top of page

মনোবিকাশ বা চেতনার বিকাশ কিভাবে সম্ভব

আলোচনার প্রয়োজন হয়— কোনো বিষয়কে ভালোভাবে বোঝার জন্য এবং সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য। কিন্তু যারা ঘন্টার পর ঘন্টা— দিনের পর দিন ধরে কোনো সাধারণ বিষয় নিয়ে আলোচনা ক’রেই চলে, বুঝতে হবে তাদের চেতনা বা বোধশক্তি খুবই কম।

চেতনা কম হওয়ার অনেকগুলি কারণের মধ্যে প্রধান দুটি কারণ হলো—

১। মস্তিষ্কের জড়তা, যা কোনো অর্জিত বা বংশগত রোগ-ব্যাধির ফল। রোগব্যাধির প্রধান কারণ হলো— শরীরে কোনো দীর্ঘক্রিয় ও গভীর ক্রিয়াশীল অনিষ্টকর বিষ বা রোগ-বিষ। যেমন, পারদ, সিফিলিস জীবানুজ বিষ প্রভৃতি।

২। মন বা মস্তিষ্ক-র যথেষ্ট কাজ করার পরিবেশ—পরিস্থিতি না ঠাকা। জীবনে অনেক বিচিত্র সমস্যার সম্মুখীন না হওয়া। যত বিচিত্র জ্ঞান-অভিজ্ঞতা লাভ হবে, ততই চেতনা বৃদ্ধি পাবে। দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনার মধ্য দিয়েই চেতনার বিকাশ ঘটে থাকে।

চেতন-অস্তিত্ব লাভ করার বা প্রাপ্ত হওয়ার সাথে সাথেই যন্ত্রনার পালা শুরু হয়ে যায়। তবে, নিম্ন-চেতন-স্তরগুলিতে বোধ-শক্তি কম হওয়ায়— যন্ত্রনাও কম বোধ হয়। চেতনা যত বর্ধিত হয়, যন্ত্রনাও তত বর্ধিত হতে থাকে।

আবার, উচ্চ-চেতনা লাভের পর থেকে যন্ত্রনা ধীরে ধীরে কম অনুভূত হতে থাকে। অনেকটা উচ্চ বা উচ্চতর চেতন-অবস্থায় আর তেমন যন্ত্রনা থাকে না।

পার্থিব দেহ-অস্তিত্ব সম্পন্ন চেতন-সত্তার যন্ত্রনা কিছু বেশি হলেও, দেহাতীত বা দেহ-বিহীন চেতন সত্তাকেও অনেক যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়। তা’ হলো মানসিক যন্ত্রনা।

দেহ-অস্তিত্ব সম্পন্ন সচেতন মানুষ শারীরিক যন্ত্রনা থেকে মানসিক যন্ত্রনাই বেশি ভোগ করে থাকে। যন্ত্রনার মধ্যদিয়েই মনোবিকাশ তথা চেতনার বিকাশ ঘটে থাকে।

যে একবার চেতন-অস্তিত্ব লাভ করেছে, তার যন্ত্রনা থেকে রেহাই নেই। একমাত্র, দ্রুত উচ্চ চেতন-স্তরে উপনীত হতে পারলে, তবেই যন্ত্রনা থেকে অনেকাংশে মুক্তি ঘটবে।

তাই, যন্ত্রনা থেকে পালিয়ে যাওয়ার অথবা যন্ত্রনাকে ভুলে থাকার চেষ্টা না করে, দ্রুত আত্ম-বিকাশ লাভের চেষ্টা করো। আত্ম বিকাশই আমাদের অন্তিম লক্ষ্য।

জাগতিক-ব্যবস্থা মতো— আমাদের জীবন-চলা ঐ পরম লক্ষ্যপানেই এগিয়ে চলেছে। কেউ দ্রুত গতিতে— কেউ ধীর গতিতে, কেউ এগিয়ে, আর কেউ পিছিয়ে। আমরা সবাই এই একই পথের পথিক— বিকাশমান চেতনার পথে।

