top of page

পঞ্চম অধ্যায়

শিক্ষা প্রসঙ্গে কিছু কথা:



আমাদের চারিদিকে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কার্যত দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত শিক্ষার বড়ই অভাব। অধিকাংশ মানুষ যে তিমিরে ছিল— এখনো অনেকাংশে সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। শুধু বাইরের চাকচিক্য ধারালো ভাবটাই বৃদ্ধি পেয়েছে ভিতরের অন্ধকার তেমন দূর হয়নি কিছুতেই।

প্রকৃত শিক্ষার অভাবে সার্বিক চেতনার বিকাশ ঘটছেনা তেমনভাবে। তবু তারই মধ্যে, কিছু উচ্চ চেতনার মানুষ এই ঘাটতি পুরণের আশায়, প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের এবং প্রকৃত আত্মবিকাশ লাভের আশায়, প্রচলিত ধর্ম এবং, আধ্যাত্মিক শিক্ষার শরণাপন্ন হয়েও হতাশ হয়ে ফিরছে। কারন, সেখানেও মিলছে না প্রকৃত শিক্ষা —প্রকৃত মানুষ গড়ার শিক্ষা। 

প্রকৃত শিক্ষা হলো তা-ই, —যা আমাদের যথেষ্ট বিকশিত মানুষ হতে সাহায্য করে, নিজেকে জানতে এবং নিজের বিকাশলাভে সরাসরি সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে। শুধু তাই নয়, নিজের ভিতরকে জানার সাথে সাথে নিজের চারিপাশসহ বহির্জগতকে জানতে সাহায্য করে। প্রকৃতশিক্ষা মানুষকে নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ এবং কর্তব্য কর্মে উদ্যোগী করে তোলে।

তা-ই হলো প্রকৃত শিক্ষা যা আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন ক’রে তোলে এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্রিয় সহযোগিতা করে থাকে। সেই সাথে আমাদের সুস্থ সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ জীবন লাভে সহায়তা করে, এবং সচেতন মনের বিকাশ ঘটায়। আমাদেরকে কুসংস্কার— অন্ধবিশ্বাস— অজ্ঞানতা, এমনকি মানসিক অসুস্থতা থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে। এককথায়, যে শিক্ষা প্রকৃত জ্ঞান তথা চেতনার জন্ম দেয়। সেই হলো প্রকৃত শিক্ষা। আমরা যতই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠি না কেন, অত্যাবশ্যক ভিত্তিমূল  গঠনমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে না পারলে, সে সবই হবে— ভিত্তিহীন সৌধ গড়ার মতো।  
সেদিন একটি মেয়ের সাথে আলাপ হলো, জানলাম, সে এম. এ. পাশ। কিন্তু কথা বলে বুঝলাম, তার ‘কমন সেন্সের’ বড়ই অভাব। নাগরিকোচিত সচেতনতাও নেই তেমন। এমনকি যে বিষয়টিতে সে ‘মাষ্টার ডিগ্রি’ করেছে, সে বিষয়টিতেও তার জ্ঞান যথেষ্ট নয়। বুঝলাম, ভালো ক’রে না বুঝে গোগ্রাসে গলধঃকরণ করার মতো মুখস্থ ক’রে পরীক্ষার খাতায় উগরে দিয়ে এসেছে। তারপর পেটে আর কিছু নেই।  

শিক্ষাব্যবস্থা আর শিক্ষার্থীদের অবস্থা দেখে সত্যই বিষন্ন হয়ে পড়ি। আবার যখন দেখি, এই রকম কোনো একটি ছেলে বা মেয়ে শিক্ষক/শিক্ষিকার পদে আসীন হয়েছে, তখন আর দুঃখ রাখার জায়গা থাকেনা।

শিক্ষা প্রসঙ্গে শিক্ষকের কথা এসেই যায়, অন্নসংস্থান বা অর্থলাভের জন্য আজকাল অনেকেই অনেক পেশা বেছে নিচ্ছে। কিন্তু কেউ যদি ঐ কারণটির বাইরে শুধু নিজের যোগ্যতা ও প্রবণতার ভিত্তিতে কোনো কর্মে নিযুক্ত হয় বা হতে চায়, তখন সেটাই হয় তার উপযুক্ত কর্ম অথবা সেই কর্মের যোগ্য কর্মী হয় সে।

আনেক শিল্পী-কারিগর প্রভৃতির মতো দেখা যায়, কেউ কেউ যেন শিক্ষক হয়েই জন্মায়। কিন্তু সঠিক বিকাশ ও প্রকাশের সুযোগ না পাওয়ায়, আনেকের পক্ষেই আর শিক্ষক হয়ে ওঠা সম্ভব হয়না।

আবার অনেক শিক্ষককেই দেখা যায়, যাদের শিক্ষক হিসেবে মেনে নিতে মন চায়না, তবু বাধ্য হয়ে তাদের কাছেই শিক্ষা গ্রহন করতে হয় আমাদের। অনেক শিক্ষককেই দেখা যাবে, শিক্ষণীয় বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করতে অক্ষম, অথবা ইচ্ছার অভাব। বিষয়টিকে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর গ্রহনশক্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাঞ্জল ভাবে বোঝানোর ক্ষমতা নেই অনেকের, তবু তারাই আমাদের শিক্ষক।

হিংসা-বিদ্বেষ ক্রোধ এবং বিভিন্ন অমানবিক গুণে পরিপূর্ণ, হীনস্বার্থান্বেষী কোনো মানুষ অথবা অসুস্থ মনের কোনো মানুষ যদি আমাদের শিক্ষক হয়, তাহলে আমরা কিরূপ শিক্ষা লাভ করবো —তা সহজেই অনুমেয়। শুধু ‘একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন’ দেখে শিক্ষক নিয়োগ করলে এই দশা তো হবেই।

মনেরেখো, শিক্ষাগ্রহন কালে শিক্ষণীয় বিষয়টি ছাড়াও, আমাদের অজ্ঞাতে আমরা শিক্ষকের দোষ-গুণ প্রভৃতিও কম-বেশি গ্রহণ করে থাকি।

পরিশেষে বলি, শিশুশ্রেণী থেকেই অন্যান্য পাঠক্রমের পাশাপাশি ক্রমশ ধাপে ধাপে সঠিকভাবে আত্মবিকাশ (মনোবিকাশ) মূলক বুনিয়াদী শিক্ষা (থিওরিটিক্যাল ও প্র্যাকটিক্যাল) দান না করা হলে, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি কখনোই সম্ভব হবেনা।     

এই উদ্দেশ্যেই, সুদীর্ঘ কালের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় একটু একটু করে গড়ে উঠেছে— ‘মহামনন’ আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রম। 

শুভ পরিবর্তন আসছে— মহাধর্মের পথ ধরে


চতুর্দিকে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় এত উন্নতি, মানুষের জীবনযাত্রায় এত শ্রীবৃদ্ধি ঘটলেও, অধিকাংশ মানুষের মনের কিন্তু তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। সে সেই আদিম তমসাচ্ছন্ন কালেই পড়ে রয়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি সে এখনো পর্যন্ত। প্রতিদিনের সংবাদ-মাধ্যমে চোখ-কান রাখলেই এর নজির পাওয়া যাবে। 

কিন্তু এর কারণটা কী? 
বর্তমান মানবসমাজ যে প্রধান তিনটি থামের উপর দাঁড়িয়ে আছে, সেই (প্রচলিত) ধর্মতন্ত্র, রাজতন্ত্র (বর্তমান রাজনীতি), আর বৈশ‍্যতন্ত্র (ব্যবসা-বাণিজ্য তন্ত্র)--- ওদের অধিকাংশই মানুষের প্রকৃত উন্নতি, মানব-মনের প্রকৃত বিকাশ চায় না। 

উপরে উপরে দেখায়--- ওরা কতোইনা মানবদরদী— মানব কল্যাণকামী! মানব বিকাশের জন্য কত কিছুই না করছে!

আসলে, মানুষকে অজ্ঞ-মূর্খ-অন্ধ বানিয়ে রাখতে না পারলে, ওদের কপট অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়বে। এছাড়াও আছে প্রবল ক্ষমতাশালী (ভালো ও মন্দ) মিডিয়া (সংবাদ মাধ্যম), আছে ইন্টারনেট প্রভৃতি। 

অধিকাংশ মানুষ বহুলাংশে ওদের দ্বারাই ভাবিত হচ্ছে এবং চালিত হচ্ছে। বহু মানুষের মধ্যেই রাজতন্ত্রের প্রভাব এখনো সক্রিয় রয়েছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হলে কি হবে, দাস মনোভাব এখনো কাটেনি তাদের। তবে আশার কথা, ইদানিং কিছু মানুষ সজাগ ও সচেতন হয়ে উঠছে ক্রমশ। সমস্যার মূল কারণ উপলব্ধি করতে পারছে— সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট হয়ে উঠছে অনেকেই। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে থেকে প্রতিকারে সক্ষম হয়ে উঠতে পারছে না তারা। মহাধর্মের পতাকা তলে একত্রিত হয়ে সক্রিয়-শক্তিশালী হয়ে ওঠার সময় এসেছে এবার। আগামী দিনে মহাধর্ম-এর পথ ধরেই শুভ পরিবর্তন আসতে চলেছে। তাকে স্বাগত জানাতে হবে, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই।

প্রসঙ্গ : আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রম 




বিকশিত মানুষ বলতে বোঝায়— বিকশিত মনের মানুষ। যথেষ্ট জ্ঞান ও চেতনাসহ মানবিক গুণে সমৃদ্ধ সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ— মুক্তমনের প্রগতিশীল মানুষ।  

আমাদের মন অনেকাংশে তার অন্তর্নিহিত সংস্কার বা 'প্রোগ্রাম' দ্বারা চালিত হয়। তাই প্রথমেই মনের মধ্যে আত্মবিকাশ লাভের জন্য ব্যাকুলতা সহ— সত্য ও জ্ঞান লাভের প্রবল আকাঙ্ক্ষার 'প্রোগ্রাম' রূপ বীজ বপন করতে হবে। এটা নিজেই নিজের মধ্যে বপন করা যায়। অর্থাৎ নিজেই নিজেকে 'প্রোগ্রামড্' ক'রে তোলা যায়। আবার অপর কারো দ্বারাও 'প্রোগ্রামড্' হওয়া যায়। উপযুক্ত শিক্ষা ও পরিবেশ এই বাসনা বৃদ্ধির সহায়ক হয়ে থাকে। এর জন্য প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার এবং প্রকৃত আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রমের প্রচলন একান্ত প্রয়োজন। 

জ্ঞান ও সত্য লাভের তীব্র পিপাসা থাকাই হলো— দ্রুত বিকাশ লাভের প্রথম সোপান। এই জ্ঞান ও সত্য লাভের জন্য হতে হবে যুক্তিবাদী— বিজ্ঞানমনস্ক, সত্যপ্রিয় মানুষ। তাই, এই প্রোগ্রাম-ও মনের মধ্যে থাকতে হবে। তা' না হলে ব্যক্তি— মিথ্যা বা কাল্পনিক বিষয়কেই জ্ঞান ও সত্য ভেবে নিয়ে, তা' গ্রহণ করেই তৃপ্তি লাভ করবে। মনকে যুক্তিবাদী— বিজ্ঞানমনস্ক ক'রে তোলার পাঠ-ই হলো দ্বিতীয় সোপান। এই অত্যাবশ্যক কাজটিও প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্পাদন করতে হবে। কে কতটা যুক্তিবাদী, তার পরীক্ষা নিয়ে সফল শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করতে হবে। 

এর পরবর্তী সোপান গুলিতে— আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রমের পাঠ ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে ক্রমশ উত্তরণ সম্ভব হবে। মনের ক্ষমতা বৃদ্ধির পাঠ ও অনুশীলন-ও এই শিক্ষাক্রমের অন্তর্গত। 

অনেকেই, মানুষ হওয়া বা বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠা বলতে, শুধু নীতি-রীতিজ্ঞ, আদর্শবান— বিবেকবান হওয়া, কর্মপটু ও কৌশলী হওয়া, মানবিক কর্তব্যকর্ম ও আত্মত্যাগ করাকেই বুঝে থাকেন। কিন্তু এই নীতি-— আদর্শ— বিবেক প্রভৃতি যাতে অন্ধ-আবেগ অন্ধ-বিশ্বাসের দ্বারা ভুল পথে চালিত না হয়, অথবা বিপথগামী না হয়, তার জন্য শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা লাভের সাথে সাথে মনকে সুশিক্ষিত করে তোলা প্রয়োজন। দয়া-মায়া-ক্ষমা, প্রেম-প্রীতি প্রভৃতি মানব মনের সুকুমার বৃত্তিগুলির আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। সুস্থ ও সচেতন মানুষের মধ্যে এগুলি স্বতঃই প্রস্ফুটিত হয়ে থাকে। তাই, আত্মবিকাশ শিক্ষালাভের সাথে সাথে সর্বাঙ্গীণ সুস্থতা লাভের চেষ্টাও করতে হবে আমাদের। তার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের সাহায্যসহ উন্নত বিকল্প-চিকিৎসা পদ্ধতি গুলির সাহায্যও গ্রহণ করতে হবে। 
সঠিক আত্মবিকাশমূলক শিক্ষার অভাবে এবং প্রকৃত সুস্থতার অভাবেই আজ মানুষের ও দেশের এই দুরবস্থা। আমরা এর আমূল পরিবর্তন চাই। আমরা চাই— সুস্থ ও সুশিক্ষিত, প্রকৃত জ্ঞানী মানুষে সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক আমাদের দেশ। 

প্রথমে, আত্মবিকাশ লাভে আগ্রহী মানুষদের নিয়েই শুরু করতে হবে— এই কার্যক্রম। তারপর, তাদের উন্নতি দেখে— তাদের লাভবান হতে দেখে, পরবর্তী স্তরের মানুষ— যারা স্বল্প ইচ্ছুক ছিলো, তাদের আকাঙ্খাও জাগ্রত হয়ে উঠবে, এবং তারাও এগিয়ে আসবে এর সুফল লাভের আশায়। এইভাবেই ক্রমশঃ এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে সর্বসাধারণের মধ্যে।  'যুক্তিবাদী মন' 'বিকাশপ্রাপ্ত মন', 'আলোকপ্রাপ্ত মন' প্রভৃতি সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সার্টিফিকেট গুলি— সমাজে এবং কর্মক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব ও মর্যাদার সঙ্গে সমাদৃত হলেই, সাধারণ মানুষ আত্মবিকাশ শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠবে।

