সহজ প্রাণযোগ
- mahadharma
- Jan 28, 2021
- 3 min read
Updated: Jan 29, 2021
সহজ প্রাণযোগ
মেরুদণ্ড সোজা রেখে, চোখ বুঁজে— চুপকরে বসো। ধীরে ধীরে গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করো। শ্বাস গ্রহণের সময় মনে মনে বলো— 'মহা প্রাণশক্তি'। ধারণা করো--- মহাজাগতিক মহা-প্রাণশক্তি তোমার মস্তিষ্কের মধ্যে প্রবেশ করছে। এবং তা’ মস্তিষ্ক থেকে ক্রমে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে।তারপর যতক্ষণ সম্ভব শ্বাস ধারণ করো, এবং মনে মনে বলো— 'আমি রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত, সুস্থ- স্বাস্থ্যবান, সক্রিয়-শক্তিমান, সুন্দর কান্তিমান। সৌভাগ্যবান। আমি ভালো আছি, আমি ভালো আছি, আমি ভালো আছি।
তারপরে, ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ করো। শ্বাস ত্যাগ করার সময় মন মনে বলো— ' আমি শুভময় ধনময় সৌভাগ্যময়। আমি সুস্থ— সুস্থ— সুস্থ। সমস্ত রোগবিষ থেকে মুক্ত, সমস্ত কুপ্রভাব থেকে মুক্ত, অশুভত্ব থেকে মুক্ত।'শ্বাস ত্যাগ করার পরে, কয়েক সেকেন্ডের জন্য শূন্য অবস্থায় থাকো। অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস কিছুই না করে থাকো। এই সময় মনে মনে বলো— শান্তি- শান্তি- শান্তি।
এই সময় মনকে শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযুক্ত রাখো। এইরূপ পাঁচবার করার পরে, একটু বিশ্রাম নিয়ে, আবার প্রাণযোগ অভ্যাস করো, এবার মনে মনে কোনো কথা না বলে, ছড়িয়ে থাকা মনকে বা মনের ফোকাসকে, শ্বাস গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে কপালের বা ভ্রু যুগলের মাঝখানে কেন্দ্রীভূত করুন। এবং শ্বাস ছাড়ার সময়েও ওখানেই মনকে স্থির নিবদ্ধ রাখুন। প্রথম পর্যায়ে, ভ্রু যুগলের মধ্যে অথবা কপালের মাঝখানে মনোসংযোগ করলেও, পরবর্তীতে যেতে হবে আরও গভীরে। 'আমি'-র কেন্দ্রে অর্থাৎ স্ববোধ-এর জায়গাটি হলো--- উপরোক্ত স্থানের কিছুটা গভীরে, দুটি কানের মধ্যবর্তী একটি স্থান।
প্রাণযোগ অভ্যাসের পরে, কিছুক্ষণ স্ব-বোধে স্থিত হয়ে, ধ্যানস্থ থাকতে হয়। তখন সমস্ত মনোযোগ থাকবে ঐ স্থানটিতে, অর্থাৎ নিজের বা নিজের মনের উপর। আরেকটি কথা, ভরা পেটে প্রাণযোগ অভ্যাস করা নিষেধ। প্রাণযোগ অভ্যাসের পক্ষে ভোরবেলা হলো সবচাইতে ভালো সময়।
ধ্যান-যোগ অভ্যাসের পূর্বে 'প্রাণযোগ' অভ্যাস এর পিছনে বিজ্ঞান:
বিশেষভাবে ধ্যান করা ছাড়াও, মনোযোগ সহকারে কোন কিছু করা, পড়া বা শোনার সময় আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। মনোযোগ যত বেশি গভীর ও কেন্দ্রীভূত হবে, শ্বাস-প্রশ্বাস ততই ক্ষীণ হতে থাকবে। এদিকে আবার, মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে--- যথাযথভাবে মনন ক্রিয়া করার জন্য, মস্তিষ্কে যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেনের প্রয়োজন। আর প্রয়োজন হয় জলের। এই দুটির অভাব হলেই মস্তিষ্ক তার কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এমনকি সে অচল হয়েও পড়তে পারে।
ধ্যান-যোগ অভ্যাস কালে ধানের গভীরতা যত বৃদ্ধি পাবে, ধ্যানীর শ্বাসক্রিয়া ততবেশি ক্ষীণ হতে থাকবে। আর মস্তিষ্কের ক্রিয়াও ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকবে।
মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি যাতে না হয়, সেই উদ্দেশ্যেই তাকে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়ে থাকে, প্রাণযোগ অভ্যাস-এর মাধ্যমে। এছাড়াও, শরীরকে টক্সিন বা রোগবিষ থেকে মুক্ত করতে, অক্সিজেনের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে।
প্রাণযোগ অভ্যাসের মাধ্যমে আমাদের প্রাণশক্তির বৃদ্ধি ঘটে থাকে। আমাদের চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসের যোগ রয়েছে। আমাদের মন তথা চিন্তা-ভাবনা যখন অসুস্থ এবং বিশৃঙ্খল থাকে, তখন শ্বাস-প্রশ্বাস তার ছন্দ হারিয়ে ফেলে। প্রাণযোগের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস তার ছন্দ ফিরে পেলে, মন ও তার চিন্তা-ভাবনাও ছন্দে ফিরে আসে।
নিয়মিত প্রাণযোগ অভ্যাসের দ্বারা মানসিক চাপ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ভীতি, শোক, দুঃখ, অশান্তি, হতাশা, অবসাদ প্রভৃতি ক্রমশ দূর হয়ে যায়। যোগী প্রাণশক্তিতে ভরপুর হয়ে ওঠে। মানসিক সুস্থতা, শৃঙ্খলা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে ক্রমশ। মানসিক অসুস্থতার কারণে যে সমস্ত শারীরিক সমস্যা ঘটে থাকে, সেগুলোও আস্তে আস্তে দূর হয়ে যায়।
সঠিকভাবে প্রাণযোগ অভ্যাসের মাধ্যমে, যোগীর মনের চঞ্চলতা কমে গিয়ে, তার মন স্থির একাগ্র হয়ে ওঠে। তার কাজের প্রতি আগ্রহ ও অনুরাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে ক্রমশ।
ধ্যান অনেক প্রকার, 'মহামনন' আত্ম-ধ্যানের সময় আমাদের মন ও মস্তিষ্ক ক্রিয়া রহিত হয়ে যায় না। বরং সেই সময় সচেতন মন যথেষ্ট সজাগ থাকে, এবং সচেতন মনের বিকাশ ঘটতে থাকে তখন। এই কারণেই যোগ অভ্যাসের পূর্বে ও পরে যথেষ্ট পরিমাণে জল পান করা উচিত।
'মহা প্রাণযোগ' শেখানো হয় পূর্ণাঙ্গ আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রম -এর ক্লাসে।
ধ্যানের জন্য মন ও মস্তিষ্কের শিথিলতা এবং মেরুদন্ড ও স্নায়ুতন্ত্রের নমনীয়তা প্রয়োজন। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই শিথিলতা এবং নমনীয়তা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। তাই, মেরুদণ্ডের নমনীয়তা লাভ করতে, কিছু ব্যায়াম করতে হবে। আর, মন ও মস্তিষ্কসহ স্নায়ুতন্ত্রের শিথিলতা লাভ করতে, সুষুপ্তি-যোগ অভ্যাস করতে হবে।

Comments