top of page

নিষ্কামকর্ম যেন সোনার পাথরবাটি !


শরীর ও মনের মধ্যে থাকা অথবা উৎপন্ন হওয়া না প্রকার অভাব— শূণ্যতা— ঘাটতি থেকেই সৃষ্টি হয়— সেই অভাব— শূণ্যতা পূরণের চাহিদা বা কামনা। আর, সেই কামনাকে মেটাতেই আমরা কর্ম ক’রে থাকি।
এই চাহিদা বা কামনা— সচেতনভাবে ঘটতে পারে, আবার অবচেতনভাবেও ঘটতে পারে। অর্থাৎ সচেতন মনের চাহিদামতো কর্ম হতে পারে, আবার কখনো, সচেতন মনের অজ্ঞাতসারে— অবচেতন মনের চাহিদামতোও কর্ম হতে পারে।
যেখানে অভাব নেই— শূণ্যতা নেই, সেখানে তা’ পূরণ করার চাহিদা বা কামনাও নেই। কামনা থেকেই কর্ম। এই বিশ্বজগৎ জুড়ে যা কিছু ঘটছে— তার পিছনে আছে কামনা। কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে নিষ্কাম কর্ম করা সম্ভব নয়। জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে সে যা-ই করুক না কেনো, তার পিছনে অভাব—শূণ্যতা থেকে উৎপন্ন চাহিদা বা কামনা থাকবেই। তা’ সে শরীরের চাহিদাই হোক আর মনের চাহিদাই হোক, অথবা তা’ ভিত্তিমূল মন-সফটওয়ারের চাহিদাই হোক। তার, সেই কামনা সম্পর্কে সে ওয়াকিবহাল থাকুক আর না-ই থাকুক। কাম বা কামনা ছাড়া কর্ম হবেনা।
আপাতদৃষ্টিতে, ঐচ্ছিকভাবে অথবা অনৈচ্ছিকভাবে, যে কোনোভাবেই কর্ম সংঘটিত হোক না কেনো— বুঝতে হবে, তার পিছনে কারো না কারো ইচ্ছা বা কামনা কাজ করছে। সে জাগতিক-ব্যবস্থা হতে পারে, ঈশ্বর হতে পারে, অথবা আদি-সত্তা পরমাত্মা হতে পারে।
আমাদের অন্তরের গভীরে আছে শূণ্যতা— আছে অভাব। জ্ঞানের অভাব— চেতনার অভাব। জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে— সর্বদা আমরা সেই শূণ্যতা মোচনের জন্য— পূর্ণতালাভের জন্য ব্যকূল হয়ে আছি। এবার, যার যেমন জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-চেতনা, যেমন শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, সেই মতো তার চিন্তা-চাহিদা-কামনা। কিভাবে কীসে যে তার অভাব পূরণ হবে, —অনেক মানুষই তা’ বোঝার মতো অবস্থায় নেই। অজ্ঞান শিশুরমতো তাই— চারিপাশে যাকিছু সে দেখছে, —তা’ই দিয়েই সে তার শূণ্যতা দূর ক’রে— পূর্ণতা লাভের চেষ্টা ক’রে চলেছে। ভাবছে, এটা পেলে অথবা ওটা করলে বুঝি তার চাহিদা পূর্ণ হবে। এইভাবে কর্ম ও ভোগের মধ্য দিয়ে— দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনা ভোগের মধ্য দিয়ে, একটু একটু ক’রে ক্রমশ জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-চেতনা লাভের দ্বারা মানুষ নিজের অজান্তেই তিলেতিলে পূর্ণতা লাভের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। এটাই জাগতিক ব্যবস্থা।
আরেকটু তলিয়ে দেখলে— দেখা যাবে, আমরা যাকিছু করছি— যে সমস্ত কর্ম করছি, কামনা করছি— চিন্তা করছি, এ’সব কিছুই আমরা করতে বাধ্য হচ্ছি। জাগতিক-ব্যবস্থা আমাদের দিয়ে যা করাচ্ছে, আমরা তা’ই করছি। ভাগ্যরূপ জাগতিক ঘটনাপ্রবাহের অধীন আমরা— যা কিছু করছি— বাধ্য হয়ে করছি।
চলে যাই আরো অনেক দূরে— অনেক গভীরে—। যে আদি সত্তা— পরমাত্মা থেকে সমস্ত জগত-সংসার সৃষ্টি হয়েছে, সে-ও কিন্তু পূর্ণ নয়। পূর্ণাবস্থা থেকে কোনো কিছু সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয় (মহাবাদ দ্রষ্টব্য)। পূর্ণাবস্থায় কোনো চাহিদা— কোনো কামনা থাকেনা, কোনো কর্মও থাকে না। পরমাত্মাকেও তার অভাব থেকে উৎপন্ন চাহিদা বা কামনা পূরণের উদ্দেশে কর্ম করতে হয়েছে ও হচ্ছে। আর, সেই কর্ম হেকেই সৃষ্টি হয়েছে এই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড —চলছে এই মহা সৃষ্টিলীলা।
তার অংশানুক্রমে— তার চাহিদানুসারে আমরাও কর্ম ক’রে চলেছি। তবে, স্বল্প জ্ঞান ও চেতনার কারণে— আমাদের কামনা-বাসনা-কর্মের জন্য অনেক সময়েই আমাদেরকে দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনা ভোগ করতে হচ্ছে— (যার জন্য আমরা মোটেই দায়ী নই)। এর কারণ সেই অপূর্ণতা— জ্ঞান ও চেতনার অভাব। আমরা যদি জ্ঞান ও চেতনা লাভের জন্য সচেতনভাবে কর্ম করতে পারি— সেই কর্মই হবে শ্রেষ্ঠ কর্ম।
Featured Posts
Recent Posts
Archive
Search By Tags
No tags yet.
Follow Us
  • Facebook Basic Square
  • Twitter Basic Square
  • Google+ Basic Square
bottom of page