top of page

মহাসাধনা


‘মহাসাধনা’ হলো— ‘মহাবাদ’ এবং ‘মহাধর্ম’-এর দুটি সাধন পথের একটি পথ। যা’ প্রকৃত ভক্তির পথ— শাশ্বত প্রেমের পথ। ভক্তি ও প্রেমের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সাথে এবং ঈশ্বর জ্ঞানে সমস্ত জীবের সাথে যোগ সাধনের পথ। ঈশ্বর তথা সমস্ত জীবের সাথে গভীর প্রেমের সংযোগ সাধনের অনুশীলনই হলো— ‘মহাসাধনা’।

অন্তরের সৎ ভাবনা— শুভ ভাব, —ধনাত্মক ভাবকে জাগ্রত ক’রে তোলা এবং তাকে সদা জাগরুক রাখার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করাই হলো— ‘মহাসাধনা’।

যারা ঈশ্বরের আশ্রয়ে শান্তিলাভ করতে চাও, ঈশ্বরের নিকট আত্মসমর্পন ক’রে আনন্দময় জীবনযাপন করতে চাও— তাদের জন্য ‘মহাসাধনা’।

যারা ঈশ্বর সম্পর্কে আগ্রহী নও, —শুধু নির্মল-পবিত্র —আনন্দময়, সুন্দর—শান্তিময়, শাশ্বত-প্রেমময় জীবন লাভে ইচ্ছুক, তাদের জন্যেও ‘মহাসাধনা’।

তোমরা— তোমাদের ‘মহাআনন্দ মন্ডল’-এ মূর্তিরূপে ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারো, (* মহাআনন্দ্‌-এর অনেক ভক্তিযোগী ভক্তগণই মহাআনন্দ্‌-এর মূর্তি পূজা ক’রে থাকেন। এছাড়া, দুটি বিপরীত বিশ্বসত্তা— দুই মহা শাশ্বত প্রেমিক-প্রেমিকার প্রতীকরূপে রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি পূজা করা যেতে পারে। তবে তা’ প্রচলিত পুরাণ ভিত্তিক নয়।) আবার নিরাকার বা জগতাকার ঈশ্বরের উপাসনাও করতে পারো। যেমন তোমাদের পছন্দ। এখানে তুমি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা, ধ্যান, জপ, স্তোত্রপাঠ, ভজন এবং নাম সংকীর্ত্তন সবই করতে পারবে।

যা-ই করো না কেন, শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে— তা’ যেন তোমাদের মূল নীতি—আদর্শ বহির্ভূত না হয়। অপরের এবং নিজের বা নিজেদের পক্ষে তা’ যেন অনিষ্টকর না হয়। ধর্মের সার অংশটুকু রেখে— অসার অংশটুকু বর্জন করবে। অযথা আড়ম্বর, কুসংস্কার, অধিক উন্মাদনা, অপ্রয়োজনীয় আচার-অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে— যেটুকু ইষ্টলাভের সহায়ক, নিজের এবং অপরের পক্ষে মঙ্গলকর —সেটুকুই শুধু গ্রহন করবে।

ঈশ্বরে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পিত মনই হলো—প্রকৃত ভক্তিযোগী। ঈশ্বর যেমন রাখবে— তাতেই সে সন্তুষ্ট। শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও সে ঈশ্বরের করুণাময়—মঙ্গলময় স্নেহের স্পর্শ অনুভব ক’রে থাকে। সে মনে করে, ঈশ্বর যা কিছু করে—মঙ্গলের জন্যই করে। সে বলে, ‘আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে, স্বল্প জ্ঞানে— আমি ঈশ্বরের এই বৃহৎ কর্মকান্ড এবং তার উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে অক্ষম’।

সাধারণ মানুষের নানাবিধ ভক্তির মধ্যে, একশ্রেণীর ভক্তি হলো— ভয়ে ভক্তি অর্থাৎ ভয়ের কারণে ভক্তি। যেমন, অধিকাংশ শাসক বা রাজার প্রতি ভক্তি, শয়তান, প্রবল শক্তিমান, দুষ্ট—অশুভ দেবতা বা অপদেবতার প্রতি ভক্তি।

আর এক শ্রেণীর ভক্তি হলো— স্বার্থের জন্য ভক্তি। যা কিছু ব্যক্তির স্থূল—পার্থিব স্বার্থ পূরণ করে, পার্থিব যা কিছু তার শরীর-মনের পক্ষে আরামদায়ক, তৃপ্তি ও সুখদায়ক— তার প্রতি ভক্তি।

বিশুদ্ধ ভক্তি হলো— অন্তরের স্বতঃস্ফূর্ত প্রেম—ভক্তি। আপাত কোনো কারণ ছাড়াই সে প্রেম— আনন্দ অন্তর থেকে উৎসারিত হয়, এবং তা’ সবাইকে বিতরণ ক’রে, আরও বহুগুণ আনন্দ উপলব্ধ হয়। একে বলে অহেতুকী প্রেম! এত আনন্দ উৎসারিত হয়, তার ভিতর থেকে, —শাশ্বতপ্রেমী তা’ নিজেই জানে না।

