশিত মানুষ ক’রে তুলতে চাইলে, —ঐকান্তিকভাবে চাইলে, নিজেদের আত্মবিকাশ ঘটানোর সাথে সাথে— কিভাবে সন্তানকে মানুষ ক’রে তুলতে হয়, তার পাঠ নেওয়া এবং তা’ অনুসরণ ও অনুশীলন করা অত্যন্ত জরুরী। আজকের দিনে— পরিবারে সুখ ও শান্তি চাইলে, পরিবারের প্রত্যেককেই আত্মবিকাশ বা মনোবিকাশের পাঠ নেওয়া এবং তা’ নিয়মিত অনুসরণ ও অনুশীলন করা একান্ত কর্তব্য।  

পড়াশোনার সময় অর্থ বুঝে পড়তে বা শুনতে হবে। আর সাথে সাথে তার অর্থ অনুযায়ী মানসপটে তার চিত্ররূপ দিতে হবে—  চলমান (যেন জীবন্ত) ছবি কল্পনা ক’রে নিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট পাঠের মধ্যে— পর পর বিষয়গুলির মধ্যে যেমন যেমন সম্পর্ক রয়েছে, —তোমার কল্পনার চলচ্চিত্রের মধ্যেও ঠিক তেমনি সম্পর্ক থাকবে। 

আর একটি কথা মনে রাখতে হবে, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রে যদি প্রয়োজনীয় রস-রক্ত-খাদ্য বা পুষ্টির অভাব ঘটে, যদি তা’ টক্সিন দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে তার কাছ থেকে ভালো কাজ পাওয়ার আশা করা যাবেনা। 

আত্মবিকাশ— মনোবিকাশ— মানুষ হওয়া অথবা মানুষ করার ব্যাপারটা অনেকের কাছেই এখনো স্পট নয়। ছেলেমেয়েকে— তাদের নানা আবদার মিটিয়ে, সযত্নে প্রতিপালন করা, তাদের বড় ক’রে তোলাকেই অনেকে ‘মানুষ করা’ বলে, মনে করে। আবার, অনেক মা-বাবা না বুঝেই— নিজেদেরকে যথেষ্ট বিকশিত— পরিপূর্ণ মানুষ ব’লে ভেবে থাকে।
 
মনীষীরা যখন আশীর্বাদ ক’রে বলেন, —‘মানুষ হও’, তখন তাঁরা কি শুধু খেয়ে-প’রে বড় হওয়ার কথা বলেন? —একবারও ভেবে দেখিনা আমরা। অনেকের বক্তব্য, —মানুষ আবার কি হবো, আমরা তো মানুষই!
 
আসলে, এই মানুষ হওয়া বলতে বোঝায়, —যথেষ্ট বিকশিত মানুষ হওয়া। অর্থাৎ যথেষ্ট বিকশিত মনের মানুষ হওয়া। আত্মবিকাশের অর্থ হলো— মনোবিকাশ। ‘মনের বিকাশ’ —ব্যাপারটা নিয়েও অনেকে ধন্দে আছে। কেউ কেউ ভাবে, আমাদের অনেক বয়েস হয়েছে— যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি-অভিজ্ঞতা হয়েছে, এর থেকে আবার কি বিকাশ হবে! এদের কাছে— পূর্ণবয়স্ক মানুষ আর পূর্ণবিকশিত মানুষ প্রায় সমার্থক!
 
বহীর্মুখী দৃষ্টি দিয়ে অন্তরের অন্ধকার—অসুস্থতা—অপূর্ণতা, অন্তরের বিকাশ বোঝা সম্ভব নয়। তার জন্য মন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান সহ, মন সম্পর্কে সজাগ-সচেতন হতে হবে আমাদের। মনের দিকে তাকাতে— লক্ষ্য রাখতে হবে মাঝে মাঝেই। মনে রাখতে হবে, এই মন আছে ব’লেই— আমরা মানুষ। তাই, একজন মানুষ হিসেবে, আমাদের মন সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হতে হবে। যার মন যত বিকশিত— সে ততটাই বিকশিত মানুষ।
 
মানুষে মানুষে এতো পার্থক্য সৃষ্টির পিছনেও বড় কারণ হলো— আমাদের মন। বিভিন্ন চেতনস্তরের— বিভিন্ন মানসিক গঠন এবং বিভিন্ন ধরণের সংস্কার বা ‘প্রোগ্রাম’ সংবলিত— বিভিন্নরূপ মনের কারণেই আমরা এক একজন এক এক ধরণের মানুষ।
 
আমাদের এই মনের মধ্যে— বর্তমানে সক্রিয় দুটি অংশী মনের একটি হলো— অন্ধ-আবেগ প্রবণ অবচেতন মন, আর অপরটি হলো— সচেতন মন। এদের সুস্থতা এবং সচেতন মনের বিকাশের উপরেই মানুষের যাবতীয় বিকাশ— উন্নতি— সমৃদ্ধি নির্ভর করে। মানব সমাজের অধিকাংশ অসুখ-অশান্তি-সমস্যার মূলেই রয়েছে— আমাদের এই মন। অজ্ঞান-অন্ধ, অসুস্থ-বিকারগ্রস্ত মন। তাই, সুস্থ-সুন্দর —শান্তিপূর্ণ-সমৃদ্ধ জীবন লাভ করতে— নিজের নিজের মনোবিকাশ ও সুস্থতা লাভের চেষ্টার সাথে সাথে, চারিপাশের সমস্ত মানুষের মনোবিকাশ এবং মানসিক সুস্থতা ঘটাতে সচেষ্ট হতে হবে আমাদেরকে। এটাই মানব জীবনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। আর এর জন্য যথাযথভাবে নিয়মিত অনুশীলন করাই হলো— মানবধর্ম।                       

 


 

জীবনে সাফল্য লাভ প্রসঙ্গে
 

জীবনে সফল হওয়া বলতে, সাধারণত— মানব সমাজে প্রচলিত ‘মূল্যায়নের মাপকাঠি’ অনুযায়ী, একজনের জীবনে— তার চাহিদা মতো এবং/অথবা অপরাপরের চাহিদা অনুসারে, কোন কিছু বা বিশেষ কিছু হয়ে ওঠা, পেরে ওঠা, লাভবান হওয়া, বড় হওয়া অথবা উচ্চস্থান লাভ করা— কোন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করাকেই বুঝে থাকি আমরা।

আমরা অনেকেই জীবনের মূল সত্য— মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত না থাকার কারণেই ঐ রূপ ভেবে থাকি, এবং ঐ রূপ কিছু একটা হতে পারলে অথবা লাভ করতে পারলেই নিজেদেরকে জীবনে সফল বলে মনে করি।

আবার, যারা সেই হয়ে ওঠা— পেরে ওঠায় অসফল হয়, তারা মনে করে, তাদের জীবনটাই বুঝি বিফল হয়ে গেল! দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনা —হতাশায় কেউ কেউ জীবনের মূল স্রোত থেকেই সরে যায়।

আবার দেখা যায়, সফলতা লাভের পরেও, অন্তরের গভীরে একটা অতৃপ্তি থেকেই যায়। ‘কি যেন চেয়েছি –কি যেন পাইনি-!’ অনেক খুঁজেও সেই অতৃপ্তির কারণটাকে সবাই ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনা। মানব সমাজে সফলতার সার্টিফিকেট পেয়েও, সংবেদনশীল মন মাত্রেই ভিতরে ভিতরে একটা অপরিতৃপ্তি-অসন্তোষ অনুভব করে থাকে।

কেন এমন হয়?

আমি কে- জীবন কি ও কেন, জীবনের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কি, —তা’ সঠিকভাবে জানা না থাকার কারণে, এবং মূল উদ্দেশের ক্ষেত্রে সফলতা লাভ না হওয়ার কারণেই এমনটা হয়ে থাকে।

অনেকেই বলে থাকে, জীবনের মূল উদ্দেশ্য নাকি ঈশ্বরলাভ! —ঈশ্বরলাভ না হওয়ার কারণেই ঐরূপ অতৃপ্তি—শূণ্যতা অনুভূত হয়ে থাকে।

কিন্তু ঈশ্বর লাভ বলতে, তারা ঠিক কি বলতে চায়, তা’ তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এই জীবনেই ঈশ্বর লাভ আদৌ সম্ভব কিনা, ঈশ্বরলাভই মানব জীবনের মূল উদ্দেশ্য কি না, —সে সম্পর্কে তাদের কোন স্পষ্ট ধারণা নেই। শুধু পড়া ও শোনা কথা— জাহির করেই তারা আত্ম-সন্তুষ্টি লাভ ক’রে থাকে।

যার নিজের সম্পর্কে— জগৎ-সংসার সম্পর্কে, এবং ঈশ্বর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই, সে কি ক’রে বলতে পারে – ঈশ্বরলাভই জীবনের মূল লক্ষ্য!

আমাদের মধ্যে, পরিশ্রম ক’রে কিছু লাভ করা- যুক্তি-বুদ্ধি খরচ ক’রে, প্রভাব মুক্ত হয়ে— বিচার-বিবেচনা-অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে তলিয়ে দেখা ও বোঝার চেষ্টা খুব কম। শুধু পরস্পর শুনে— বিশ্বাস করা, আর ঘুষ দিয়ে— পূজো দিয়ে, স্তব-স্তুতি-স্তাবকতা ক’রে অনায়াসে বা স্বল্পায়াসে লাভ করার দিকেই আমাদের বেশী আগ্রহ। তার জন্য নিজেকে ঠকাতেও আমরা প্রস্তুত।


আমাদেরকে জীবনের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে অবহিত করতে, এবং সেই লক্ষ্যপানে স্বচ্ছন্দে এগিয়ে যেতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি হয়েছে— আত্মবিকাশ তথা মানববিকাশ মূলক ধর্ম— মহাধর্ম। মানবধর্মই হলো— মহাধর্ম।

সত্যই যদি জীবনে সফল হতে চাও, —তাহলে মহাধর্ম পথে অগ্রসর হও। মহাধর্ম-ই হোক তোমার আপন ধর্ম।

বর্তমান পৃথিবীর সবচাইতে বড় রোগ হল নৈরাশ্য--- হতাশা। মন-সফটওয়্যার-এর মধ্যে একের পর এক নৈরাশ্য-এর নেগেটিভ ফাইল জমে জমে তা পাহাড়প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই হতাশা থেকে জন্ম নিচ্ছে অজস্র রোগব্যাধি।

'মাইন্ড প্রোগ্রামিং'* অথবা এইসব ব‍্যাড ফাইলগুলোকে 'ডিলিটং' -এর মাধ্যমে এই সমস্যার নিরাময় সম্ভব। কিন্তু সেই কারিগর সহজলভ্য নয়। আবার অনেকে ঐ সমস্ত ক্ষতিকর ফাইলগুলোকে ডিলিট করতেই রাজি নয়। তারা মনকষ্ট পুষে রাখার পক্ষপাতী। ওইগুলোকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায় তারা। যেন ওই গুলোই তাদের বেঁচে থাকার সম্বল।

*'মহামনন' আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রমের মধ্যে এই 'মাইণ্ড প্রোগ্রামিং' -ও শেখানো হয়।


ক্রোধ-উত্তেজনা-অস্থিরতা, ভয় আর আলস্য— এগুলি হলো আমাদের বড় শত্রু
 

ক্রোধ-উত্তেজনা-অস্থিরতা, ভয় আর আলস্য— এগুলি হলো আমাদের বড় শত্রু, সাফল্য লাভের পথে সব চাইতে বড় প্রতিবন্ধক। এগুলি আসলে অসুস্থতার লক্ষণ। এদের উপেক্ষা করলে— তার ফল হবে খুবই খারাপ। এদের থেকে মুক্ত হতে হবে— সুস্থ হতে হবে তোমাকে। রুক্ষ—কর্কশ—উত্তেজিত কথা ও আচরণ তোমাকে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করবে। ঋণাত্মক (নেগেটিভ) চিন্তা-ভাবনা—আচরণ আর নয়, এখন থেকে ধনাত্মক (পজেটিভ) হয়ে ওঠো। আর তার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন সুস্থতা। কথায় আছে— বিনীত ছাত্রই জ্ঞান লাভে সক্ষম হয়।  

“একটি অর্থপূর্ণ সার্থক জীবনযাপন করতে চাইলে, নিজেকে জানতে হবে নিজের স্বরূপে, অন্তর্নিহিত আকাঙ্ক্ষাসহ জীবনের মৌলিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে হবে সর্বাগ্রে।” ~মহর্ষি মহামানস
পজেটিভ পরিকল্পনা কি ভাবে করবে 


উপযুক্ত সুযোগ পেলেই তোমার বিষয়—কর্ম—সাফল্য নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য পজেটিভ কল্পনায় বুঁদ হয়ে যাও। তারপরেই সচেতনভাবে— সেই কল্পনাকে যুক্তির পথে চালিত ক’রে— তাকে পরিকল্পনায় রূপ দাও।
 
এরপর, মাঝে মাঝে সেই পরিকল্পনাকে যুক্তি—বিচার—বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে, ক্রমশ একটি সুপরিকল্পনায় পরিণত ক’রে তোলো। এইভাবে— এক সময় একটা স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছে, এবার তাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য ধাপে ধাপে এগিয়ে যাও, বাস্তবসম্মত— যুক্তিসম্মত পথ ধরে।
 
যদি দেখা যায়, চিন্তা-ভাবনা কল্পনা-পরিকল্পনাগুলি সুন্দর—সুশৃঙ্খলভাবে এগচ্ছেনা, কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে যাচ্ছে, তাহলে কাগজ-কলম নিয়ে নিভৃতে বসে— এক এক ক’রে প্রথম থেকে তোমার বিষয়—কর্ম—পরিকল্পনাকে লিখে ফেলো। দেখবে, লিখতে লিখতেই— পরিকল্পনাটি কেমন সুন্দর—সুশৃঙ্খল রূপ পেয়ে যাবে। হারিয়ে যাওয়া সূত্র এবং অদেখা পথগুলি একে একে তোমার কাছে আত্মপ্রকাশ করতে থাকবে।
 
সবটা যদি স্পষ্ট না হয়, কয়েক ঘন্টা পরে সেই কাগজ-কলম নিয়ে আবার বসে যাও। প্রথম থেকে ধাপে ধাপে দেখতে থাকো। ফাঁক-ফোঁকড়— ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লেই তা’ সংশোধন—সংযোজন করো, এবং পুনরায় ফ্রেস ক’রে আবার লেখ। দেখবে, এই ভাবে বার কয়েক লেখার পর— একটি সুন্দর পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরী হয়ে গেছে।       




 
মনকে আবর্জনা মুক্ত রাখো


মনটাই তো আসলে তুমি। শরীরের মতো তাকেও নিয়মিত পরিস্কার করা না হলে, সে ক্রমশ নোংরা দুষিত অব‍্যবহার্য পরিত্যক্ত হয়ে ওঠে। এখন, তুমি যদি সেই অপরিচ্ছন্ন মন নিয়েই থাকতে অভ‍্যস্ত হও, তাহলে অনেকেই তোমার কাছে ঘেঁষতে চাইবে না--- তোমাকে এড়িয়ে চলবে। তোমার কাজকর্ম ও আচরণেও এর প্রভাব পড়বে।

প্রতিদিন প্রতিনিয়ত তোমার মনে ময়লা জমছে। কিন্তু একবারের জন্যেও তাকে পরিস্কার না করে, তুমি যদি দিনের পর দিন সেই অপরিচ্ছন্ন আবর্জনার স্তুপ হয়েই থাকো, তাহলে সেই মনের অবস্থাটা কিরূপ হবে--- একবার ভেবে দেখো!

এই অবস্থায় কোনো শুভলাভ--- সৌভাগ্য লাভ, উন্নতি--- সাফল্য--- বিকাশ লাভ কি সম্ভব? 