জাগো— ওঠো, বিকাশলাভ করো 
 


মানবদেহী বা মানবদেহধারী হলেই যে সে মানবত্ব লাভ করেছে অথবা তার আয়ুষ্কালের মধ্যেই মানবত্ব লাভ করতে পারবে, তেমন নয়। মানবত্ব লাভ হলো— পূর্ণবিকশিত মানুষ হয়ে ওঠা। মানব জীবনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্যই হলো— মানবত্ব লাভ।

একজন মানবদেহী (মানবদেহ ধারী) যে ধর্মরূপ পথ ও পদ্ধতি অবলম্বন ক’রে মানবত্ব লাভ করতে পারে, সেই ধর্মই হলো— মানবধর্ম। নানা মতবাদ অনুসরণ ক’রে ঈশ্বর ও স্বর্গরূপ মরীচিকার পিছনে অন্ধের মতো ছুটে চলা— মানবধর্ম নয়।

দেবত্ব এবং তৎপরবর্তী ঈশ্বরত্ব আমাদের মধ্যেই সুপ্তাবস্থায় এবং বিকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। দেবত্ব এবং ক্রমে ঈশ্বরত্ব লাভের জন্য আমাদেরকে মানবত্ব লাভ করতে হবে সর্বাগ্রে।

কর্ম ও ভোগের মধ্য দিয়ে— জ্ঞান-অভিজ্ঞতা লাভের মধ্য দিয়ে— ক্রমশ মনোবিকাশ তথা চেতনার বিকাশ লাভ করা— আমাদের স্বভাবধর্ম। কিন্তু, আমাদের ভিতরে—বাইরে—চারিপাশে বিকাশের অনুকূল অবস্থা না থাকায়, নানা প্রতিকূলতা থাকায়, বিকাশ-উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহন আবশ্যক হয়ে পড়ে। মানবধর্ম— 'মহাধর্ম' হলো সেই অত্যাবশ্যক ব্যবস্থা। একটা চারাগাছের সঠিক বিকাশের জন্য যেমন যত্ন-পরিচর্যা-সুরক্ষাসহ পুষ্টি ও সুস্থতার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়, এ-ও ঠিক তেমনি ব্যবস্থা।

মানুষের প্রকৃতি অনুযায়ী— বহু পথ বা মার্গ ধরে মানুষ অগ্রসর হয়ে থাকে। তার মধ্যে নিম্নগামী পথগুলি বাদ দিয়ে কর্মপথ—ভক্তিপথ—জ্ঞানপথ –এসবই মিলিত হয়েছে মহাধর্ম পথে। কর্ম ব্যতীরেকে ভক্তিপথ-জ্ঞানপথ –কোনো পথেই অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। আবার জ্ঞানপথেও ভক্তি থাকে। সে হলো জ্ঞানের প্রতি ভক্তি— সত্যের প্রতি ভক্তি। তবে তা’ অন্ধ ভক্তি নয়। অন্ধভক্তির পথ হলো নিম্নমূখী পথ— অধঃপতনের পথ।

ধর্মরূপ যে যুক্তিসম্মত পথ-পদ্ধতি ও ব্যবস্থা— একজন মানবদেহীকে মানবত্ব লাভে সাহায্য করে— তা-ই হলো মানবধর্ম। আর, এই মানবধর্মই— মহাধর্ম।

আত্ম-বিস্মৃত— মোহগ্রস্ত— পথভ্রষ্ট মানুষকে তার জীবনের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন ক’রে তুলতে, তাকে স্ব-ধর্মে (মানবধর্মে) প্রতিষ্ঠিত করতে, এবং স্বচ্ছন্দে সেই লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে ‘মহাধর্ম’ আবির্ভূত হয়েছে। শুধু তাকে গ্রহন করতে হবে— তাকে ধারণ করতে হবে।


তুমিও কি একই পথের পথিক? এসো, আমরা সবাই মিলে এক উন্নত পৃথিবী গড়ে তুলি।

প্রতিটি মানুষই বিকাশলাভ করে চলেছে। বিকাশলাভই মানুষের মৌলিক ধর্ম— স্বভাবধর্ম। তবে, শরীর-মনের অবস্থা, পরিবেশ-পরিস্থিতি, সুযোগ-সুবিধা, বাধা-বিঘ্ন-অভাব, প্রতিকূলতা, সুস্থতা-অসুস্থতা, সু বা কু শিক্ষা প্রভৃতি সাপেক্ষে কারো বিকাশ ঘটছে খুব ধীর গতিতে, আবার কারো বিকাশ ঘটছে স্বচ্ছন্দে— সঠিকভাবে। কেউ সমগ্র আয়ুষ্কালের মধ্যে অতি সামান্যই বিকশিত হতে পারছে, কেউ যথেষ্ট বিকাশলাভে সক্ষম হচ্ছে।

এই বিকাশ হলো— মনোবিকাশ— আত্ম-বিকাশ— চেতনার বিকাশ। যার ফল স্বরূপ ঘটে মানব বিকাশ।

একটা পোষ্য চারাগাছকে যেমন প্রয়োজনীয় আলো—বাতাস—জল—খাদ্য, পরিচর্যা ও সুরক্ষা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যথেষ্ট বিকশিত করে তোলা হয়, মহাধর্মও তেমনিভাবে একজন মহাধর্মানুসারীর সার্বিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে থাকে।

এখানেও কিছু কিছু নিয়ম-নীতি-পদ্ধতি আরোপ করা হয়ে থাকে, তবে তা’ করা হয়, বিকাশের প্রয়োজনে— বাধা-বিঘ্ন-প্রতিকূলতা অপসারণের জন্যে, শরীর-মনের সুস্থতা লাভের প্রয়োজনে।

অন্ধ-বিশ্বাস হলো বিকাশের পরিপন্থি। তাই, অন্যান্য ধর্ম সরাসরি মানুষের বিকাশ ঘটাতে পারেনা। তাছাড়া, যথেষ্ট বিকাশ ঘটলে মানুষ আর সেইসব ধর্মের বাঁধনে বাঁধা থাকেনা, তাই, অন্যান্য ধর্ম— প্রকৃত বিকাশ ঘটুক তা’ চায়না। ‘মহাধর্ম’ মানুষকে বিভিন্ন প্রতিকুলতা ও বন্ধন থেকে মুক্তির পথ দেখায়।

মানব ধর্মই মহাধর্ম। যার মূল কথা হলো— মানব বিকাশ।

 

শিক্ষা প্রসঙ্গে নানা কথা

 

কোনো তথ্য ও তত্ত্বমূলক বই বা শাস্ত্র পড়ে মুখস্ত করা, এবং/অথবা সেই বইয়ে বলা কথাগুলি অন্ধের মতো বিশ্বাস করাকে জ্ঞান অর্জন করা বলা যায় না।

সেই বই বা শাস্ত্র প'ড়ে, তাতে বলা কথাগুলির মধ্যে সত্য-মিথ্যা, ভুল-ত্রুটি যাই থাকুক--- যতটুকু থাকুক, প্রভাবমুক্ত হয়ে-- গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণ পূর্বক তা' উপলব্ধি করা, এবং তারমধ্যে কোনো গূঢ় অর্থ বা সারমর্ম নিহিত থাকলে, তা' উদ্ধার করা, এছাড়াও, সেই বইয়ে উল্লেখিত বিষয়-বস্তু বা কথার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অতিরিক্ত কোনো সত্য থাকলে তা' উপলব্ধি করা, এই সব মিলিয়ে যা অর্জিত হয়, তাকেই বলে, জ্ঞান অর্জন করা।

***

'হৃদয়' শব্দটি সাধারণত দুটি অর্থে ব‍্যবহার হয়ে থাকে। একটি হলো~ হৃদযন্ত্র, আর অপরটি হলো~ অন্ধ-আবেগ প্রবণ অবচেতন মন।

এখন, অনেক মানুষই অত তলিয়ে বোঝার চেষ্টা করে না। ফলে, তারা গুলিয়ে ফেলে। আর, 'মন' বলতে, তারা হৃদযন্ত্রকেই বুঝে থাকে। মনের অবস্থান বোঝাতে তাই তারা বুকের মাঝে হাত দিয়ে দেখায়। এর জন্য অনেকাংশে দায়ী আমাদের শিক্ষাব‍্যবস্থা। প্রথাগত শিক্ষা এবং ধর্মীয় শিক্ষা আমাদেরকে যুক্তিপথে তলিয়ে ভাবতে শেখায়না, অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে শেখায়। তাই আমাদের আজ এই দুর্দশা।

***

একটা কাল্পনিক গল্পের বই— রূপকথার গল্প। তার প্রথম অথবা শেষ পাতায় লেখা আছে, —এই গল্পের সমস্ত চরিত্রসহ সমস্ত ঘটনাই কাল্পনিক। আর একটা কাল্পনিক গল্পের বই— সেও রূপকথার গল্প। সেখানে প্রথম বইটির মতো কোনো স্বীকারোক্তি তো নেই-ই, উপরন্ত তার প্রতিটি অধ্যায়ে সেই কাহিনীকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করার প্রবল প্রচেষ্টা লক্ষিত হয়। এখন, শিশু মানব মনের উপর কোন বইটির কিরূপ প্রভাব পড়বে, ভেবে দেখো—।

***

একেবারে নিরুপায় না হলে, কোনো নির্বোধ মানুষের কথামতো চলা— নির্বুদ্ধিতারই কাজ। কোনো নির্বোধ ব‍্যক্তি, সে নেতা/মন্ত্রী, মা/বাবা, গুরুজন, অথবা কোনো প্রভাবশালী ব‍্যক্তি হলেও, এমনকি যথেষ্ট শুভাকাঙ্ক্ষী হলেও, নির্বিচারে তার কথামতো চললে— অনেক সময়েই বিপাকে পড়তে হতে পারে। তাই, একজন সজাগ-সচেতন মানুষকে, যথাসম্ভব প্রভাবমুক্ত হয়ে, যুক্তি-বিচারের পথ ধরে এগিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে সুকৌশলে তাদের কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। নির্বোধ ব‍্যক্তি তোমার ভালো করতে গিয়েও— অনেকসময় তোমার ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

***

 মিথ্যার আঁতুরঘর 

অনেক বাড়িতেই, বাচ্চাদেরকে মিথ্যা কথা— মিথ্যাচার শেখানো হয়, হিংসা-বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ক'রে তোলা সহ নানাভাবে তাদের মনোদুষণ ঘটানো হয়। প্রধানতঃ এর পিছনে থাকে তাদের বাবা-মা। এছাড়া বাড়ির অন‍্যান‍্য সদস্যরাও অনেক সময় এর জন্য দায়ী থাকে। পরবর্তীতে এর কুফল শুধু তাদের পরিবারকেই ভোগ করতে হয়, তা-ই নয়, গোটা সমাজকেই তা' ভোগ করতে হয়।

***

পথ মূলতঃ দুটি। একটি হলো বিশ্বাসের পথ, আর অপরটি হলো জ্ঞানের পথ। ভক্তি ও কর্ম— দুটি পথের সঙ্গেই যুক্ত থাকে। কর্ম ছাড়া কোনো পথেই চলা সম্ভব নয়। জ্ঞানপথের পথিকেরও ভক্তি থাকে, সে হলো জ্ঞান ও সত‍্যের প্রতি ভক্তি। যাকে ভক্তিপথ বলা হয়, সেটা আসলে বিশ্বাসের পথ।

***

মানুষের বহু সমস্যার মূলে আছে মানুষ চেনার অক্ষমতা। নিজেকে জানা ও চেনার এবং সামনের মানুষকে চেনার শিক্ষা না থাকায় এই সমস্যা চলতেই থাকবে।

***

সার্বিক দূষণ ও বিষাক্ততার কারণে, যত দিন যাচ্ছে~ মানুষ তত বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সেইসঙ্গে অসুস্থ যৌনতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই। বিকৃত~বিকারগ্রস্ত~ ধর্ষকামী মানুষে দেশ ভরে গেছে। অনেকেই অসুস্থ শরীর-মন নিয়েই জন্মাচ্ছে এখন। প্রয়োজন~ সঠিক চিকিৎসা।

***

পরিবেশ দূষণ ঘটিয়ে প্রকৃতির সুস্থতা-সাম্যাবস্থা নষ্ট করে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনার পিছনে মূল কারণ হলো— মানুষের জ্ঞান ও চেতনার স্বল্পতা।

***

কাউকে একদিন খাইয়ে সেবা করার চাইতেও বড় সেবা হলো, তাকে যথোপযুক্ত শিক্ষা ও পরামর্শ দিয়ে সাবলম্বী হয়ে উঠতে সাহায্য করা। যাতে সে একসময় অন‍্যদেরও সাহায্য করতে সক্ষম হয়ে ওঠে।

***

শরীর-মন সুস্থ থাকলে তবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। নচেৎ নিয়ন্ত্রণ কৌশল জানা থাকলেও তা' কাজে লাগানো যাবে না।

***

যত ভোগ হয়, তত যোগ হয়। যত যোগ হয়, তত ত্যাগ হয়।

উপরের সিঁড়িতে পা বাড়াও (যোগ করো), নিচের সিঁড়ি আপনা থেকেই ত্যাগ হয়ে যাবে। তোমাকে জোর করে ত্যাগ করতে হবে না। —মহর্ষি মহামানস

***

"আমাদের প্রধান শত্রু রয়েছে আমাদের মধ্যেই।যদি আমরা আমাদের ঘর থেকে শুরু করে সমস্ত দেশের মানুষকে সুস্থ, সজাগ-সচেতন, যুক্তিবাদী করে তুলতে পারি, তাদের যথেষ্ট মনোবিকাশ ঘটাতে পারি, তাহলে আর বহিঃশত্রু সঙ্গে যুদ্ধের প্রয়োজন হবে না। শত্রু তো রয়েছে আমাদের মধ্যেই। অজ্ঞান-- অন্ধবিশ্বাস রূপ শত্রু।" ~মহর্ষি মহামানস

আগ্রহ— ইন্টারেস্ট
 

কোনো একটি বিষয়ে আগ্রহ নেই— ইন্টারেস্ট নেই, অথচ সেই বিষয়ে আগ্রহ না থাকলে, সমুহ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা! —এমন ক্ষেত্রে কি ক’রে আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা যায়, —সে’ সম্পর্কে এবার কিছু বলব।
 