কোনো বিচার ক’রে— হিসাব ক’রে, কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে— সে কাউকে ভালোবাসে না। তার মধ্যে বিশাল প্রেমানন্দের খনি থাকে। খনির মুখ উন্মুক্ত হয়ে— আগ্নেয়গিরির মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে— প্রেমানন্দ উদ্গিরণ হতে থাকে সেখানে।

জোর ক’রে কাউকে প্রকৃত ভক্তিযোগী বা শাশ্বতপ্রেমী ক’রে তোলা যায় না, এমনকি ইচ্ছা করলেও হয়ে উঠতে পারে না সবাই। ব্যক্তির ভিতরে শাশ্বত প্রেমী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গঠন-উপাদান থাকলে এবং তার যথেষ্ট বিকাশ ঘ’টে থাকলে, তবেই সে হ’তে পারে শাশ্বত-প্রেমী। তবে কারও মধ্যে যদি সব থাকা সত্বেও, পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে তার যথেষ্ট বিকাশ না ঘ’টে থাকে, অথবা প্রকাশ ঘটলেও তা’ ত্রুটিপূর্ণ বা দূষণাক্রান্ত অথবা আদিম মনোভাবের সাথে মিশ্রিত রূপে থাকে, সেক্ষেত্রে উপযুক্ত শিক্ষা, পরিবেশ এবং সৎ-সঙ্গ পেলে, তা’ বিকশিত ও পরিশীলিত হয়ে উঠতে পারে।

তুমি কি প্রকৃত ভক্তিযোগী বা শাশ্বত-প্রেমী? তোমার মধ্যে কি এই গুণগুলি আছে, অথবা তুমি কি এই গুণগুলি অর্জন করতে চাও?

—পরিচ্ছন্নতাই হলো বিশুদ্ধ প্রেমের এবং ঈশ্বরের আসন। প্রকৃত ভক্তিযোগী—শাশ্বতপ্রেমী হবে ভিতরে-বাইরে পরিচ্ছন্ন—পবিত্র মনের মানুষ। সে তার শরীর-মন-পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে যত্নবান হবে। সনাতনধর্মী— ঈশ্বরপ্রেমী, বিশ্বপ্রেমী— শাশ্বতপ্রেমীগণ, অপর ধর্ম—জাতি অথবা কারো প্রতিই হিংসা-বিদ্বেষ— বিরুপভাব পোষণ করে না। শাশ্বতপ্রেমী কারোও দোষ-ত্রুটি দেখে না। মানুষের দোষ-ত্রুটিগুলিকে তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা বা খেলা অথবা মানুষের অজ্ঞানতা মনে ক’রে ক্ষমার চোখে দেখে থাকে। ঈশ্বরের কাছেও তার কোনো অভিযোগ নেই। কিছুতেই সে বিরক্ত বা রুষ্ট নয়, —সদা সন্তুষ্ট।

সে মনে করে, ‘ঈশ্বর মঙ্গলময়, —ঈশ্বর যা করেন, সব মঙ্গলের জন্য— ভালোর জন্যই করেন। আমরা আমাদের স্বল্প জ্ঞান দিয়ে— ঈশ্বরের বিচার করতে সক্ষম নই। —সবই তাঁর ইচ্ছা, তিনি যেমন রাখেন— তাতেই আমি খুশী।’

সহজ—সরল জীবনযাত্রা প্রকৃত ভক্তিযোগী বা শাশ্বতপ্রেমীর পছন্দ। তর্ক, ভেদবুদ্ধি, বিরূপতা, স্বার্থপরতা, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ —এর কোনোটাই শাশ্বতপ্রেমীর লক্ষণ নয়। নির্মল—স্বতঃস্ফূর্ত প্রেম, নিষ্কাম—স্বার্থশূণ্য প্রেমই প্রকৃত ভক্তিযোগী বা শাশ্বতপ্রেমীর ধর্ম।

ভালো লাগে, তাই সে ভালবাসে। কেন ভালবাসে— ভালবেসে কি হবে, —এসব ভক্তিযোগী বা শাশ্বতপ্রেমী ভাবে না। সে যেন— উৎসারিত ভালবাসার এক স্বতঃস্ফূর্ত অগাধ উৎস। ভালবেসেই সে খুশী, ভালবাসার বিনিময়ে অন্য কিছু সে চায় না। এমনকি ভালবাসার বিনিময়ে সে ভালবাসাও কামনা করেনা। সম্পূর্ণ নিষ্কাম ভালবাসাই প্রকৃত ভক্তিযোগী বা শাশ্বতপ্রেমীর লক্ষণ।

প্রেমময় জীবন— প্রেমময় জগৎ তার। শাশ্বতপ্রেমীর জীবনে যতই ঝড়-ঝঞ্ঝা, বাধা-বিঘ্ন, দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-দুর্বিপাক, প্রতিকূলতা আসুক—, যতই আঘাত আসুক না কেন, কিছুতেই সে বিকারগ্রস্ত হয় না। সে সদা শান্তিপূর্ণ—আনন্দময় থাকে।