মনের পরিচ্ছন্নতার জন্য সারাদিনে মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় ব‍্যয় করলেই হবে। বিশ্রামের সময়ে স্থিরভাবে বসে--- একাগ্র হয়ে মনের দিকে ধ‍্যান দাও। দেখ, বহুকাল ধরে মনের মধ্যে--- বহু দুঃখ- কষ্ট- যন্ত্রণা, কালিমা- কলুষ- গ্লানি, শোক- সমস্যা- হতাশা প্রভৃতি জমে জমে মনের কি দশা হয়েছে। 

এগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে এক এক করে সেই স্মৃতিগুলিকে মনের পর্দায় অবলোকন করো। তারপরে, সেগুলিকে 'ডিলিট' করার জম্য— 'ডিলিট' বলে, মনকে কয়েকবার নির্দেশ বা আদেশ দাও, এবং লক্ষ্য করো--- সেটি মুছে গিয়ে— (কম্পিউটারের ডিলিটিং প্রক্রিয়ার ছবিটি কল্পনা করো) মনটা অচিরেই কেমন নির্মল- পবিত্র- সুন্দর, পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে। এ'হলো রোজকার সাফাই। পুরোনো জমে থাকা ময়লা দূর করতে হলে, তোমাকে সুষুপ্তি-যোগের মাধ্যমে গভীর 'ট্রান্স' -এর মধ্যে ডুবে গিয়ে স্ব- অভিভাবন বা নির্দেশ দিতে হবে মাঝে মাঝে।

মনের ধ‍্যান শুরু করার পূর্বে ৫ মিনিট সচেতন- প্রাণযোগ বা Consciously deep breathing অভ‍্যাস করতে হবে। শ্বাস গ্রহণের সয়য় কল্পনা করো--- মহাজাগতিক শক্তি তোমার মধ্যে প্রবেশ করছে। আর শ্বাস ত‍্যাগ ক‍রার সময় কল্পনা করো--- শরীর ও মনে জমে থাকা সমস্ত আবর্জনা দূর হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেও আরো কিছু বিষয় আছে, যা সাক্ষাৎ শিক্ষা কালেই বোঝানো হয়ে থাকে। তবে, এতেও অনেক সুফল পাওয়া যাবে।
 
সুষুপ্তি যোগ  : তদবিষয়ক আলোচনা ও নির্দেশ
 
 

সুপরিকল্পিত ভাবে আত্মবিকাশের জন্য যোগাভ্যাস করা প্রয়ােজন। 'যােগ' অর্থে মিলন। দেহের সাথে মনের, বহির্মনের সাথে অন্তর্মনের, বহির্জগতের সাথে অন্তর্জগতের মিলন, মহাপ্রাণের সাথে ক্ষুদ্র প্রাণের মিলন। এই যোগপ্রক্রিয়া ভালভাবে আয়ত্ত করতে প্রয়োজনীয় যোগ্যতাও থাকা আবশ্যক। থাকতে হবে আকঙ্খা- প্রত্যাশা, প্রত্যয়, একাগ্রতা, সংবেদনশীলতা বা অনুভূতিপ্রবণতা, আর চাই শিথিল হওয়ার সক্ষমতা বা 'রিল্যাক্সিবিলিটি'। যথেষ্ট শিথিল হতে না পারলে, যোগে বিশেষ উন্নতি সম্ভব নয়। তাই, ‘আত্মবিকাশযোগ’ ও ‘মহামানস যোগ' শিক্ষার প্রথম পাঠই হলো— সুষুপ্তি-যোগ বা মহা-শবাসন। 

যোগাসন অভ্যাসের সময় তোমরা অনেকেই শবাসন অভ্যাস করেছ। 'শব' অর্থাৎ মৃতের ন্যায় আসনই হলো— শবাসন। কিন্তু হাত-পা ছড়িয়ে, চিৎ হয়ে শুলেই যথেষ্ট শিথিলতা আসেনা। দেহ-মনের পুরোপুরি শিথিলতা আনতে সুপরিকল্পিত পথে নির্দিষ্ট পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এগোতে হয়। নিদ্রা-যোগ-এর গভীরে ডুবে যেতে হলে, নিদ্রা-যোগের বিস্ময়কর ফল লাভ করতে চাইলে, শৈথিল্য লাভ করতে— সুষুপ্তি-যোগ শিক্ষতে হবে প্রথমেই। আসলে, সুষুপ্তি-যোগ বা মহা-শবাসন বা গভীর ‘রিল্যাক্সেশন'-এর পরবর্তী গভীর স্তরই হলো— নিদ্রা-যোগ। আবার নিদ্রা-যোগ থেকে আরও অনেক গভীরে পৌঁছালে— ভাব-সমাধি স্তর।
 
একই পথ, শুধু গভীরতার পার্থক্য। সমাধিলাভ সবার পক্ষে সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা (শরীর-মন-ইন্দ্রিয়ের সামর্থ) সবার থাকেনা। তীব্র আকাঙ্খা, শ্রদ্ধা-ভক্তি-বিশ্বাস, আস্থা, প্রত্যয়, একাগ্রতা, অনুভূতিপ্রবণতা বা সংবেদনশীলতা ও শিথিল হওয়ার যোগ্যতা -এগুলি অত্যন্ত অধিক মাত্রায় থাকলে, তবেই ভাবাবিষ্ট হয়ে সমাধিস্তরে পৌঁছানো সম্ভব। তবে, সুষুপ্তি-যোগ বা মহাশবাসন-এর জন্য যে যোগ্যতার প্রয়োজন, তা' অনেক মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। প্রয়োজন শুধু উপযুক্ত গুরু বা পথপ্রদর্শক, —যে যোগনিদ্রায় সক্ষম করে তুলতে সাহায্য করবে।  

কারো কারো মধ্যে সমাধি সম্পর্কে বিশেষ কৌতুহল কাজ করে, কিন্তু, সমাধি স্তরে পৌছে সবার পক্ষেই লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা। নেই। অধিকাংশের ক্ষেত্রেই সেখানে আছে শুধু নিঃসীম অন্ধকার অথবা অগাধ শূন্যতা পূর্ণ অজ্ঞান অবস্থা। 

এখন বলি। কিভাবে এই সুষুপ্তি-যোগ বা মহাশবাসন-এর অডিও সিডি-র মাধ্যমে সুষুপ্তি-যোগ অভ্যাস করবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, যেখানে কোনো বিরক্তিকর ও উত্তেজনাকর শব্দ নেই, কোনো অবাঞ্ছিত বা কোনোরূপ বিঘ্নকারী কেউ বা কিছু থাকবে না, এমনই নির্মল নিরালা- নিরাপদ পরিবেশ সুষুপ্তি-যোগ অভ্যাসের পক্ষে উপযুক্ত স্থান। নিজের শোবার ঘরেও অভ্যাস করতে পারা যাবে। দরজা-জানালা বন্ধ করে, এমন ব্যবস্থা করবে— যাতে কেউ তোমার বিশ্রামে ব্যাঘাত না ঘটায়। ঘরের পরিবেশ আরও উপযোগী করে তুলতে, মৃদু নীল আলাে এবং প্রশান্তিকর হালকা সুগন্ধময় ধূপের ব্যবহার করতে পারাে। চন্দন ধূপবাতি হলেই ভালো হয়।   

হালকা ও ঢিলাঢালা পোষাক পরে আরামদায়ক বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ো। হাত দুটি সরলভাবে দেহের দু-পাশে শিথিল করে রেখে দাও। হাতের তালু উপর দিকে অর্থাৎ চিৎ করে রাখলে ভলো হয়। তার আগেই সিডি বা ডিভিডি প্লেয়ারে সুষুপ্তি-যোগ-এর সিডি-টিকে সেট করে, শ্রুতি-সুখকর করতে, ভল্যুম এডজাস্ট করে, এমন ভাবে প্রস্তুত রাখবে, যেন, শুয়ে শুয়েই হাত বাড়িয়ে ‘সুইচ অন-অফ’ করা যায়। এবার প্লেয়ার চালু করে-- আবার পূর্বের অবস্থায় হাত রেখে চোখ বন্ধ করে নাও। মন দিয়ে সিডি প্লেয়ারের কথাগুলি শুনতে থাকো এবং ক্রমশঃ হাত-পা সহ সমস্ত শরীরকে শিথিল করে দাও, এলিয়ে দাও--- মিশিয়ে দাও বিছানার সাথে।   

সুষুপ্তি-যোগ অভ্যাস করতে করতে ক্রমশঃ বোধ হবে--- যেন, শরীর নেই-- মন নেই, জগৎ সংসার কিছুই নেই, আছে শুধুমাত্র একটি চেতন সত্তা। --খুব আরামদায়ক বিশ্রামের মধ্যে ডুবে যাচ্ছো তুমি, তলিয়ে যাচ্ছো গভীর অন্ধকারের মধ্যে।

*শিথিল হওয়া বা শৈথিল্য লাভ হলো- বিষয়মুক্ত হওয়ার এক অতি সহজ উপায়। শিথিল হওয়ার মধ্য দিয়ে বিষয়মুক্ত হয়ে, অতি সহজেই ‘ট্রান্স'-এর মধ্যে ডুবে গিয়ে আকাঙ্খিত বিষয়ের সাথে যোগ ঘটানোই সুষুপ্তি-যোগ ও নিদ্রা-যোগের উদ্দেশ্য।
 
কিছুদিন অভ্যাস করলেই তুমি তোমার শরীর ও মনের এক শুভ পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবে। আস্তে আস্তে অনুভব করতে পারবে, তোমার মানসিক উন্নতি ও শারীরিক সুস্থতা। প্রথমদিকে প্রতিদিন একবার করে অভ্যাস করবে। পরে দু-একদিন অন্তর দুপুরে বা রাতে তোমার সুবিধামতো যে কোনো সময় অভ্যাস করবে। বিশ্রামের সময়ই হলো উপযুক্ত সময়। যখন কোনোরূপ বহির্মূখীনতা থাকবে না, থাকবে না খিদে-তৃষ্ণা বা কোনো কাজের তাড়া। ২৫-৩০ দিন বা তারও বেশী দিন অভ্যাসের পর, যখন দেখবে, তুমি খুব ভালোভাবে 'রিল্যাক্সড়' বা শিথিল হতে পারছো, তখন 'মহা-নিদ্রা-যোগ' অভ্যাস করতে শুরু করবে। এই সময় কেউ যাতে কিছুমাত্র বিরক্ত বা স্পর্শ না করে, তারজন্য পূর্বেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মনেরেখ, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এখন, যারা বেশ কিছুদিন অভ্যাস করেও বিশেষ 'রিল্যাক্সড়' হতে পারছো না, বুঝতে হবে। কোনো না কোনো বিশেষ অসুখে ভুগছো, অথবা জন্মগত কোন স্নায়বিক ত্রুটি আছে। সেক্ষেত্রে, এই অসুবিধা কাটানোর জন্য হোমিওপ্যাথিক বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করে দেখতে পারো। এছাড়া, ‘হঠযোগ' এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক চিকিৎসার সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে। এখানে আমি কয়েকটি প্রাথমিক ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করছি— ১) ভরপেট ভাত খেলে শরীর আপনা থেকেই কিছুটা শিথিল হয়ে যায়। এই সময় 'শবাসন' অভ্যাস করে দেখতে পারো। ২) সকাল-বিকাল দু-বেলা আসন ও ব্যায়াম অভ্যাস করা প্রয়োজন৷ ব্যায়ামের পরে শবাসন অভ্যাস করা যেতে পারে। ৩) যাদের ভালো ঘুম হয় না, তারা হোমিওপ্যাথির সাহায্য নিতে পারো। এছাড়া, সুশুনি শাক, জটামাংসী ভেজানো দু-চামচ জল, ‘প্যাসিফ্লোরা -মাদারটিঞ্চার', 'রাউলফিয়া সাপেন্টিনা -মাদারটিঙ্কার', ব্রাহ্মি মাদার টিনচার -এগুলি চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যবহার করে দেখতে পারো। তবে এলোপ্যাথিক ‘সিডেটিভ’ বা ‘ট্রাঙ্কুইলাইজার' বা ঘুমের ওষুধ অথবা কোনো ‘ড্রাগ’ নিয়ে শবাসন অভ্যাস করবে না। বিশেষ কোনো স্নায়বিক বা মানসিক অসুস্থতা থাকলে চিকিৎসকের অনুমতি পরামর্শ এবং বিশেষজ্ঞ মনস্তত্ববিদ-এর উপস্থিতি ও তত্ত্বাবধানে সুষুপ্তি-যোগ ও মহা-নিদ্রা-যোগ অভ্যাস করা কর্তব্য।

সবশেষে আরও কিছু জরুরী কথা, —এই অডিও ফাইল বা সিডি-গুলির অপব্যবহার যেন কোনোমতেই না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখবে। আত্মবিকাশ--- ধ্যান, যোগ প্রভৃতি সাধনার বিষয়। অকারণে- অসময়ে পূর্বনির্দেশিত ব্যবস্থা ছাড়া, এই সিডি চালানো নিষেধ। এতে নিজেরই ক্ষতি হবে। মন খুব সূক্ষ্ম জিনিস, তা মোটেই অবহেলার বিষয় নয়। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজনের কাছে, হাল্কা পরিবেশে নিজেকে জাহির করার জন্য অথবা নিছক কারো কৌতুহল নিবৃত্তির জন্য এর ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশেষ প্রয়োজনে, উপযুক্ত ব্যক্তিকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করার মতো মানসিক প্রস্তুতি ও শিক্ষা আছে যার, তেমন ব্যক্তিকেই পূর্বে এই নির্দেশিকা পাঠ করতে দিয়ে তারপর পূর্ব-নির্দেশিত পরিবেশে তাকে শোনানো যেতে পারে।

সাধারণভাবে, পূর্ব-নির্দেশিত ব্যবস্থা ছাড়াই এই অডিও-ফাইল বা সিডির ব্যঞ্জনাপূর্ণ ব্যবহারিক কার্যকর সাজেশন গুলি শুনলে, কোনো ফল লাভ হবে না, কোনো ক্রিয়াই অনুভূত হবে না। সিডির প্র্যাকটিকাল অংশ শোনা এবং কাউকে শোনানোর পূর্বে এই প্রবন্ধ পাঠ করা অত্যাবশ্যক, তবে কাউকে বিস্তারিতভাবে এ সম্পর্কে জানিয়ে তারপরে তাকে শোনানো যেতে পারে।

এই ‘সিডি' 'কপি' করে অপরকে দেওয়া শুধুমাত্র আইনত: অপরাধই নয়, এর ফলে আধ্যাত্মিক বা মানসিক দিক থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সম্ভব। উপকার পেলে প্রচার করতে আপত্তি নেই। আগ্রহীগণকে সরাসরি 'মহা-আত্মবিকাশ কেন্দ্র'-এর সাথে যোগাযোগ করতে বলবে। আমাদের ওয়েবসাইটেও আসতে পারো। প্রচারের সময় কখনোই ফেনিয়ে-ফাপিয়ে কিছু বলবে না। যা সত্য তা-ই বলবে। মহাআত্মবিকাশ কার্যক্রমে যে সমস্ত যোগ-প্রক্রিয়ার কথা এখানে বলা হয়েছে, প্রাচীন যােগশাস্ত্রে উল্লেখিত দুরূহ বিধি-নিয়ম-পদ্ধতির সাথে এর অনেকাংশেই মিল নেই। 'মহামানস মন্ডলের' যোগসাধনা- প্রচলিত যোগ-প্রক্রিয়া থেকে অনেকটা স্বতন্ত্র।

আধুনিক বিজ্ঞানের হাত ধ'রে, অনেক গবেষনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপযোগী করে, সহজ-সরলভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে- এই 'মহা-আত্মবিকাশ-যোগ কার্যক্রম'।

আত্মবিকাশ- আত্মজ্ঞান, আত্মচেতনার বিকাশ, আত্মশক্তির বিকাশ। —যার দ্বারা আত্মিক এবং জাগতিক বিষয়-বস্তু ও ঘটনাগুলিকে আরও ভালোভাবে আরও বেশী করে অনুভব ও উপলব্ধি করা যায় এবং তাদের মধ্যেকার তথ্য ও তত্ত্ব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান জন্মায়। —যার মধ্য দিয়ে জাগতিক বিষয়-বস্তু - ঘটনাগুলির উপর এবং নিজের উপর ক্রমশ নিয়ন্ত্রণলাভে সক্ষম হয়ে ওঠে মানুষ। নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা, নিজেকে জানা, নিজের অতীতকে জানা, ভবিষ্যত লক্ষ্যকে জানার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছন্দ গতিতে এগিয়ে চলতে সক্ষম হয় সে তখন। জগৎকে আরও বেশী আরও ভালভাবে ভোগ করতে সক্ষম হয়ে ওঠে সে, একজন প্রকৃত সফল ও সৌভাগ্যবান মানুষ হয়ে উঠতে পারে সে মহা-আত্মবিকাশ-যোগ-এর মধ্য দিয়ে।



ফ্রি অডিও ফাইল-এর জন্য এই লিঙ্ক ফলো করো—

https://drive.google.com/file/d/1mIHZvuFL23O9MVrnM4DpkBvW0mYdiLFr/view
মন-আমি যোগ

'মন-আমি-যোগ' হলো অবচেতন মনের সঙ্গে সচেতন মনের যোগ সাধন। আমাদের মধ্যে সক্রিয় দুটি মন সম্পর্কে সম‍্যক ধারণা লাভ করার সাথে সাথে, অবচেতন মনের উপর ক্রমশ নিয়ন্ত্রণ লাভ করো।

অবসর সময়ে চোখ বুঁজে শুয়ে বা বসে, মন দিয়ে শোনো এবং বিবরণ অনুসারে কল্পনা করো।
ফ্রি অডিও ফাইল-এর জন্য এই লিঙ্ক ফলো করো—

https://drive.google.com/file/d/1mIHZvuFL23O9MVrnM4DpkBvW0mYdiLFr/view


 
সহজ প্রাণযোগ 
 

মেরুদণ্ড সোজা রেখে, চোখ বুঁজে— চুপকরে বসো। ধীরে ধীরে গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করো। শ্বাস গ্রহণের সময় মনে মনে বলো— 'মহা প্রাণশক্তি'। ধারণা করো--- মহাজাগতিক মহা-প্রাণশক্তি তোমার মস্তিষ্কের মধ্যে প্রবেশ করছে। এবং তা’ মস্তিষ্ক থেকে ক্রমে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে।​তারপর যতক্ষণ সম্ভব শ্বাস ধারণ করো, এবং মনে মনে বলো— 'আমি রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত, সুস্থ- স্বাস্থ্যবান, সক্রিয়-শক্তিমান, সুন্দর কান্তিমান। সৌভাগ্যবান। আমি ভালো আছি, আমি ভালো আছি, আমি ভালো আছি।​
 