আমরা যা কিছু করি, তার বেশিরভাগ-ই ক’রে থাকি— স্বার্থের জন্য। তাই স্বার্থটাকে ভালভাবে বুঝতে হবে (স্বার্থ সম্পর্কে অন্যত্র আমার একটি রচনা দ্রষ্টব্য)। এই জগতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে, নিজের বিকাশ ঘটাতে, —নিজের যাবতীয় চাহিদা মেটাতে, —আমাদের অনেক কিছুই করতে হয়, এবং ভবিষ্যতেও করতে হবে। তার মধ্যে সব কাজ যে আমাদের পছন্দ মতো হবে— সহজসাধ্য হবে, অথবা অপরের দ্বারা করিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে— এমন নয়। ইচ্ছায় হোক— অনিচ্ছায় হোক, কর্ম আমাদের করতেই হবে।
 
জাগতিক ব্যবস্থা (Worldly System) আমাদের বিকাশ ঘটাতে— মনোবিকাশ ঘটাতে, যে যে উপায় অবলম্বন করেছে, তার মধ্যে প্রধান হলো— আমাদের মধ্যে নানা প্রকার চাহিদা সৃষ্টি ক’রে— সেই চাহিদামতো আমাদেরকে কর্মে প্রবৃত্ত ক’রে তোলা। অর্থাৎ চাহিদা সৃষ্টির সাথে সাথে— আমাদের মধ্যে সেই চাহিদা মেটানোর উদ্দেশে কর্মোদ্যোগ-ও সৃষ্টি করেছে। যা আমাদেরকে নানা কাজে— নানা উদ্দেশ্যে— নানা দিকে ছুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
 
উদ্দেশ্য— আমরা যাতে কর্ম আর ভোগের মধ্য দিয়ে জ্ঞান-অভিজ্ঞতা লাভ করি। এই জ্ঞান-অভিজ্ঞতা লাভের মধ্য দিয়েই আমাদের চেতনার বিকাশ ঘটে থাকে। আমরা ইচ্ছায়—অনিচ্ছায় এই জাগতিক ব্যবস্থা মতোই কাজ ক’রে চলেছি। জীবনের লক্ষ্যে— পূর্ণ বিকাশের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি।
 
কিন্তু, মাঝে মাঝে এর ব্যতীক্রমও ঘটে। এগিয়ে চলায় আগ্রহের অভাব— উৎসাহের অভাব ঘটে। এটা ঘ’টে থাকে— বোধের অভাব অথবা বোধশক্তির অভাবে, আর সুস্থতার অভাবে। অসুস্থতার ক্ষেত্রে— দুর্বলতা বা পুষ্টির অভাব— শক্তির অভাব একটা কারণ।    
 
তবে, কম-বেশি এরও প্রতিকার সম্ভব, যদি ঠিকমতো পারিপার্শ্বিক সুযোগ-সুবিধা সহযোগিতা মেলে। আর ব্যক্তি যদি সেই সহযোগিতা লাভে সচেষ্ট হয়।
 
যখনকার যে কাজ— সময়মতো তা’ না করলে, আলসেমী করলে অথবা আগ্রহ হারালে, ভবিষ্যতে তার জন্য অনেক কষ্ট পেতে হতে পারে, অনেক কিছু হারাতে হতে পারে, তারজন্য অনেক অনুতাপ করতে হতে পারে। কিন্তু কোনো মতেই সেই হারানো সময় আর ফিরে পাওয়া যাবেনা। যে ক্ষতি হয়ে গেছে— তাকে আর পুরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে কখনও।
 
সেই কথা ভেবে, নিজের চেষ্টায় এবং প্রয়োজনে অপরের সাহায্য নিয়ে— সময়ের কাজ সময়ে করার জন্য যথেষ্ট আগ্রহী ও উদ্যোগী হতে হবে আমাদের।   
 
আগ্রহ বৃদ্ধির পক্ষে উপযুক্ত পরিবেশ— আগ্রহী মানুষদের সঙ্গ, অর্থাৎ তাদের সাথে মেলামেশা বিশেষ ফলদায়ক হয়ে থাকে। তাই, কোনো বিষয়ে আগ্রহ বাড়াতে চাইলে, সেই বিষয়ে আগ্রহীদের সঙ্গে মেলামেশা করা উচিত।

ভবিষ্যতের কথা ভেবে—

 

অর্থ উপার্জনের জন্য আমরা বহু মানুষই এমন অনেক কাজ করি, যা ঠিক আমাদের পছন্দের কাজ নয়। কিন্তু অর্থলাভের আশায় এবং সেই অর্থ দিয়ে সুখ-স্বাচ্ছন্দ এবং পছন্দমতো সম্পদলাভের আশায়— আমরা বেশ মন দিয়েই কাজ ক’রে থাকি। কাজ করতে করতে— আস্তে আস্তে সেই কাজের প্রতি একটা ভাললাগার সম্পর্কও গড়ে ওঠে।

 

আমাদের মাথায় এই চিন্তাও থাকে— যে, কাজটা যদি ভালভাবে না করতে পারি, তাহলে চাহিদামতো অর্থ লাভ হবেনা। —এই চাহিদার ফলে, সেই কাজের প্রতি আমাদের আগ্রহ— এবং ক্রমে ক্রমে ভালবাসা জন্মায়। এর ফলে, আমরা ক্রমশ সেই কাজে দক্ষ হয়ে উঠি, অথবা সেই কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি।

 

ঠিক সেই রকম, কোনো পাঠ্য বিষয় যদি তোমাদের মন-পসন্দ্‌ নাও হয়, তবু তোমরা সেই বিষয় ভালভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর— কিসের আশায়? —না, ভালো নম্বর পাবে ব’লে! ভালো নম্বর বা ভালো ‘মার্কস’ পেয়ে পাশ করতে পারলে, সবার কাছে তোমার দাম বেড়ে যাবে অনেক! সব জায়গাতেই তোমার খাতির-যত্ন —সমাদর বেড়ে যাবে! —তোমাকে ভালবাসবে সবাই!

 

এইভাবে— এক সময় তুমি প্রচুর অর্থ-সম্পদ লাভ করতে পারবে। যার দ্বারা তুমি তোমার খুশি মতো— সাধ মিটিয়ে অনেক কিছু কিনতে পারবে, —অনেক কিছু করতে পারবে, —অনেক সুখ-স্বাচ্ছন্দ ভোগ করতে পারবে! তুমি শুধু নিজেই সুখ-আনন্দ পাবে— তাই নয়, সেই সাথে তুমি তোমার প্রিয়জনদেরও সুখ-স্বাচ্ছন্দ—আনন্দ দিতে পারবে তখন!

 

একান্তে বসে— মাঝে মাঝে সেই আনন্দ-উজ্বল ভবিষ্যতের কথা ভাবো— কল্পনা কর, দেখবে, ভাল না লাগা বিষয়গুলিও কেমন ভালোলাগতে শুরু করবে!

 

তাছাড়া, এখন যে বিষয়টি তোমার ভালো লাগছে না, তার ব্যবহারিক প্রয়োজন অনুভব করতে না পারার কারণে, ভবিষ্যতে তাকে যে প্রয়োজনে লাগবেনা, এমন কথা জোড় দিয়ে বলা যায়না।

 

যেমন আমার কথাই ধরো, স্কুলে পড়ার সময় বীজগণিত বা ‘এলজেব্রা’ আমার ভালো লাগতো না। তার ব্যবহারিক প্রয়োজন অনুভব করতে পারতাম না ব’লে। ওটাযে কি কাজে লাগবে— বুঝতে পারতাম না তখন। কিন্তু এখন, এই বয়েসে— আমি যে সমস্ত দার্শনিক তত্ত্ব এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের রুপ-রেখা তৈরী করেছি, সেগুলিকে পন্ডিত সমাজের কাছে উপস্থাপিত করতে— অঙ্কের ভাষায় ব্যাখ্যা করতে, —প্রয়োজন হচ্ছে সেই বীজগণিতের। যাকে আমি অবহেলা ক’রে এসেছি এতদিন!

 

তাহলেই বুঝতে পারছো, কাকে যে কখন কার প্রয়োজন হবে— কেউ বলতে পারেনা।* তাই শেখার সুযোগ যখন আছে— শিখে নাও, ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে শেখার সুযোগ হয়তো আর নাও পেতে পারো।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

 

*এই প্রসঙ্গে আরেকটি কথাও বলি, ঠিক এই কারণেই সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা দরকার। সবার সাথে ভালো ব্যবহার— সাফল্য লাভের পথকে সুগম ক’রে তোলে। কখন যে কাকে তোমার প্রয়োজন হবে, কেউ বলতে পারে না।   

মনোবিকাশের সহজ উপায় 

মনোবিকাশের সহজ উপায় হলো— চোখ-কান খোলা রেখে, সজাগ-সতর্ক-সচেতন ও সত‍্যপ্রেমী হয়ে, যথাসম্ভব বিশ্বাস— সংস্কার ও প্রভাবমুক্ত হয়ে, যুক্তি-বিচারসহ জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে কর্মপথে এগিয়ে যাওয়া। আর সেইসঙ্গে চাই— সুস্থতা। সুস্থতালাভ এবং তা' বজায় রাখার জন্যেও সজাগ-সচেতন থাকতে হবে। শরীর ও মন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

আর, মাঝে মাঝেই মনের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। মন কি ভাবছে, কি কল্পনা করছে লক্ষ্য করতে হবে। মনের মনোভাবটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে তোমাকে। এইভাবে অনুশীলন করতে থাকলে, ক্রমশই মনোবিকাশ ঘটতে থাকবে তোমার।

কি ধরনের মনোভাব বা কি ধরনের চিন্তা আসছে মনে, এবং সেই চিন্তার পিছনে বা সঙ্গে কি মনোভাব রয়েছে বোঝার চেষ্টা করো— তাকে চিহ্নিত করো। যেমন— লোভ, মোহ, কাম, ক্রোধ, হিংসা, বিদ্বেষ মূলক চিন্তা। আজেবাজে বা এলোমেলো চিন্তা। কর্ম বা ব‍্যবসা সংক্রান্ত চিন্তা। সমস্যা, অশান্তি, অসুস্থতা, উন্নয়ন, প্রচেষ্টা, বাচালতা, বোকামি, সুখকর চিন্তা। কল্পনা, বিষন্নতা, শোক, হতাশা, প্রতিহিংসা, স্বার্থ চিন্তা। আনন্দ, উৎসাহ, আগ্রহ, উত্তেজনা, আশা-আকাঙ্খা, সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, স্মৃতিচারণ, অনুসন্ধান, সত‍্যান্বেষণ সম্পর্কে চিন্তা। নীচ-অমানবিক, অনিষ্টকর বা প্রতারণামূলক চিন্তা, ধ্বংসাত্মক চিন্তা প্রভৃতি। মনের মধ্যে এদের কোনো এক বা একাধিক চিন্তা বা মনোভাব তরঙ্গ চলছে— চিহ্নিত করো এবং পরিবর্তন লক্ষ্য করো।

এর পাশাপাশি, প্রতিদিন অবসর সময়ে কিছুক্ষণের জন্য মনকে চিন্তাশূন্য অবস্থায় বিশ্রামে রাখতে হবে। এটি অভ‍্যাস করার জন্য প্রথমে শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে কিছুক্ষণ মনোযোগ দিতে হয়। তারপর মনের (অবচেতন মনের) কার্যকলাপের দিকে মন দিলে, অচিরেই মনের খেলা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন চিন্তাশূন্য অবস্থায় থাকা সম্ভব হবে। কোনো বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে না। শুধু কিরকমের চিন্তা বা মনোভাব, তা'  লক্ষ্য করে— চিহ্নিত করলেই হবে। 

পড়াশোনা তো অনেকেই করে, কিন্তু পূর্বোক্ত উপায়ে লেখাপড়া করে ক'জন! দু-একটা উদাহরণ দিলে সহজে বোঝানো যাবে। যেমন~ পড়ছে— 'সম্মান', কিন্তু বলছে~ 'সন্মান'। 'তন্বী' কে 'তম্বী' বলতেও শুনেছি। 'নায়িকা' কে 'নাইকা' লিখতেও দেখা যায়। 'হাসি' কে 'হাঁসি'। 'Form' কে 'From' বলতে হামেশাই শোনা যায়। এইরকম অজস্র উদাহরণ আমাদের সামনেই রয়েছে। আমরা শুনেও শুনি না, দেখেও দেখি না, সজাগ-সতর্কতার অভাবে।

এইরকম ভুল যারা করে, তারাই অজ্ঞান-অন্ধের মতো বিশ্বাসের পথে, এবং অনেক সময়েই ভুল পথে চালিত হয়ে থাকে।

শিক্ষকতা অনেকেই করেন, কিন্তু ক'জন শিক্ষক সঠিকভাবে 'গাইড' করে থাকেন! অনেক শিক্ষককেই দেখেছি, নিজেরাও ভুল করেন, আবার ছাত্রদেরকেও ভুল শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

এই যখন অবস্থা, তখন সঠিকভাবে মনোবিকাশ ঘটাতে হলে, বিশেষ শিক্ষাব‍্যবস্থা— মনোবিকাশ বা আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রমের সাহায্য নিতেই হবে।

দিকে দিকে 'মহামনন' আত্মবিকাশ শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলো।


বিকাশপথে সবচাইতে বড় বাধা হলো প্রচলিত ধর্ম
 

বিকাশ অর্থাৎ মনোবিকাশ। পূর্ণবিকশিত (মনের) মানুষ হয়ে ওঠাই মানবজীবনের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য। এই লক্ষ্য-পথে অগ্রসর হওয়াই মানুষের মৌলিক ধর্ম। মানবধর্ম। 

কিন্তু, প্রচলিত ও তথাকথিত ধর্ম মানুষকে সেই বিকাশপথ থেকে সরিয়ে দিয়ে বিপথে ঠেলে দিয়েছে ও দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই বিপথগামীতা কখনোই মানুষের ধর্ম হতে পারে না। এ' হলো অধর্ম। 

আবার বলছি,  মানুষকে তার মূল ও প্রধান স্বার্থ— বিকাশধর্ম থেকে বঞ্চিত করে, হীনস্বার্থবোধে —অধর্মে প্ররোচিত করে যা— তা' কখনোই মানুষের ধর্ম হতে পারেনা। তা' ধর্ম নামে আসলে অধর্ম। তা' মানবজাতির প্রধান শত্রু।
 
 
অসন্তোষ থেকে মুক্তি
 

আমরা অধিকাংশ মানুষ— যা কিছু দেখছি— শুনছি— বুঝছি, ইন্দ্রিয়ানুভব করছি, চিন্তা করছি, তার ফলস্বরূপ আমাদের মনোভাবের একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে অসন্তোষ! সন্তোষ যেটুকু লাভ হচ্ছে, তা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে তিলে-তিলে জমে ওঠা পর্বতপ্রমাণ অসন্তোষের অন্ধকারে। 

এই অসন্তোষের কারণ আমাদের ভিতরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই বর্তমান। এই অসন্তোষ আমাদেরকে ভিতরে ভিতরে কুঁঁড়ে কুঁঁড়ে খাচ্ছে অবিরাম। আস্তে আস্তে আমরা অসুস্থ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা আমাদের জীবন থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। ভালোভাবে বেঁচে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। 

এই করুণ দুরবস্থা থেকে রেহাই পেতে, সুন্দরভাবে জীবনকে উপভোগ করতে, এবং বিকাশপথে স্বচ্ছন্দে এগিয়ে যেতে, আজ তাই ভীষণভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে—'মহামনন' ধ‍্যান অনুশীলন।


      
এখনো সময় আছে...
 