অত্যন্ত মূল্যবান এই মানব জীবনকে মোটেই হালকাভাবে দেখো না। জীবনটা শুধুই হাসি-মজা-হৈচৈ ক’রে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য নয়। জীবনের লক্ষ্য কি তা’ জানো। জীবনকে ভালোভাবে বোঝার পরে, তখন হালকাচালে চলতে পারা-ই হলো— জীবন-কলা।

আমরা এখানে এসেছি— এক শিক্ষামূলক ভ্রমনে। ক্রমশ উচ্চ থেকে আরো উচ্চ চেতনা লাভই— এই মানব জীবনের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য। একানে আমরা জ্ঞান—অভিজ্ঞতা লাভের মধ্য দিয়ে যত বেশি চেতনা-সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারবো, —তত বেশি লাভবান হবো। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে— এখান থেকে চলে যাবার সময় কিছুই আমাদের সঙ্গে যাবে না, —একমাত্র চেতনা ব্যতিত।

চেতনার অনেকটা বিকাশ ঘটলে, তবেই একজন ব্যক্তি মানুষ চেনার ক্ষমতা লাভ ক’রে থাকে। মানুষ চিনতে না পারার কারনে— একজন ব্যক্তিকে সারা জীবন বহু দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়। সাধুবেশী ভন্ড-প্রতারক—উন্মাদ-শয়তানের কবলে পড়েও, অনেকের চেতনা জাগ্রত হয়না। একই ভুল সে বারবার করতেই থাকে। যদি চেতনার বিকাশ ঘটাতে চাও, মানব ধর্ম— মহাধর্ম-এর শরণ নাও।

তবে, একটু-আধটু চিনতে সক্ষম হলেই যেন তা’ প্রকাশ কোরোনা, তাহলেই বিপদে পড়বে। কিছুকিছু জ্ঞান প্রকাশযোগ্য নয়।

আমাদের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো— অধিকাংশ মানুষই মুক্তমনে— যুক্তি-বিচারের সাথে গভীরভাবে তলিয়ে ভাবতে পারেনা, এবং অনেক সাধারণ বিষয়ও বুঝতে পারেনা। তারা গতানুগতিক বাঁধা ছকের মধ্যে— ওপরে ওপরে— ভাসা ভাসা চিন্তা করতে অভ্যস্ত। মানবজাতির প্রধান সমস্যা গুলির মধ্যে এটা হলো অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা। এর সাথে নিকট সম্পর্কযুক্ত আরেকটি সমস্যা হলো— অন্ধ-বিশ্বাস।

দু-একটি ব্যতীক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া, আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা, স্কুল-কলেজ প্রভৃতির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, এবং ধর্মীয় শিক্ষা, —এদের কেউই আমাদেরকে যুক্তি-সম্মতভাবে— বিষয়ের গভীরে গিয়ে— পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে চিন্তা করতে শেখায় না, বুঝতে শেখায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই— এরা অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে শেখায়। এদের অধিক অংশই আমাদেরকে তাদের অধীনস্ত— আজ্ঞাবহ—বাধ্য ক’রে রাখতে, আমাদেরকে মূর্খ বানিয়ে রাখতে সদা তৎপর।

এখানে এমন কোনো চালু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, যে সরাসরি আমাদের চেতনার বিকাশ (সচেতন মনের বিকাশ) ঘটাতে সাহায্য করে। আমাদের জীবনের পক্ষে অপরিহার্য এই বিষয়ের উপরেই কাজ ক’রে চলেছে— মানব-বিকাশ-মূলক ধর্ম— মহাধর্ম। মহাধর্ম বলে, জেগে ওঠো— আত্ম-বিকাশলাভ করো।

আমরা জানি, মোহাচ্ছন্ন মানুষ— এই ‘জেগে ওঠা’ এবং ‘প্রকৃত বিকাশলাভ’-এ মোটেই আগ্রহী নয়। তাদের কথা— ‘এই মধুর স্বপ্ন দেখা থেকে জাগিও না— আমাদের জাগিও না।’ ‘হোক সে মিথ্যা বা কল্পনা, তবু সেই মিথ্যা নিয়েই বাঁচতে চাই আমরা।’