তারপরে, ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ করো। শ্বাস ত্যাগ করার সময় মন মনে বলো— ' আমি শুভময় ধনময় সৌভাগ্যময়। আমি সুস্থ— সুস্থ— সুস্থ। সমস্ত রোগবিষ থেকে মুক্ত, সমস্ত কুপ্রভাব থেকে মুক্ত, অশুভত্ব থেকে মুক্ত।'​শ্বাস ত্যাগ করার পরে, কয়েক সেকেন্ডের জন্য শূন্য অবস্থায় থাকো। অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস কিছুই না করে থাকো। এই সময় মনে মনে বলো— শান্তি- শান্তি- শান্তি। ​
এই সময় মনকে শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযুক্ত রাখো।

এইরূপ পাঁচবার করার পরে, একটু বিশ্রাম নিয়ে, আবার প্রাণযোগ অভ‍্যাস করো, এবার মনে মনে কোনো কথা না বলে, ছড়িয়ে থাকা মনকে বা মনের ফোকাসকে, শ্বাস গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে কপালের বা ভ্রু যুগলের মাঝখানে কেন্দ্রীভূত করুন। এবং শ্বাস ছাড়ার সময়েও ওখানেই মনকে স্থির নিবদ্ধ রাখুন।

প্রথম পর্যায়ে, ভ্রু যুগলের মধ্যে অথবা কপালের মাঝখানে মনোসংযোগ করলেও, পরবর্তীতে যেতে হবে আরও গভীরে। 'আমি'-র কেন্দ্রে অর্থাৎ স্ববোধ-এর জায়গাটি হলো--- উপরোক্ত স্থানের কিছুটা গভীরে, দুটি কানের মধ‍্যবর্তী একটি স্থান।

প্রাণযোগ অভ‍্যাসের পরে, কিছুক্ষণ স্ব-বোধে স্থিত হয়ে, ধ‍্যানস্থ থাকতে হয়। তখন সমস্ত মনোযোগ থাকবে ঐ স্থানটিতে, অর্থাৎ নিজের বা নিজের মনের উপর। আরেকটি কথা, ভরা পেটে প্রাণযোগ অভ‍্যাস করা নিষেধ। প্রাণযোগ অভ‍্যাসের পক্ষে ভোরবেলা হলো সবচাইতে ভালো সময়।
 
 
ধ্যান-যোগ অভ্যাসের পূর্বে 'প্রাণযোগ' অভ্যাস এর পিছনে বিজ্ঞান: 

বিশেষভাবে ধ্যান করা ছাড়াও, মনোযোগ সহকারে কোন কিছু করা, পড়া বা শোনার সময় আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। মনোযোগ যত বেশি গভীর ও কেন্দ্রীভূত হবে, শ্বাস-প্রশ্বাস ততই ক্ষীণ হতে থাকবে। এদিকে আবার, মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে--- যথাযথভাবে মনন ক্রিয়া করার জন্য, মস্তিষ্কে যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেনের প্রয়োজন। আর প্রয়োজন হয় জলের। এই দুটির অভাব হলেই মস্তিষ্ক তার কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এমনকি সে অচল হয়েও পড়তে পারে। 

ধ্যান-যোগ অভ্যাস কালে ধানের গভীরতা যত বৃদ্ধি পাবে, ধ‍্যানীর শ্বাসক্রিয়া ততবেশি ক্ষীণ হতে থাকবে। আর মস্তিষ্কের ক্রিয়াও ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকবে। 

মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি যাতে না হয়, সেই উদ্দেশ্যেই তাকে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়ে থাকে, প্রাণযোগ অভ্যাস-এর মাধ্যমে। এছাড়াও, শরীরকে টক্সিন বা রোগবিষ থেকে মুক্ত করতে,  অক্সিজেনের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। 

প্রাণযোগ অভ‍্যাসের মাধ্যমে আমাদের প্রাণশক্তির বৃদ্ধি ঘটে থাকে। আমাদের চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসের যোগ রয়েছে। আমাদের মন তথা চিন্তা-ভাবনা যখন অসুস্থ এবং বিশৃঙ্খল থাকে, তখন শ্বাস-প্রশ্বাস তার ছন্দ হারিয়ে ফেলে। প্রাণযোগের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস তার ছন্দ ফিরে পেলে, মন ও তার চিন্তা-ভাবনাও ছন্দে ফিরে আসে। 

নিয়মিত প্রাণযোগ অভ‍্যাসের দ্বারা মানসিক চাপ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ভীতি, শোক, দুঃখ, অশান্তি, হতাশা, অবসাদ প্রভৃতি ক্রমশ দূর হয়ে যায়। যোগী প্রাণশক্তিতে ভরপুর হয়ে ওঠে। মানসিক সুস্থতা, শৃঙ্খলা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে ক্রমশ। মানসিক অসুস্থতার কারণে যে সমস্ত শারীরিক সমস্যা ঘটে থাকে, সেগুলোও আস্তে আস্তে দূর হয়ে যায়।

সঠিকভাবে প্রাণযোগ অভ‍্যাসের মাধ্যমে, যোগীর মনের চঞ্চলতা কমে গিয়ে, তার মন স্থির একাগ্র হয়ে ওঠে। তার কাজের প্রতি আগ্রহ ও অনুরাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে ক্রমশ।

ধ‍্যান অনেক প্রকার, 'মহামনন' আত্ম-ধ‍্যানের সময় আমাদের মন ও মস্তিষ্ক ক্রিয়া রহিত হয়ে যায় না। বরং সেই সময় সচেতন মন যথেষ্ট সজাগ থাকে, এবং সচেতন মনের বিকাশ ঘটতে থাকে তখন। এই কারণেই যোগ অভ্যাসের পূর্বে ও পরে যথেষ্ট পরিমাণে জল পান করা উচিত।

'মহা প্রাণযোগ' শেখানো হয় পূর্ণাঙ্গ আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রম -এর ক্লাসে।

ধ‍্যানের জন্য মন ও মস্তিষ্কের শিথিলতা এবং মেরুদন্ড ও স্নায়ুতন্ত্রের নমনীয়তা প্রয়োজন। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই শিথিলতা এবং নমনীয়তা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। তাই, মেরুদণ্ডের নমনীয়তা লাভ করতে, কিছু ব‍্যায়াম করতে হবে। আর, মন ও মস্তিষ্কসহ স্নায়ুতন্ত্রের শিথিলতা লাভ করতে, সুষুপ্তি-যোগ অভ‍্যাস করতে হবে।




 

 সংগীতের মাধ্যমে 'মহামনন' ধ্যান 


 

'সঙ্গীত সহযোগে ধ‍্যান' হলো একটা খুব সহজ এবং ফলপ্রসূ ধ‍্যান পদ্ধতি। প্রথমে গানটি কাগজে লিখে নাও। তারপর--- আমার সঙ্গে অথবা রেকর্ডের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গানটিকে কণ্ঠস্থ করে নাও। তারপর নিজেই গাইতে থাকো। কয়েকজন মিলে সংঘবদ্ধ হয়েও, এই ধ‍্যান অভ‍্যাস করতে পারো। ধ্যান-সংগীত গাওয়ার সময় হেলেদুলে--- মাথা দুলিয়ে, হাত তুলে, অথবা হাতে তালি দিয়ে--- মাতোয়ারা হয়ে গান গাইতে থাকো।

গানটি কে বারবার (repeatedly) গাওয়ার সাথে সাথে--- ক্রমশ লয় বা গতি বাড়িয়ে দাও। অর্থাৎ ক্রমশ দ্রুতগতিতে গান গাইতে থাকো। কিছুক্ষণ গাওয়ার পরে, যখন দেখবে বেশ ঘোরলাগা মতো অবস্থা হয়ে এসেছে, তখন গান গাওয়া বন্ধ করে চোখ বুঁজে স্ব-বোধে স্থিত হয়ে, ধ‍্যানের গভীরে ডুবে যাও। সমস্ত ফোকাস থাকবে মস্তিষ্কের ঠিক মাঝখানে। আস্তে আস্তে এক চিন্তাশূন্য অবস্থায় চলে যাও তুমি। যতক্ষণ ভালো লাগবে ধানের মধ্যে ডুবে থাকো।

এর বহুবিস্তৃত সুফল বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। নিষ্ঠার সঙ্গে ধ‍্যান অভ‍্যাস করতে করতে, ধ‍্যান-যোগী নিজেই উপলব্ধি করতে পারবে এর বহুবিধ উপকারিতা।

।। মহামনন আত্মবিকাশ সঙ্গীত ।।

~মহর্ষি মহামানস

জাগো ওঠো--- জাগো ওঠো, জাগো মোহ মুক্ত হও। 

জাগো মন--- হও সচেতন, এখনো কেনো ঘুমাও। 

জানো চেনো বোঝো নিজেরে, দ্রুত বিকশিত হয়।।

জাগো ওঠো--- অন্তরামি, জাগ্রত সক্রিয় হও। 

স্ব-বোধে স্থিত হয়ে, 'মহামনন' যুক্ত হও।।

বিকাশমান চেতনা পথে, সচেতন হয়ে এগিয়ে যাও। 

আর যা-ই হওনা তুমি, সবার আগে মানুষ হও।।

জাগো ওঠো--- হে মহাপথিক, সর্বাঙ্গীণ সুস্থ হও। 

মানবধর্মের পথ ধরে তুমি স্ব-নিয়ন্ত্রণাধীন হও।।

।। মহামনন ।। স্ব-অভিভাভন গীতি

~মহর্ষি মহামানস​

আমি জাগ্রত- আমি সক্রিয়, আমি সচেতন মোহমুক্ত।

আমি নির্মল--- পবিত্র, আমি সুন্দর--- আমি সুস্থ।।

আমি কে তা' আমি জানি, আমি সত্যানুসন্ধানী। 

আমি দীপ্ত--- বিকশিত, আমি সকল বাঁধন মুক্ত।।

আমি পূর্ণ-- আমি স্বাধীন, আমি স্ব-নিয়ন্ত্রণাধীন। 

আমি নিজেরে হারায়ে খুঁজি, আমি জেনেছি সৃষ্টিতত্ত্ব।।

(আমি) প্রশান্ত-- সন্তুষ্ট, নই কখনোই আমি রুষ্ট। 

নেই অজ্ঞান-অন্ধত্ব, আমি প্রজ্ঞান-আলোক প্রাপ্ত।।

*গান-দুটি খাতায় লিখে নাও। অন্যান্য গানের জন্য ষষ্ঠ অধ্যায় দ্রষ্টব্য।

মহামনন-যোগ~৫


কাঙ্খিত বিষয়-বস্তু, ঘটনাকে মনশ্চক্ষে স্পষ্টভাবে দর্শন করো এবং তা' অনতিবিলম্বে বিস্ময়করভাবে লাভ করো! 'মহামানন-যোগ ~ ৫' এর সাহায্যে সহজতম উপায়ে তুমি তোমার পছন্দসই জিনিস বা প্রিয়জনকে লাভ করতে পারবে।

যদি তুমি তা' বা তাকে স্পষ্টভাবে এবং কিছু সময়ের জন্য স্থায়ীভাবে মনশ্চক্ষে দর্শন করতে সক্ষম হও, তবে অদূর ভবিষ্যতে তুমি তা' বা তাকে লাভ করতে সক্ষম হবে।

একাকী ঘরে, আরামদায়ক বিছানায় বসে বা শুয়ে, তোমার চোখ বন্ধ করো। এবার 'মহামনন' নামটি কয়েকবার নিঃশব্দে মনে মনে উচ্চারণ (জপ) করো। এরপরে, তোমার পছন্দসই জিনিস বা প্রিয়জনকে কল্পনায় দেখার চেষ্টা করো। যত তাড়াতাড়ি তুমি তা' বা তাকে স্পষ্টভাবে এবং কিছুক্ষণ স্থায়ীভাবে কল্পনায় অবলোকন করতে পারবে, তত তাড়াতাড়ি তা' বা তাকে তুমি লাভ করতে পারবে।

স্থির-চিত্র হিসাবে নয়, গতিময় (চলচ্চিত্র) ছবির মতো তুমি তোমার পছন্দসই ঘটনার সাথে তাকে 'ভিজ্যুয়ালাইজ' করবে।

যদি তা' পরিষ্কারভাবে না দেখা যায়, তবে প্রতিদিন এই যোগটি অনুশীলন করো--- ছবিটি পরিষ্কার করার জন্য।

এখন এটা মনেরেখো, যে কাঙ্খিত জিনিস বা প্রিয়জনকে তুমি পেতে চাইছো, তা' অবশ্যই বাস্তব হতে হবে, এবং তা' পাওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা থাকতে হবে। আর, তা' বা তাকে পাওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে তোমার মধ্যে।

একবারে, তোমাকে অবশ্যই কেবল একটি জিনিস বা প্রিয় একজন ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষা করতে হবে। একটি পাওয়ার পরে, তুমি অন্যটির জন্য চেষ্টা করতে পারো।


তবে, অবৈধ এবং অমানবিক কাজ বা আকাঙ্ক্ষা থেকে সাবধান থাকো, তাতে কুফল ভোগ করতে হবে তোমাকে। এই অনুশীলনটিও একটি 'যোগ' সাধনা। এটি মহর্ষি মহামানস-এর 'মহামানস' যোগের একটি পদ্ধতি।

 
 
মহামানস যোগ—৬ 

আমরা এখন 'মহা্মানস যোগে'-এর একটি ব্যবহারিক ফলিত যোগ প্রক্রিয়া--- আরোগ্যকর ধ‍্যান বা ধ্যানযোগে রোগ-আরোগ্য পদ্ধতি অনুসরণ করব।  

একটা সুন্দর মনোরম নির্বিঘ্ন স্থানে অথবা একান্তে নিজের ঘরে যে কোন ধ্যানাসন বা সুখাসনে বসে শরীর-মনকে শিথিল করে দাও। মনে মনে, এক থেকে পিছন দিকে দশ পর্যন্ত ক্রমানুসারে গুনতে গুনতে ( সুষুপ্তি-যোগ দ্রষ্টব্য) নিজের মধ্যে ডুবে যাও। এবার আরগ‍্যের উদ্দেশ্যে, যে শরীর-যন্ত্রটি রোগাক্রান্ত হয়েছে, অথবা সমস্ত কষ্টকর উপসর্গের জন্য যে শরীর-যন্ত্রটি দায়ী, তাতে মন-সংযোগ করো। সমস্ত উদর সংক্রান্ত রোগে, নাভি কেন্দ্রে মন সংযোগ করতে পারো। কোন ব্যথা, জ্বালাযন্ত্রণা থাকলে, তাতে মনঃসংযোগ করো। 

ওই শরীর যন্ত্র সম্পর্কে তোমার কোন ধারনা না থাকলে, ধ্যানে বসার পূর্বে, শরীর-সংস্থানের (এনাটমির ম‍্যাপ) ভালো করে খুঁটিয়ে দেখে, তোমার রোগাক্রান্ত শরীর যন্ত্রটির আকার ও অবস্থান জেনে নাও। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে পারো।

ধ্যানের মধ্যে শরীর-যন্ত্রটিকে অনুভব করার চেষ্টা করো। যতক্ষণ পারো থাকো। রোগের গুরুত্ব অনুসারে প্রতিদিন এক থেকে তিন বার করে এবং প্রতিবারে ৫ থেকে ১৫ মিনিট বা তারও বেশি সময় ধরে ধ্যান করো। এর মধ্যে, মাঝে মাঝে "সুস্থ হও--- রোগমুক্ত হও", এই বলে মনে মনে আরোগ্যের নির্দেশ দেবে। মনে রেখো প্রার্থনা বা কামনা নয়, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নির্দেশ বা আদেশ দেবে। প্রয়োজনবোধে ধানের সময় আক্রান্ত স্থান হাতের আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করতে পারো।

স্থির হয়ে ধ‍্যানস্থ হতে অক্ষম হলে, তোমাকে তার আগে মহাশবাসন বা  সুষুপ্তি-যোগ নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। ধ‍্যানে বুঁদ হতে পারলে, অর্থাৎ ভালো ট্রান্স এলে তবেই সাফল্য আসবে।

ধ্যান চিকিৎসা চলাকালীন প্রয়োজনে অন্য পদ্ধতির চিকিৎসাও চলতে পারে। এই ধ‍্যান চিকিৎসায় বেশ দক্ষ হয়ে উঠলে , রোগের প্রাথমিক বা দ্বিতীয় অবস্থায়, তখন আর অন্য পদ্ধতির চিকিৎসার প্রয়োজন নাও হতে পারে। বসে ধ্যান করতে অক্ষম হলে, শুয়ে শুয়েও ধ্যান করা যাবে। শুধু এমন একটি সময় ও স্থান নির্বাচন করতে হবে, যাতে ধানে কোনরূপ ব্যাঘাত না ঘটে।

আমাদের সমস্ত যোগ-প্রক্রিয়া শেখার পূর্বে যথেষ্ট শিথিল হতে শিখতে হবে প্রথমে। এর জন্য তোমাকে মহাশবাসন বা সুসুপ্তি-যোগ শিখতে হবে সবার আগে। মহাশবাসন বা সুষুপ্তি-যোগের মাধ্যমেও বহু রোগ-উপসর্গ দূর হয়ে থাকে।