অজ্ঞান-অসহায় মানুষের— ভিতর থেকে অন্ধকার মুক্ত না ক’রে, তাকে সজাগ-সচেতন ক’রে না তুলে, তার বোধশক্তিকে জাগ্রত ক’রে তোলার চেষ্টা না ক’রে, শুধু ওপর থেকে নিয়ম-নীতি-ধর্ম-আদর্শের শিক্ষা আরোপ ক’রে— নানা বিধি-নিষেধের বেড়াজালে বেঁধে— জুজুর ভয় দেখিয়ে, তাকে চিরকাল বশীভূত ক’রে রাখা যাবেনা।  
 
হীন-স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশে সুকৌশলে— মানুষকে অজ্ঞান-অন্ধ—অচেতন ক’রে রেখে, কেউ কেউ সাময়ীকভাবে লাভবান হলেও, কালক্রমে একসময় সে এমন বিগড়ে যাবে, যে তখন তাকে আর নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব হবেনা। তখন, সমস্ত দমন-যন্ত্র —তথাকথিত ধর্ম ও শাসনতন্ত্রকে ভেঙেচুরে ধুলিসাত ক’রে দেবে মানুষ।  
 
চেতনার যথেষ্ট বিকাশ ঘটার আগেই যদি এমনটা ঘটে, তাহলে সে নিজেকেও ধ্বংস ক’রে ফেলতে পারে— সেই সাঙ্ঘাতিক অবস্থায়! মানবজাতির সেই করুণ পরিণতি যদি না চাও, এখনো সময় আছে, —ফিরে তাকাও!!
 

 

পৃথিবীর কঠিন অসুখ—গভীর সঙ্কট! 

 

একদিকে, পৃথিবী তার অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার মতো গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। অপরদিকে, সমগ্র মানবজাতি ভুগছে দুরারোগ্য কঠিন ব‍্যাধিতে। মানবজাতিসহ এই পৃথিবী ধ্বংসোন্মুখ অবনতির দিকে এগিয়ে চলেছে ক্রমশ।

 

সবচাইতে বড় সমস্যা হলো, অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই তা' বোঝার মত যথেষ্ট বোধশক্তি বা চেতনা নেই। প্রচলিত ধর্ম— রাজনীতি, প্রশাসন-প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান— দর্শন, নাস্তিক্যবাদ— কোন কিছুই এর সমাধানে সক্ষম নয়।

 

যদিও আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই আর, তবুও, শেষরক্ষা পেতে, একমাত্র ভরসা হলো— 'মানবধর্ম'। পুনরায় মানবধর্মে ফিরে এসে, ঘরে ঘরে মনোবিকাশের ধর্ম— মানবধর্ম অনুশীলনের মধ্য দিয়ে, মানুষের চেতনার যথেষ্ট বিকাশ ঘটলে, তবেই মানুষ এই আত্মবিনাশক কঠিন অসুখ থেকে মুক্ত হতে সক্ষম হবে।

 

মানুষের ব‍্যাধিটা কত কঠিন ও জটিল এবার একটু দেখে নেওয়া যাক:  যথেষ্ট জ্ঞান ও চেতনার অভাব থেকে উৎপন্ন হওয়া অন্ধত্ব—অন্ধবিশ্বাস, আর তার সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক কঠিন অসুস্থতা মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে এই কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধি।

 

মানুষের মূল সম্পদ হলো তার চেতনা আর সুস্থতা। চেতনার অভাবে জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। মানুষ সুস্থতা ও চেতনা রহিত হলেই তার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। অথচ তার এতটুকু হুঁশ নেই!  হাসি-মজা, গল্প-আড্ডা, আর যেনতেন প্রকারে তার হীন-স্বার্থ চরিতার্থ করা নিয়েই মশগুল হয়ে আছে সে!

 

অন্ধত্ব—অন্ধবিশ্বাস মানুষের চেতনা বিকাশের পক্ষে সবচাইতে বড় অন্তরায়। তাকে আরো পরিপুষ্ট করে তুলেছে একশ্রেণীর কুচক্রী প্ররতারকদের তৈরি 'ধর্ম' নামক শোষণ ও নিপীড়ন যন্ত্রটি। এই ধর্ম নামক অধর্মের বিষে জর্জরিত হয়ে, মোহাচ্ছন্ন হয়ে, নেশাসক্তের মতো মানুষ মিথ্যে প্রলোভনের পিছনে ছুটে মরছে হাজার হাজার বছর ধরে।

 

তারপর, তার এই বোধশক্তি ও জ্ঞানের অভাবেই সে অনিয়ম, অনাচার, কদাচার, অখাদ্য আহার অপচিকিৎসাসহ  সিফিলিস-গনোরিয়ার মতো বংশপরম্পরায় সংক্রামিত হওয়া বিভিন্ন অনারোগ‍্য কঠিন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে, এবং একে অপরকে আক্রান্ত করে চলেছে ক্রমশ। এই সমস্ত রোগ-ব‍্যাধি মানুষের মস্তিষ্ককে জড়বৎ করে তুলে— মানুষকে তার স্বাভাবিক চেতনা বিকাশে অক্ষম করে তুলেছে। আর সেই সঙ্গে মানুষকে করে তুলেছে প্রচণ্ড ক্রোধান্ধ এবং উগ্র কামোন্মাদ। উগ্র কামোন্মাদনা মানবজাতির অন‍্যতম এক বড় সমস্যা। আবার এই কামোন্মাদনা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে, মানসিক বিকার-বিকৃতি, মনোরোগ, উন্মাদনা ও ধর্মোন্মাদনা। পৃথিবীতে সুস্থ মানুষের দেখা মেলাই ভার হয়ে উঠেছে আজ।

মহামনন : মহা আত্মবিকাশ যোগ শিক্ষাক্রম

সম্পাদকের সংযোজন 

'মহামনন' (পূর্নাঙ্গ) আত্মবিকাশ যোগ শিক্ষাক্রম সম্পর্কে এখানে সংক্ষেপে কিছু বলা প্রয়োজন। 'মহামনন ধ‍্যান সাধনা' হলো 'মহামনন' আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রমেরই একটি বিশেষ অংশ। 'মহামনন' ধ্যান অভ্যাস করার পূর্বে, মহামনন আত্মবিকাশ যোগ শিক্ষাক্রম সম্পর্কে কিছু জানা প্রয়োজন।

মহর্ষি মহামানস নির্দেশিত ও প্রদর্শিত পথে সহজ-সরল অপূর্ব এই শিক্ষা অধ্যয়ন ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে— জীবনে নিয়ে আসুন এক অভূতপূর্ব বিস্ময়কর শুভ পরিবর্তন। আপনার জীবন আরও সুন্দর ও আরও বিকশিত হয়ে উঠুক।

মহা-আত্মবিকাশের জন্য মনন-ই হলো— ‘মহামনন’। প্রকৃত আত্মবিকাশ লাভের এক অতুলনীয় শিক্ষাক্রম-ই হলো—‘মহামনন’। ভিত্তিমূল শিক্ষা থেকে আরম্ভ ক’রে অতি উচ্চস্তরের ‘মহা-আত্ম-বিকাশ-যোগ’ শিক্ষাক্রমই হলো—‘মহামনন’।

—যার মধ্য দিয়ে ক্রমশই বহু সত্য —বহু অভাবনীয় তথ্য ও তত্ত্ব আপনার সামনে উদ্ঘাটিত হবে, আস্তে আস্তে এক সুস্থ-সমৃদ্ধশালী নতুন মানুষ জন্ম নেবে আপনার মধ্যে, এবং ক্রমশ বিকাশলাভ করতে থাকবে— করতেই থাকবে। সুস্থতা ছাড়া আত্মবিকাশ সম্ভব নয়। তাই, এই শিক্ষাক্রমের অঙ্গ হিসাবে আপনি এখানে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা প্রাকৃতিক ও যোগ চিকিৎসার সুযোগ পাবে।

নিজেকে জানা— নিজের শরীর ও মনকে জানা, নিজের চারিপাশ সহ মানুষকে চেনা, নিজের প্রকৃত অবস্থানসহ জগৎ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান লাভ, নিজের উপর নিয়ন্ত্রন লাভ, জগতকে আরো বেশি উপভোগ করার জন্য নিজেকে যোগ্য—সমর্থ ক’রে তোলা, এই রকম আরো অনেক বিষয় নিয়েই এই শিক্ষাক্রম।

নিষ্ঠার সাথে শিক্ষা ও অনুশীলন করতে থাকলে, আস্তে আস্তে আপনার ভিতরে এক উন্নত—বিকশিত নতুন মানুষ জন্ম নেবে। যা দেখে আর সবার মতো আপনিও বিস্ময়ে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়ে অপার আনন্দের আধার হয়ে উঠবেন আপনি। আপনার চারিপাশে থাকা অন‍্যান‍্য সবাই এই আনন্দের সংস্পর্শে এসে তারাও আনন্দ লাভ করবে!

ছাত্র-ছাত্রীগণ তাদের প্রচলিত শিক্ষা গ্রহনের পাশাপাশি এই আত্মবিকাশ শিক্ষা গ্রহনের দ্বারা তাদের পরীক্ষার ফল আরো ভালো করতে সক্ষম হবে। এছাড়া তাদের আচরণেও শুভ পরিবর্তন দেখা যাবে।

'মহামনন' শিক্ষার্থীদের একটা নেশাই থাকবে, তা' হলো ধ‍্যানের নেশা।

মহামনন —আত্মবিকাশ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য মুক্তহস্তে দান করুন।

আত্ম-ধ্যান হলো 'আমি'-র ধ্যান। এই 'আমি'-টা কে, কোথায় তার অবস্থান জানতে হবে। যাকে জানলে প্রায় সব জানা হয়, সেই 'আমি'-কে অর্থাৎ নিজেকে জানতে হবে আমাদের। আত্মজ্ঞান হলো এই 'আমি'-র জ্ঞান। 'আমি'-কে দেখা যায়না, উপলব্ধি করা যায়। নিজেকে অর্থাৎ 'আমি'-কে যত বেশি জানা যাবে, ঈশ্বর তথা এই মহাবিশ্ব জগতের রহস্য ততই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। 'আমি'-কে অর্থাৎ নিজেকে জানার উদ্দেশ্যেই এই সৃষ্টি লীলা (মহর্ষি মহামানসের মহান সৃষ্টিতত্ব দ্রষ্টব্য) শুরু হয়েছে। 'আমি'-কে পুরোপুরি জানা হলে, তবেই ঘটবে মোক্ষ লাভ। সৃষ্টির অবসান ঘটবে তখন। 
অনেকের মধ্যেই একটা ভুল ধারণা আছে, তারা মনে করে, ধ্যান চর্চা শুধুমাত্র সাধু-সন্ন্যাসী-তপস্বীদের জন্য।'ধ্যান' অভ্যাস যে প্রতিটি মানুষের পক্ষে কতটা প্রয়োজনীয়, তারা তা' জানেন না। 'ধ্যান' হলো আমাদের সবচাইতে বড়  ঔষধ। ইদানীং, সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও 'যোগ' চর্চা শুরু হয়েছে। যোগের উপকারীতা অনেকেই আস্তে আস্তে বুঝতে পারছে। এই 'যোগ' প্রক্রিয়াকে বলা হয়, 'হঠ যোগ'। 'যোগ'-এর রাজা হলো 'ধ্যান'। যাকে বলাহয়-- 'রাজ-যোগ'। আজকের দিনে, ভালোভাবে জীবনযাপন করতে হলে, সুষ্ঠুভাবে বিকাশলাভ করতে হলে, 'ধ্যান' ছাড়া আমাদের গতি নেই। 
মন শান্ত থাকা অথবা মনকে শান্ত রাখা শুধুমাত্র মনের উপর নির্ভর করেনা। শরীরের মধ্যে প্রদাহ ও উত্তেজনা (ইরিটেশন,  ইনফ্লেমেশন, এক্সাইটমেন্ট) হতে থাকলে, তার প্রভাবে মনও অশান্ত হয়ে ওঠে।

মহাবাদ
মহর্ষি মহামানস-এর মহান মতবাদ 
সম্পাদকের সংযোজন 


এবার 'মহবাদ' গ্রন্থ সম্পর্কে সংক্ষেপে এখানে কিছু বলা প্রয়োজন। কারণ 'মহাবাদ' গ্রন্থটির উপর ভিত্তি করেই যুগোপযোগী মানব বিকাশমূলক ধর্ম~ 'মহাধর্ম' গড়ে উঠেছে।

'মহাবাদ' শুধুমাত্র যুক্তিসম্মত অধ‍্যাত্মবাদ নয়, মহাবাদ হলো মানব জীবনে অভূতপূর্ব শুভপরিবর্তন সাধক, মানব বিকাশের সঠিক পথপ্রদর্শক একটি অসাধারণ গ্রন্থ। 

মহাবাদ-এর উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে 'মহাধর্ম' নামে এক অত‍্যুন্নত জীবন যাপনের প্রণালী। যা আমাদের আত্মিক, আর্থিক, সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক এবং পরিবেশগত উন্নতি এবং শান্তি ও সুস্থতা সম্পর্কে আমাদেরকে সচেতন করে তোলে, এবং তা' লাভ করার সঠিক পথ প্রদর্শন করে।

