মানবধর্ম এবং মহাধর্ম আসলে কি—
মানবধর্ম এবং মহাধর্ম আসলে কী— ~মহর্ষি মহামানস
একজন মানুষ রূপে, আমরা প্রত্যেকেই একটি সহজ ধর্ম নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে থাকি, তা' হলো~ মানবধর্ম। কিন্তু সমাজ-সংসার সেই মানবত্বলাভ মুখী স্ব-বিকাশ মূলক স্বাভাবিক ধর্ম থেকে আমাদেরকে বিচ্যুত করে--- বিপথগামী করে, কোনো একটি বিশ্বাস ভিত্তিক ধর্ম নামক অধর্ম আমাদের উপর আরোপ করে বা চাপিয়ে দেওয়ার ফলে, আমরা স্বতঃস্ফূর্ত মনোবিকাশের পথ থেকে সরে এসে অন্ধের মতো গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চলেছি।
এইভাবে হাজার হাজার বছর ধরে চলতে চলতে আজ আমরা মানবজীবনের মূল লক্ষ্য~ পূর্ণ বিকশিত মানুষ হয়ে ওঠার লক্ষ্য থেকে বহুদূরে সরে এসেছি। এতদিনে স্বাভাবিকভাবে যতটা মনোবিকাশ তথা মানববিকাশ হওয়ার ছিল আমাদের, তার কিয়দংশ বিকাশও হয়ে ওঠেনি আজ।
ক্রমশ আত্মবিকাশ লাভের মধ্য দিয়ে মানবত্ব লাভের উদ্দেশ্যে --- বিস্মৃতপ্রায় মানবধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে, মানুষকে তার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে, সময়ের চাহিদা মতো আত্মপ্রকাশ করেছে~ 'মহাধর্ম'। বিমূর্ত মানবধর্মের মূর্ত রপই হলো~ মহাধর্ম।
একে সঠিকভাবে বুঝতে হলে, পূর্বলব্ধ সংস্কার --বিশ্বাস থেকে মুক্ত হয়ে, প্রচলিত ধর্ম-- শাস্ত্র-- মত এবং বিভিন্ন ব্যক্তির উক্তির সঙ্গে তুলনা না করে, নিরপেক্ষ যুক্তি-বিচার সহ মুক্তমন নিয়ে সত্য উপলব্ধির উদ্দেশ্যে এগিয়ে যেতে হবে। এ'হলো বিশুদ্ধ জ্ঞানের পথ।
এখানে একটা কথা উল্লেখনীয়, সহজ-প্রবৃত্তি এবং সহজ-ধর্মের সঙ্গে কিছু নীচ প্রবৃত্তি, কিছু আদিম বা পাশবিক ধর্মও আমরা জন্মসূত্রে লাভ করে থাকি। এখন, সেগুলিকে অনিষ্টকর অবদমন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবদমিত করে নয়, সঠিক শিক্ষা ও চিকিৎসার মাধ্যমে, এবং জ্ঞান ও চেতনার আলোকে— সেইসব অন্ধকার অংশগুলিকে আলোকিত করে তুলতে হবে।
যা সম্ভব হয়ে ওঠে, মানবধর্মের পথ ধরে অনেকটা এগিয়ে থাকা মানুষের লব্ধ জ্ঞান-অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও উপদেশ লাভের মাধ্যমে। তাঁদের উদ্ভাবিত কিছু বিশেষ উপায় বা পদ্ধতি অনুশীলনের মাধ্যমে। এ-ও মানবধর্ম তথা মহাধর্ম-এর একটি অংশ। বিশ্বাস ভিত্তিক এবং প্রতারণামূলক ধর্ম পথে এটা কখনোই সম্ভব নয়।