'যোগ' -এর মূল কথা হলো যুক্ত হওয়া, অর্থাৎ যোগ ঘটানো। ধ‍্যানীর মন ও ধ্যেয় বিষয়বস্তুর মধ্যে যত বেশি যোগ ঘটবে যোগের উদ্দেশ্য সফল হবে ততই। ধানের সময় একাগ্র হয়ে ধ‍্যানের বিষয়বস্তুর সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করবে যুক্ত হবার চেষ্টা করবে--- তার অন্তরে প্রবেশ করবে।



 

মহামানস যোগ—৭

প্রাণযোগ, সুষুপ্তি যোগ ও মহামনন ধ্যান-যোগ ভালভাবে অনেকদিন ধরে অভ্যাস করার পরে এই যোগটি অভ্যাস করা যাবে। একটি উপযুক্ত স্থানে বসে, পূর্ব-প্রস্তুতি ও পূর্বানুষ্ঠানগুলি একে একে অভ্যাস করার পরে, চোখ বুঁজে ‘মহামানস যোগ’ অভ্যাস করতে হয়। এই যোগ খুবই উচ্চ স্তরের যোগ প্রক্রিয়া।

সুখাসনে বসে চোখ বুঁজে কল্পনা করো— এই মহাবিশ্ব তোমার শরীর, আর তুমি হলে সেই শরীরের মধ্যে বিরাজমান— বিশ্বমন বা বিশ্বাত্মা বা ঈশ্বর। তোমার শরীরের অসংখ্য কোষের প্রতিটি কোষ হলো— এক একটি জীব ও উদ্ভীদ। স্থির-অচঞ্চল হয়ে পর্যবেক্ষন করতে থাকো।

নিয়মিতভাবে অনেকদিন ধরে অভ্যাস করতে করতে— দেখতে পাবে, ঈশ্বর ও জীব সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নের উত্তর এখন আর তোমার কাছে অজানা নেই। ক্রমশ অভ্যাস করতে করতে, তুমি এই যোগ-পথে যখন আরও গভীরে— আত্ম-উপলব্ধিতে পৌঁছে যাবে, তখন তুমি অনেক উচ্চ চেতন-স্তরে পৌঁছে গিয়েছো।  

'মহামনন' ধ্যান সাধনা

মহর্ষি মহামানস-এর মহা-আত্মবিকাশ-যোগ শিক্ষাক্রম -এর অন্তর্গত 'মহামনন' ধ‍্যান-যোগ সাধনার মাধ্যমে অনাবিল প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা লাভ করো। লাভ করো 'মেন্টাল ফিটনেস'।


।। ভূমিকা ।।

সজাগ-সচেতন বিকাশমান মানুষ মাত্রই প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা লাভের জন্য যারপরনাই আগ্রহী হয়ে থাকে। মানব জীবনে প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা এক অমূল্য সম্পদ। তার সঙ্গে যদি থাকে সুস্থতা, তাহলে তো সে এক মহা ভাগ্যবান মানুষ। দুর্লভ অথচ সহজ ও সরল এই শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করে জীবনে নিয়ে এসো এক অভূতপূর্ব শুভ পরিবর্তন। 

'মহামনন' ধ্যান সাধনার দ্বারা সাধকের মন স্ব-বোধে স্থিত হয়ে, এক অনাবিল প্রশান্তি লাভ করে থাকে। সাধকের জীবন হয়ে ওঠে সুখ ও শান্তিময় আনন্দময়। তার মন সমস্ত রকমের ঋণাত্মক ভাব ও মানসিক দূষণ--- উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রভৃতি  থেকে মুক্ত হয়ে ওঠে। ক্রমে মোহ-মায়া, ভ্রান্ত-দৃষ্টি, অন্ধবিশ্বাস, অজ্ঞান-অন্ধত্ব ও মিথ্যার আশ্রয় থেকে মুক্ত হয়ে, সাধক সত্যনিষ্ঠ হয়ে--- আত্মশুদ্ধি, আত্মজ্ঞান, আত্মোপলব্ধি লাভের মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠে দিব্য আলোকময়!
ভুক্তভোগী মাত্রই জানে, ধ্যানের গভীরে ডুব দেওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। অনেকবার ধ্যানস্থ হওয়ার চেষ্টা করেও, বিফল হয়ে, শেষপর্যন্ত ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে, এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। সেই অতি কঠিন কাজটিকে আমাদের জন্য সহজ হয়ে উঠেছে অপূর্ব এই ধ্যান পদ্ধতির মাধ্যমে।
প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী, কোনো মন্ত্র জপের মাধ্যমে গভীর ধ্যানের মধ্যে ডুবে যাওয়া, অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। 'মহামনন' ধ্যানে ওই রকম কোনো চালু পদ্ধতি নেই।
ধ্যান মানে শুধু চোখ বুঁজে বসে থাকা নয়। অথবা কোনো স্মৃতি বা কল্পনায় বুঁদ হয়ে থাকাই নয়। ধ্যানের অনেক গভীরে ডুবতে হবে। ধ্যানের তন্ময়তা যত গভীর হবে, ততবেশি সাফল্য লাভ করতে পারবে ধ্যানী ব্যক্তি।
মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হও। সুস্থ থাকো। চরম সঙ্কটপূর্ণ এই অস্থির সময়ে—  ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ~ দুঃশ্চিন্তা, মনকষ্ট, অসন্তোষ, অশান্তি, অসুখীভাব থেকে বহু কঠিন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। নিয়মিতভাবে 'মহামনন' মেডিটেশন অভ্যাস করে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকো।
 
 

'মহামনন' ধ‍্যান প্রশিক্ষণ শিবির

—সম্পাদক

 

মহর্ষি মহামানস নির্দেশিত পথে সহজ-সরল  এবং অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতিতে মনোবিজ্ঞান ও আধ‍্যাত্মিকবিজ্ঞান ভিত্তিক দুর্লভ ধ‍্যান প্রশিক্ষণ শিবির। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। বর্তমানে কোথায় কোথায় শিবির চলছে, জানতে, ইভেন্ট দেখুন। ওয়েবসাইট: www.mahamanan.wix.com/meditation

'মহামনন' ধ‍্যান অনুশীলনের মাধ্যমে লাভ করুন মানসিক উৎকর্ষ এবং অনাবিল প্রশান্তি। লাভ করুন 'মেন্টাল ফিটনেস' সহ আরও অনেককিছু।

'মহামনন' ধ‍্যান-যোগ সাধনার মাধ্যমে সাধকের মন স্ব-বোধ-এ স্থিত হয়ে, এক অভূতপূর্ব প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা লাভ করে থাকে। ক্রমশ সাধকের জীবন হয়ে ওঠে সুখময়— শান্তিময়— আনন্দময়। 'মন' তার ঋণাত্মক (negative) ভাব এবং মানসিক দুষণ--- উদ্বেগ-- উৎকণ্ঠা-- অবসাদ (stress, tension, depression) প্রভৃতি থেকে থেকে মুক্ত হয়ে, আত্মোপলব্ধি লাভের মধ্য দিয়ে ক্রমশ হয়ে ওঠে দিব‍্য জ্ঞান-আলোকময়!

ছাত্র-ছাত্রীগণ প্রচলিত শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি 'মহামনন' শিক্ষা ও অনুশীলনের দ্বারা তাদের পরীক্ষার রেজাল্ট আরও ভালো করতে সক্ষম হবে। এছাড়া, তাদের আচরণেও ক্রমশ শুভ পরিবর্তন আসবে।

বিশদভাবে জানতে, এবং অংশগ্রহণ করতে, শীঘ্র যোগাযোগ করুন। আসন সংখ্যা সীমিত।

কোনো ব‍্যক্তি বা সংস্থা কলকাতায় অথবা কোনো বড় শহরে, বড় আকারে এই 'মেডিটেশন ক‍্যাম্প' -এর আয়োজন করতে আগ্রহী হলে, যোগাযোগ করুন। আট দিনের কোর্স এবং চার দিনের সংক্ষিপ্ত কোর্স।



মানব ধর্মই মহাধর্ম
—সম্পাদক​


মহর্ষি মহামানস নির্দেশিত ও প্রদর্শিত পথে মহাধর্মাচারণ অর্থাৎ মানবধর্ম— মহাধর্ম-এর অনুশীলন পর্বের নাম হলো— মহামনন। যা হলো মহা আত্মবিকাশ বা মনোবিকাশ যোগ শিক্ষাক্রম। মহামনন যোগ সাধনা--- প্রচলিত যোগ-প্রক্রিয়া থেকে অনেকাংশে স্বতন্ত্র। আধুনিক বিজ্ঞানের হাত ধরে, অনেক গবেষণা, প্রয়োগ এবং অনুশীলনের মাধ্যমে অত্যন্ত কার্যকরী এই যোগ প্রক্রিয়াগুলি গড়ে উঠেছে। মহামনন অনুশীলনের পূর্বে, মহাধর্মের তাত্ত্বিক পর্বগুলি অবশ্যই পাঠ করা কর্তব্য।


'মহামনন' (পূর্নাঙ্গ) আত্মবিকাশ যোগ শিক্ষাক্রমের একটি অংশ হলো এই 'মহামনন ধ‍্যান সাধনা'। তাই, মহামনন আত্মবিকাশ যোগ শিক্ষাক্রম সম্পর্কে কিছু জানা প্রয়োজন।

মহর্ষি মহামানস নির্দেশিত ও প্রদর্শিত পথে সহজ-সরল অপূর্ব এই শিক্ষা অধ্যয়ন ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে— জীবনে  নিয়ে আসুন এক অভূতপূর্ব বিস্ময়কর শুভ পরিবর্তন। আপনার জীবন আরও সুন্দর ও আরও বিকশিত হয়ে উঠুক।

মহা-আত্মবিকাশের জন্য মনন-ই হলো— ‘মহামনন’। প্রকৃত আত্মবিকাশ লাভের এক অতুলনীয় শিক্ষাক্রম-ই হলো—‘মহামনন’। ভিত্তিমূল শিক্ষা থেকে আরম্ভ ক’রে অতি উচ্চস্তরের ‘মহা-আত্ম-বিকাশ-যোগ’ শিক্ষাক্রমই হলো—‘মহামনন’। 

—যার মধ্য দিয়ে ক্রমশই বহু সত্য —বহু অভাবনীয় তথ্য ও তত্ত্ব আপনার সামনে উদ্ঘাটিত হবে, আস্তে আস্তে এক সুস্থ-সমৃদ্ধশালী নতুন মানুষ জন্ম নেবে আপনার  মধ্যে, এবং ক্রমশ বিকাশলাভ করতে থাকবে— করতেই থাকবে। সুস্থতা ছাড়া আত্মবিকাশ সম্ভব নয়। তাই, এই শিক্ষাক্রমের অঙ্গ হিসাবে আপনি এখানে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা প্রাকৃতিক ও যোগ চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।

মহাধর্ম: মানবধর্ম ভিত্তিক, যুক্তিসম্মত অধ‍্যাত্ম বিজ্ঞান অনুসারী, মানববিকাশ মূলক যুগান্তরকারী ধর্মই হলো 'মহাধর্ম।

মহাধর্মের ব্যবহারীক (প্র্যাকটিক্যাল) দিকই হলো— ‘মহামনন’ বা মহা আত্মবিকাশ যোগ শিক্ষাক্রম। আত্মবিকাশ অর্থাৎ মনোবিকাশ ঘটানোর সাথে সাথে সর্বাঙ্গীন সুস্থতা লাভই হলো এই শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য। 

বিভিন্ন চিকিৎসা বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, অধ্যাত্ম মনোবিজ্ঞান, যোগবিজ্ঞান এবং অন্যান্য বিজ্ঞানের সমন্বয়ে এবং এই কালের মহান মতবাদ~ ‘মহাবাদ’ গ্রন্থের প্রকৃষ্ট জ্ঞানের সাহায্যে এই অসাধারণ শিক্ষাক্রম গ’ড়ে উঠেছে— বহুকালের নিরলস ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও গবেষনার ফলে--।

নিজেকে জানা—নিজের শরীর ও মনকে জানা, নিজের চারিপাশসহ মানুষকে চেনা, নিজের প্রকৃত অবস্থান সহ জগৎ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান লাভ, নিজের উপর নিয়ন্ত্রন লাভ, জগতকে আরো বেশি উপভোগ করার জন্য নিজেকে যোগ্য—সমর্থ ক’রে তোলা— এই রকম আরো অনেক বিষয় নিয়েই এই শিক্ষাক্রম।

নিষ্ঠার সাথে শিক্ষা ও অনুশীলন করতে থাকলে— আস্তে আস্তে আপনার  ভিতরে এক উন্নত—বিকশিত নতুন মানুষ জন্ম নেবে। যা দেখে আর সবার মতো আপনিও বিস্ময়ে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়ে অপার আনন্দের আধার হয়ে উঠবেন আপনি। আপনার
  চারিপাশে থাকা সবাই এই আনন্দের সংস্পর্শে এসে তাঁরাও আনন্দ লাভ করবেন!

ছাত্র-ছাত্রীগণ তাদের প্রচলিত শিক্ষা গ্রহনের পাশাপাশি এই আত্মবিকাশ শিক্ষা গ্রহনের দ্বারা তাদের পরীক্ষার ফল আরো ভালো করতে সক্ষম হবে্ন। এছাড়া তাঁদের আচরণেও শুভ পরিবর্তন দেখা যাবে। 

"মহামনন শিক্ষার্থীদের একটা নেশাই থাকবে, তা' হলো ধ‍্যানের নেশা।"   —মহামানস   
 
মহামনন —আত্মবিকাশ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য মুক্তহস্তে দান করুন। 

 

'মহামনন' আত্মবিকাশ-যোগ শিক্ষাক্রম-এর অন্তর্গত 'মহামনন' ধ‍্যান-যোগ শিক্ষা।

আত্মবিকাশ! আত্ম-চেতনার বিকাশ, আত্মশক্তি আত্ম-সম্পদ, আত্ম-জ্ঞানের বিকাশ! গভীর আত্ম-সাগরের নিস্তরঙ্গ শান্তির বিকাশ।

আত্ম সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষ আত্মবিকাশের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তখন নানা কাজের ফাঁকে, মাঝে মাঝেই চলতে থাকে আত্মচিন্তন--- আত্মজিজ্ঞাসা--- আত্মানুসন্ধান--- আত্মবিশ্লেষণ প্রভৃতি। ক্রমশ আরো পথ পেরিয়ে, পরোক্ষ ও স্বতঃস্ফূর্ত জ্ঞান লাভের মধ্য দিয়ে--- যথেষ্ট চেতনা বৃদ্ধি পেলে, বিকাশ লাভের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে ওঠে। সে তখন পথ এবং পথপ্রদর্শক খুঁজে ফেরে। কোন পথে, কি পদ্ধতিতে দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, কার কাছে গেলে পাওয়া যায় সঠিক পথ ও সহজ পদ্ধতির সন্ধান, প্রায়শই এই চিন্তায় মগ্ন থাকে সে তখন।

আপাতদৃষ্টিতে/ বাস্তবে সবকিছু থাকা সত্ত্বেও মনে শান্তি নেই, এরকম মানুষের সংখ্যা আজ ক্রমশই বেড়ে চলছে। অযথা--- অনিয়ন্ত্রিত চাহিদার কারণেও বহু মানুষ হতাশ ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে যারপরনাই অশান্তি ভোগ করছে।

'মহামনন' শিক্ষা ও অনুশীলনের দ্বারা সাময়িকভাবে লাভবান হবার পর, স্থায়ীভাবে লাভবান হবার জন্য এখানে শিক্ষা গ্রহণ অনুশীলনের পরেও নিজের নিজের আবাসস্থলে নিয়মিতভাবে বিধি-নিয়ম মেনে 'মহামনন' অনুশীলন করে যেতে হবে। প্রয়োজনে, বাড়ির অন‍্যান‍্য সদস্যদেরকে সঙ্গে নিয়েও প্রতিদিন 'মহামনন' অভ‍্যাস করলে, গৃহে শান্তি বজায় থাকবে।

আত্মবিকাশের সহায়ক যোগ পদ্ধতি গুলির মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ যোগ হলো 'মহামনন' ধ্যান-যোগ। ধ‍্যেয় এবং ধ‍্যানী সেখানে এক অভিন্ন। অর্থাৎ আত্ম-ধ্যান বা অধ‍্যাত্ম-ধ‍্যান। 'মহামনন' ধ‍্যান প্রচলিত কোনো ধর্মীয় ধ‍্যান নয়।

ধ্যান করতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়ে। মনের বিশৃঙ্খলা অবস্থার কারণে, সফল হতে না পেরে, ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় অনেকেই। সরাসরি ধ্যানের গভীরে পৌঁছানো সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই ধানের প্রস্তুতির জন্য অনুসরণ ও অনুশীলন করতে হয় আরো কিছু সাধন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া গুলোও আত্মবিকাশের পক্ষে সহায়ক হয়ে থাকে। এর মধ্য দিয়ে জানতে হয় এবং উপলব্ধি করতে হয়--- মনের তথা চেতনার বিভিন্ন স্তরগুলিকে। এর মধ্য দিয়ে সেই সঙ্গে মানসিক এবং মনোদৈহিক সুস্থতাও লাভ হয় অনেকটাই। 