'মহাবাদ' আমাদেরকে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত ক'রে— সত্যে আসক্ত করে তোলে। আমাদের জীবন যাত্রাকে আরো সুন্দর— ছন্দময়— আনন্দময় ও গতিময় ক'রে তুলতে, জীবনের সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে, 'মহাবাদ' এক অসাধারণ পথপ্রদর্শনকারী অমূল্য গ্রন্থ।

'মহাবাদ' প্রদর্শিত পথ ধরে এগিয়ে গেলে, আমরা নিজেকে ও ঈশ্বরকে আবিষ্কার করতে পারবো—আমাদের নিজ স্বরূপে। মহাবিশ্বের মহান রূপটি আমাদের কাছে তার আত্ম-স্বরূপে প্রকাশলাভ করেছে এই মহান গ্রন্থে। মহাবাদ শুধুই শুষ্ক তত্ত্বকথা নয়, মহাবাদ হলো মহর্ষি মহামানস প্রদর্শিত ও নির্দেশিত পথে অত‍্যুন্নত জীবন লাভের তথা সার্বিক বিকাশ লাভের প্রকৃষ্ট সাধন প্রণালী।

মানুষের অধিকাংশ সমস্যার মূলে রয়েছে অজ্ঞানতা— অসুস্থতা, আর চেতনার স্বল্পতা। প্রচলিত কোন বিজ্ঞান— দর্শন— ধর্ম, প্রযুক্তি, শিক্ষাব্যবস্থা, এর সমাধানে সক্ষম নয়। একমাত্র 'মহাবাদ' প্রদর্শিত প্রকৃত আধ্যাত্মিক জ্ঞান, এবং তার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা অতুলনীয় আত্মবিকাশ বা মনোবিকাশ শিক্ষাক্রমই এর সমাধানে সক্ষম।

'মহাবাদ' -এর মূল গ্রন্থ বাংলা ভাষায় লিখিত। মহাবাদ হলো মহর্ষি মহামানসের মহান মতবাদ ও অতুলনীয় শিক্ষা। এতে রয়েছে প্রকৃত অধ্যাত্ম-বিজ্ঞান, আধ্যাত্মিক মনোবিজ্ঞান, আত্ম জ্ঞান ও আত্মবিকাশ লাভের বিজ্ঞান। সর্বাধুনিক সৃষ্টিতত্ত্ব ও জীব-সৃষ্টিতত্ত্ব, পরলোক তত্ত্ব প্রভৃতি এযাবৎ অমীমাংসিত বহু অতি উচ্চস্তরের বিষয় ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানের আকর গ্রন্থ হলো— 'মহাবাদ'। রহস্যময় অধ্যাত্ম-জগত সহ মহাবিশ্বের অন্তর্নিহিত বহু সত্য এই গ্রন্থে উন্মোচিত হয়েছে। 

এক কথায় বলা যেতে পারে, 'মহাবাদ' হলো এমন একটি দিব‍্য তরণী, যাতে আরোহণ করে, একজন অনায়াসে এই অহম 'আমি' থেকে পরম 'আমি' পর্যন্ত সেই অত্যাশ্চর্য যাত্রাপথে পরিভ্রমণ করতে সক্ষম।

'মহাবাদ' হলো প্রকৃত অধ্যাত্মবাদ— যুক্তিসম্মত অধ্যাত্মবাদ ও অধ্যাত্ম বিজ্ঞান। অধ‍্যাত্ম মনোবিজ্ঞান সহ তাত্ত্বিক বিজ্ঞান। মহাবাদ হলো—  মহাবিশ্ব-মন সহ মহাবিশ্বের রহস্য ময় জীবন কাহিনী। 'মহাবাদ' হলো— মহাজীবনের শ্বাসরুদ্ধকর রহস্য উন্মোচন। 'মহাবাদ' হলো— আপনার সাথে আপনার নিজের পরিচয়।

মহাবাদ এর মূল বিষয়বস্তু হলো, জীবন ও মহাজীবনের সত্য উদঘাটন। মহা মানবতাবাদ। জীবনের মূল লক্ষ্য পরিজ্ঞাপন এবং প্রকৃত ও সার্বিক আত্মবিকাশের পথ প্রদর্শন। 

'মহাবাদ' শুধু আধ্যাত্মবাদ-ই নয়, প্রকৃত আধ্যাত্মবাদ ও আধ্যাত্ম বিজ্ঞান ভিত্তিক মৌলিক ধর্ম— মানব ধর্মের মূর্তরূপ— 'মহাধর্ম' -এর মহা-ধর্মগ্রন্থ। মহর্ষি মহামানস প্রদর্শিত এবং প্রবর্তিত মানব বিকাশমূলক ধর্ম— মহাধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ হলো মহাবাদ। 

'মহাধর্ম'— এক সত‍্যাশ্রয়ী সুন্দর অকপট আনন্দময় ধর্ম। যা সরাসরি মানব মনের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে, এবং আরো ভালোভাবে জীবনযাপনের পথ দেখায়। যা প্রায় সমস্ত প্রকারের দোষ, যথা— হিংসা-বিদ্বেষ, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, নিষ্ঠুরতা, অন‍্যায়, অত্যাচার প্রভৃতি থেকে মুক্ত। মহাধর্ম হলো, প্রকৃত জীবনের পথ। মহাধর্ম হলো, মানুষের অবশ্যকরণীয় কর্তব্য কর্ম। 

প্রকৃতপক্ষে, মানবত্ব লাভের পথে চলাই আমাদের ধর্ম। মানবতার স্বার্থেই আমাদের ভক্তি, এবং মানব মনের বিকাশ— মানব চেতনার বিকাশই আমাদের ইস্ট। 

'মহাবাদ' উক্ত 'মহাধর্ম'-এর আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এ ধর্ম কোনো মিথ্যা প্রলোভন দেখায় না। কোনো মানবতাবিরোধী কর্মে উস্কানি দেয় না। স্বপ্নের বেসাতি করে না। 

'মহাবাদ' হলো মূল শিকড়ের সন্ধানে আমি থেকে পরমামি পর্যন্ত সম্যক আত্মানুসন্ধান। 'মহাবাদ' শুধু আধ্যাত্মিক পথের পথনির্দেশক-ই নয়, জাগতিক পথেরও পথনির্দেশক। বিরল কালযোগে মহর্ষি মহামানস-এর গভীর ধ‍্যানলব্ধ দিব‍্য দর্শন।

মানুষ গড়ার কর্মশালা

সুসন্তান উৎপাদনের মধ্যেই দেশ তথা মানবজাতির উজ্বল—উৎকৃষ্টতর ভবিষ্যত নিহিত রয়েছে। মানবেতর জীবদের মতো কামতাড়িত হয়ে, জ্ঞান-শিক্ষা ও প্রস্তুতি বিহিন— সুপরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ বিহিন সন্তান উৎপাদন দ্বারা দু-একটি ব্যতীক্রমী ঘটনা ছাড়া, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুসন্তান উৎপাদন সম্ভব নয়।

বীজ বা অঙ্কুরেই যদি গলদ থেকে যায়, সেক্ষেত্রে যতই যত্ন—পরিচর্যা সহ বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করা হোক না কেন, যথেষ্ট সাফল্য আসতে পারেনা৷ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন না করলে অনেক সময় সবটাই পন্ডশ্রম হয়ে যেতে পারে।

সুসন্তান বলতে এখানে, শুধু মাতা-পিতার অনুগত এবং তাদের পছন্দমতো বিভিন্ন গুণের অধিকারি হওয়াই বোঝায় না, সুসন্তান বলতে আমরা বুঝি— সব দিক থেকেই ভালো সন্তান। সুস্থ শরীর— সুস্থ মন সহ উচ্চ চেতনা সম্পন্ন এবং মানবিক গুণে সমৃদ্ধ মানব সন্তান। মানুষ গড়ার কাজটি শুরু করতে হবে— একেবারে গোড়া থেকে। বীজ থেকেই নয়, বীজ উৎপাদিত হয় যে গাছে, সেই গাছ থেকে শুরু করতে হবে এই কাজ।

এর প্রথম পদক্ষেপ হলো— ভাবী পিতা-মাতাকে সুস্থ-শিক্ষিত ও যোগ্য করে তোলা। শিক্ষার প্রথমাংশ অবশ্যই আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রম। আত্মবিকাশ শিক্ষা ও অনুশীলন পর্বের পরবর্তীতে সুসন্তান উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা, যথা— যৌন বিজ্ঞান, প্রজনন বিজ্ঞান, স্বাস্থ্যবিধি সহ মনোবিজ্ঞান ও অধ্যাত্ম-মনোবিজ্ঞানের শিক্ষা গ্রহন এবং পূর্ব প্রস্তুতির আয়োজন ও অনুশীলন কর্তব্য।

সর্বাগ্রে প্রয়োজন— সর্বাঙ্গীন সুস্থতা সহ মানসিক প্রস্তুতি৷ ভাবী পিতা-মাতার ভাবের ও চাহিদার মধ্যে ঐক্য স্থাপিত হতে হবে প্রথমেই। পরস্পরের মধ্যে প্রেম শ্রদ্ধা এবং উচ্চ মানবিকতার এক অনির্বচনীয় দিব্য ভাবমন্ডল সৃষ্টি হওয়া আবশ্যক। এর ব্যত্যয় হলে, তাদের দ্বারা প্রকৃত সুসন্তান উৎপাদন সম্ভব হবেনা।

নিজেদেরকে যোগ্য করে তুলতে হবে। গর্ভাধান— গর্ভধারণ, প্রসব এবং সন্তান পালনের প্রতিটি ধাপেই যুক্তিবিজ্ঞান এবং অধ্যাত্ম-বিজ্ঞানের (তথাকথিত ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতা নয়) আলোয় আলোকীত হয়ে সজাগ সচেতন থাকতে হবে। এখানে অলসতার কোনো স্থান নেই, কোনো রকম অন্ধবিশ্বাস— কুসংস্কার, অজ্ঞান-অন্ধত্বকে অনুপ্রবেশের সুযোগ দিলে হবেনা।

পরবর্তী কার্যক্রম হলো— সন্তানকে বুনিয়াদি শিক্ষা সহ প্রয়োজনীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রমের সহায়তা ছাড়াও, এখানে পিতা-মাতাকে সাধারণ মনস্তত্ব সহ শিশু-মনস্তত্ব,  সন্তানের মনস্তত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে, এবং প্রয়োজন মতো যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে আত্মবিকাশ কেন্দ্রের মনোবিদ-দের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে।

পরিমিতি বোধসহ সংযমী হয়ে মনোবিদের ভূমিকায় থাকতে হবে পিতা-মাতাকে। অপত্যস্নেহ-ভালবাসা সবই থাকবে, তবে নিয়ন্ত্রণাধীনে। নিজেদের মধ্যে আচরণগত বিরূপতা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সর্বদা সজাগ থেকে—  সুনিপুণভাবে নিজেদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

 

সন্তানকে সঠিকভাবে মানুষ করে তুলতে, অর্থাৎ তার শরীর ও মনকে যথেষ্ট বিকশিত করে তুলতে, কোন সময়— কোন অবস্থায় কী করণীয়, সে শিক্ষাক্রমই হলো— মহা-আত্মজ-বিকাশ শিক্ষাক্রম। এটা ‘মহামনন’ আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রমেরই একটি অংশ।

 

বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে নানা পরিবর্তন এবং নানা সমস্যা দেখা দেয়। যা তাদের সমস্ত জীবনকে প্রভাবিত করে থাকে। সে সবের মোকাবিলা করতে হবে খুব নিপুণভাবে। সন্তানের শৈশব ও কৈশোরকালে যাতে বিশেষ মনোবিকার এবং যৌনবিকার না ঘটে, সে ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে মাতা-পিতা, অভিভাবককে। প্রয়োজনে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তার জন্য।

 

সহজ প্রবৃত্তি ও অন্ধ-আবেগের ঊর্ধে উঠে—  যুক্তিবাদী বিজ্ঞান-মনষ্ক হয়ে, নিজেদেরকে নিজেরাই প্রশ্ন করতে হবে—  আমরা কি সুস্থ সন্তান উৎপাদনে সক্ষম? —আমারা কি সুসন্তান গ্রহণের যোগ্য? —আমরা আমাদের সন্তানকে কি ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা দিতে সক্ষম?