এমনও দেখা যাবে, একজন ব্যক্তি কোনো ক্ষেত্রে বা কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমঝদার, এবং যুক্তি অবলম্বন করে চলেছেন। আবার, সেই একই ব্যক্তি, অপর কোনো একটি ক্ষেত্রে পুরোপুরি অন্ধ-বিশ্বাস যুক্ত।

একজন, কোনো একটি বিষয়ে ভালো সমঝদার, কিন্তু অপর কোনো একটি সাধারণ বিষয় তার মাথাতেই ঢোকেনা। এখানে আগ্রহ—অনাগ্রহের ব্যাপার থাকতে পারে। আবার আগ্রহ থাকা সত্বেও, কোনো ক্ষেত্রে সে (মানসিক দিক থেকে) দুর্বল বা অক্ষম, —কোনো ক্ষেত্রে সে (মানসিক দিক থেকে) সবল— সক্ষম হতে পারে।

এছাড়া, লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, আমরা অনেক সময় কোনো বিষয় ভালোভাবে না বুঝে অথবা কিছু না বুঝেই কথা বলি— কাজ করি। আবার, কখনো কখনো সব বোঝার ভান করে থাকি। —এ’ হলো আমাদের মানসিক দোষ বা ত্রুটি।

যুগযুগ ধরে বহু মনীষীই আমাদেরকে বলেছেন— ‘মানুষ হও...’ ‘মানুষের মতো মানুষ হও’ ...কিন্তু, কী উপায়ে যে যথেষ্ট বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠা যাবে, —তার কোনো হদিস নেই কোথাও।

যে সব পথ অনেকে দেখিয়ে গেছেন, সে সব পথে যথেষ্ট বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠা যাবেনা কোনো দিনও। তা’ যদি হতো— তাহলে দেশের তথা পৃথিবীর চেহারাটাই বদলে যেতো।

এখানে উল্লেখযোগ্য, মানুষ হওয়ার মানে শুধু মানব-দরদী হওয়াই নয়, মানুষ হওয়ার অর্থ হলো— মানব-মনের যথেষ্ট বিকাশ ঘটা। বিকশিত মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবেই মানব-দরদী হয়ে থাকে। তাদের উপর মানবতার পাঠ বা কর্তব্য আরোপ করার কোনো প্রয়োজনই হয়না।

আজ, মানুষ গড়ার প্রকৃত দিশা দেখিয়েছেন, আমাদের সদগুরু— মহর্ষি মহামানস তাঁর আত্ম-বিকাশ শিক্ষাক্রমের মধ্য দিয়ে। এ-ই হলো প্রকৃত আত্ম-বিকাশ লাভের পথ।

চেতনা বিকাশের কয়েকটি সহজ উপায় (প্রতিটি পদ্ধতিই অভ্যাস করতে হবে)

 

১। সর্বপ্রথম যা দরকার তা’ হলো— ইচ্ছা। আত্ম বিকাশলাভের ইচ্ছা।

২। সর্বদা হাবজাবি চিন্তায় মনকে ব্যস্ত না রেখে, কিছু কিছু সৃজনমূলক গঠনমূলক চিন্তা করো। এছাড়া, গোয়েন্দা বা বিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো প্রয়োজনীয় অথবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সত্যানুসন্ধানে মন দাও। কোনো কিছু আবিষ্কারেও মন দিতে পারো। কোনো কিছু সৃষ্টি করা— আবিষ্কার করা, সত্য উদ্ঘাটন করার মধ্যে যে কতো আনন্দ— তা’ ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।

৩। মাঝেমাঝেই নিজের মনের প্রতি— মনের কার্যকলাপের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখো। এর উপর মৎকৃত একটি অডিও প্রোগ্রাম আছে। এই মন-আমি-যোগ অভ্যাসের মাধ্যমে মন তথা চেতনার বিকাশ ঘটে থাকে।

৪। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যা অর্জন ও যোগ্যতা লাভের চেষ্টা করা। শুধু তোমার চাহিদা হলেই হবেনা, বাজারে তার চাহিদা থাকতে হবে। তার জন্য মার্কেট-স্টাডি করতে হবে তোমাকে।