তবে তার আগে জানতে হবে ধ্যান কী, ধ‍্যান কিভাবে ঘটে, তারপর ধ্যান কেন করবো, কিভাবে করবো। 'ধ্যান' অধ্যায়ে এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তবু বলি, সাধারণভাবে কোনো জাগতিক বা বহির্জাগতিক বিষয়বস্তুতে, অথবা ঐরূপ কোন বিষয়বস্তুর স্মৃতিতে--- একাগ্রচিত্তে মনোনিবেশ করে, পুনঃ পুনঃ ওই একই বিষয়ে বা বস্তুর চিন্তনের মধ্য দিয়ে--- বিষয়বস্তুর মধ্যে নিহিত সত্য (রূপ---গুণ---শক্তি--- উপাদান প্রভৃতি তত্ত্ব ও তথ্য) উদঘাটন প্রক্রিয়াকেই অনেকে ধ‍্যান বলে থাকে।

আত্ম-ধ্যান হলো 'আমি'-র ধ্যান। এই 'আমি'-টা কে, কোথায় তার অবস্থান জানতে হবে। যাকে জানলে প্রায় সব জানা হয়, সেই 'আমি'-কে অর্থাৎ নিজেকে জানতে হবে আমাদের। আত্মজ্ঞান হলো এই 'আমি'-র জ্ঞান। 'আমি'-কে দেখা যায়না, উপলব্ধি করা যায়। নিজেকে অর্থাৎ 'আমি'-কে যত বেশি জানা যাবে, ঈশ্বর তথা এই মহাবিশ্ব জগতের রহস্য ততই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। 'আমি'-কে অর্থাৎ নিজেকে জানার উদ্দেশ্যেই এই সৃষ্টি লীলা ( সৃষ্টিতত্ব দ্রষ্টব্য) শুরু হয়েছে। 'আমি'-কে পুরোপুরি জানা হলে, তবেই ঘটবে মোক্ষ লাভ। সৃষ্টির অবসান ঘটবে তখন। 
অনেকের মধ্যেই একটা ভুল ধারণা আছে, —তারা মনে করে, ধ্যান চর্চা শুধুমাত্র সাধু-সন্ন্যাসী-তপস্বীদের জন্য। 'ধ্যান' অভ্যাস যে প্রতিটি মানুষের পক্ষে কতটা প্রয়োজনীয়, তারা তা' জানেনা। 'ধ্যান' হলো আমাদের সবচাইতে বড়  ঔষধ। ইদানীং, সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও 'যোগ' চর্চা শুরু হয়েছে। যোগের উপকারীতা অনেকেই আস্তে আস্তে বুঝতে পারছে। এই 'যোগ' প্রক্রিয়াকে বলা হয়, 'হঠ যোগ'। 'যোগ'-এর রাজা হলো 'ধ্যান'। যাকে বলাহয়-- 'রাজ-যোগ'। আজকের দিনে, ভালোভাবে জীবনযাপন করতে হলে, সুষ্ঠুভাবে বিকাশলাভ করতে হলে, 'ধ্যান' ছাড়া আমাদের গতি নেই। 

মনকে শান্ত--- স্থির--- একাগ্র করার উদ্দেশ্যেও অনেকে অনুরূপ ধ‍্যান করে থাকে। জাগতিক বা বহির্জাগতিক কোনো কিছুকে মনে ধারণ করে, তাতে একাগ্রচিত্তে মনোনিবেশ করাকে 'ধ‍্যান-ধারণা'-ও বলে অনেকে। আবার বস্তু নিরপেক্ষ ধ‍্যানও করে কেউ কেউ।

'মহামনন' যোগ অর্থাৎ আত্ম-ধ‍্যানের বিষয়--- ধ‍্যানী নিজেই। যাকে জানতে পারলে সব জানা হয়, যার মধ্যে বিকাশের অপেক্ষায় নিহিত আছে অতুল শক্তি--- মহাজ্ঞান--- মহাচেতনা, সেই 'আমি'--- অন্তরামি ও তার কেন্দ্রই হলো মহামনন ধ‍্যান-যোগের লক্ষ্য। আর শান্তি! সে তো মোহ-মায়ারূপ জাগতিক বিষয় বস্তু এবং তার প্রতি আকর্ষণ বশতঃ সৃষ্ট জাগতিক দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে, আত্ম-সাগরের গভীরে ডুব দিলেই মিলবে অপরিমেয়--- অনাবিল শান্তি।

তবে, কে আত্ম-সাগরের কত গভীরে নামতে পারবে, কার কত দম-সামর্থ, কে কতটা রত্ন তুলে আনতে পারবে সেখানে থেকে, সাগর কাকে কতটা উজাড় করে দেবে তার ধন-সম্পদের ভাণ্ডার, তা নির্ভর করছে ধ‍্যানীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, এবং ধ‍্যানী কোন চেতন স্তরে অবস্থান করছে এবং তার আন্তরিক চাহিদার উপর। নির্ভর করছে পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং পরম্পরাগত ঘটনাপ্রবাহের উপর।

মনে রাখবে, এই জীবনেই সব পাওয়া সম্ভব নয়। তুমি যে চেতন স্তরে আছো, সেই চেতন-স্তরের চেতনা, চাহিদা, সামর্থ্য, চেষ্টা, পন্থা, কৌশল অনুশীলন, শারীরিক ও মানসিক গঠন, সুস্থতা এবং প্রাপ্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি, সুযোগ-সুবিধা, বাধাবিঘ্ন প্রভৃতি সাপেক্ষে তোমার প্রাপ্তি ঘটবে।

অলীক-কল্পনা আকাশ-কুসুম-এর পিছনে ছুটে যেন হতাশায় ভুগতে না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। কথায় আছে, 'যার কান্ডজ্ঞান নেই--- সেই কিনা দিব্যজ্ঞান এর পিছনে ছুটে মরে।' ---তেমনটি যেন না হয়। পায়ে পায়ে এগিয়ে--- অনেক কষ্টে, অনেক সময় নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। একলাফে দেশ-কাল পেরিয়ে ম্যাজিকের মতো এই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।

যোগ বা ধ‍্যানের মাধ্যমে অতি কিছু পাওয়ার ঝোঁক অনেকের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। এই ঝোঁক--- অন্ধ আবেগপূর্ণ অতি ঝোঁক হলেই সর্বনাশ। অতি কিছু পাওয়ার আশা নয়, নিজেকে ধীরে ধীরে ক্রমশ যতটা সম্ভব বিকশিত করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাও। সামর্থমতো যতটা সম্ভব নিজেকে সুস্থ-শান্ত, স্বনিয়ন্ত্রণাধীন করার লক্ষ্য নিয়েই ধ্যান করো। অতি কিছু লাভ হলে ভালো, না হলেও ক্ষতি নেই। এই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে গেলে, লাভ বৈ লোকসান হবে না।

ধ‍্যানের মূল লক্ষ্য হলো--- সত‍্য। সত্য উদঘাটন--- সত্যকে জানা, সত্যে পৌঁছানো, সত‍্যে স্থিত হওয়া। সত‍্যের জন্য আকুল হয়ে ধ্যান করো। একটু একটু করে সত্য তোমার কাছে প্রকাশ লাভ করবে। এটাই হলো সবচাইতে বড় পাওয়া। আমাদের পরম বিষয় হলো 'আমি', যার মধ্যে নিহিত রয়েছে অতুল সম্পদ। চেতনার ক্রমবিকাশের হাত ধরে যা একদিন আমরা সবাই লাভ করবো।

দ্রুত বিকাশ-উন্মুখ যাঁঁরা তাঁঁদের বুকের মাঝে বেজে উঠেছে--- মহা আত্মবিকাশ আগমনীর ঢাকের কাঠি। এই জীবনেই যতটা সম্ভব দ্রুতগতিতে এগিয়ে, আরো বেশি আত্মবিকাশ ঘটিয়ে, লাভ করতে চায় আরও কিছু আত্ম-সম্পদ, লাভ করতে চায় অনাবিল শান্তি, তাদের জন্যেই মহামনন ধ‍্যান, (আত্ম-ধ‍্যান) এই মহান আত্মবিকাশ যোগ শিক্ষাক্রম।


'আমি'--- মহা চৈতন্য-সাগরের একটি বিন্দু বা একক। যাকে জানতে পারলে--- সব জানা হয়, যাকে পেলে--- বিশ্বাত্মা বা ঈশ্বরকে পাওয়া হয়, যাতে বিলীন হলে, ঈশ্বরে বিলীন হয়ে যায়--- ক্রমে ঈশ্বর হয়ে যায় মানুষ।

এই 'আমি' কিন্তু শুধু আজকের আমি নয়। এখানে সর্বোচ্চ চেতন 'আমি' সহ সমগ্র আমির কথা বলা হয়েছে। 'সব পাওয়া হবে--- সব জানা হবে' সেই সর্বোচ্চ চেতন 'আমি'-র বিকাশ ঘটলে, বা সেই আমিত্ব লাভ করলে, তার আগে নয়।

এই জীবনেই কি সর্বোচ্চ মনের বিকাশ ঘটানো সম্ভব? ---না, কখনোই--- কারো পক্ষেই সম্ভব নয় (দ্রষ্টব্যঃ 'নিজের মনকে জানো')। বর্তমান সচেতন-মন আত্ম-বিকাশ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বড়জোর নিজের, অর্থাৎ মানব-চেতন মনের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম, এই জীবনে। আর নিজের যথেষ্ট বিকাশের সাথে সাথে স্বভাবতই ---পরবর্তী উচ্চ চেতন মনের আংশিক বিকাশ ঘটতে পারে। ---এর বেশি নয়। এ-ই অনেক পাওয়া, এর বেশি আশা করা মুর্খামি।

এখন, জানতে হবে, এই 'আমি' -টা কে। এই দেহটা যে আমি নয়, আশাকরি এই বোধটা তোমাদের আছে যা হয়েছে। তাহলে মনটাই কি 'আমি'! মনের দিকে তাকালে (অন্তরে দৃষ্টিপাত করলে বা অন্তরানুভব করার জন্য তার প্রতি মনোসংযোগ করলে) বোধ হবে, --- না, মনটাও 'আমি' নয়। যার দিকে দৃষ্টিপাত করা যায়, সে তো বাইরের জিনিস, ---সে 'আমি' হয় কি করে! যেখানে থেকে মনের উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করছি, 'আমি'-টা আছে সেই খানে।

আপাতদৃষ্টিতে এরকম মনে হলেও, প্রকৃত সত্য তা' নয়। মন-ও একটা 'আমি', ---পূর্বের 'আমি'। ---অনেকাংশে বর্তমানের 'আমি'। আর, সচেতনভাবে এখন যাকে 'আমি' বলছি, ---সে হলো আগামীর 'আমি' এবং আংশিকভাবে বর্তমানের 'আমি'।

ব্যাপারটা খুবই দুর্বোধ্য ঠেকছে, তাই না! আসলে সমগ্র মন অনেকগুলি স্তরে বিভক্ত। পেঁয়াজের মতো বা পদ্মের মতো, ভিন্ন ভিন্ন রূপে--- স্তরে স্তরে সাজানো। যেমন শিশু-মন, কিশোর-মন, যুবক-মন প্রভৃতি (মন সম্পর্কে স্বতন্ত্র রচনা দেখো)। এইভাবে ক্রমশ একের পর এক স্তর বিকশিত বা প্রস্ফুটিত হতে হতে, শেষে পূর্ণ মনোবিকাশ বা আত্মবিকাশ! তারপর আর মন নেই, 'আমি' নেই। থাকে শুধু বীজ। সমস্ত পাঁঁপড়ি ঝরে গিয়ে--- মনোপদ্মের বীজ অবশিষ্ট থাকে। যা আসলে পুনরায় আত্মবিকাশ লীলার গোপন প্রস্তুতি।

এখন, ধ‍্যানের বিষয় যে--- 'আমি', সে হলো বর্তমানে আংশিক বিকশিত--- ক্রমবিকাশমান কিশোর মন বা সচেতন মন, যে পরবর্তীকালে পূর্ণ বিকাশলাভের অপেক্ষায়। আর, এখন যাকে 'মন' বলছি, সে হচ্ছে অনেকাংশে বিকশিত, অথবা কারো কারো ক্ষেত্রে প্রায় বিকশিত শিশুমন বা অবচেতন মন।

আমাদের এই 'মন' বা 'শিশুমন' এখন অনেকটাই বিকশিত। তাকে নিয়ে আমাদের চিন্তা থাকলেও, তার বিকাশ আমাদের লক্ষ্য নয়। বিকাশের লক্ষ্যে রয়েছে এখন কিশোর-মন বা সচেতন মন। যাকে বলা হচ্ছে 'আমি' ---সচেতন 'আমি'। অতি নিম্ন চেতন-স্তরের মন থেকে শিশুমন পর্যন্ত, নিম্নচেতন মনগুলি--- নিজেরা নিজেদের বিকাশ ঘটাতে অক্ষম। শিশুমনের বিকাশ ঘটে অতি ধীর গতিতে কর্ম ও ভোগের মধ্য দিয়ে, বহু দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা, বহু পীড়নের মধ্য দিয়ে তিলে তিলে।

এখানে, আমি মনকে দেখছি বা অনুভব করছি, অর্থাৎ কিশোর-মন (সচেতন মন) শিশুমনকে (অবচেতন মনকে) দেখছে বা অনুভব করছে, অথবা তার ক্রিয়া-কলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। এখানে কিন্তু প্রত্যেকের নিজস্ব সত্তা বা অস্তিত্ব রয়েছে। যেন, পদ্মের এক সারি বা এক স্তরের পাঁপড়ি তার নিচের সারির পাঁঁপড়িকে দেখছে ('মন-আমি যোগ' অনুশীলন করলে বুঝতে পারবে)।

বর্তমানে আমাদের মনোরাজ্যে দুটি মন সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। একটি হলো--- শিশুমন বা আদিম বা প্রাক মানব-চেতন মন, আর অপরটি হলো--- কিশোর-মন বা মানব-চেতন মন। প্রচলিত ভাষায়, প্রথমটিকে বলা হয়--- অবচেতন মন। আর দ্বিতীয়টিকে বলা হয় সচেতন মন।

কোন শিক্ষক বা গুরুর দ্বারা অথবা অন্য কোন মাধ্যমের দ্বারা, দুটি মনের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি না হওয়া পর্যন্ত, সাধারণত সবার বোধহয়--- যেন আমাদের একটাই মন। একটা মনই কখনো 'হ‍্যাঁ', আবার কখনো 'না' বলছে। কখনো সে আবেগ ধর্মী, আবার কখনো সে বিবেক ধর্মী। এইরকম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন 'মুডে' কাজ করছে। কখনো আবার ক্ষণিকের মধ্যেই বিপরীত ধর্মী আচরণ করছে। নিজেই অন‍্যায় করছে, আবার নিজেই শাসন করছে। এইরকম অভিজ্ঞতা সবারই কমবেশি আছে। দুটি মনের আলাদা অস্তিত্ব--- সম‍্যক উপলব্ধি করার পর, তখন ব‍্যক্তির দৃষ্টি বদলে যায়। তখন সে যেন এক অন্য মানুষ! নতুন চেতনার আলোকে দেখতে শুরু করে সে তখন।

তখন, দুটি মন সরাসরি পরস্পরকে দেখতে না পেলেও, একে অপরের অস্তিত্ব সম্পর্কে কমবেশি ওয়াকিবহাল। শিশুমনের চেতনার ন‍্যুনতার কারণে, সে কিশোর-মনকে ভালোভাবে জানতে-- বুঝতে অক্ষম হলেও, এবং মাঝে মাঝেই কিশোর-মনের কথা বিস্মৃত হলেও, সে এইটুকু জানে, যে তার উপরে একজন বড় কর্তা আছে। ---যাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মান্য করে চলতে হয়।

এদিকে, এখনও পর্যন্ত কিশোর-মনের (সচেতন মনের) যথেষ্ট বিকাশ না ঘটার ফলে, সে নিজের পূর্ণ ভূমিকা পালনে সব সময় সমর্থ না হলেও, শিশুমনের (অবচেতন মনের) কাজকর্মের উপর নজর রাখা, তাকে নিয়ন্ত্রণ করা, এবং সেইসঙ্গে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করার যথাসাধ্য চেষ্টা সে করে থাকে--- তার সামর্থ মতো। এককথায়, মনের রঙ্গমঞ্চে শিশুমনের প্রায় একক নাট‍্যাভিনয়ে--- সে (সচেতন মন) কখনো নেপথ্যে থেকে প্রম্পটারের ভূমিকা, আবার কখনো মঞ্চে আবির্ভূত হয়ে বিবেকের ভূমিকা পালন করে থাকে। বেশিরভাগ সময় সে তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে--- যথেষ্ট বিকাশের অভাবে।

কোনো 'মন' তার ক্রমোচ্চ পরবর্তী বিকাশযোগ্য অপেক্ষাকৃত উচ্চ চেতন মনের ভিতরকার ক্রিয়া-কলাপ অনুভব করতে অক্ষম। তাকে সম্যক উপলব্ধি করতে অক্ষম। শুধু তদ-উচ্চ মনের বিকাশের পরিমাণ অনুসারে, তার শক্তি-- প্রভাব-- নির্দেশ মান্য করতে এবং তার প্রচ্ছন্ন অস্তিত্ব অনুভব করতে সক্ষম। কোনো মনের যথেষ্ট বিকাশ বা পূর্ণবিকাশ--- তার উর্দ্ধতন তদপেক্ষা উচ্চ চেতন মনের বিকাশের উপরেও নির্ভরশীল। সেই উচ্চ চেতনার প্রভাবে সে আরও সমৃদ্ধ হয়ে পূর্ণতা লাভ সক্ষম হয়।