পৃথিবীর মুক্ত পাঠশালায়, এই জাগতিক শিক্ষা ব্যবস্থায়, পূর্বসূরিদের জ্ঞান-অভিজ্ঞতার দ্বারা সজাগ-সচেতন, যুক্তি-প্রিয় ও সত্যপ্রেমী হয়ে--- ঘাত-প্রতিঘাত, বাধা-বিঘ্ন-প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, কর্ম ও ভোগের মধ্য দিয়ে, জ্ঞান-অভিজ্ঞতা লাভের মধ্য দিয়ে স্বতস্ফূর্তভাবে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে— ক্রমশ মনোবিকাশ তথা চেতনা-বিকাশের পথে এগিয়ে চলাই মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম— মৌলিক ধর্ম এবং অন্যতম প্রধান ধর্ম। আর, এ-ই হলো মানবধর্ম।
আমরা সবাই এই একই পথের পথিক— ক্রমবিকাশমান চেতনার পথে। তবু আজ, কেউ চলেছে জ্ঞাতে, আর কেউ অজ্ঞাতে। কেউ পিছিয়ে— আর কেউ এগিয়ে। কেউ অতি ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে, আর কেউ দ্রুত গতিতে। কেউ মানবধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে, চেতন-আলোকবিহীন অন্ধকারাচ্ছন্ন পথে অজ্ঞান-অন্ধত্বের কারণে হোঁচট খেতে খেতে, অত্যন্ত দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনা ও অসুস্থতার মধ্য দিয়ে কোনোক্রমে এই পথ অতিক্রম ক’রে চলেছে, আর কেউ মানবধর্মের চেতন-আলোকে উজ্বল পথে— স্বচ্ছন্দে— জ্ঞানানন্দে স্ফূর্তিতে পূর্ণ-বিকাশের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে--- এই একই পথ ধরে। কেউ 'মানবধর্ম' সম্পর্কেই সজাগ নয়, ওয়াকিবহাল নয়, আর কেউ সজাগ-সচেতনভাবে 'মানবধর্ম' পালন ক’রে চলেছে।
এখন প্রশ্ন হলো, এমন অসামঞ্জস্য--- এমন পার্থক্য সৃষ্টি হওয়ার কারণ কী? আর, মানবধর্মের স্বাভাবিক ছন্দময় মূলস্রোত থেকে বিচ্যুত হয়ে, এমন দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত হওয়ারইবা কারণ কী?
এর অন্যতম কারণ হলো, মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া কৃত্রিম ধর্ম।
একটাই জগত, পথও একটাই, শুধু জ্ঞান ও চেতনার পার্থক্যের জন্য এক একজনের এক এক দশা, এবং এই পথ ও জগত— এক একজনের কাছে এক এক প্রকার উপলব্ধ হয়। শুধু তা-ই নয়, জ্ঞান ও চেতনার স্বল্পতার কারণে এই পথ—এই জগতকেই দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনাময় নরক ক’রে তোলে কেউ কেউ।
এরজন্য অনেকাংশে দায়ী স্বার্থান্বেষীদের দ্বারা পরিচালিত অন্ধ-বিশ্বাস ভিত্তিক প্রচলিত ধর্ম। ধর্ম--- যাকে ধারণ ও পালন করে আমাদের মনোবিকাশ বা মানব-বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা, উল্টে সেই ধর্মই যদি আমাদের বিপথগামী--- নিম্নগামী করে তোলে, তো সেই মিথ্যার বেসাতিকে কি ধর্ম বলা যাবে?