 

সবদিক বিচার করে—  নিজেদেরকে সক্ষম ও যোগ্য মনে হলে, তবেই অগ্রসর হওয়া উচিত। অন্যথায়, অর্থাৎ অক্ষমতা—  অযোগ্যতা থাকা সত্বেও কেউ যদি সন্তান গ্রহণে প্রবৃত্ত হয়, —তা’ হবে অতি অমানবিক কাজ। এই কান্ডজ্ঞান বিহীন কর্মের কুফল ভোগ করতে হবে তাদের সন্তানকে। যা সচেতন পিতা-মাতার পক্ষে মোটেই কাম্য নয়। এর কুফল থেকে পিতা-মাতাও রেহাই পাবেনা। এই কুকর্মের ফল তাদের সাথে সাথে সমস্ত মানবসমাজসহ সমগ্র দেশকেও ভোগ করতে হবে।

 

সন্তান গ্রহণের নুন্যতম যোগ্যতাগুলি—  

ক) ভাবী পিতা-মাতা উভয়রই সর্বাঙ্গীন (শারীরিক ও মানসিক) সুস্থতা থাকা আবশ্যক। অর্জিত ও বংশগত রোগ-ব্যাধি, যেগুলি পরম্পরাগতভাবে সন্তানদের মধ্যে সংক্রামিত হয়ে থাকে, সেগুলি থেকে সাবধান হতে হবে।

খ) ভাবী পিতা-মাতা উভয়ের মধ্যে ঐক্যমত ও সদ্ভাব থাকা আবশ্যক।

গ) সন্তান গ্রহণ ও প্রতিপালনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সক্ষমতাসহ তার দায়ীত্ব গ্রহণ এবং নিরাপত্তা দানের সক্ষমতা থাকা আবশ্যক।

ঘ) সন্তান-গ্রহণ ও পালন এবং বিকাশের অণুকুল পরিবেশ থাকা আবশ্যক।

ঙ) সন্তানকে যথেষ্ট সময় দেওয়ার সক্ষমতা থাকা আবশ্যক।

চ) আত্মবিকাশ শিক্ষায় শিক্ষিত অথবা যথেষ্ট বিকশিত মনের মানুষ হওয়া আবশ্যক।

ছ) সন্তান গ্রহণ ও পালনের জন্য ভাবী পিতা-মাতা উভয়ের মধ্যে মানসিক প্রস্তুতিসহ সার্বিক প্রস্তুতি থাকা আবশ্যক।

জ) সন্তান গ্রহণ, পালন ও তার যথাযথ বিকাশ ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও জ্ঞান থাকা আবশ্যক, এবং সেইমতো কর্ম সম্পাদনে ব্রতী হওয়া আবশ্যক।

 

সতর্ক থাকতে হবে— 

ছেলে-মেয়েদের আচরণ— চোখ-মুখের হাবভাবের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই, তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। এবং প্রয়োজনে মনোবিদের সাহায্য নিতে হবে। স্নেহান্ধ হলে হবেনা।

ভেবে দেখতে হবে—

বিয়ের পরেপরেই সন্তান নেওয়া উচিৎ নয়। একজনকে পৃথিবীতে নিয়ে আসাটা ঠিক হবে কি না, তার প্রতি কোনো অন্যায়-অবিচার হবে কি না, —তা’ অনেকদিন ধরে, অনেক দিক থেকে খুব ভালভাবে বিচার করে দেখতে হবে। তারপর সচেতন মন যদি সবুজ-সঙ্কেত দেয়, তবেই সন্তান গ্রহণে অগ্রসর হতে হবে।

অন্ধ-আবেগ, অন্ধ-বিশ্বাস ও সহজপ্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাই হলো উন্নত মানুষের কাজ।

সন্তান নেওয়ার পূর্বে অনেকদিন ধরে দেখতে হবে— ভাবী পিতা-মাতার মধ্যে সুসম্পর্ক আছে কি না, ‘ম্যাচ’ হচ্ছে কি না— দেখা দরকার সবার আগে। দেখতে হবে— সম্পর্ক ভেঙে যাবার সম্ভাবনা আছে কি না। উভয়ের মধ্যে বংশগতভাবে সংক্রামিত হবার মতো রোগ-ব্যাধি আছে কি না। উভয়ের মধ্যে সুস্থতা— স্বাভাবিকতা আছে কি না, দেখা দরকার। তারপরে পরিবেশ-পরিস্থিতি-সময়, দেশের হালচালসহ অন্যান্য জরুরী বিষয় বা ক্ষেত্রগুলি বিচার করে দেখতে হবে। আগামীদিনে পৃথিবী আমাদের সন্তানদের পক্ষে বাসযোগ্য থাকবে কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। শুধু সহজপ্রবৃত্তির তাড়নায় ছুটে বেড়ালে হবে না।

একটি শিশুকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা বা জন্ম দেওয়ার আগে খুব ভালোকরে ভাবুন।

মহর্ষি মহামানসের সতর্ক বাণী

 

আগামী দিনগুলোতে পৃথিবী কি তোমার সন্তানের বাসোপযোগী থাকবে? আগামী দিনগুলোতে পৃথিবীর যা অবস্থা দাঁড়াবে, তাতে—

 

৹ তুমি  কি তাকে তার জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয় জল দিতে পারবে?

 

৹ তুমি কি তাকে তার জীবন ধারণের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ শ্বাস-বায়ু দিতে সক্ষম হবে?

 

৹ যে হারে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী দিনগুলোতে তোমার সন্তান স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে পারবে তো?

 

৹ সারা পৃথিবীজুড়ে যুদ্ধ ও সন্ত্রাস যেভাবে ক্রমশই ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে চলেছে, তাতে তোমার কি মনে হয়, তুমি তোমার সন্তানকে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হবে?

 

৹ প্রায় প্রতিটি মানুষই আজ কমবেশি অসুস্থ। পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে এই অসুস্থতা ক্রমশই বেড়ে চলছে। এমতাবস্থায় তুমি কি নিশ্চিত যে তুমি একটি সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম?

 

৹ যেভাবে ক্রমশই পানীয় জলের অভাব, খাদ্যের অভাব, শ্বাসোপযোগী বায়ুর অভাব, এবং প্রখর তাপের প্রভাব বেড়েই চলেছে, চতুর্দিকে দূষণ ও বিষাক্ততা বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী প্রজন্মের মানুষের করুণ অবস্থাটা কল্পনা করো। আর, এই অবস্থায়, জেনেশুনে একটি শিশুকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্য তুমি কি দায়ী হবে না?

মুক্তি চাও? নাকি মুক্ত হতে ভয় পাও? 

 

এই মহাবিশ্বরূপ ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা নিম্নচেতন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই, শঠতা ও প্রবঞ্চনাপূর্ণ প্রচলিত ধর্ম তাকে দিয়েছে সহজবোধ্য কাল্পনিক ঈশ্বর, যাতে সে তা-ই নিয়েই নির্বোধের স্বর্গে অলীক সুখে মশগুল হয়ে থাকে।

মানুষ যাতে ক্রমশ চেতনা-সমৃদ্ধ হয়ে কোনো দিনই আর আসল ঈশ্বরকে জানার এবং উপলব্ধি করার ক্ষমতা অর্জন করতে না পারে, তার জন্য সমস্ত আয়োজনই পাকা করে রেখেছে এই ধর্ম নাম্নী অধর্মের কারবারিরা।

একমাত্র প্রবল চেষ্টার দ্বারাই, তথাকথিত ধর্মের এই কঠিন মায়াজালের ফাঁদ থেকে বেড়িয়ে এসে মুক্তি লাভ সম্ভব। চেষ্টা করো, নিশ্চয়ই পারবে। অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তিপ্রিয় সত‍্যপ্রেমী হয়ে ওঠো। আমার শুভকামনা তোমার সঙ্গে থাকবে।

দীর্ঘকাল অন্ধকারে থাকতে অভ‍্যস্ত হয়ে গেলে, যেমন আলোতে আসতে ভয় হয়, দীর্ঘ বন্দী-জীবন কাটানোর পর, মুক্ত জীবনে ফিরে আসতে যেমন ভয় হয়, তেমনই আজন্ম এই ধর্মের ঘেরাটোপে বন্দী থেকে অভ‍্যস্ত মানুষ— ধর্মের মোহজাল ছিঁড়ে বেড়িয়ে এসে মুক্তজীবন লাভের কথা ভাবতেই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।

এই ভয়কে জয় ক'রে মুক্তিলাভে সক্ষম হয় যে (যুক্তিপ্রিয় সত‍্যপ্রেমী মুক্তমনের) জন , সে-ই হলো প্রকৃত আলোকপ্রাপ্ত মানুষ।।

শিক্ষা প্রসঙ্গে, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি মহর্ষি মহামানস

ভুল বোঝাবুঝি মানবসমাজের এক বড় সমস্যা

 

উপন্যাস—গল্প—কবিতা—প্রবন্ধ সবাই লিখতে পারে না, —সবাই লেখেনা। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে— যারা পড়ে, পাঠক-পাঠিকা বলা হয় যাদের, তাদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু ঠিকমতো পড়তে পারেনা!

 

জ্ঞান-অভিজ্ঞতা এবং চেতনার স্বল্পতার কারণে, মন ও মস্তিষ্কের অক্ষমতার কারণে, এবং কিভাবে পড়তে হয়— তা’ না জানার ফলে, অনেকেই পড়ে এক— বোঝে আর এক!  প’ড়ে তার সঠিক অর্থ বুঝতে পারেনা অনেকেই। নিজের নিজের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা —কল্পনা অনুযায়ী, নিজের মতো ক’রে— এক একজন এক একটা অর্থ ক’রে নেয়, এক এক রকমের চিত্র গ’ড়ে নেয় মনের মধ্যে।

 

মোটেই দুর্বোধ্য নয়, সহজ-সরল —সাধারণ লেখার ক্ষেত্রেও এইরূপ ঘটতে দেখা যায়। লেখক/লেখিকা যা বলতে চেয়েছে, যা বোঝাতে চেয়েছে, তা’ না বুঝে— এরা অন্য কিছু বোঝে, অন্য কিছু অর্থ ক’রে থাকে। ফলে, পঠন-পাঠনের উদ্দেশ্যটাই বিফল হয়ে যায়। এই ব্যাপারে— এর প্রতিকারের ব্যাপারে বিশেষ নজর না দিলে, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব হবেনা।

 

শুধু পড়া নয়— শোনার ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটনা ঘটে থাকে। শুধু ‘ধান’ শুনতে ‘কান’ শোনা নয়। এক শুনে— তার আর এক অর্থ করা বা বোঝার ঘটনা আমাদের চারিপাশে সর্বদাই কোথাও না কোথাও ঘটে চলেছে। এই ভুল বোঝাবুঝিই আমাদের সমাজের এক বড় সমস্যা। এর থেকেই আরো বহু সমস্যা জন্ম নিচ্ছে। বহু ঘটনা—দুর্ঘটনা, বিশৃঙ্খলা—অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

  

এর পিছনে অন্যমনষ্কতা—উদাসীনতা, মানসিক অস্থিরতা ও অসুস্থতা এবং আগ্রহের অভাব অনেকাংশেই দায়ী। তাই, এর প্রতিকার করতে হলে— বিভিন্ন উপায়ে মানুষের জ্ঞান ও চেতনার যেমন বৃদ্ধি ঘটাতে হবে, সেইসঙ্গে মস্তিষ্কের জড়তা, মনের অস্থিরতা ও অসুস্থতারও নিরসন করতে হবে। তা’ না করতে পারলে— ‘অন্ধের হস্তি দর্শন’-ই হবে, লাভ হবে না কিছুই।

 

কোনো কোনো ক্ষেত্রে, বিষয়-বস্তুতে আকর্ষণীয় রসের অভাব থাকে, বোঝানোর ত্রুটি বা অক্ষমতাও থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, যারা ভালো বুঝতে পারেনা, তারা ভালো বোঝাতেও পারেনা। তাই শিক্ষা ব্যবস্থা বা কার্যক্রমকে সফল ক’রে তুলতে হলে— চিকিৎসা বিজ্ঞান, পুষ্টি বিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হবে আমাদের।     

 

 

বুঝতে না পারার কারণ

 

কোনো কিছু বুঝতে গিয়ে— আমরা আমাদের চেনা-জানা ছবি— পূর্ব অভিজ্ঞতা— বিশ্বাসের সাথে মিল খুঁজি। অনেকটা মিল হলে তবেই তা’ আমরা সহজে বুঝতে পারি। আর যদি তা’ অনেকাংশে না মেলে, সেক্ষেত্রে সেই বিষয়টি বুঝতে আমাদের কষ্ট হয়, অথবা আমরা বুঝতে পারিনা। এছাড়া, অনেক সময় আমাদের মন তা’ মেনে নিতে— বিশ্বাস করতে অপারক হয়।

 

তাই, কাউকে কোনো কিছু বোঝাতে অথবা নতুন কিছু বোঝাতে গেলে, প্রথম থেকেই— যাকে বোঝানো হচ্ছে, তার চেনা-জানা জগতের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আস্তে আস্তে বিশ্বাসের জায়গা তৈরী হলে— একটু একটু ক’রে— মাঝে মাঝে অল্প চেনা বা আংশিক চেনা বিষয়ের অনুপ্রবেশ ঘটাতে হবে তার মধ্যে।

 

যদি একেবারেই অচেনা—অজানা কোন বিষয় জানাতে বা বোঝাতে হয়, তাহলে অবশ্যই তাকে চেনা ছবির মোড়কে অথবা চেনা জগতের হাত ধরেই তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।

 

তবে, এই বোঝার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে— প্রয়োজন বোধ তৈরি করতে হবে সবার আগে। স্বার্থ— প্রয়োজনবোধ না থাকলে, ব্যক্তির মধ্যে বোঝার আগ্রহই সৃষ্টি হবেনা। এই প্রয়োজনবোধ যত তীব্র হবে— ততই জানা-বোঝার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে— নিজের স্বার্থেই। এই প্রয়োজন বোধও আমাদের চেনা-জানা ক্ষেত্রের মধ্যেই থাকতে হবে। অজানা—অচেনা কোনো প্রয়োজনীয়তাকে একদম হুট ক’রে আমাদের মনের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা। তার জন্য সুকৌশলে ধীরে ধীরে সঠিক পথে এগনো দরকার।

 

প্রয়োজন থাকা সত্বেও— স্বার্থ থাকা সত্বেও, অনেকসময় আমরা অনেক কিছুর প্রতি আগ্রহ বোধ করিনা, —বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক শ্রম স্বীকার করতে অনীহা দেখা দেয় আমাদের মধ্যে। এই অনীহা—বিরাগ—আলস্য এসবের পিছনে থাকে শারীরিক এবং/অথবা মানসিক দুর্বলতা, অক্ষমতা অথবা অসুস্থতা।

 

প্রকৃত কারণটি বুঝে—, তখন তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু এখানেও সেই বোঝার ব্যাপারটা থেকেই যায়। বোঝা ও বোঝানোর মধ্যে—আনন্দরস— মজা থাকলে, বোঝা ও বোঝানো উভয়ই অনেক সহজ হয়ে ওঠে।       

 কিছুতেই মনে পড়ছে না!

 

আমরা মন দিয়ে যাকিছু পড়ি—শুনি—দেখি, কোনোটাই আমরা ভুলে যাইনা। সব কিছুই আমাদের স্মৃতি-ভান্ডারে সঞ্চিত থাকে। কিন্তু প্রয়োজনমতো তা’ স্মরণ করতে গিয়ে— অনেক সময়ে আমাদের নাজেহাল হতে হয়। কখনো কখনো— অনেক চেষ্টা করেও তাকে মনের পর্দায় তুলে আনা সম্ভব হয়না।

 

আবার দেখাযায়, অন্য এক সময়— আমাদের অজান্তেই ‘মন’ তার ‘সার্চ-ইঞ্জিন’ -এর সাহায্যে কোনো এক চাপা পড়া ফাইল থেকে তাকে খুঁজে বের ক’রে এনে—  হাজির করেছে !

 

তাছাড়া, আমরা সবাই লক্ষ্য করেছি, যখন কিছুতেই কোনো একটা কিছু মনে করতে পারছিনা, তখন অপর কেউ— কোনো একটা সূত্র দিয়ে সাহায্য করার সাথে সাথেই— সেটা আমাদের মনে পড়ে গেছে ! এর থেকেই আমরা বুঝতে পারি, একমাত্র বিশেষ অসুস্থতা ছাড়া, কোনো জানা তথ্যই আমাদের মন থেকে মুছে যায় না। সমস্যা— শুধু প্রয়োজনমতো তাকে মনের সামনে তুলে আনা !