প্রকৃত (যুক্তিসঙ্গত) জ্ঞানযোগের পাঠ সহ 'সুষুপ্তি যোগ' এবং 'মন-আমি যোগ' অনুশীলনের মধ্য দিয়েই দুটি মনের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব অনুভূত হয়ে থাকে। তবে শুধু উচ্চ চেতনাসম্পন্ন আত্মসচেতন ব্যক্তিগণই নিজেদের মনোরাজ্যে দুটি মনের অস্তিত্ব এবং তাদের কর্মকান্ড অনুভব করতে সক্ষম। অপেক্ষাকৃত নিম্ন-চেতনার মানুষের ক্ষেত্রে, মনোরাজ‍্যের এই সমস্ত লীলা খেলা তাদের অজ্ঞাতেই ঘটে থাকে। তাদেরকে চিনিয়ে দিলেও তারা চিনতে পারে না। অথবা তখনকার মতো চিনতে পারলেও, পরে তা' ভুলে যায়। মনে রেখো, এই উচ্চচেতনা ও নিম্নচেতনা--- ব্যক্তির সচেতন মনের বিকাশের পরিমাণের উপর নির্ভরশীল।

'আমি' (সচেতন মন) আমাদের ধ‍্যানের বিষয় হলেও, প্রথমে 'মন'-কে (অবচেতন মনকে) জানতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে জানতে হবে। তাকে সুস্থ ও দূষণ মুক্ত করতে হবে। অসুস্থ— অস্থির— বিক্ষিপ্ত মনই ধ‍্যানের প্রধান অন্তরায়। তাই, তাকে এড়িয়ে নয়, তাকে অবদমন করে নয়, তাকে জয় করে— তার সাহায্য নিয়ে, তবেই স্ব-বোধে— 'আমি'-র কেন্দ্রে পৌঁছানো সম্ভব হবে। 'আমি' -র ধ‍্যানে, অন্যান্য বিষয়বস্তুর ধ‍্যানের মতো, সরাসরি 'আমি'-র কেন্দ্রে একাগ্র হওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে, অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে। পরে ধ‍্যান প্রক্রিয়ায় তা আলোচনা করছি।

মনকে না জেনে, তাকে নিয়ন্ত্রণ না করে, বরং মনের পাগলামী কে প্রশ্রয় দিয়ে, অবাস্তব কাল্পনিক বিষয়ের ধ্যান করলে, মন সে চাহিদা মেটাতে— কল্পনার জাল বুনে, রঙিন স্বপ্নের অবতারণা করবে। 'ইলিউশন' 'হ‍্যালুউসিনেশন' সৃষ্টি করবে। আর, তাতেই যদি তুমি ভাবো— সব পেয়ে গেছি! —অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে গেছি! তাহলে তা' হবে নির্বোধের স্বর্গবাস করার মতো ঘটনা।

'মহামনন ধ‍্যান' বা আত্ম-ধ‍্যানের সঙ্গে সাধারণ ধ‍্যান এবং সম্মোহন নিদ্রার মধ্যে পার্থক্য হলো, 'মহামনন ধ‍্যান' বা 'আত্ম-ধ‍্যানে', আবেগপ্রবণ ও কল্পনাপ্রবণ শিশুমন (অবচেতন মন) সচেতন মনের সজাগ দৃষ্টির সামনে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে থাকার ফলে, সে বিবশ হয়ে— অভিভূত হয়ে বিশ্রাম অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে থাকে। আর কিশোর-মন বা সচেতন-মন থাকে জাগ্রত অবস্থায়। অবশেষে নিজেকে নিজের মধ্যে পেয়ে, এক অব‍্যক্ত আনন্দে কাটিয়ে দেয় সে বেশ কিছু সময়।

সাধারণ ধ‍্যান এবং সম্মোহন নিদ্রায় তার বিপরীত ঘটে। সেক্ষেত্রে, কিশোর মন বা সচেতন-মন বিশ্রামাবস্থা প্রাপ্ত হয়, আর কল্পনাপ্রবণ শিশুমন (অবচেতন মন) কিছু অংশে অভিভূত হলেও, অনেকাংশে সজাগ থাকে। এক্ষেত্রে তারই প্রধান ভূমিকা থাকে।

'মহামনন' আত্ম-ধ্যান এবং সম্মোহন-নিদ্রা এই দুটি ক্ষেত্রে আমাদের দুটি মনের পৃথক পৃথক ভূমিকা রয়েছে। দুটি মনকেই আমাদের প্রয়োজন এবং এদের দু'জনকেই জানতে হবে। কিশোর-মন বা সচেতন মনকে সম্মোহন পদ্ধতিতে সহজেই ঘুম পাড়ানো যায়, কারণ সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই মনটি স্বল্পাংশে জাগ্রত এবং তেমন সক্রিয় নয়। তার তন্দ্রাচ্ছন্নতা এখনো কাটেনি। কিছু মানুষকে দেখা যায়, জাগ্রত অবস্থায় কথা বলতে বলতে অথবা কাজ করতে করতে, এদের ঘুমের ঢুলুনি এসে যায়। এই সচেতন মনটির অবস্থাও ঠিক তেমনই। আপাতদৃষ্টিতে জাগ্রত ও কর্ম ব্যস্ত মানুষের সচেতন-মন সারা দিনে-রাতে কতবার যে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে, আবার চট্ করে জেগে ওঠে তার কোন হিসেব নেই। সচেতন মনের অনুপস্থিতির সুযোগে, শিশুমন বা অবচেতন মনের লীলাখেলা বা কল্পনা চলতে থাকে অবাধে।

কোনো বিষয়বস্তুতে কিছুক্ষণ স্থির-একাগ্র হয়ে থাকলেও, কিশোর-মন বা সচেতন-মন অবশতা প্রাপ্ত হয়ে তন্দ্রাভিভূত হয়ে পড়ে। ভিতরে উত্তেজনা না থাকলে এবং সামনে উত্তেজক কিছু না থাকলে, শান্ত পরিবেশে তন্দ্রাচ্ছন্নতা আসে আরও তাড়াতাড়ি। এ অবস্থায় নিদ্রার সংস্কার (প্রি-প্রোগ্রামিং সাজেশন) থাকলে তো আর কথাই নেই। শীঘ্রই ঘুমের কোলে নিজেকে সঁপে দেব সে। আত্ম-ধ‍্যানের সময়ও এরকম ঘটতে পারে। তবে সতর্ক—সচেতন ও জাগরণের জোরালো সংস্কার (প্রি-প্রোগ্রামিং) থাকলে, সে আর ঘুমিয়ে পড়বে না। আত্ম-ধ‍্যানের সময় শিশু-মন বা অবচেতন-মন— কিশোর মনের (সচেতন মনের) সতর্ক দৃষ্টির সামনে ক্রমশ উত্তেজনা হারিয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

বিভিন্ন প্রয়োজনে— অপ্রয়োজনে আমরা প্রায় অহরহ ধ‍্যান করছি। কখনো সচেতনভাবে— জ্ঞাতে, কখনো অজ্ঞাতে। কখনো ক্ষণকালের জন্য কখনো অল্প সময়ের জন্য। অধিকাংশ সময়েই এই সমস্ত ধ্যান গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী না হলেও, ধ‍্যান আমাদের স্বভাব গুণ। কিন্তু অনেক সময়েই আমরা নিজেদের অনেক গুণ—ধর্ম— ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন নই, তাই প্রয়োজন হয় এ বিষয়ে দক্ষ— অভিজ্ঞ একজন গুরুকে, যিনি পথ দেখিয়ে দেবেন প্রক্রিয়া শিখিয়ে দেবেন। এছাড়া সাধারণভাবে যে কাজ করতে বহু সময়— বহু শ্রম ব্যয় হয়, সেই কাজই অল্প সময়ের মধ্যে অনায়াসে সম্পন্ন হতে পারে একজন উচ্চশ্রেণীর গুরু বা পথপ্রদর্শকের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ও সহজ পন্থা বা পদ্ধতি অবলম্বন করে।

ধ্যান আমাদের মনের স্বভাব গুণ হলেও, চঞ্চলতাও তার স্বভাব ধর্ম। বিশেষত শিশুমন বা অবচেতন মনের স্বভাবই হলো চঞ্চলতা। বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে ছোটাছুটি করাই তার স্বভাব। আবার, তার সঙ্গে যদি থাকে অসুস্থতা, তাহলে তো আর কথাই নেই। শিশুমন বা অবচেতন মনের কাছে কোন বিষয়বস্তু অত্যন্ত আকর্ষণীয় না হলে, সে সেই বিষয়বস্তু থেকে দ্রুত সরে যাবে অন্য বিষয়বস্তুতে। আবার, সে যদি কখনো কোনো বিষয়বস্তুতে খুব আকর্ষণ বোধ করে, সেক্ষেত্রে সে মোহিত হয়ে— মোহ-আবেশে আবিষ্ট হয়ে, সেই বিষয় বস্তুর প্রতি স্থির একাগ্র হয়ে— ধ‍্যানস্থ হয়ে পড়ে তখন।

এই বৈপরীত্য সম্পন্ন মনটাকে ভালোভাবে জেনে, তাকে সুকৌশলে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের আত্মবিকাশের পথে। আমাদের সচেতন-মনের বিষয়বস্তু যে সব সময় এই শিশুমনের (অবচেতন মনের) কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে, এমন নয়। তাই আমাদেরকে কিছু বিশেষ উপায়— বিশেষ কিছু যোগ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাকে বশে আনতে হবে, সাধনায় সিদ্ধি লাভ করতে।

বিশেষ করে, অদেখা— অজানা অন্তর-বিষয়ের ধ‍্যানের মতো এক কঠিন বিষয়ের ক্ষেত্রে, প্রথমদিকে আমরা অনেকেই অসহায় বোধ করে থাকি। যার জন্য প্রয়োজন হয় এমন একজন সদগুরু-কে যিনি প্রকৃতই জানেন, যিনি হাতে-কলমে শিখিয়ে দেবেন, সংশয়ের দুয়ার পার হতে— যিনি ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেবেন— সাহস জোগাবেন।

তত্ত্ব বিষয়ক অধ্যায়ে আমরা দেখেছি, চেতনার ক্রমবিকাশের মধ্যদিয়ে ধাপে ধাপে পূর্ণ চেতনায় পৌঁছাতে হবে আমাদের। আমরা সবাই এক পথের পথিক, বিকাশমান চেতনার পথে। অস্ফুট চেতনা থেকে পূর্ণ চেতনার লক্ষ্যে, ক্রমবিকাশের পথ ধরে আমরা এগিয়ে চলেছি।

আমরা এখন যেখানে অবস্থান করছি, এ হলো— মানব-চেতন-স্তর। এখান থেকে সামনে ঊর্ধ্বে— বহু দূর পর্যন্ত দেখতে সক্ষম হলে, বুঝতে পারবে, আমাদেরকে এই মানব-চেতন-স্তর পেরোতে হবে প্রথমে। তারপর রয়েছে—মহামানব চেতন-স্তর। তারপরে দেব-চেতন-স্তর। তারপরে ঈশ্বর চেতন-স্তরে পৌঁছে, ঘটবে ঈশ্বরত্ব লাভ। পূর্ণ মানবত্ব লাভ না করে, দেবত্ব বা ঈশ্বরত্ব লাভ সম্ভব নয়। এড়িয়ে বা ডিঙিয়ে যাওয়া যাবে না। পায়ে পায়ে সমস্ত পথ অতিক্রম করতে হবে। তবে যদি দ্রুত গতিতে পার হতে চাও, তাহলে 'মহামনন' ধ‍্যান এবং মহা আত্মবিকাশ যোগ-এর সাহায্য নাও।

ধ‍্যান কিভাবে করবো। সবচাইতে সহজ কাজটাই সবচাইতে বেশি কঠিন। ধ‍্যানের ক্ষেত্রে এই কথাটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য। তা' সেই কঠিন কাজটিতে সাফল্য লাভ করতে প্রস্তুতি দরকার। প্রথমে নিজের মনকে চিনতে— জানতে হবে। আমরা এখন যে চেতন স্তরে রয়েছি, সেখানে দুটি মন কাজ করছে। একটি হলো শিশুমন বা আদিম মানবচেতন মন বা অবচেতন মন। অপ‍রটি হলো— কিশোর-চেতন মন বা মানবচেতন মন বা সচেতন মন। অস্থির— অন্ধ-আবেগ পূর্ণ এই শিশু মনটাকে নিয়েই যত সমস্যা। এই শিশুমনটাকে 'প্রোগ্রামিং' -এর মাধ্যমে, সচেতন মনের নিয়ন্ত্রণাধীন করতে হবে। মনের মধ্যে জমে থাকা রাশি রাশি অবদমিত দুঃখ-কষ্ট— অপমান— লজ্জা— গ্লানি— কালিমা-কলুষ প্রভৃতি থেকে মুক্ত করে, তাকে নির্মল করে তুলতে, এবার এক পা— এক পা ক'রে এগিয়ে যেতে হবে গভীর ধ‍্যানের লক্ষ্যে।

প্রথম পদক্ষেপ—
১৫ থেকে ৩০ দিন 'সুষুপ্তি যোগ' বা 'রিলাক্সেশন' অভ্যাস করতে হবে। ধ‍্যান-যোগ-এ সফল হতে হলে যথেষ্ট রিল্যাক্সেবিলিটি বা শিথিল হওয়ার ক্ষমতা থাকা দরকার। ভালো রিল‍্যাক্সড্ হতে পারলে তবেই প্রত্যাশামতো উন্নতি হবে এবং সাফল্য পাওয়া যাবে। ক্লাসে 'সুষুপ্তি যোগ' শেখানো হবে এছাড়া ওয়েবসাইটে সুষুপ্তি যোগ -এর উপর রচনা পড়ুন। এর পাশাপাশি প্রাণযোগ অভ‍্যাস করতে হবে প্রতিদিন। প্রাণযোগ ক্লাসে শেখানো হবে। এছাড়া, ওয়েবসাইটে প্রাণযোগের উপর রচনা পড়ুন।

দ্বিতীয় পদক্ষেপ—
১৫ দিন 'মন-আমি যোগ' অভ্যাস করতে হবে। ক্লাসে 'মন-আমি যোগ' শেখানো হবে। এর পাশাপাশি প্রাণযোগ অভ‍্যাস করুন।

**এখানে একটা কথা বলা আবশ্যক, প্রচলিত যোগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমাদের যোগ প্রক্রিয়াগুলির কিছু পার্থক্য রয়েছে। আমাদের এই যোগ প্রক্রিয়াগুলি অধ‍্যাত্ম-বিজ্ঞান ও অধ‍্যাত্ম-মনোবিজ্ঞান সহ আধুনিক মনোবিজ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত, সময়োপযোগী এক বিশেষ যোগ প্রক্রিয়া। যা সর্বসাধারণের উপযোগী অত্যন্ত ফলপ্রদ যোগ প্রক্রিয়া।

তৃতীয় পদক্ষেপ—
সুষুপ্তি যোগ, মন-আমি যোগ এবং প্রাণযোগ অভ্যাস করার পর, এবার ধানের জন্য বসতে হবে। এরমধ্যেও কিছু প্রক্রিয়া আছে যা ধ্যান নয়, ধ্যানের এর প্রস্তুতি বিশেষ। প্রথমে হাত-পা, চোখ-মুখ, ঘাড়-গলা ধুয়ে নাও, অথবা স্নান করেও নিতে পারো। নির্দিষ্ট স্থানে— যেখানে কোনো বাঁধাবিঘ্ন প্রতিকূলতা নেই, কোন দূষণ নেই, এমন একটি সুন্দর স্থানে— ধ‍্যানের জন্য নির্দিষ্ট আরামদায়ক আসনে বসতে হবে তোমাকে। এই সময় কেউ যাতে তোমাকে বিরক্ত না করে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে মশারী নেওয়া যেতে পারে। এসময় কোথাও যাওয়া বা কোন কাজের তাড়া থাকলে চলবে না।

প্রথম পর্ব---
৫ থেকে ১০ মিনিট প্রাণযোগ।

দ্বিতীয় পর্ব---
সঙ্গীত যোগ (ক্লাসে শেখানো হবে)। সঙ্গীত শেষে, স্ব-বোধ -এ স্থিত হয়ে বিশ্রামে থাকো ২--৩ মিনিট।

তৃতীয় পর্ব—
ক্রন্দন যোগ। চোখ বুজে বা তাকিয়ে, শিথিল হয়ে বসে প্রায় ১০ মিনিট কাঁদতে থাকো। পাওয়ার জন্য কাঁদো। না পাওয়ার বেদনায় কাঁদো। দুঃখ-কষ্ট লজ্জা-অপমান; যন্ত্রণা —যা তুমি না চেয়েও পেয়েছো, তার জন্য কাঁদো। অজ্ঞানতা-- চেতনাহীনতা--- অন্ধত্বের কারণে এতদিন যাবৎ অন্ধকার পাঁঁকে ঘুরপাক খেয়ে মরছো তুমি, তার জন্য কাঁদো। আলোর জন্য— চেতনার জন্য— মুক্তির জন্য কাঁদো। আকুল হয়ে কাঁদো। তোমার ভিতরে যে এত কান্না জমে আছে তুমি নিজেই জানো না। কেঁদে কেঁদে অন্তরের সমস্ত কালীমা— কলুষ— গ্লানি ধুয়ে মুছে দাও।


