top of page

'মন' -এর কথা

  • মহামানস
  • Jan 28, 2018
  • 2 min read

একটি শিশুকে আগ্রহের সাথে বারবার নানাবিধ প্রশ্ন করতে দেখে, আমরা সাধারণতঃ তাকে উন্নতিশীল বা প্রগতিশীল শিশু বলে চিহ্নিত ক’রে থাকি। তার এইসব প্রশ্ন যদি নিছক কৌতুহল না হয়ে জানার আগ্রহ হয়, আর সে যদি তার স্বল্প জ্ঞান-অভিজ্ঞতা সম্বল ক’রেই যুক্তি-বিচার সম্ভাবনা-অনুমান-এর সাহায্যে সত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে, এবং সেই পথে সত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, তখন তাকে আমরা উৎকৃষ্ট শ্রেণীর শিশু বলে থাকি।

শুধু শিশুই নয়, বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রেও এ’কথা প্রযোজ্য। যে সচেতন মনটির মালিক হওয়ার সুবাদে— আমরা মানুষ বলে গণ্য হই, সেই সচেতন বা মানব-চেতন মনটি এখনো আমাদের অধিকাংশের মধ্যে শৈশব অবস্থাতেই রয়েছে। তার যথেষ্ট বিকাশ ঘটলে— তবেই ঘটবে মনোবিকাশ —ঘটবে মানব-বিকাশ।

সঠিক বিকাশের জন্য— জানার আগ্রহের সাথে থাকতে হবে সুস্থতা। ক্রোধ-উত্তেজনা-অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, অলসতা-উদাসীনতা প্রভৃতি অসুস্থতা জ্ঞাপক দোষসহ অন্ধ-বিশ্বাস, অন্ধবৎ অনুসরণ, নির্বোধের মতো সব মেনে নেওয়া, যুক্তি-বিচারের অক্ষমতা, এবং স্রোতে ভেসে চলার প্রবণতা প্রভৃতি দোষগুলি আমাদের বিকাশের পরিপন্থি। কষ্ট করতে রাজি নয়, এমন একজনের বক্তব্যঃ ‘বিশ্বাস করতে তো আর কষ্ট করতে হয়না, জ্ঞান অর্জনের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়!’ অথচ, জ্ঞানাভাবের কারণে তাকে আরো অনেক বেশি কষ্ট স্বীকার করতে হচ্ছে!

মানব-জীবন লাভ ক’রে— মানব অস্তিত্ব সম্পন্ন উন্নত জীব হয়েও যদি কারো মধ্যে— নিজের সম্পর্কে—জীবন সম্পর্কে জোরালো প্রশ্ন না জাগে, আত্ম-জিজ্ঞাসা— জীবন-জিজ্ঞাসা —বিকাশাকাঙ্খা না জাগ্রত হয়, এবং যদি সে তার উত্তর সন্ধানে— সত্য সন্ধানে যুক্তিপথে অগ্রসর না হয়, সেক্ষেত্রে, তার সচেতন মনের অবস্থাটা সহজেই অনুমেয়।

সচেতন বা মানব-চেতন মনের ধর্মই হলো— যুক্তি-বিচার-সতর্কতার সাথে বাস্তবপ্রিয়তা ও সত্যপ্রিয়তা প্রভৃতি। আর, অবচেতন বা প্রাক-মানব-চেতন মনের ধর্ম হলো— অন্ধ-আবেগ— অন্ধ-বিশ্বাস, অলীক কল্পনা প্রিয়তা প্রভৃতি। মনে রাখতে হবে, আত্ম-জিজ্ঞাসাই ঊর্ধগামী আত্ম-বিকাশ-পথের প্রথম সোপান। এবং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে— তা’ যেন নিম্নগামী অন্ধবিশ্বাসের আপাত সুখকর পথে নেমে গিয়ে— পথভ্রষ্ট না হয়, —বিপথগামী না হয়।

আমাদের সচেতন-মন যত বেশি বিকশিত হবে, আমরা ততই অন্ধ-বিশ্বাস মুক্ত হয়ে— যুক্তি ও জ্ঞানপথে অগ্রসর হতে পারবো। আমরা যুক্তি ও জ্ঞানের পথ ধরে যত চলবো— সেইমতো সচেতন-মনের বিকাশও ঘটতে থাকবে ততই।

স্বল্প-বিকশিত সচেতন-মনের মানুষ অন্ধ-বিশ্বাসের পথ ধরে চলতে গিয়ে— বারবার ঘাত-প্রতিঘাতে আঘাতে আঘাতে বিপর্যস্ত হতে থাকবে, এবং এরফলেই তিলে তিলে তাদের মধ্যে বাস্তব বোধ— যুক্তি বোধসম্পন্ন সচেতন-মনের বিকাশ ঘটতে থাকবে। এইভাবে দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনাদায়ক বিচিত্র ঘটনার মধ্যদিয়ে একসময় তাদের সচেতন-মনের বিকাশ ঘটবে।

এরই মধ্যবর্তী কোনো কোনো সূক্ষ চেতনস্তরে, অন্ধ-বিশ্বাসকে অপযুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা দেখা যাবে। আবার, অন্ধ-যুক্তিবাদী ও অন্ধ-বিজ্ঞান-সমর্থক মানুষের দেখাও পাওয়া যাবে কিছু কিছু, যারা আসলে একশ্রেণীর অন্ধ-বিশ্বাসী।

অন্ধ-বিশ্বাস-প্রবন স্বল্প-চেতন মানুষ— ভন্ড-প্রতারকদেরকেই বেশি পছন্দ ক’রে থাকে। যাদের দ্বারা সে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তেমন ব্যক্তিদের প্রতিই সে বেশি আকর্ষন বোধ ক’রে থাকে। জ্ঞানী ব্যক্তি— যে প্রকৃতই তার মঙ্গল চায়, তাঁকে এবং তাঁর কথা তার ভালো লাগেনা। ফলে, বারবার প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে সে, যতদিন না তার চেতনা যথেষ্ট জাগ্রত হয়। আবার, কারো কারো চেতনার জড়তা এত বেশি, যে বারবার ঠেকে ও ঠকেও তাদের চেতনা হয়না।

 
 
 

Comments


Featured Posts
Recent Posts
Archive
Search By Tags
Follow Us
  • Facebook Basic Square
  • Twitter Basic Square
  • Google+ Basic Square
bottom of page