একশ্রেণীর কুচক্রী (অ)মানুষ, তাদের হীন-স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে, মানুষকে তাদের সৃষ্ট--- কাল্পনিক ঈশ্বর ভিত্তিক 'ধর্ম' নামে অধর্মের খাঁচাকলে পুরে, মানুষের মধ্যে ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে, মানুষকে তার স্বাভাবিক বিকাশমুখি --- 'মানবধর্ম' থেকে বিচ্যুত করে, তার অধঃপতন ঘটিয়েছে।
এই অজ্ঞান-অন্ধত্বজাত অশান্তি থেকে মুক্ত হয়ে স্বচ্ছন্দে সানন্দে এগিয়ে যেতে চাইলে, জ্ঞান ও চেতনা-বিকাশের পথে অগ্রসর হতে হবে আমাদের, 'মানবধর্ম' ভিত্তিক আত্মবিকাশ মূলক ধর্ম— 'মহাধর্ম'-এর পথ ধরে। মানবধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতেই আবির্ভূত হয়েছে--- মহাধর্ম। বিমূর্ত মানব ধর্মের মূর্ত রূপই হলো--- মহাধর্ম।
"যাকে ধারণ ক’রে মানুষ ভালভাবে বাঁচতে পারে, —অপরকে বাঁচাতে পারে এবং আত্মবিকাশের পথে নিজে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে অপরকে অগ্রসর হতে সাহায্য করিতে পারে, তা-ই হলো মানব ধর্ম। আর এই মানব ধর্মই হলো মহাধর্ম।" —মহর্ষি মহামানস
এখন, অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে আলাদা করে মানব ধর্ম ভিত্তিক এই 'মহাধর্ম' গ্রহণ ও অনুশীলন করার প্রয়োজন কী।
প্রয়োজন এই জন্য---, আমরা হাজার হাজার বছর পেরিয়ে এসেও, এখনো আমাদের যথেষ্ট মনোবিকাশ ঘটতে পারেনি। আমরা আজও যে তিমির সেই তিমিরেই পড়ে আছি। আমাদের চেতনা বিকাশের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় প্রতিবন্ধকদের চিহ্নিত করতে হবে প্রথমে। এরা হলো--- প্রচলিত ধর্ম, রাজতন্ত্র (বর্তমানে রাজনীতি), আর বৈশ্যতন্ত্র (ব্যবসা- বাণিজ্য ব্যবস্থা)। এরা চিরকালই আমাদেরকে এদের প্রয়োজনানুসারে মুর্খ বানিয়ে রাখতে সদাতৎপর। মানুষের মনোবিকাশ এদের কাম্য নয়। মানুষ বেশি সচেতন হয়ে উঠলে এদের সর্বনাশ। এদের কারসাজিতেই, আজ আমাদের যতটা মনোবিকাশ ঘটার কথা, তা' ঘটা সম্ভব হয়নি।
'মহাধর্ম' হলো একটি অতি উৎকৃষ্ট বিশেষ (প্র্যাকটিকাল ও থিওরিটিক্যাল) শিক্ষা ব্যবস্থা। যার দ্বারা বিভিন্ন প্রতিকূলতা দূর করে দ্রুত মনোবিকাশ ঘটানো সম্ভব। মানুষকে সুস্থ ও সচেতন করে তোলা এবং পূর্ণবিকশিত মানুষ হয়ে ওঠার লক্ষ্যে আমাদেরকে এগিয়ে দেওয়াই 'মহাধর্ম' -এর কাজ। যেটা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা অথবা প্রচলিত ধর্মের দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়। আশা করছি, 'মহাধর্ম' আসলে কি, এবং এর কি উদ্দেশ্য, আপনাদেরকে মোটামুটি বোঝাতে পেরেছি।
।। মানবধর্ম-ই মহাধর্ম ।।
মানবধর্ম— হলো মানুষের প্রকৃত ধর্ম— আদি ধর্ম। আত্ম-বিকাশের ধর্ম। আমরা সেই মানবধর্মকে ভুলে গিয়ে, মানব বিকাশের স্বাভাবিক স্রোত থেকে সরে এসে, নানারূপ ধর্ম ও অধর্ম নিয়ে অজ্ঞান-অন্ধের মতো মোহাচ্ছন্ন হয়ে মেতে আছি। চারিদিকে একটু সচেতন দৃষ্টিতে তাকালেই দেখা যাবে— দিনকে দিন ক্রমশ ভয়ানক পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা। আজকের এই ঘোর সঙ্কটকালে— এই সর্বনাশা করুণ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে, অবিলম্বে মানবধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ক’রে, মানব ধর্ম অনুশীলন করতে হবে আমাদের।