মনে রেখো, ধ্যানের প্রস্তুতি হিসেবে যা কিছু করছো— তা' প্রায় সবই, মনের মধ্যে নানা বিষয় অবদমন করা থেকে সৃষ্ট— পাষাণ দেওয়াল এবং আবর্জনাকে বহির্মুক্ত করার জন্য, মনকে নির্মল পবিত্র এবং খালি করার জন্য করছো। ক্রন্দন শেষে চোখ না খুলে শিথিল হয়ে, স্ব-বোধ-এ স্থিত হয়ে ২ মিনিট বিশ্রাম করো। এখন অন্তর চেতনা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে তোমার।

চতুর্থ পর্ব—

পূর্বের শিথিল অবস্থাতেই— আরামদায়কভাবে, চোখ বুজে— ভিতর ও বাহিরে সম্পূর্ণ মৌন হয়ে, স্ববোধ-এর চেতন -প্রদীপ জ্বেলে বসে থাকো। প্রথম দিকে 'মন-আমি-যোগ' -এর মতো কিছুক্ষণ মনের খেলা চলতে পারে, আবার নাও পারে। কারণ মন এতক্ষণে অনেক নির্মল— প্রশান্ত এবং গ্লানি মুক্ত হয়ে উঠেছে। শিক্ষিত হয়ে উঠেছে। মন যা বলে, যা করে করুক, তুমি একটা কথাও (ভিতর ও বাহিরে) বলবে না।কোন কথা নয়— ভাষা নয়। শুধু সজাগ— সচেতন— আত্মসচেতন হয়ে, আত্মবোধে স্থিত হয়ে, নিরাসক্ত— নির্বিকার হয়ে, এক অব‍্যক্ত আনন্দ— ভালোবাসা— প্রেমে আপ্লুত হয়ে বসে থাকো।

কোন বিষয়েই আগ্রহী হবে না, শব্দ-- আলো— শূন্য— মূর্তি— যা-ই আসুক তোমার মনের সামনে, একেবারে উৎসুক— কৌতুহলী হবেনা। একাত্ম হয়ে পড়বে না কোন বিষয়ের সাথে। ক্রমশ তোমার সমস্ত সত্তা স্বতস্ফূর্ত প্রেম— ভালোবাসায় ভরে উঠবে। তুমি এক অনির্বচনীয় আনন্দ ভরে উঠবে। স্ব-কেন্দ্রে পৌছাবার প্রতিটি ধাপে— নানা অনুভূতি আসতে পারে, তুমি কোন কিছুর সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করবে না।

এক নির্মল মানস-সাগরে তুমি বিরাজ করছো। মনের খেলা অচিরেই বন্ধ হয়ে গেছে, অথবা শীঘ্রই বন্ধ হয়ে যাবে। তবে সতর্ক ও সজাগ থাকো, মন যেন কোনো ছুঁতোয়— কোনো ছলনায় আবার সক্রিয় হয়ে উঠতে না পারে।

....এখন, 'আমি' আছে, আমিত্ব আছে, কিন্তু এই 'আমি' সেই 'আমি' নয়। —যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে এক বা একাধিক নাম, ঠিকানা, নানা অলঙ্কার, নানা বিশেষণ....। মনের (শিশু মনের) সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওসব ঝরাপাতার মতো ঝরে পড়ে গেছে। না, কোন বিচার নয়, কোন সিদ্ধান্ত নয়। স্ববোধে অবস্থান করো....।

এখন স্ববোধ আছে। কিন্তু স্বগৃহে— স্বস্থানে— 'আমি'-র কেন্দ্রে পৌঁছাওনি এখনো। তোমার লক্ষ্য— তোমার গন্তব্য ওটাই। তা'বলে চেতন কেন্দ্রমুখী হয়ো না। শিথিল—রিল‍্যাক্সড্ থাকো। কোন চাপ সৃষ্টি করো না। যেমন আছো— তেমনি থাকো।

তোমার চেতন-সত্তা একটা বেলুনের মতো ফুলে ফেঁপে প্রসারিত হয়ে— বহির্মুখী হয়ে আছে। বহির্জগতের রঙ-রূপ-রস প্রভৃতি উপভোগ করার জন্য— সে নিজে কেন্দ্র থেকে বিস্তৃত হয়ে চতুর্দিকে উন্মুখ হয়ে ছড়িয়ে আছে। আছে চাপের মধ্যে। এবার সেই ফোলানো বেলুনটাকে যদি তার কেন্দ্রাভিমুখী চাপ দাও, তাহলে চাপ আরও বেড়ে যাবে। লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। এভাবে কোনোক্রমে অন্তরে গেলেও, সেখানে কিছু বা কাউকে পাবে না। সে বিক্ষিপ্ত থাকায়— চাপগ্রস্ত এবং স্ফীত থাকায়, ওভাবে ঘরে ফেরা সম্ভব হবে না। অনেক সাধকের ক্ষেত্রেই এইরূপ ভ্রান্তি ঘটে। তাই যেমন আছো —যেখানে আছো, চুপ করে নিঃশব্দে সজাগ হয়ে থাকো।

ক্রমশ 'আমি'-র পরিবর্তন ঘটছে। দেখো, আস্তে আস্তে আমিত্বের বেলুনটা একটু একটু করে চুপসে যাচ্ছে। ---শিথিল হয়ে যাচ্ছে। ক্রমশ ঘরমুখী হচ্ছে— স্ব-কেন্দ্রমুখী হচ্ছে সে এবার।

এই ঘরে ফেরার বিভিন্ন স্তরে বা বিভিন্ন স্টেজে, বিভিন্ন রঙ-রূপ-রসের দৃশ্যাবলীর সাক্ষাৎ হতে পারে। তাদের কোনটির প্রতি যদি আগ্রহী হয়েছো, তো ঘরে ফেরার আশা ওখানেই শেষ। তাই প্রলুব্ধ না হয়ে, অধৈর্য্য না হয়ে, ছলনায় না ভুলে, শুধু দেখতে দেখতে ঘরে ফিরে চলো। চলো নিজ নিকেতনে। রেলগাড়ির জানালা পথে দৃশ্যাবলী দেখার মত— সবই দেখছো, ভালোও লাগছে, কিন্তু মুল টান আছে— ঘর পানে। অন্য কোন কিছুতেই তেমন টান অনুভব করছো না।

চলো— এভাবেই একটু একটু করে ডুবতে থাকো। ..... আস্তে আস্তে আমি-র বেলুনটা একটু একটু করে চুপসে যাচ্ছে। তুমিও ডুবে যাচ্ছো আমি-র অভ্যন্তরে। বহুদিন হলো নিজের ঘর বা কেন্দ্র ছেড়ে অনেক দূরে চলে এসেছো। তাই ফিরতে একটু সময় তো লাগবেই। ধৈর্য হারালে ঘরে ফেরা হবে না। একটু ধৈর্য ধরো।....

এখানেই অনেক সাধক অসফল হয়ে ফিরে আসে। অথবা কোনো কিছুতে প্রলুব্ধ হয়ে--- অন্য স্টেশনে নেমে গিয়ে, অন্য কিছু দেখে বা নিয়ে ফিরে আসে। অনেকে এই অজানা পথে— অজানা উদ্দেশ্যে এগিয়ে যেতে গিয়ে, ভীত হয়ে পড়ে। ভয় নেই। তোমার ভোগ যেহেতু শেষ হয়নি, যেহেতু তোমাকে এখনো অনেক পথ পার হতে হবে, —তাই চেতন কেন্দ্রে লীন হয়ে যাবার সম্ভাবনা নেই।

তোমার মধ্যে এই 'প্রি-প্রোগ্রাম' করে রাখা আছে, "তুমি ঘরে ফিরে যাচ্ছো, সেখান থেকে আত্ম-সম্পদ নিয়ে ফিরে এসে— আরো ভালো ভাবে জীবনকে উপভোগ করবে। আরও বেশি বিকাশ লাভ করবে।" "আরো দ্রুতগতিতে চেতনা বিকাশের পথে এগিয়ে যাবার জন্য, রসদ সংগ্রহ করতে যাচ্ছ সেখানে। চেতন মনের বিকাশ ত্বরান্বিত করতে, তুমি ঘরে ফিরে যাচ্ছো।"

মনেরেখো, প্রথমে তোমাকে পূর্ণ বিকশিত মানুষ হতে হবে। তারপর তোমাকে দেবতা হতে হবে। তারপরে সর্বোচ্চ চেতনা লাভ হবে। এখন, তুমি অন্তরের জ্ঞান-গুণ-চেতনা, ঐশ্বর্য-ক্ষমতা-শক্তিতে শক্তিমান হয়ে ফিরে আসবে। যেমন ফিরে এসেছে সুষুপ্তি যোগ-এর ক্ষেত্রে। মাভৈঃ এগিয়ে যাও।

যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি কিছু দেখতে পাচ্ছো— মনের কার্যকলাপ, কিংবা শূন্য বা জ্যোতি অথবা মূর্তি, অথবা 'আমি'-কে দেখতে পাচ্ছো, ততক্ষণ বুঝবে তোমার ঘরে ফেরা হয়নি। লক্ষ্যে পৌঁছাওনি।

'আমি' যতক্ষণ পর্যন্ত ফুলে-ফেঁপে থাকবে, ততক্ষণ 'আমি' এক অংশ থেকে আরেক অংশকে দেখলেও দেখতে পারে। 'আমি'-র বেলুন যখন চুপসে--- শিথিল হয়ে--- সংকুচিত হয়ে, স্ব-কেন্দ্রে ফিরে আসবে, তখনই 'আমি' প্রকৃত 'আমিত্বে' স্থিত হবে। তখন আর নিজেকে নিজে দেখতে পাবে না। শুধু অনুভব— আত্মানন্দ— মহা আনন্দ অনুভব হবে তখন।

* প্রথম অবস্থায় 'মহামনন' ধ‍্যান অভ‍্যাস কালে, বেশি গভীরে না গিয়ে, ফিরে এসো ধীরে ধীরে একই পথ ধরে। প্রত‍্যেক সিটিং-এ একটু একটু করে গভীরতা বৃদ্ধি পাক। যাওয়া— আসা— সহজ-সাবলীল— আয়ত্বাধীন হয়ে উঠুক। এইভাবে অভ‍্যাস করতে করতে কিছু দিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবে লক্ষ্যে।

** প্রথমদিকে সাক্ষাৎ গুরুর সাহায্য প্রয়োজন।

'মহামনন ধ‍্যান' ওয়েবসাইট দেখুন-- www.mahamanan.wix.com/meditation



 
 
 প্রসঙ্গ: ধ্যান  


ধানের প্রসঙ্গ এলেই, সজাগ-সচেতন নতুন শিক্ষার্থীদের মনে যে প্রশ্ন দুটি প্রথমেই আসে, তা হলো~ ধ্যান আসলে কি এবং ধ্যান কেন করবো।

কোন কিছুতে, অথবা কোনোকিছু চিন্তন, কল্পনা, স্মরণ অথবা মনশ্চক্ষে অবলোকীত বিষয়ে একনিবিষ্ট হয়ে পুনঃপুনঃ সেই বিষয়-বস্তুর চিন্তার দ্বারা অবিরাম বা সবিরামভাবে মনোযুক্ত থাকাকেই সাধারণভাবে বলা হয়— ধ‍্যান বা ধ‍্যান করা।

'যোগ' প্রসঙ্গে যেমন বলেছি, ধ‍্যানের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা। ধ‍্যানের মূল উদ্দেশ্য হলো, ধ‍্যেয় বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিলিত হয়ে— তার অন্তর্নিহিত সত্যকে জানা। এই সম‍্য‍্ক জ্ঞান লাভের ফলে, ধ‍্যানীর চিন্তাভাবনা— ধারণায় অনেক পরিবর্তন ঘটে থাকে। এবং অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্ত হয়ে সে তখন জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। এছাড়াও সঠিকভাবে সাফল্যমন্ডিত ধ‍্যানের মধ্য দিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই ধ‍্যেয় বিষয়বস্তুর উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করাও সম্ভব হয় কখনো কখনো। ধ‍্যানী ও ধ‍্যেয় বিষয়বস্তুর মূল উপাদান আসলে একই। তাই, সুগভীর ধ‍্যানের মধ্য দিয়ে যদি কখনো ধ‍্যানী এবং ধ‍্যেয় বিষয়বস্তু মিলিত হয়ে, অবশেষে একাত্মতা লাভ করে একাকার হয়ে যায়, তখনই ঘটে প্রকৃত সমাধি অবস্থা। তবে ভাবসমাধি আর প্রকৃত সমাধি এক জিনিস নয়। অন্ধবিশ্বাস ভিত্তিক অলীক বিষয়বস্তুর ধ‍্যানের ক্ষেত্রে এইরূপ ঘটে না। এই বিষয়ে 'মহামনন' আত্মবিকাশ যোগ শিক্ষার ক্লাসে বিশদভাবে আলোচনা হবে।

ধ‍্যানের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি বিভিন্ন প্রকারের। যেমন সজাগ-সচেতন ধ‍্যান, ভাবাবেশ মুলক ধ্যান, শূণ্য ধ‍্যান, অলীক ধ্যান, আত্ম-ধ‍্যান। 

এখানে উল্লেখিত 'মহামনন' ধ‍্যান পদ্ধতিটি হল 'আত্ম-ধ‍্যান' বা অধ‍্যাত্ম ধ‍্যানের একটি বিশেষ পদ্ধতি। 'আত্ম-ধ‍্যান' হলো— যুক্তিবাদী বিজ্ঞান-মনষ্ক, প্রকৃত অধ‍্যাত্ম সচেতন, মুক্ত মনের, আত্মবিকাশ অর্থাৎ মনোবিকাশকামী সজাগ-সচেতন মানুষের উপযোগী আত্মবিকাশমূলক ধ‍্যান। 

'মহামনন' আত্ম-ধ‍্যান-যোগের ক্ষেত্রে ধ‍্যানের বিষয় হলো নিজের মন। যাকে জানলে, সব জানা হয়, যার বিকাশ ঘটানোই আমাদের প্রথম ও প্রধান লক্ষ। আবার, সেই বিষয়ানুরাগী ধ‍্যানী যে, সে-ও তো সেই মন। একে বলা হয়--- আত্ম-ধ‍্যান বা অধ‍্যাত্ম ধ‍্যান। নিজেকে জানা— উপলব্ধি করা, নিজের (মনের) এবং অন্তর্নিহিত শক্তি--ক্ষমতার বিকাশ ঘটানোই এই ধ‍্যানের লক্ষ্য।

এই ধ‍্যানের জন্য সজাগ— সচেতনতাসহ তীব্র চাহিদা— অনুরাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি, ইতিপূর্বে প্রকাশিত তথ্য ও তত্ত্ব (মহাবাদ) সম্পর্কে অধ‍্যয়ন করতে হবে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে। এই জ্ঞান লাভও 'মহামনন' শিক্ষা বা সাধনার একটা অঙ্গ। এই ধ‍্যানে সাফল্য লাভ করতে, মনকে অন্তর্মুখী স্থির একাগ্র করে তোলার জন্য বিশেষ কয়েকটি যোগ-পদ্ধতি পূর্বেই অনুশীলন করতে হয়। তাতেই অর্ধেক কাজ হয়ে যায় এবং অর্ধেক পথ অতিক্রম করা হয়ে যায়। গভীর ধ‍্যানের মধ্যে ডুবে গিয়ে অন্তর-মন সাগরের রত্নখনি  থেকে দিব‍্য-রত্ন তুলে আনা সহজসাধ‍্য হয় এর দ্বারা।

নতুন শিক্ষার্থীদের বোঝার সুবিধার জন্য আর একবার বলি, সাধারণভাবে 'ধ‍্যান' হলো— কোনো কিছুতে মনোযুক্ত হওয়া বা মনোযোগ দেওয়া। যাকে বলা হয় ধ‍্যান দেওয়া। অথবা গভীর ভাবে কোনও কিছুর চিন্তা করা। 

কিন্তু ধ্যান বা ধ্যান-যোগ কথাটি যখন বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হয়, তখন 'ধ্যান' বা 'ধ্যান করা' কথাটি বিশেষ অর্থ বহন করে থাকে। তখন, 'ধ্যান' অর্থে অত্যন্ত অনুরাগের সঙ্গে তন্ময় হয়ে, অথবা ভাবাবেশে আচ্ছন্ন হয়ে— স্থির একনিবিষ্ট হয়ে, কোনো বিষয়-বস্তু বা ভাবনা বা স্মৃতি বা কল্পনা প্রভৃতি কোন একটি বিষয়ে চিন্তামগ্ন হওয়া অথবা মগ্নচিত্ত হওয়া অথবা মনোনিবেশ করা বোঝায়। 