 

খেয়াল করো, একটু আগেই বলেছি— একটা সূত্র পাওয়ার সাথে সাথেই, একটু আগে মনে না আসা বিষয়টি তৎক্ষণাৎ আমাদের মনে পড়ে গেছে ! তাহলে, আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই ‘সূত্র’ হলো— স্মরণ করার এক বড় চাবিকাঠি ! সূত্রই আমাদের মনের ‘সার্চ-ইঞ্জিন’-কে সেই গোপন কুঠুরী থেকে তথ্য বের ক’রে আনতে সাহায্য করে। 

 

তাই, প্রয়োজনমতো কোনো তথ্যকে স্মরণ করতে হলে— তথ্যকে বিশেষ বিশেষ সূত্রের সাহায্যে— সুতো দিয়ে গেঁথে রাখতে হবে মনে, যাতে প্রয়োজন হলেই তাকে ডেকে আনা যায়।

 

এ’ নিয়ে ক্লাসে বিশদভাবে আলোচনা করবো। বিশেষ পদ্ধতির সাহায্যে এই কাজটি ছাত্র-ছাত্রীরা সহজেই করতে সক্ষম হবে। তবে, মন ও স্নায়ু-তন্ত্রের সুস্থতা থাকা অত্যন্ত জরুরী। মন ও স্নায়ু-তন্ত্র উত্তেজিত—বিক্ষিপ্ত, দুর্বল ও অস্থির থাকলে, তার পক্ষে সুষ্ঠুভাবে কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। সেইজন্য, শিক্ষা বিভাগের পাশাপাশি  আমাদের রয়েছে— বিশেষ চিকিৎসা বিভাগ।  

উত্তেজনা— ভুলে যাওয়ার অন্যতম কারণ

 

মস্তিষ্কের উত্তেজনা— মনের উত্তেজনা, উত্তেজক চিন্তা-ভাবনা— আমাদের মনেরাখা প্রয়োজন এমন বিষয়গুলি ভুলে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এরসাথে যদি যুক্ত হয়— দুর্বলতা আর অস্থিরতা, তাহলে তো সোনায়-সোহাগা!

 

ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকের মধ্যেই কাম-উত্তেজনার প্রাবল্য লক্ষ্য করা যায়। অত্যাধিক কামোত্তেজনার কারণে কত প্রতিভা— কত জীবন যে নষ্ট হয়ে যায়, —তার কোনও হিসেব নেই। কামোত্তেজনা আমাদের মস্তিষ্ক ও মনের উত্তেজনা ঘটায়। শুধু তা-ই নয়, এর বাড়াবাড়ি হলে— আমাদেরকে দুর্বল—অস্থির—অসুস্থ বিপথগামী ক’রে তুলতে পারে।

 

প্রতিনিয়ত ঘ’টে চলা— চিরকালীন এই সমস্যা নিয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের মা-বাবারাও ভীষন অসহায় বোধ ক’রে থাকে। নিরুপায় হয়ে তারা কপালের হাতে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হয়।

 

কিন্তু, প্রাচীনকালের ঋষিদের হাতে ছিল এর প্রতিকার ব্যবস্থা। তাঁরা বিশেষ কিছু ভেষজের দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীদের সাময়ীক উত্তেজনার প্রশমন ঘটাতে পারতেন। ধারাবাহিকভাবে জ্ঞান-চর্চার অভাবে— এ’রকম অনেক কিছুই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেক স্বল্প-জ্ঞানী মা-বাবা আবার এর প্রয়োগ ঘটাতে ভীত হয়ে ওঠেন!

 

কোনোকিছু তলিয়ে বোঝার জন্য যে মানসিক পরিশ্রমটুকু প্রয়োজন, —তাতে অনেকের মধ্যেই অনিহা দেখা যায়, ফলে যে তিমির— সেই তিমিরেই থেকে যাই আমরা।

 

প্রাচীন ঋষিরা ছাত্র-ছাত্রীদের যৌনক্ষমতার বিনাশ না ঘটিয়ে, তাঁরা এই কামোত্তেজনাকে বর্ধিত ক’রে তোলে যে অগ্নিরূপ ‘পিত্ত’— তার প্রশমন ঘটাতেন। বর্তমানে আমাদের হাতে হোমিওপ্যাথিক ওষুধও আছে— যার দ্বারা কামোত্তেজনার আধিক্য অনেকটাই নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। তবে, যে কোনো ভেষজেরই অপরিমিত—যথেচ্ছ ব্যবহার যে ক্ষতিকর, —তা’ আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

 

উত্তেজনার পিছনে অসুস্থতা একটি বড় কারণ। শরীরে অর্জিত বা বংশগত রোগ-ব্যাধি, নানা প্রকার রোগবিষ, ক্রিমি, জীবানু—ফাঙ্গাস প্রভৃতি আমাদের বিভিন্ন অর্গানসহ মনের উত্তেজনা ঘটিয়ে— আমাদেরকে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে অক্ষম ক’রে তোলে। তাই, এ’সম্পর্কে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকতে হবে, এবং যথাবিহিত ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

নির্বিচারে যথেচ্ছ আহার— উত্তেজনা সৃষ্টির পিছনে আর একটি বড় কারণ। আমাদের প্রকৃতি অনুসারে, প্রকৃতির প্রকৃতি অনুসারে— অর্থাৎ পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং ঋতু অনুসারে, খাদ্য-পানীয় নির্বাচন করা উচিত। এর অন্যথা হলেই, তার কুফল ভোগ করতে হবে, তার জন্য আমাদের অনেক ক্ষয়-ক্ষতি শিকার করতে হতে পারে।      

 

শরীর-মনে উত্তেজনার অভাব দেখা দিলে, চিকিৎসা করাতে হবে। তার জন্য নিয়মিতভাবে উত্তেজক খাদ্য বা পানীয় গ্রহন করা একেবারেই উচিৎ নয়। উত্তেজনাকর খাদ্য—পানীয় —নেশাজাত দ্রব্য আমাদের শরীর-মনের স্বাভাবিক অবস্থা এবং ব্যবস্থা বা সিস্টেমকে নষ্ট ক’রে দিয়ে— অসুস্থ-অস্বাভাবিক ক’রে তোলে। এরফলে, তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায়না।

 

অধিকাংশ সময়েই যদি মাথার মধ্যে হাজারো এলোমেলো— বিক্ষিপ্ত চিন্তা, নানা রকমের ধারনা বা আইডিয়া ঘোরাঘুরি করতে থাকে, মন যদি কোনো একটা বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে গুছিয়ে চিন্তা করতে অক্ষম হয়, একটা বিষয়কে বা ছবিকে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে অক্ষম হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেই মন খুবই অস্থির। এই অস্থির মন, যা পড়ে— যা শেখে, তা’ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনা, অচিরেই তা’ বিস্মৃত হয়।    

 

 

পড়াশোনা করা যেন লড়াই করা না হয়

ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে মহর্ষি মহামানসের উপদেশ

পাশের ঘরে টিভির শব্দ তোমার মনোযোগকে সেই দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তুমি চেষ্টা ক’রে যাচ্ছ— ওখান থেকে মনকে সরিয়ে নিয়ে পড়ায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে। তার জন্য তোমায় লড়াই করে যেতে হচ্ছে।

 

রান্নাঘরে মা তোমার পড়ার আওয়াজ শুনতে না পেলে ভাববে, তুমি পড়ছনা। তাই তুমি চেঁচিয়ে পড়তে চেষ্টা করছ। কিন্তু চেঁচিয়ে পড়তে গিয়ে তুমি পাঠ্য বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করতে পারছনা। পড়ছ— কিন্তু মাথায় কিছু ঢুকছে না। সেখানেও লড়াই।

 

মাথার মধ্যে বন্ধুদের আড্ডা অথবা ফেসবুকের মজার কথা বারবার ফিরে ফিরে আসছে। ওখান থেকে মনকে সরিয়ে নিতে— সেখানেও লড়াই করতে যাচ্ছ। ইতিহাসটা আবার তেমন পছন্দের বিষয় নয় তোমার কাছে, তবু জোর ক’রে পড়তে হচ্ছে, এখানেও লড়াই। এই রকম আরো অনেক লড়াই ক’রে লেখাপড়া করতে গিয়ে— আসল লেখাপড়া কিছুই হচ্ছে না, শুধু লড়াই ক’রে ক’রে মাথা ব্যাথাই হয়ে যাচ্ছে।

 

অথচ যখন তুমি তোমার কোনো প্রিয় গল্পের বইয়ের মধ্যে ডুবে যাও, অথবা কোন সুখকর বা মজার কল্পনায় বুঁদ হয়ে থাকো, তখন কোনো লড়াই করতে হয়না তোমাকে! এমনকি মা ডাকলেও তা’ কানে ঢোকে না তখন। এর কারণটা একবারও ভেবে দেখেছ কী?  

এর কারণ আর কিছুই নয়— ‘ইন্টারেস্ট’ —আগ্রহ!    

 

এবার লক্ষ্য কর— গল্পের বই পড়ার সময়, অথবা বন্ধুদের চিন্তা— ফেসবুকের চিন্তা করার সময় তুমি কল্পনায় সেই সব ছবি দেখছিলে, এবং সেই চলমান বা জীবন্ত ছবিতে তোমার মন আকৃষ্ট হয়ে ছিল। কিন্তু যখন তুমি পাঠ্যবই পড়ছিলে তখন বিশেষ কোনো কল্পনা— বিশেষ কোনো ছবি ছিলনা। তাহলেই বুঝতে পারছো সমস্যাটা কোথায়?  —এই ছবি যত স্পষ্ট হবে— মনে থাকবে তত বেশি।    

ভালো ছাত্র-ছাত্রী হতে হলে—

ভালো ছাত্র-ছাত্রী হতে হলে— ছাত্র/ছাত্রী জীবনে সফল হতে হলে— স্বাস্থ্যবিধি ও সুস্থতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং এ’ সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। এর মধ্যে প্রধান হলো— পেটের সুস্থতা। অম্ল-অজীর্ন-বায়ু, কৃমি, লিভারসহ সমস্ত পরিপাকতন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকা দরকার।

 

অসুস্থতা যাতে সমস্ত পরিশ্রম পন্ড ক’রে দিতে না পারে, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে, এবং নিজ নিজ প্রকৃতি ও স্থান—কাল— অনুসারে পরিমাণ মতো পান-ভোজন করতে হবে। এছাড়া, আরেকটি বড় শত্রু হলো— অধিক বা অস্বাভাবিক কামোত্তেজনা। প্রয়োজনে এসবের জন্য প্রাকৃতিক বা বিকল্প চিকিৎসার সাহায্য নিতে হবে।   

 

পরিপাকতন্ত্রের উত্তেজনা— মনকে উত্তেজিত ক’রে তোলে। পরিপাকতন্ত্রের বিশৃঙ্খলা মানসিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

মনেরাখতে হবে, সব কিছু সবার জন্য সমান উপযোগী নয়। খাদ্য সে যতই ভালো হোক, সবার ক্ষেত্রেই ভালো হবে এমন নাও হতে পারে।

 

দেখতে হবে, কোন্‌ খাদ্য/পানীয় খাওয়ার পর তুমি প্রায়শই অসুস্থ বোধ করছ...। তেমন হলে, বুঝতে হবে, সেই খাদ্য/পানীয় যতই সুস্বাদু হোক না কেন, তা’ তোমার পক্ষে উপযুক্ত নয়। 

ছাত্র-ছাত্রীদের মা-বাবা, অভিভাবকদের উদ্দেশে কিছু কথা

 

আপনার সন্তানকে যুক্তিবাদী হতে শিক্ষা দিন। এমন কিছু শেখাবেন না বা করতে বলবেন না, যার কোনো যুক্তি নেই। যার অর্থ অথবা ব্যাখ্যা আপনার নিজেরই জানা নেই।

 

আপনার সন্তানকে অধিকাংশ সময়ে উচ্চস্বরে বা চেঁচিয়ে কিছু বলবেন না, অথবা গাল-মন্দ করবেন না। তাতে, ভবিষ্যতে সে আর আপনার কথায় গুরুত্ব দেবেনা। আপনার কথা শুনবে না। প্রয়োজনে, চোখ-মুখের অভিব্যক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিন, আপনি তার উপর অসন্তুস্ট হয়েছেন।

 

সন্তানকে ভালোবাসবেন, কিন্তু ভালোবাসার দাস হবেন না। তাহলেই সে আপনার দুর্বলাতার সুযোগ নিতে পারে। অধিক আদর ও প্রশ্রয় দেবেন না। তার চাহিদা বাড়াবাড়ি হলে— অস্বাভাবিক হলে, তাকে বুঝিয়ে বলুন। প্রয়োজনে একটু কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে।

 

সন্তানের সামনে নিজেকে বা নিজেদেরকে সংযত রাখুন। মা-বাবার মনোমালিন্য—দ্বন্দ্ব—অশান্তির প্রভাব যেন সন্তানের উপর না পড়ে।    

 

সন্তানের সাথে নিয়মিতভাবে বাস্তবের নানা শিক্ষনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করুণ। সন্তানকে সংসারের এবং সমাজের বাস্তব অবস্থা একটু একটু করে বুঝিয়ে বলুন। সন্তানের কাছে সেরা শিক্ষক/শিক্ষিকা হয়ে উঠুন। সন্তানের কাছে শ্রদ্ধেয়-আদর্শ-গুরুত্বপূর্ণ— পরম আকাঙ্খিত হয়ে উঠুন। নিজে সেরা হয়ে উঠুন— সন্তানকেও সেরা ক’রে তুলুন।

 

সন্তানের সামনে পরচর্চা—পরনিন্দা করবেন না, এবং তাকে এ’ ব্যাপারে উৎসাহিত করবেন না।অলৌকীক বা কাল্পনিক কোনো গল্প শোনালে, অবশেষে তাকে বলুন— এটা একটা কাল্পনিক বা বানানো গল্প।

 