৫। সর্বদা সমশ্রেণীর মানুষদের সাথে মেলামেশা না ক’রে, মাঝেমাঝে বিভিন্ন শ্রেণীর এবং সম্ভব হলে, কিছু উচ্চশ্রেণীর মানুষের সাথে মেলামেশা করবে। এবং এই মেলামেশার সময় নিজেকে সজাগ রেখে, তাদের কাছ থেকে কিছু কিছু বিষয় শেখার ও জানার চেষ্টা করবে।

৬। সুস্থতা লাভ ও তা’ বজায় রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন করতে হবে। অসুস্থতা ও তার কারণ এবং শরীর-মন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, এবং সুষম আহার করতে হবে। আজেবাজে আহার (জাঙ্ক ফুড) একেবারে চলবে না।

৭। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দক্ষ কর্মীর কাজ মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। একজন দক্ষ কর্মী কিভাবে— কি কৌশলে সেই কাজটি সম্পন্ন করছে, শেখার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে যেন তুমিও সেই কাজটি করতে পারো। অর্থাৎ কর্মদক্ষ হয়ে উঠতে হবে।

৮। অবসর সময়ে, অথবা ট্রেনে বা বাসে যাত্রাকালে মনোযোগ দিয়ে সামনের মানুষকে বোঝার বা পড়ার (রিড) চেষ্টা করবে। তার চেহারা, মুখাবয়ব, তার পোষাক, অভিব্যক্তি, কথাবার্তা, বাচনভঙ্গী— সবকিছু খুঁটিয়ে লক্ষ্য করবে (তবে সেই ব্যক্তি যেন বুঝতে না পারে)। এবং মনেমনে এক এক ক’রে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে আপাত সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে। এরপর, সুযোগ পেলে তোমার সিদ্ধান্ত মিলিয়ে নেবে। ভুল হলে, কেন ভুল হয়েছে দেখবে, এবং ভুল সংশোধন করে নেবে।   

তবে, সাবধান, তোমার এই সিদ্ধান্ত বা প্রেডিকশন মিলে গেলে খুশি হতে পার, কিন্তু অহঙ্কার বোধ কোরো না। তাহলেই তোমার মানুষ চেনার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। এইভাবে অভ্যাস করতে করতে তোমার মন-বিকাশ ঘটতে থাকবে।

৯। নিজের দিকে দৃষ্টি দাও, —নিজেকে চেনো। নিরপেক্ষভাবে নিজের শরীর ও মনকে জানা ও বোঝার চেষ্টা করো। ক্রমশ চেতনা বৃদ্ধি পাবে।    

১০। নিয়মিতভাবে একটা নির্দিষ্ট সময়ে— যোগ-নিদ্রা বা সুষুপ্তাবস্থায় দুবে যাও। এতে মনের বিকাশ ঘটবে। যোগনিদ্রা ভালোভাবে অভ্যাস হয়ে গেলে, তখন গভীর ধ্যানের মধ্যে ডুবে যাওয়া খুব সহজ হবে।   

এর উপর মৎকৃত যোগ-নিদ্রার অডিও প্রোগ্রাম আছে। যার মাধ্যমে খুব সহজেই যোগ-নিদ্রার গভীরে ডুবে যাওয়া যায়।

১১। মৎকৃত কিছু বিশেষ ধ্যান-প্রক্রিয়া— যেমন, মহামনস-যোগ, আত্ম-ধ্যান-যোগ প্রভৃতি মনোবিকাশ তথা চেতনার বিকাশের উৎকৃষ্ট উপায়।  

১২। মাঝেমাঝে মৎকৃত ‘মহাবাদ’ দর্শন অধ্যয়ন এবং নিয়মিতভাবে নিষ্ঠার সাথে ‘মহামনন’ আত্ম-বিকাশ-যোগ অভ্যাসের মধ্য দিয়ে চেতনার বিকাশ ঘটে। ‘মহামনন’-এর মধ্যেই রয়েছে মৎকর্তৃক সৃষ্ট বিভিন্ন দুর্লভ যোগ পদ্ধতি যা আত্ম-বিকাশ বা মনোবিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে।

 

* এগুলি অভ্যাসের মধ্যদিয়ে আত্মবিকাশ লাভের পথে এগিয়ে যাওয়াই হলো— মহাধর্ম (পালন)।    

bottom of page