কেউ কেউ মনে করেন, শুধু সৎ ও সহৃদয় হয়ে ওঠাই ‘মানবধর্ম’। কিন্তু মানবধর্ম মানে শুধু সৎ ও সহৃদয় হয়ে ওঠাই নয়, মানবধর্ম হলো পূর্ণ বিকশিত মনের মানুষ হয়ে ওঠার জন্য অবশ্য পালনীয় ধর্ম। একজন বিকশিত মানুষ সতঃস্ফূর্তভাবেই সৎ ও হৃদয়বান হয়ে থাকেন।
মানবধর্ম অনুশীলনের মধ্যদিয়েই প্রকৃত মানব-বিকাশ এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। মানবজীবনে এক শুভ পরিবর্তন আসছে— মহাধর্ম-এর পথ ধরে।
প্রতিদিন সারা পৃথিবী জুড়ে অত্যন্ত মর্মাহতকর মনুষ্যকৃত যে সমস্ত ঘটনা ঘটে চলেছে, এবং মানুষের যে বিকৃত—বিকারগ্রস্ত—উন্মাদপ্রায় রূপ আমরা অসহায়ের মতো প্রত্যক্ষ ক’রে চলেছি, ধর্ম—রাজনীতি—প্রশাসন প্রভৃতি প্রচলিত কোনো ব্যবস্থা বা সিস্টেম-ই তার প্রতিকারে সক্ষম নয়।
এই ঘোর সঙ্কটে, আগামী সর্বনাশা পরিণতি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করতে— মহর্ষি মহামানস একমাত্র সমাধানের পথ দেখিয়েছেন। এখনও সময় আছে, আমরা যদি এখনও সেই পথ অবলম্বন ক’রে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলেই শেষ রক্ষা হবে।
'মহাধর্ম' হলো— মানবধর্ম ভিত্তিক অন্ধ-বিশ্বাসমুক্ত মানব-বিকাশমূলক মনোবিজ্ঞান ও অধ্যাত্ম-বিজ্ঞান অনুসারী যুগোপযোগী ধর্ম। মহাধর্ম হল— এ’কালের মহা বৈপ্লবিক উত্তাল তরঙ্গ— প্রকৃত মানব বিকাশের জন্য। এ’হলো অত্যুৎকৃষ্ট (সুস্থ—শান্তিপূর্ণ ও যথেষ্ট বিকশিত) জীবন লাভের শ্রেষ্ঠ পথ। মহাধর্ম গ্রহন করতে, এবং দিকে দিকে সংগঠন গড়ে তুলতে, মুক্তমনের সত্যপ্রেমী যুক্তিবাদী আত্ম-বিকাশকামী জ্ঞানপথের উদ্যোগী মানুষদের আহ্বান জানাই।
চতুর্দিকে মানবকেন্দ্রিক যত অশান্তি, যত সমস্যা ও সঙ্কট ক্রমশ ভয়ানক রূপ ধারণ করতে চলেছে, তার অধিকাংশেরই মূল কারণ হলো— জ্ঞান ও চেতনার স্বল্পতা এবং শরীর ও মনের অসুস্থতা। আর, এর একমাত্র সমাধান হলো— সার্বিকভাবে 'মহাধর্ম' অনুশীলন।
শরীর ও মনের সুস্থতাসহ মনোবিকাশ এবং সার্বিক উন্নতি লাভের জন্য ‘মহাধর্ম' গ্রহন করুন, এবং মহা-আত্ম-বিকাশ-যোগ অনুশীলন করুন। পূর্বের ধর্ম ত্যাগ না করেও মানব ধর্ম— ‘মহাধর্ম গ্রহণ করা যাবে। এই ধর্ম প্রচলিত ধর্মের মতো নয়। মানুষকে সচেতন ও সুস্থ করে তোলাই এই ধর্মের মূল উদ্দেশ্য।
মানবধর্ম অনুশীলনের মধ্যদিয়েই প্রকৃত মানব-বিকাশ এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। মানবজীবনে এক শুভ পরিবর্তন আসছে— মহাধর্ম-এর পথ ধরে।
মানবধর্ম দুই প্রকারের: এক, মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। নেচরাল ফাংশন অফ হিউম্যান।
দুই, মানুষ গড়ার ধর্ম। এ'হলো একটা আরোপিত ব্যবস্থা বা সিস্টেম, যার দ্বারা প্রকৃত বিকশিত মানুষ গড়ে তোলা যায়। যা মানুষের মৌলিক ধর্ম সম্পর্কে মানুষকে সজাগ-সচেতন করে তোলা এবং সেই পথে দ্রুত অগ্রসর হতে সাহায্য করে। এর মধ্যে আবার দুটি ভাগ আছে। একটি হলো তাত্ত্বিক বা দার্শনিক দিক বা শিক্ষা। থিওরীটিক্যাল এডুকেশন। আর অপরটি হলো ব্যবহারীক দিক বা আচরণগত শিক্ষা। প্র্যাকটিকাল এডুকেশন।
যে মানুষ গড়ার (শিক্ষা) ব্যবস্থা ধারণ-পালনের মধ্য দিয়ে একজন ব্যক্তি যথেষ্ট বিকশিত মানুষ হয়ে উঠতে পারে, তা'ই হলো মানবধর্ম। আর, মানব ধর্মই মহাধর্ম।
মানুষ হওয়া বলতে কী বোঝায়!