সন্তানকে মিথ্যা কথা বলা, তার সাথে মিথ্যা আচরণ করা এবং তার মিথ্যাচরণে প্রশ্রয় দেওয়ার কুফল ভোগ করতে হবে আপনাদের সবাইকে— সারা জীবন ধরে। সন্তানের সাথে সহজভাবে খোলামেলা আলোচনা করু্ম, এবং তাকেও করতে দিন। কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকুন। ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তিকে অধিকাংশ মানুষই গুরুত্ব দেয়না— পাত্তা দেয় না।

 

সন্তানের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না— সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। তাই বলে, সব সময় খুঁত খুঁতে হলে হবেনা। উদ্বিগ্ন হলে হবে না।

 

নিজের আচরণগত সমস্যা থাকলে, তার জন্য মনোবিদ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে আত্মবিকাশ (সেলফ-ডেভালপমেন্ট)-এর জন্য আমাদের ‘মহামনন কেন্দ্রে’ আসুন।

 

ভাল-মন্দ খাওয়ালে, দামীদামী স্কুল— শিক্ষক এবং অন্যান্য সবকিছু দিয়ে সুখে-সাচ্ছন্দে রাখলেই সন্তান মানুষ হয়ে যায়না। অবশ্যই সাধারণ প্রয়োজনটুকু মেটাতে হবে। কিন্তু তার সঙ্গে চাই আরো অনেক কিছু—যা সবসময় অর্থ দিয়ে পুরণ করা যাবেনা। সন্তান মানুষ করতে চাই আন্তরিক ইচ্ছা, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং জ্ঞান, আর সেই জ্ঞানানুসারে তার প্রয়োগ করতে হবে।

এখানে ভাল-মন্দ মানে— যা মুখে ভাল লাগে, কিন্তু পেটে গিয়ে মন্দ করে। উপযুক্ত পরিবেশ তৈরীর সাথে সাথে সন্তানকে খাওয়ানোর নিয়ম— স্বাস্থ্যবিধি জানতে হবে। জানতে হবে, সন্তানের সাথে কখন কিরূপ ব্যবহার করতে হবে— তাও।  

 

আজকের অনেক মা-বাবাই যথাসাধ্য বিনিয়োগ ক’রে, অক্লান্ত পরিশ্রম করেও সন্তানকে মানুষ ক’রে তুলতে না পারার কারণই হলো— যথেষ্ট জ্ঞানের অভাব আর সুস্থতার অভাব।

 

সন্তানের মধ্যে আচরণগত ত্রুটি থাকা সত্বেও, অনেক মা-বাবাই স্নেহে অন্ধ হয়ে সেগুলি সম্পর্কে সচেতন হয়না— প্রতিকারে সচেষ্ট হয়না। মনোবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে, বরং সন্তানের সেই ত্রুটিকেই অনেকে গর্ব ক’রে সবার কাছে জাহির ক’রে থাকেন। তাহলে ভেবে দেখুন, কী হতে পারে তার পরিণতি!

 

বেশি রাগ—উত্তেজনা—অস্থিরতা, বেশি জেদিভাব— অধৈর্য—অসহিষ্ণুতা, অপরাধ প্রবণতা, অথবা আলস্য, বিষন্নতা এগুলি সমস্তই জীবনে সাফল্যলাভের পক্ষে বড় অন্তরায় হয়ে থাকে।

 

অনেক মা/বাবা নিজের এবং নিজের সন্তানের দোষ দেখতে পাননা। অপরকে দোষি করেই তারা আত্মতৃপ্তি লাভ ক’রে থাকেন। আবার অনেকে প্রায় সময়েই সন্তানকে অযথা বকাবকি মারধোর ক’রে থাকেন। এর কোনোটাই সন্তানের পক্ষে ভালো হতে পারেনা।

 

বুঝতে হবে— বুঝতে চেষ্টা করতে হবে, এবং ধৈর্য ধ’রে সন্তানকে বোঝাতে হবে। তাতেও যদি কাজ না হয়, তখন মনোবিদ বা চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। অনেকসময়, মা-বাবার দোষ— ক্রোধ-উত্তেজনা প্রভৃতি সন্তানে সংক্রামিত হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে, প্রয়োজনে মা-বাবাকেও চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।      

সবশেষে বলি, আপনাদের মধ্যে কারো যদি মনেহয়, ‘—আমি এতোগুলো ছেলে-মেয়ে মানুষ করেছি, আমাকে কিনা ছেলে মানুষ করা শেখাচ্ছে!’ দয়াকরে আমাকে ক্ষমা করবেন, এই পরামর্শগুলি মোটেই তার জন্য নয়। যাঁরা এগুলি সম্পর্কে আগ্রহী— যাঁরা এগুলি তাদের জীবনে গ্রহন করতে এবং প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক, আমার এই পরামর্শ শুধু মাত্র তাদের জন্য।        

গুরু—মেন্টর

 

কোনো বিষয়ে শিক্ষার সাথে সাথে, যদি সেই বিষয়ে সর্বোচ্চ সাফল্য লাভ করতে চাও, তাহলে অবশ্যই একজন বহুদর্শী—অভিজ্ঞ এবং নির্ভরযোগ্য মেন্টর অথবা মেন্টর কাম কোচের সাহায্য নিতে হবে তোমাকে। যিনি হবেন— একদিকে উপদেষ্টা, আবার অপরদিকে প্রশিক্ষক।

 

গান-বাজনা, অভিনয়, ছবিআঁকা, খেলাধুলা, পড়াশোনা অথবা আধ্যাত্মিকতা— যে কোনো ক্ষেত্রেই— প্রথাগত শিক্ষা গ্রহনের সাথে সাথে, অথবা শিক্ষা গ্রহনের পূর্বে বা শুরুতেই ঐরূপ একজন উচ্চশ্রেণীর গুরুর পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। যিনি তোমাকে পরীক্ষা ক’রে— তোমার আগ্রহ, যোগ্যতা, পরিবেশ-পরিস্থিতি— সুবিধা-অসুবিধা এবং অন্যান্য ক্ষমতা-অক্ষমতা বুঝে, তোমাকে সঠিক পথ দেখাবেন।

 

কোন্‌ বিষয় নিয়ে এগিয়ে গেলে ভালো হবে, কিভাবে এগিয়ে গেলে সর্বাধিক সাফল্য আসবে, কোথায় তোমার ঘাটতি আছে— ভুল-ত্রুটি আছে, কিভাবে নিজেকে ত্রুটিমুক্ত করবে, —দেখিয়ে দেবেন তিনি। অনেক অজানা পথের সুলুকসন্ধান, অনেক অজানা সম্পদ পাওয়া যাবে তাঁর কাছে। প্রতিভার সঠিক বিকাশ ঘটাতে এবং জগতের কাছে তার যথাযথ প্রকাশ ঘটাতে সাহায্য করবেন তিনি তোমাকে।

 

অন্ধ-আবেগ— অন্ধ-বিশ্বাস, মিথ্যা অহঙ্কার নিয়ে সাফল্য নামক মরীচিকার পিছনে ছুটে চলা— হিতাহিত জ্ঞানশূন্য মানুষের জন্য একজন মেন্টরের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। বিনীত—অনুগত—উদ্যোগী—পরিশ্রমী সমঝদার ছাত্র-ছাত্রীই একজন মেন্টরের কাম্য।

 

বহু গুণি—প্রতিভাবান মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, অনেক উচ্চস্থানে পৌঁছেও, নক্ষত্র-পতন ঘটেছে— শুধুমাত্র একজন উপযুক্ত মেন্টরের অভাবে। আবার, স্তাবক পরিবেষ্টিত— অহঙ্কারী অনেক নক্ষত্রই খসে পড়েছে গুরুর উপদেশ—পরামর্শ অগ্রাহ্য করার ফলে।

 

আজকের দিনে, শিক্ষাজগতে উচ্চশ্রেণীর উপদেষ্টা গুরুর বড়ই অভাব! থাকলেও, তাঁরা আছেন অন্তরালে। অনেকেই তাদের সন্ধান জানে না। অজ্ঞান-অবুঝ মানুষের অত্যাচারের ভয়েও অনেকে অন্তরালে থাকা পছন্দ করেন। অনেক মানুষই দিশাহারা হয়ে ঘুরছেন— শুধুমাত্র একজন সদ্‌গুরুর কৃপা লাভের উদ্দেশে।         

সৃজনশীল হও

মহা আনন্দময় শিক্ষা ও জ্ঞানের জগতে প্রবেশ কর!    

 

এমন কোনো মানুষ নেই—যার মধ্যে কোনো সৃজন ক্ষমতা নেই। আমাদের এই জগতে, আনন্দলাভের—সুখলাভের জন্য অনেক কিছু আছে। অনেক কিছু করার আছে, পাওয়ার আছে—দেওয়ার আছে। কিন্তু সৃষ্টির মধ্যে যে আনন্দ— সুখ আছে, তার কোনো তুলনা নেই। 

 

খুঁজে দেখো তোমার মধ্যে কোন সৃজন ক্ষমতা লুকিয়ে আছে। —একবার সন্ধান পেলেই, তার বিকাশ ঘটাতে লেগে যাও। সাফল্য লাভের জন্য যা যা করণীয়— তা’তো তুমি আগেই জেনেছ। এবার সেই পথ ধরে এগিয়ে যাও— সৃষ্টির আনন্দ লাভের উদ্দেশে।

 

একজন সৃজনশীল ব্যক্তি শুধু কোনো নির্দিষ্ট বিষয়েই সৃজন ক্ষমতা সম্পন্ন— তা-ই বা কেন হবে! তোমার পড়াশোনা— খেলাধুলা, তোমার আচরণ— পোষাক-পরিচ্ছদ, এমনকি দৈনন্দিন সব কাজের মধ্যেই তুমি তোমার নিজস্ব বৈশিষ্টের ছাপ রাখতে পারো— তোমার সৃজনশীল মনের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে। এতে শুধু তুমি নিজেই আনন্দ পাবে, তা-ই নয়! আরো অনেককেই আনন্দ দিতে পারবে। আর, অপরকে আনন্দ দিতে পেরে— তোমার আনন্দ আরো বহু গুণ বেড়ে যাবে। একবার ভেবে দেখতো—, কেমন হবে সেই আনন্দজনক ব্যাপার!!   

 

এছাড়া, আনন্দলাভের আরেকটি বড় উৎস হলো— আবিষ্কার! আবিষ্কার হলো— অদেখা-অজানা-অপ্রকাশিত থাকা বা গোপনে থাকা সত্যকে খুঁজে পাওয়া— তাকে উন্মুক্ত করা। আমাদের পড়াশোনা— শিক্ষাক্রমের মধ্যেও এমন অনেক কিছু আছে, যা অনেকেই বুঝতে পারেনা— লক্ষ্য করে না, অথবা অব্যক্ত থাকে— গোপন থাকে। তাদের যদি তুমি আবিষ্কার করতে পারো— দেখবে, জ্ঞান লাভের সাথে সাথে অনেক আনন্দ লাভও হবে। পড়াশোনার বড় মজাতো এর মধ্যেই! তবে এর জন্য তোমাকে সত্যপ্রিয় হতে হবে— সত্যকে ভালোবাসতে হবে। আর, হতে হবে— যুক্তিবাদী—বিজ্ঞানমনষ্ক। আস্তে আস্তে দেখবে, নতুন কিছু শিখতে পেরে— তুমি সব চাইতে বেশি আনন্দ লাভ করতে পারছ! তখন, জ্ঞানলাভেই তোমার আনন্দ লাভ হবে। জীবনের আসল আনন্দের উৎস খুঁজে পাবে তুমি।     

 

এইতো মানুষ!

মানুষ! গাছের যে ডালে বসে আছে, সেই ডালেরই গোড়া কেটে চলেছে সে! যে প্রকৃতি— পরিবেশসহ সমগ্র জীবজগতের উপর তার অস্তিত্ব নির্ভর করছে, দিনের পর দিন ধরে সে সেই প্রকৃতি— পরিবেশ এবং জীবজগতকে নির্বিচারে ধ্বংস করে চলেছে!

ভাবখানা তার এমনই— যেন সে এই প্রকৃতি— পরিবেশসহ সমগ্র জীবজগতের একছত্র অধিপতি, দন্ডমুন্ডের অধিকর্তা!  তার স্বার্থ— তার চাহিদা মেটাতেই যেন আর সবার জন্ম হয়েছে, তার ক্ষুধা মেটাতেই এসমস্ত বলিপ্রদত্ত! এদেরকে ধ্বংস করা যেন তার মৌলিক অধিকার। এদেরকে রক্ষা করার কোনো দায় নেই তার।

অজ্ঞান-অন্ধ মানুষ! একবারও সে তার ভবিষ্যতের কথা ভেবে দেখেনা। ভেবে দেখেনা, সামঞ্জস্যপূর্ণ এই প্রকৃতি— পরিবেশসহ সমগ্র জীবজগতের উপরেই তার টিঁকে থাকা নির্ভর করছে। এদের ভারসাম্য নষ্ট হলে— তার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। অজ্ঞান-অন্ধত্বের কারণেই সে একের পর এক অন্যায়-অত্যাচার— অনাচার করে চলেছে। পরিবেশ দূষণ ঘটিয়ে চলেছে।

হায় মানুষ! সে নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব বলে, আত্মশ্লাঘা বোধ করে থাকে। যে সচেতন মনটির দৌলতে সে মানুষ এবং অন্যান্য সমস্ত জীব থেকে স্বতন্ত্র, সেই ‘মন’ সম্পর্কে— নিজের সম্পর্কেই সে সচেতন নয়। তো, এই মানুষের কি যে পরিণতি হবে, তা’ সহজেই অনুমেয়।       

অনেকেরই মনে হতে পারে, একটা ধর্মগ্রন্থের মধ্যে (প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী) ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচরণ-অনুশাসন, পূজা-উপাসনা-প্রার্থনা সম্পর্কে কিছু না বলে, শিক্ষা—চিকিৎসা ও বিজ্ঞান সংক্রান্ত এসব কথা বলা হয়েছে কেন!

প্রচলিত ধর্মের সঙ্গে ‘মহাধর্ম’-এর পার্থক্য এখানেই। ‘মহাধর্ম’ আমাদেরকে অন্ধের মতো অলীক কোনকিছুর পিছনে না ছুটিয়ে, সুস্থ-সমৃদ্ধ-বিকশিত মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে বলে। ‘মহাধর্ম’ আমাদেরকে অজ্ঞান-অন্ধত্ব মোচনের পথ দেখায়, আমাদেরকে পূর্ণ-বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠার কথা বলে।                                                                           -মহর্ষি মহামানস

bottom of page