তবে ধানের প্রকারভেদ আছে। তারমধ্যে, একপ্রকার ধ‍্যান আছে, যাতে কোন কিছুতে মনোসংযোগ করা অথবা একাগ্র হয়ে কোনোকিছু চিন্তা করার কোনো স্থান নেই। তাকে চিন্তাশূণ্য বা শূণ্য ভাবের ধান বলা হয়। তবে পূর্বোক্ত একাগ্র মনোসংযোগ মূলক ধ‍্যানের ক্ষেত্রেও, শেষ পর্যায়ে চিন্তাশূন্য এক বিহ্বল ভাবাবেশ সৃষ্টি হয়ে থাকে। শূণ‍্যাবস্থা সৃষ্টি হয়ে থাকে। 

আরেক প্রকার ধ‍্যান আছে, সেক্ষেত্রে ধ‍্যানী তীব্র আবেগ বা ভাবাবেগ দ্বারা চালিত হয়ে, খুব দ্রুত গতিতে অত্যন্ত গভীর ধ্যান-স্তরে উপস্থিত হয়ে থাকে। অবশ্য এই প্রকার ধ্যান সবার ক্ষেত্রে ঘটে না। আমাদের আলোচ্য ধ্যান প্রকারটি হলো— আত্ম-ধ্যান। এখানে ধ‍্যানীর ধ‍্যানের বিষয় সে নিজেই। অর্থাৎ ধ্যানী-ও 'মন', আবার ধ‍্যানের বিষয় বা ধ‍্যেয় বিষয়-ও সেই 'মন'।

এই প্রসঙ্গে বলি, শুধু ধ‍্যান-যোগ দিয়েই সমস্ত শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন কথা আমি বলি না। শরীরের মধ্যে প্রচুর পরিমানে অর্জিত ও বংশগত টক্সিন বা রোগবিষ থাকলে, তা' ধ‍্যান-যোগ অভ‍্যাসে বিঘ্ন ঘটাবে। সেক্ষেত্রে মোটামুটি সাধারণ স্তরের ধ‍্যান হলেও, তাতে পুরোপুরি সমস্যা মিটবে না। তাই, ধ‍্যান-যোগ অভ‍্যাসের পাশাপাশি, শরীর থেকে টক্সিন মুক্ত করতে হবে নিয়মিতভাবে। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আহার-বিহার করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, রোগ অবদমনকর চিকিৎসা, দুষিত পরিবেশে বাস এবং অনিয়মিত জীবনযাপন মনকে অস্থির, উত্তেজিত ও অসুস্থ করে তোলে। যা ধ‍্যান-যোগ সাধনা এবং তাতে সাফল্য লাভের পক্ষে মোটেও অনুকূল নয়।



ধ‍্যান কী, সে সম্পর্কে পূর্বে বলেছি। এবার বলি, ধ্যান কেন করব— 

নিয়মিত ধ্যান অভ‍্যাস করার ফলে, ধ‍্যানী বা ধ‍্যান-যোগী যে সমস্ত ক্ষেত্রে লাভবান হয়ে থাকেন, সেগুলি একে একে বর্ণনা করলেই বোঝা যাবে, তার মধ্য থেকে কার কোন বিষয়টির চাহিদা রয়েছে।
নিয়মিত ধ‍্যান অভ‍্যাসের ফলে ঘটে—

৹ মানসিক শান্তি লাভ অর্থাৎ মানসিক অশান্তি থেকে মুক্তি। 
৹ মানসিক শৃঙ্খলা লাভ অর্থাৎ মনের বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি। 
৹ একাগ্রতা— মনোযোগ, আগ্রহ বৃদ্ধি।
৹ প্রধান মানসিক ক্ষমতা— সঠিক ভাবে গ্রহন ক্ষমতা, ধারণ ক্ষমতা, ও বিতরণ (ডেলিভারি) ক্ষমতা বৃদ্ধি।
৹  উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, স্ট্রেস ও টেনশন থেকে মুক্তি।
৹ অস্থিরতা, উত্তেজনা, ভয় থেকে মুক্তি।
৹ মানসিক দূষণ থেকে মুক্তি।
৹  প্রশান্ত ও প্রফুল্লতা বৃদ্ধি।
৹  মনের উপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি।
৹ মনের মেঘাচ্ছন্নভাব থেকে মুক্তি অর্থাৎ পরিচ্ছন্ন মন।
৹ চিন্তাশক্তি— কল্পনাশক্তি, উদ্ভাবন ক্ষমতা বৃদ্ধি।
৹  নতুন বিষয়ের ধারণা— নতুন আইডিয়া লাভ। 
৹ মানসিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি।
৹ মানসিক এনার্জি বৃদ্ধি, যার ফলে মুড ভালো থাকা। 
৹ ইরিটেবিলিটি, অসহিষ্ণুতা থেকে মুক্তি। 
৹ হতাশা— অবসাদ থেকে মুক্তি। 
৹ কর্মকুশলতা বৃদ্ধি।
৹ সঠিকভাবে কর্ম সম্পাদনা করার ক্ষমতা লাভ।
৹ শারীরিক ক্ষেত্রে:  আজকের দিনের অধিকাংশ রোগ-ব্যাধি, যাকে এক কথায় বলা হয়~ 'সাইকোসোমাটিক ডিজিজ', এগুলো থেকে আস্তে আস্তে মুক্তিলাভ। যেমন উচ্চরক্তচাপ, টেনশন রিলেটেড যন্ত্রণা, এসিডিটি, মাথার যন্ত্রনা, অক্ষুধা, ক্লান্তি, আচরণগত সমস্যা, এবং ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা প্রভৃতি বহু সমস্যা থেকে মুক্তি।

অন্যান্য প্রকারের ধ্যান পদ্ধতি থেকে 'মহামনন' আত্ম-ধ‍্যানের উপকারিতা অনেক বেশি। আত্ম-ধ‍্যানের মাধ্যমে আত্ম সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আত্মোপলব্ধি হওয়ায়, ধ‍্যান যোগীর আচরণে অনেক শুভ পরিবর্তন ঘটে থাকে।

আমি কখনোই বলিনা, ধ‍্যান ও যোগের মাধ্যমেই সমস্ত শারীরিক ও মানসিক সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। শরীরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে (অর্জিত ও বংশগত) রোগ, রোগবিষ বা টক্সিন থাকলে, ধ‍্যান-যোগের পাশাপাশি সঠিক প্রাকৃতিক চিকিৎসা এবং 'ডিটক্সিফিকেশন' পদ্ধতির সাহায্যও নিতে হবে আমাদের।


*এখানে 'মন' সম্পর্কে আলোচিত সমস্ত কথাই 'মহাবাদ' নামে আধ‍্যাত্মিক মনোবিজ্ঞান অনুসারী কথা।

ধ্যান শিক্ষার্থীদের প্রতি জ্ঞাতব‍্য:

শরীর ও মন উভয় দিক থেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে এবং 'মহামনন'-এর ঐকান্তিক চাহিদা নিয়ে মহামনন শিক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। কোনো কাজের তাড়া নিয়ে, অর্থাৎ কোনোরূপ বহির্মুখীতা নিয়ে এখানে আসা যাবে না। শিক্ষা গ্রহণের জন্য মনস্থির করার পর, সমস্ত প্রকারের নেশা, নেশাজাতীয় দ্রব্য, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, আড্ডা এবং বাজে অভ্যাস ও প্রবৃত্তিসহ বিভিন্ন বহির্মুখীতা থেকে মুক্ত হতে হবে। এটাই হলো প্রাক প্রস্তুতি। অধৈর্য, অস্থিরতা, উত্তেজনা থেকে মুক্ত হয়ে, যথা সম্ভব মৌনতা অবলম্বন করে, মনকে স্বতঃস্ফূর্ত মানব-প্রেম-ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলতে হবে। ধ‍্যানের জন‍্য ভিতরে ভিতরে তৈরি করতে হবে নিজেকে।

তারপর, ধাপে ধাপে, প্রাণযোগ— সুষুপ্তিযোগ, মন-আমি যোগের আত্ম-নিরীক্ষার পথ ধরে, 'মহামনন' যোগে— বিশ্ব-মানব-প্রেমে আপ্লুত হয়ে, অনাবিল সুখানুভূতি ও সন্তুষ্টি নিয়ে স্ব-বোধে স্থিত হতে হয়।

এই ধ‍্যান শিক্ষা ও অনুশীলনে কোনো প্রবেশ মূল্য নেই। তবে, প্রত‍্যেকের নিকট আবেদন, এই শিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানাবিধ খরচ এবং অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বমানের একটি আদর্শ 'মহামনন কেন্দ্র' গড়ে তোলার জন্য সবাই নিজেদের সাধ‍্যমতো দান করবেন।

এখানে প্রশিক্ষিত হওয়ার পরে, নিজের নিজের বাসস্থানে নিয়মিত অনুশীলন করে যেতে হবে। তবেই ভালো ফল পাওয়া যাবে।

এই শিক্ষাক্রম ৮ দিনের কোর্স, প্রতিদিন... থেকে.... টা পর্যন্ত (ঘোষণা করা হবে)। মাঝে .... বিরতি।

এছাড়া আছে, চারদিনের বিশেষ সংক্ষিপ্ত কোর্স।

শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ মিনিট পূর্বে শিক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। প্রথম দিন আধঘন্টা পূর্বে উপস্থিত হওয়া কর্তব্য। দেরি করে এলে, ক্লাসে প্রবেশ করা যাবে না। এই ধ‍্যান শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষা চলাকালীন কখনো কোনোদিন অনুপস্থিত হওয়া যাবেনা। অনুপস্থিত থাকলে, তাকে আর পুনঃপ্রবেশর সুযোগ দেওয়া হবে না। আবেদন পত্রের সঙ্গে মোবাইল নম্বর এবং হোয়াটসআ্যপ নম্বর দিতে হবে।

এখানে প্রচলিত ধর্ম, রাজনীতি, আধ‍্যাত্মিক অথবা অন্য কোনো বিষয় নিয়েই আলোচনা হবেনা, কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। যথাসম্ভব নিরবতা বজায় রেখে শিক্ষা গ্রহণ করাই শিক্ষার্থীদের একমাত্র কর্তব্য। কোনো প্রশ্ন থাকলে, কাগজে লিখে জানাতে হবে। নিয়ম বহির্ভূত আচরণের জন্য যেকোনো শিক্ষার্থীকে এই ধ‍্যান শিক্ষাকেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। শিক্ষক এবং অপর শিক্ষার্থীদের কাজে ব‍্যাঘাত ঘটানো অথবা বিরক্ত করা এবং অযথা কথা বলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। 


এখানে শিক্ষার ভাষা মাধ্যম হলো বাংলা।

মহামনন' ধ‍্যান শিক্ষার জন্য, শিক্ষার্থীদের যা যা থাকা আবশ্যক:

ঐকান্তিক আগ্রহ, ইচ্ছা ও নিষ্ঠা। এবং এক আসনে অনেকক্ষণ সুস্থির হয়ে বসে থাকার ক্ষমতা।

প্রয়োজন— ঢিলেঢালা পোষাক। নিজস্ব বেডসিট বা যোগা-ম‍্যাট এবং জলের পাত্র (বোতল)। কাগজ, খাতা-কলম। এখানে, অষ্টম অধ্যায়ে দুটি গান আছে। গানদুটি খাতায় লিখে নাও। শিক্ষার্থীকে এই গ্রন্থে উল্লেখিত সমস্ত বিষয়গুলি (সমস্ত আর্টিকেল) ভালোভাবে পড়তে হবে, অথবা ই-বুক পড়তে হবে। www.mahadharma.wix.com/book

 

দূষণ মুক্ত নির্মল পরিচ্ছন্ন স্থানই ধ্যান অভ্যাসের পক্ষে উপযুক্ত স্থান। সেখানে ধ্যানে বিঘ্নকর কিছু থাকবে না। ধ্যানে বসার পূর্বে হাত-পা ধুয়ে, চোখ-মুখ ও ঘাড়ে জলের ঝাপটা দিয়ে, ধুয়ে —মুছে, ধ্যানে বসতে হয়। 

নিষেধ: শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত কাউকে শিক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবেনা। কুড়ি বছরের কম বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে, তাদের অভিভাবক থাকতে হবে, এবং অভিভাবকদেরকেও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী হতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফোন / মোবাইল রাখা নিষেধ।

শিক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে কোনোরকম আলাপ-আলোচনা, কথা বলা নিষেধ। নিস্তব্ধতা ও শান্তি বজায় রাখতে হবে। কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে, ক্লাস শুরু হওয়ার পরে, লিখিতভাবে একটি প্রশ্ন করা যাবে। অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো সময় না থাকলে, হোয়াটসআ্যপের মাধ‍্যমে প্রশ্ন-উত্তর দেওয়া হতে পারে অথবা ওয়েবসাইটে প্রশ্ন করা যাবে।

এডমিশন বা ভর্তির জন্য সাদা কাগজে আবেদন করতে হবে। একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ আবেদন পত্রের সঙ্গে আইডি প্রুফ (ভোটার কার্ড/ আধার কার্ড)-এর জেরক্স কপিসহ আবেদন করতে হবে। সঙ্গে অরিজিনাল আইডি প্রুফও আনতে হবে। আসন সংখ্যা সীমিত।

ক্লাসে তথ্য ও তত্ত্ব সম্পর্কীত আলোচনার পরে (প্র‍্যাকটিক‍্যাল) অনুশীলন পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।

প্র‍্যাকটিক‍্যাল শিক্ষণীয় বিষয়ের-- অনুশীলন সূচী:

৹ প্রথম ধাপ= 
১. প্রাথমিক কর্তব্য-কর্ম। 
২. প্রাণযোগ অনুশীলন। 

৩. সুষুপ্তি যোগ।

৪. সঙ্গীত যোগে ধ্যান
৫. দশ মিনিট সম্পূর্ণ মৌনতা (মুখে ও মনে সম্পূর্ণতঃ মৌনতা) অবলম্বন। মনের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা।

৹ দ্বিতীয় ধাপ= 

১. প্রাণযোগ অনুশীলন। 
২. সুষুপ্তি-যোগ অনুশীলন। 
৩. ধ‍্যান-যোগে রোগ-আরোগ‍্য পদ্ধতি।

৪. প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি।
৫. দশ মিনিট সম্পূর্ণ মৌনতা (মুখে ও মনে সম্পূর্ণ মৌনতা) অবলম্বন। মনের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা।

৹ তৃতীয় ধাপ= 
১. 'মন-আমি যোগ' (সচেতন ও অবচেতন মনের যোগ) অনুশীলন। অডিও সাজেশন শোনার পর, নির্দেশ মতো— মনের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে মনের চিন্তা— কল্পনা— স্মৃতিচারণের প্রতি লক্ষ্য করা—। 


২. কিভাবে কষ্টদায়ক স্মৃতিকে মন থেকে মুছে ফেলা যায়। 


৩. দশ মিনিট সম্পূর্ণ মৌনতা (মুখে ও মনে সম্পূর্ণতঃ মৌনতা) অবলম্বন।

৹ চতুর্থ ধাপ=

'মহামনন' আত্মধ‍্যান অনুশীলন। এর মধ্যেও রয়েছে কয়েকটি ধাপ বা পর্ব।

—সম্পাদক

To know more, please go through Google search: মহাধর্ম, মহামনন, মহামনন ধ‍্যান, মহর্ষি মহামানস, MahaDharma, MahaManan, Maharshi MahaManas

'মহামনন' (ফ্রী) 'মেডিটেশন ক‍্যাম্প'

আয়োজকদের প্রতি জ্ঞাতব‍্য:

আবশ্যক বিষয়াদি—


১) বড় হল /অডিটোরিয়াম/ ফ্ল্যাট হল (যথেষ্ট আলো-বাতাস যুক্ত)
২) সাউন্ড সিস্টেম
৩) মাইকিং, ফ্লেক্স-ব‍্যানার, লিফলেট, নিউজপেপার, গেট প্রভৃতি সহ ব‍্যাপক প্রচার।
৪) ম‍্যানেজমেন্ট (ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আয়োজক সংস্থা)।
৫) ধ‍্যান-শিক্ষকের বসার জন্য: 
বড় জলচৌকি বা প্লাটফর্ম বা সিঙ্গেল বেড সহ তোষক, অথবা সুদৃশ্য আরামদায়ক চেয়ার।

৬) আয়োজক সংস্থা প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি করে প্রবেশপত্র (গেট-পাশ কার্ড) দেবেন, যাতে সেই সংস্থার নাম, লোগো অথবা বিজ্ঞাপন থাকবে।

প্রচারে আয়োজক হিসাবে ব‍্যক্তি বা সংস্থার নাম দেওয়া যাবে। আয়োজক ইচ্ছা করলে, কয়েকজন স্পন্সর নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে, স্পন্সর হিসাবে তাদেরও নাম থাকতে পারে। 

—সম্পাদক

শিশুসুলভ মানবমন রূপকথাসম ধর্মীয় কল্পকাহিনীতে কেমন অন্ধবিশ্বাসে বিভোর হয়ে আছে! একবারও প্রশ্ন জাগেনা এই মনে!
আজকের অনেক শিশুমনেও প্রশ্ন জাগে, তারাও প্রশ্ন করে, তবুও নিজেদেরকে বয়স্ক ভেবে গর্বিত মনে প্রশ্ন জাগে না, তাইতো, এসব কি সম্ভব! এগুলো কি অবাস্তব কল্পনা নয়!?
                                                                                —মহর্ষি মহামানস
bottom of page