প্রকৃত ভক্তিযোগী বা শাশ্বতপ্রেমীর সবচাইতে বড় মূলধন হলো— বিশ্বাস। ইশ্বরের প্রতি— মানুষের প্রতি— নিজের প্রতি অবিচল বিশ্বাস। সে মনে করে, ঈশ্বর না চাইলে— কেউ তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। যা-ই ঘটুক, সবই ঈশ্বরের ইচ্ছায় ঘটে—। কিছুর জন্যই সে কাউকে দায়ী করে না, এমনকি নিজেকেও সে দায়ী করে না। সে মনে করে, সবই ঈশ্বরের ইচ্ছা। তার নিজের ইচ্ছাও ঈশ্বরের ইচ্ছা।

একশ্রেণীর ভক্তিযোগী আছে— যারা মনে করে, ঈশ্বর ভালো চায়— যত ভালো, যা কিছু ভালো সবই ঈশ্বরের দান। যা কিছু খারাপ— আমাদের দোষে— মানুষের দোষে, যেমন কর্ম তেমন ফল। এরা প্রকৃত ভক্তিযোগী বা শাশ্বতপ্রেমী নয়। এদের মধ্যে দুই-দুই ভাব, বিচার— বৈপরীত্য থাকে। এরা ঈশ্বরে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পিত নয়।

শ্বাশত প্রেমের কথা অনেকেই আড়ম্বর ক’রে ব’লে থাকে, কিন্তু প্রকৃত ভক্তিযোগী বা শাশ্বতপ্রেমী ক’জন হয়!

শাশ্বতপ্রেম কোনো হুজুগ নয় (মিথ্যাচারণ— ভন্ডামি যারা করে, তাদের কথা আলাদা), এ’ হলো অন্তরের এক অমূল্য সম্পদ। অনেকেই একে অন্ধ-আবেগ, উন্মাদনা ব’লে, হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা ক’রে থাকে, —তাতে শাশ্বতপ্রেমীর কিছু যায় আসে না।

শাশ্বতপ্রেমীদের মধ্যেও কয়েকটি স্তর আছে, তার মধ্যে প্রধান দুটির একটি হলো— সাধারণ, আর অপরটিতে রয়েছে অতি উচ্চচেতন স্তরের মানুষ। —যাঁদের আমরা মহাপুরুষ বা দেবতা জ্ঞানে ভক্তি-শ্রদ্ধা— পূজা ক’রে থাকি। সার্বিক জ্ঞানলাভের পর মানুষ প্রজ্ঞাবান হয়ে, স্থূল-জ্ঞানের পথ পেরিয়ে এসে, সবকিছুকে— সমস্ত জীবকে আত্মজ্ঞানে বা নিজ ভেবে, আত্মপ্রেমে আনন্দ-বিহ্বল থাকে যাঁরা, —তাঁরাই হলেন মহাত্মা— মহা শাশ্বতপ্রেমী।

=================================================

মহাআনন্দ্‌ সঙ্গীত

‘মহাআনন্দ্‌ মন্ডল’ নির্দেশিত ও স্বীকৃত ভজন, সংকীর্তন, বাউল, আধ্যাত্মিক সঙ্গীত এবং স্ব-অভিভাবন বা স্বগতোক্তিমূলক সঙ্গীত প্রভৃতি প্রতিদিন অথবা নিয়মিতভাবে নিজেদের মিলনকেন্দ্রে সহধর্মীদের সাথে সমবেতভাবে অনুশীলন কর্তব্য। গীত-বাদ্য অ নৃত্য সহ ‘মহাআনন্দ্‌ সঙ্গীত’ –মহাসাধনা-র একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

=================================================

মহাআনন্দ্‌ ধ্যান

‘মহাআনন্দ্‌ সঙ্গীত’ অনুশীলনের শেষ দিকে— সঙ্গীত ক্রমশ দ্রুতলয়ে চলতে থাকলে—এই অবস্থায় যার যখন ঘোর (ট্রান্স) আসবে, সে তখন সেইখানেই ধ্যানে ব’সে যাবে। নির্মল-আনন্দময় দৃশ্য বা ইষ্টমূর্তি অথবা ‘জ্যোতি’-র ধ্যান করবে। ‘মহাআনন্দ্‌ ধ্যান’-ও –মহাসাধনা-র একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

==========================================================

“ঈশ্বরের উপাসনা— পূজা-পাঠ, ধ্যান-জপ— সংকীর্তনের মধ্য দিয়ে সব চাইতে বড় পাওয়া হলো— মনের ধনাত্মক ভাব প্রাপ্তি। শান্তি—সন্তোষ—প্রেম—আনন্দ, নির্মলতা—পবিত্রতা—একাগ্রতা প্রভৃতি সদ্‌ভাব এবং সদ্‌গুণ লাভ করতে পারলেই বুঝবে, তোমার ঈশ্বর আরাধনা সার্থক।” —মহামানস

Featured Posts
Recent Posts
Archive
Search By Tags
No tags yet.
Follow Us
  • Facebook Basic Square
  • Twitter Basic Square
  • Google+ Basic Square
bottom of page