মনীষীরা যখন আশীর্বাদ ক’রে বলেন, —‘মানুষ হও’, তখন তাঁরা কি শুধু খেয়ে-প’রে বড় হওয়ার কথা বলেন? —একবারও ভেবে দেখিনা আমরা। অনেকের বক্তব্য, —মানুষ আবার কি হবো, আমরা তো মানুষই!
আসলে, এই মানুষ হওয়া বলতে বোঝায়, —যথেষ্ট বিকশিত মানুষ হওয়া। অর্থাৎ যথেষ্ট বিকশিত মনের মানুষ হওয়া। আত্মবিকাশের অর্থ হলো— মনোবিকাশ। ‘মনের বিকাশ’ —ব্যাপারটা নিয়েও অনেকে ধন্দে আছে। কেউ কেউ ভাবে, আমাদের অনেক বয়েস হয়েছে— যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি-অভিজ্ঞতা হয়েছে, এর থেকে আবার কি বিকাশ হবে! এদের কাছে— পূর্ণবয়স্ক মানুষ আর পূর্ণবিকশিত মানুষ প্রায় সমার্থক!
বহীর্মুখী দৃষ্টি দিয়ে অন্তরের অন্ধকার—অসুস্থতা—অপূর্ণতা, অন্তরের বিকাশ বোঝা সম্ভব নয়। তার জন্য মন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান সহ, মন সম্পর্কে সজাগ-সচেতন হতে হবে আমাদের। মনের দিকে তাকাতে— লক্ষ্য রাখতে হবে মাঝে মাঝেই। মনেরাখতে হবে, এই মন আছে ব’লেই— আমরা মানুষ। তাই, একজন মানুষ হিসেবে, আমাদের মন সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হতে হবে। যার মন যত বিকশিত— সে ততটাই বিকশিত মানুষ।
মানুষে মানুষে এতো পার্থক্য সৃষ্টির পিছনেও বড় কারণ হলো— আমাদের মন। বিভিন্ন চেতনস্তরের— বিভিন্ন মানসিক গঠন এবং বিভিন্ন ধরণের সংস্কার বা ‘প্রোগ্রাম’ সংবলিত— বিভিন্নরূপ মনের কারণেই আমরা এক একজন এক এক ধরণের মানুষ।
আমাদের এই মনের মধ্যে— বর্তমানে সক্রিয় দুটি অংশী মনের একটি হলো— অন্ধ-আবেগ প্রবণ অবচেতন মন, আর অপরটি হলো— সচেতন মন। এদের সুস্থতা এবং সচেতন মনের বিকাশের উপরেই মানুষের যাবতীয় বিকাশ— উন্নতি— সমৃদ্ধি নির্ভর করে। মানব সমাজের অধিকাংশ অসুখ-অশান্তি-সমস্যার মূলেই রয়েছে— আমাদের এই মন। অজ্ঞান-অন্ধ, অসুস্থ-বিকারগ্রস্ত মন। তাই, সুস্থ-সুন্দর —শান্তিপূর্ণ-সমৃদ্ধ জীবন লাভ করতে— নিজের নিজের মনোবিকাশ ও সুস্থতা লাভের চেষ্টার সাথে সাথে, চারিপাশের সমস্ত মানুষের মনোবিকাশ এবং মানসিক সুস্থতা ঘটাতে সচেষ্ট হতে হবে আমাদেরকে।
আরো জানতে হলে, এই ওয়েবসাইটে আসুন-- www.mahadharma.wix.com/bangla